বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা রফিকুল ইসলাম খান বলেছেন, দুর্নীতি করে দেশের জনগণের সম্পদ লুটপাট এবং জনগণের ওপর গত দীর্ঘ ১৫ বছর অমানবিক জুলুম নির্যাতন, গণহত্যা চালানোর কারণেই আওয়ামী লীগ ছাত্র-জনতার আন্দোলনে ভীত হয়ে গোষ্ঠী দেশ ছেড়ে পালিয়েছে।
শুক্রবার দুপুরে রাজধানীর ধানমন্ডি উত্তর থানা জামায়াতে ইসলামীর কর্মী সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, ছাত্র-জনতা তাদেরকে দেশ ছেড়ে চলে যাওয়ার জন্য আন্দোলন করেনি। শুধু ক্ষমতা ছেড়ে দেওয়ার জন্য আন্দোলন করেছে। তাহলে যে দল গত ১৫ বছর ক্ষমতায় থেকে মানুষকে উন্নয়নের মহাসড়কের গল্প শুনিয়েছে সে দল কেন ক্ষমতা ছেড়ে এক মিনিটও থাকতে পারলো না?
এমন প্রশ্ন রেখে রফিকুল ইসলাম খান বলেন, তার একটি মাত্র কারণ, তারা দেশকে উন্নয়নের মহাসড়কে নেয়নি বরং দুর্নীতি-লুটপাট করে বিদেশে সম্পদের পাহাড় তৈরি করেছে। এটি তারা নিজেরাও জানে সেজন্যই ক্ষমতা ছেড়ে দেশ থেকে পালিয়ে গেছে। জামায়াতে ইসলামীর ওপর স্বৈরাচার আওয়ামী লীগ গত ১৫ বছরে যত জুলুম নির্যাতন করেছে তা বর্ণনা করে শেষ করা যাবে না কিন্তু জামায়াতে ইসলামীর কোনো নেতাকর্মীকে দেশ ছেড়ে পালিয়ে যেতে হয়নি এবং যায়নি। কারণ জামায়াতে ইসলামীর নেতাকর্মীরা মানুষের সম্পদ লুটপাট করেনি এবং মানুষ হত্যা করেনি। জামায়াতে ইসলামীর রাজনৈতিক কর্মসূচিই হচ্ছে মানুষের অধিকার নিশ্চিত করা। আর মানুষের অধিকারের নিশ্চয়তা পাবে কেবল ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা হলে। সেজন্য আমরা বলছি, ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার কোনো বিকল্প নেই।
ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের মজলিসে শূরা সদস্য ও ধানমন্ডি উত্তর থানা আমির আবু শাহাদাত মোহাম্মদ আলীর সভাপতিত্বে কর্মী সমাবেশে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন- কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের সেক্রেটারি ড. শফিকুল ইসলাম মাসুদ, কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরা সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের সহকারী সেক্রেটারি ড. আব্দুল মান্নান, কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরা সদস্য ইঞ্জিনিয়ার শেখ আল-আমিন।
এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন মহানগরী কর্মপরিষদ সদস্য আব্দুর রহমান, ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের মজলিসে শূরা সদস্য হাফেজ রাশেদুল ইসলাম, জাহেদুর রহমান, মাওলানা মুহিব্বুল হক ফরিদ, অ্যাডভোকেট জসিম উদ্দীন তালুকদার সহ বিভিন্ন পর্যায়ের নেতৃবৃন্দ।
