ছাত্রদের নতুন দল: শেষ মুহূর্তেও নেতৃত্ব নিয়ে কাটেনি জটিলতা

আমার সংবাদ ডেস্ক প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ২৩, ২০২৫, ১০:৪৩ এএম
ছাত্রদের নতুন দল: শেষ মুহূর্তেও নেতৃত্ব নিয়ে কাটেনি জটিলতা

গণঅভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দেওয়া ছাত্রদের নতুন রাজনৈতিক দল গঠন প্রক্রিয়া থমকে আছে দলীয় পদ-পদবীর প্রশ্নে। গত কয়েক দিনের আলোচনা ও বিতর্ক সত্ত্বেও সংকট কাটেনি, যা আবারও স্পষ্ট হয়েছে শনিবার দলের কেন্দ্রীয় কমিটির এক যুগ্ম আহ্বায়কের ফেসবুক পোস্টের পর।

শনিবার বিকেলে নিজের ফেসবুক অ্যাকাউন্টে জাতীয় নাগরিক কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক আলী আহসান জুনায়েদ একটি স্ট্যাটাস দেন। সেখানে তিনি লেখেন, ‘জাতীয় নাগরিক কমিটিতে অনেক ক্ষেত্রেই যথাযথ প্রক্রিয়া এবং স্বচ্ছতার অভাব লক্ষ্য করা যাচ্ছে। এ ধরনের সমস্যা যেন নতুন দলে না থাকে, সেজন্য গঠন প্রক্রিয়া ও নেতৃত্ব নিয়ে আমরা প্রশ্ন তুলেছি।’

এ বিষয়ে জুনায়েদ বিবিসি বাংলাকে বলেন, ‘কমিটি গঠনের ক্ষেত্রে একটি পক্ষ অভ্যুত্থানের কিছু নেতাকে অগ্রাধিকার দিতে চাচ্ছে। আমরা বলছি, তারাই আসুক, তবে পদ্ধতিটি স্বচ্ছ ও গণতান্ত্রিক হোক।’

এ মাসের শুরু থেকেই ছাত্রদের নতুন রাজনৈতিক দল নিয়ে আলোচনা চলছে। জাতীয় নাগরিক কমিটির একাধিক বৈঠকের পর উপদেষ্টার পদ ছেড়ে নতুন দলের দায়িত্ব নেওয়ার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের তথ্য উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম। তবে এ নিয়ে নাহিদ ইসলাম কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।

আগামী বুধবার (২৬ ফেব্রুয়ারি) দলটির আত্মপ্রকাশের সম্ভাবনা রয়েছে। তবে শীর্ষ ছয়টি পদ নিয়ে আলোচনা ও মতভেদ এখনো অব্যাহত।

নাগরিক কমিটির আহ্বায়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী বলেন, ‘আমাদের সিদ্ধান্ত ছিল ২৬ তারিখ দল ঘোষণা করার। এটি এখনো বহাল আছে, তবে নেতৃত্ব চূড়ান্ত হয়নি।’

নতুন দল ১০০টি আসন নিয়ে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা ও ভবিষ্যতে ক্ষমতায় আসার লক্ষ্যে গঠিত হচ্ছে বলে জানিয়েছেন নেতারা।

পদ নিয়ে জটিলতা

গত দুই মাসে দল গঠনের পদক্ষেপ নিয়ে নানা আলোচনা হয়েছে। জাতীয় নাগরিক কমিটির মধ্যে চারটি বলয় স্পষ্ট হয়েছে এবং শীর্ষ পদ নিয়ে মতবিরোধ দেখা দিয়েছে।

নাগরিক কমিটির একাধিক নেতা জানিয়েছেন, আহ্বায়ক হিসেবে নাহিদ ইসলাম নিয়ে একমত হলেও বাকি পদগুলো নিয়ে মতানৈক্য রয়েছে। সংকট সমাধানে শীর্ষ পদসংখ্যা চারটি থেকে ছয়টিতে বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ছাত্রনেতা আলী আহসান জুনায়েদ ফেসবুক পোস্টে বলেন, ‘নেতৃত্ব গঠনের প্রক্রিয়াটি গণতান্ত্রিক ও অন্তর্ভুক্তিমূলক হওয়া উচিত। যোগ্য যে কেউ যেন নির্বাচিত হতে পারে এবং যোগ্যতার মানদণ্ড নির্ধারণ করা জরুরি।’

নাগরিক কমিটির একাধিক নেতা জানান, প্রথমে চারটি শীর্ষ পদ রাখার আলোচনা হয়েছিল। কিন্তু আপত্তির পর সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক ও সিনিয়র যুগ্ম সদস্য সচিব দুটি নতুন পদ তৈরি করে ছয়টি শীর্ষ পদ নির্ধারণের সিদ্ধান্ত হয়।

শীর্ষ পদে কারা আসছেন?

নতুন দলের শীর্ষ পদ নিয়ে এখনো প্রতিযোগিতা চলছে। নাগরিক কমিটির আহ্বায়ক পদে নাহিদ ইসলাম নিশ্চিত হলেও সদস্য সচিব পদে আখতার হোসেন ও সারজিস আলমের মধ্যে প্রতিযোগিতা রয়েছে।

নতুন দলের সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক ও সিনিয়র যুগ্ম সদস্য সচিব হিসেবে আলী আহসান জুনায়েদ, নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী, সামান্তা শারমিন ও আরিফুল ইসলাম আদীবের নাম আলোচনায় রয়েছে।

চূড়ান্ত হয়নি নাম ও ঘোষণাপত্র

দল ঘোষণার কথা থাকলেও এখনো নাম ও ঘোষণাপত্র চূড়ান্ত হয়নি। নাগরিক কমিটি তিন লাখ মতামত সংগ্রহ করেছে এবং আলোচনায় থাকা নামগুলোর মধ্যে রয়েছে ‘বিপ্লবী পার্টি’, ‘জনতা পার্টি’, ‘ছাত্র জনতা আন্দোলন’, ‘জাস্টিস পার্টি’, ও ‘ইনসাফ পার্টি’।

দল ঘোষণার স্থান হিসেবে শহীদ মিনার ও মানিক মিয়া এভিনিউ বিবেচনায় রয়েছে।

নাগরিক কমিটির নেতারা জানিয়েছেন, নতুন দল আত্মপ্রকাশ করলেও জাতীয় নাগরিক কমিটি বিলুপ্ত হবে না। যারা রাজনৈতিক দলের গুরুত্বপূর্ণ পদে থাকবেন না, তারা জাতীয় নাগরিক কমিটিতে ভূমিকা রাখবেন।

আজ রোববার (২৩ ফেব্রুয়ারি) ছাত্রদের নতুন দলের আত্মপ্রকাশের বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত আসতে পারে।

সূত্র: বিবিসি

ইএইচ