মির্জা আব্বাস

কথাবার্তা হিসাব করে বলবেন, আমাদের যেন বে-হিসাবি কথা বলতে না হয়

আমার সংবাদ ডেস্ক প্রকাশিত: মার্চ ১২, ২০২৫, ০৭:২৬ পিএম
কথাবার্তা হিসাব করে বলবেন, আমাদের যেন বে-হিসাবি কথা বলতে না হয়

নির্বাচন বিলম্ব ইস্যুতে দেশের কয়েকটি রাজনৈতিক দলের প্রতি ইঙ্গিত করে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস বলেছেন, আওয়ামী লীগ তো দেশটাকে বাপের তালুকদারি ভেবেছিল। যার কারণে যা খুশি তা-ই হয়েছে। আপনারাও কি তা-ই ভাবেন? এই বাংলাদেশ কারও তালুকদারি নয়। এই বাংলাদেশ জনগণের। সুতরাং কথাবার্তা বলার সময় হিসাব করে বলবেন। আমাদের যেন বে-হিসাবি কথা বলতে না হয়।

বুধবার (১২ মার্চ) দুপুরে রাজধানীর শাহজানপুরে দলের এক প্রশিক্ষণ কর্মশালায় এমন হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেন তিনি। ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির উদ্যোগে শাহজাহানপুর রেলওয়ে অফিসার্স ক্লাব মাঠে ‘রাষ্ট্র কাঠামোর মেরামতের ৩১ দফা ও জনসম্পৃক্তি’ শীর্ষক এ কর্মশালা হয়।

নির্বাচন বিলম্ব নিয়ে কয়েকটি রাজনৈতিক দলের প্রতি ইঙ্গিত করে তিনি বলেন, আমরা বুকের তাজা রক্ত ঢেলে দিয়েছি গণতন্ত্রের জন্য, কথা বলার জন্য, ভোটের অধিকারের জন্য। আজকে যখন ভোটের সময় আসছে এখন বলেন, এটা না করলে ভোট হবে না, ওটা না করলে ভোট হবে না…কেন রে ভাই, কেন?

মির্জা আব্বাস বলেন, অনেকের ভেতরে কিছু লোভী রাজনীতিবিদ আছেন, কিছু লোভী রাজনৈতিক দল আছে, যারা শুধু বিরোধিতার কারণে বিরোধিতা করে, কার্যকর কোনো বিরোধিতা নয়। এই দলগুলো পাকিস্তানের সৃষ্টিলগ্নে ভারত বিভক্তি থেকে শুরু করে আজ পর্যন্ত শুধু বিরোধিতাই করে গেলো। দেশপ্রেমের লেশমাত্র তাদের ভেতরে নেই। তারা দেশকে ভালোবাসে না, দেশের মানুষকে ভালোবাসে না।

‘যেভাবে হোক ক্ষমতায় থাকতে হবে, যেভাবেই হোক ক্ষমতায় যেতে হবে- এটিই তাদের ভালোবাসা। আমাদের তো তাতে আপত্তি নেই, দেশের জনগণ যদি আপনাদের ভোট দিয়ে ক্ষমতায় নেয় আপত্তির কী আছে? ভোটে আসেন। ভোটকে ভয় পান কেন? নির্বাচনকে ভয় পান কেন?’

নির্বাচনের বিরোধিতাকারী রাজনৈতিক দলগুলোর নাম উল্লেখ না করে বিএনপির এ জ্যেষ্ঠ নেতা বলেন, যারা লম্বা লম্বা কথা বলেন আজকে নির্বাচন করতে দেওয়া হবে না, করতে দেওয়া যাবে না, তারা বুকে হাত দিয়ে বলেন জুলাই-আগস্টের আন্দোলনে আপনাদের কয়জন নেতাকর্মী শাহাদতবরণ করেছেন? এক মাসে বিএনপির ৪২২ জন নেতাকর্মী শাহাদতবরণ করেছেন, শহীদ হয়েছেন। আপনাদের কয়জন শহীদ হয়েছেন?

গণমাধ্যমের সমালোচনা করে মির্জা আব্বাস বলেন, আমাদের সাংবাদিক ভাইয়েরা আজকাল অনেক দলের কথা পত্র-পত্রিকায় লেখেন না, অনেক দলের খারাপ কথা লেখেন না, ভালো কথা হয়তো লেখেন দু-একটা। আর বিএনপির ভালো কথা লেখেন না। খারাপ দু-একটা লিখে দেন।

তিনি বলেন, একটা কথা আছে না- সব পাখি মাছ খায় দোষ করে মাছরাঙ্গা। এখন বিএনপির বিরুদ্ধে বলতে সহজ। মরহুম সাইফুর রহমান সাহেব সিলেটি ভাষায় বলতেন... ‘হাড্ডির পাশের মাংস খাইতে খুব মজা লাগে’। বিএনপি একটি বড় দল, গোছানো ও সুন্দর দল, এই দলের বদনাম করতে খুব মজা লাগে!

‘বিভিন্ন দল, টেলিভিশন ও ইউটিউবার একযোগে বিএনপির বিরুদ্ধে কথা বলছে। আমাদের কাজের মাধ্যমে এগুলো প্রতিরোধ করতে হবে। জনগণের পাশে থেকে তাদের এটি বোঝাতে হবে যে, বিএনপি ছাড়া এদেশে জনগণের কোনো বন্ধু নেই।’

চাঁদাবাজদের প্রতিরোধ করার আহ্বান জানিয়ে মির্জা আব্বাস বলেন, আপনাদের বিরুদ্ধে কিন্তু ওইসব লোকগুলো অনেক বদনাম করছে। অপকর্ম করে তারা, চাঁদাবাজি করে তারা, দুষ্কর্ম করে তারা, চাপিয়ে দেয় বিএনপির ওপরে। মুখের কথা অথবা কাজের মাধ্যমে এই চাঁদাবাজদের প্রতিরোধ ও প্রতিহত করতে হবে।

তিনি বলেন, যদি তা না করেন আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান (তারেক রহমান) সাহেব বারবার বলেছেন, যদি জনগণের মন থেকে উঠে যান, আওয়ামী লীগের যে পরিণতি হয়েছে তার চেয়েও ভয়াবহ পরিণতি হতে পারে। সাবধান থাকবেন।

তিনি বলেন, আপনাদের সবার নামে না, দু-একজনের নামে অভিযোগ আছে। একটা এলাকায় একশ কর্মী আছে, দুজন হয়তো খারাপ, হয়তো বদমায়েশি ও অপকর্ম করে। বাকি ৯৮ জন কর্মী তো খারাপ না। সুতরাং দুজন লোকের জন্য বাকিদের কালিমালিপ্ত হতে দেওয়া যাবে না।

মির্জা আব্বাস বলেন, বিএনপিতে কোনো অপকর্মকারী, দুষ্কৃতকারী, চাঁদাবাজের জায়গা নেই, হবে না। কেন খারাপ লোকের জায়গা বিএনপিতে হবে না, এই কথাটা মনে রাখবেন।

ঢাকা মহানগর দক্ষিণের আহ্বায়ক রফিকুল আলম মজনুর সভাপতিত্বে ও সদস্যসচিব তানভীর আহমেদ রবিনের সঞ্চালনায় কর্মশালায় মহানগরের নেতারা বক্তব্য রাখেন।

আরএস