ভারতের একটি মিডিয়ায় এক সাংবাদিক চট্টগ্রামকে ভারত অংশে যুক্ত করার বিষয়ে উপস্থাপন প্রসঙ্গে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদের সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের সেক্রেটারি ড. শফিকুল ইসলাম মাসুদ বলেছেন, চট্টগ্রাম নয়, বাংলাদেশের এক ইঞ্চি মাটিও কাউকে দখল করতে দেওয়া হবে না। ভারত বাংলাদেশে যে আধিপত্য বিস্তার করেছে সেটি ছাত্র-জনতার বিপ্লবের মাধ্যমে গত ৫ আগস্ট থেকে নিঃশেষ হয়ে গেছে। বাংলাদেশে আধিপত্য বিস্তারের আর কোন সুযোগ ভারত পাবে না। ৫ আগস্ট এদেশের ছাত্র-জনতা শুধু ফ্যাসিবাদ মুক্ত করেনি আধিপত্য গোষ্ঠীকেও নির্মূল করেছে।
শুক্রবার রাজধানীর ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারিং ইনস্টিটিউটে বরগুনা ফোরাম কর্তৃক আয়োজিত সুধী সমাবেশে প্রধান আলোচকের বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, শহীদ মতিউর রহমান নিজামী বাংলাদেশের ভূখণ্ড নিয়ে কেউ ছিনিমিনি খেলার চেষ্টা করলে তার উপযুক্ত জবাব দেওয়ার ঘোষণার পরেই ভারতের ইন্ধনে আওয়ামী লীগ শহীদ মাওলানা নিজামীসহ জামায়াতে ইসলামীর নেতৃবৃন্দকে আটক করে সাজানো মামলায় বিচারিক হত্যা করেছে। কারণ জামায়াত নেতৃবৃন্দ বেঁচে থাকলে বাংলাদেশকে ভারতের অঙ্গরাজ্য করতে দেওয়া হবে না। জামায়াতে ইসলামী ব্যক্তির উপর নির্ভর করে সংগঠন পরিচালিত হয় না। জামায়াতে ইসলামীতে নেতৃত্ব দেওয়ার মত অসংখ্য নেতৃবৃন্দ রয়েছে। আওয়ামী লীগ একজনকে আটক করলে আরেকজন দায়িত্ব নিতে একদিনও দেরি হয়নি। ফলে জামায়াতে ইসলামী নিঃশেষ করা যায়নি। যারা আল্লাহর দ্বীন কায়েমের আন্দোলন করে। তাদেরকে দুনিয়ার কোনো শক্তি নিঃশেষ করতে পারে না, পারবে না।
ড. শফিকুল ইসলাম মাসুদ বলেন, যারা দেশের জন্য উন্নয়ন করে তারা ক্ষমতা ছেড়ে দেশ থেকে পালিয়ে যায় না। শেখ হাসিনা দেশের জন্য যতটা না উন্নয়ন করেছে তার চেয়ে বেশি উন্নয়ন করেছে নিজের পরিবার ও দলের। শেখ হাসিনা নিজে প্রকাশ্যে বলেছে, ভারতকে আমি যা দিয়েছি ভারত কখনো তা ভুলতে পারবে না। এজন্যই শেখ হাসিনা ক্ষমতা ছেড়ে ভারতে চলে যান। তিনি যাদেরকে পাকিস্তান চলে যেতে বলেছেন, তারা কেউ পাকিস্তান যায়নি। কিন্তু তিনি ঠিকই ভারত চলে গেছেন। আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক গৌড় ভারতে। সেজন্যই তারা বাংলাদেশের চেয়ে ভারতে কল্যাণে বেশি কাজ করে এবং করেছে। এজন্যই জনগণ তাদেরকে ভারত পাঠিয়ে দিয়েছে। এবার ছাত্র-জনতার প্রত্যাশিত বাংলাদেশ গঠন করতে হবে। ব্যক্তির চিন্তা চেতনায় সংস্কার করা হলে শান্তি প্রতিষ্ঠা হবে না উল্লেখ করে ড. মাসুদ বলেন, শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য আল্লাহর বিধান কুরআনের আলোকে সংস্কার করতে হবে। ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করলেই শান্তি আসবে। ইসলাম ব্যতীত কোন মতবাদে শান্তি নাই, শান্তি আসবে না। তাই ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠায় জামায়াতে ইসলামীর আন্দোলনে শামিল হতে তিনি দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানান।
বরগুনা ফোরামের সভাপতি ডা. সুলতান আহমদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সুধী সমাবেশে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদের সদস্য ও সহকারী সেক্রেটারি অ্যাডভোকেট মুয়ায্যম হোসাইন হেলাল। বিশেষ অতিথি ছিলেন বরগুনা জেলা আমির মাওলানা মহিব্বুল্লাহ হারুন ও ইসলামী ছাত্রশিবিরের বরগুনা জেলা সভাপতি সুমন আব্দুল্লাহ। এছাড়া অনুষ্ঠানে বরগুনা ফোরামের নেতৃবৃন্দ বক্তব্য দেন।
পরে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর পেশাজীবী শাখার সাবেক সাথী ও সদস্যদের কর্মশালায় যোগ দিয়ে প্রধান অতিথির বক্তব্যে ড. শফিকুল ইসলাম মাসুদ বলেন, আধিপত্যবাদ-সাম্রাজ্যবাদের উপর ভর করে আর কাউকে জনগণের ভাগ্য নিয়ে ছিনিমিনি খেলতে দেওয়া হবে না।
৫ আগস্টের বিপ্লবের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ থেকে আধিপত্যবাদ-সাম্রাজ্যবাদের কবর রচনা হয়েছে উল্লেখ করে ড. মাসুদ বলেন, আমেরিকার নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট নাকি শেখ হাসিনাকে প্রধানমন্ত্রী করে আবার বাংলাদেশে পাঠাবে! আমেরিকা গণতন্ত্রের চর্চা করে এবং আমেরিকা বিশ্বাস করে জনগণের সরকার জনগণই নির্বাচন করবে। কিন্তু আওয়ামী লীগ গণতন্ত্রের চর্চা করে না, গণতন্ত্র বিশ্বাস করে না। তারা যখনই ক্ষমতা দখল করেছে বিদেশি পরাশক্তির উপর ভর করে ক্ষমতা দখল করেছে। আবার তারা ক্ষমতা হারিয়ে তাদের আপন ঠিকানা ভারতে পালিয়ে গেছে। ড. মাসুদ নতুন বাংলাদেশ গড়তে উপস্থিত সাবেক সাথী ও সদস্যদের শপথবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানান।
ইএইচ