মাওলানা রফিকুল ইসলাম খান বলেন, জামায়াতে ইসলামী বিশ্বাস করে আদর্শ রাষ্ট্র বিনির্মাণের জন্য আদর্শ মানুষ প্রয়োজন। তাই জামায়াতে ইসলামী প্রতিষ্ঠাকাল থেকেই আদর্শ মানুষ তৈরির কাজ করছে। জামায়াতে ইসলামীর ছায়াতলে অসংখ্য আদর্শ মানুষ রয়েছে। ইতঃপূর্বে জামায়াতে ইসলামীর নেতাকর্মীরা এমপি, মন্ত্রী, চেয়ারম্যান হয়ে দেশের বিভিন্ন স্তরের জনপ্রতিনিধি হিসেবে দায়িত্ব পালন করে নিজেদের নৈতিকতার প্রমাণ দিয়েছে ও আদর্শ মানুষ হিসেবে জনগণের সামনে পেশ করতে সক্ষম হয়েছে। আগামীতে জামায়াতে ইসলামী রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব পেলে সেই ধারা অব্যাহত থাকবে। জামায়াতে ইসলামী ক্ষমতা চায় না, চায় দেশে ইসলাম প্রতিষ্ঠা হোক। ইসলাম প্রতিষ্ঠা হলেই বাংলাদেশ সত্যিকার অর্থে সোনার বাংলা হবে, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বাস্তবায়ন হবে।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে ড. শফিকুল ইসলাম মাসুদ বলেন, দেশের নেতৃত্ব যারা দিবে সেসব ব্যক্তি পরিবর্তন না হলে দেশের নাগরিকের ভাগ্যের পরিবর্তন ঘটবে না। শাসক যদি হয় শেখ হাসিনার মত চোর, খুনি, ইসলাম বিদ্বেষী, তবে দেশের জনগণ কখনোই শান্তি পাবে না, কথা বলার অধিকার পাবে না, স্বাধীনতা ভোগের সুযোগ পাবে না। সেজন্য নেতা নির্বাচনে ভুল করা যাবে না।
তিনি উপস্থিত জামায়াতে ইসলামীর কর্মীদের উদ্দেশ্যে বলেন, যে কর্মীরা আওয়ামী লীগের নেতাদেরকে হুকুমে কাজ করেছে, নেতারা পালিয়ে যাওয়ার সময় কী একবারও তাদের সেই কর্মীদের কথা ভেবেছে? ভাবেনি। কারণ তাদের রাজনীতিই হচ্ছে আমার, শুধু আমার। কিন্তু জামায়াতে ইসলামীর শীর্ষ নেতৃবৃন্দসহ অসংখ্য নেতাদের নামে মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি, জেল-জুলুম, নির্যাতন করার পরও জামায়াতে ইসলামীর কোনো নেতা, কর্মীদের ছেড়ে পালিয়ে যায়নি বরং কর্মীদের ওপর খুনি হাসিনা যত নির্যাতন চালিয়েছে নেতৃবৃন্দ কর্মীদের পাশে তত বেশি গিয়ে দাঁড়িয়েছে।
ড. মাসুদ বলেন, জামায়াতে ইসলামীর প্রস্তাবিত রাষ্ট্র সংস্কার কার্যক্রম সম্পন্ন করে দ্রুত নির্বাচন দিয়ে জনগণের সরকারের কাছে রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব দিতে কাজ করছে।
আওয়ামী লীগ মানুষের ভোটাধিকার কেড়ে নিয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ নির্বাচনে বিশ্বাসী নয়। সেজন্য তারা ২০১৪ সালে একতরফা ভোট, ২০১৮ সালে দিনের ভোট রাতে, ২০২৪ সালের ৭ জানুয়ারি ডামি নির্বাচন করেছে। যারা মানুষের ভোটাধিকার কেড়ে নেয়, যারা নির্বাচনে বিশ্বাসী নয়, তাদের নির্বাচনে অংশগ্রহণ করার কোনো অধিকার নেই। আওয়ামী লীগের রাজনীতিই হচ্ছে তারা মুখে যা বলবে তা করবে না, আর যা করবে তা কখনোই বলবে না।
তিনি বলেন, ব্যাংকিং খাত, শিক্ষা খাত, স্বাস্থ্য খাতে অগ্রণী ভূমিকা রেখেছে জামায়াতে ইসলামী। আর শেখ হাসিনা জামায়াতে ইসলামীর নেতাদের তৈরি করা ব্যাংক, বীমা, হাসপাতাল, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান দখল দিয়ে লুটপাট করে নিয়ে ধ্বংস করে দিয়েছে। জনগণ জামায়াতে ইসলামীকে রাষ্ট্র পরিচালনার মহান দায়িত্ব দিলে জামায়াতে ইসলামীর নেতাদের প্রতিষ্ঠা করা ব্যাংক, বীমা, হাসপাতাল, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ সকল প্রতিষ্ঠানকে পুনরায় জনকল্যাণে রূপান্তরিত করা হবে।
ইএইচ