ধর্ষণের বিরুদ্ধে মহিলা জামায়াতের মানববন্ধন, পাঁচ দাবি

আমার সংবাদ ডেস্ক প্রকাশিত: মার্চ ১৫, ২০২৫, ০৪:৩৯ পিএম
ধর্ষণের বিরুদ্ধে মহিলা জামায়াতের মানববন্ধন, পাঁচ দাবি

ধর্ষণ নামক ব্যাধি থেকে মুক্তি পেতে পাঁচ দাবিতে এবং মাগুরার শিশুটিকে পাশবিক নির্যাতনের মাধ্যমে হত্যার প্রতিবাদে মানববন্ধন করেছে জামায়াতে ইসলামীর মহিলা শাখা। এ সময় পাঁচ দফা দাবিও জানান তারা।

শনিবার (১৫ মার্চ) জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে মানববন্ধনে ‘বেঁচে থাকা ও নিরাপত্তার অধিকার দাও’, ‘ধর্ষকদের প্রকাশ্য জনসম্মুখে ফাঁসি চাই, দিতে হবে’, ‘ধর্ষণ মামলা ৯০ দিনের মধ্যে নিষ্পত্তি কর, করতে হবে’, ‘ধর্ষণ মামলায় জামিন বিধান বাতিল কর, করত হবে’, ‘ধর্ষণ মামলায় এক বিধান, এক শাস্তি; ধর্ষককে ফাঁসি দিবি, দিতে হবে’- এই দাবিতে সহস্রাধিক উপস্থিত নারীর কণ্ঠে স্লোগান দিয়ে সরকারের কাছে জোর দাবি জানান।

মানববন্ধনে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর মহিলা বিভাগের সেক্রেটারি অধ্যাপক নুরন্নিসা সিদ্দিকা বলেন, মাগুরার ওই শিশুর হত্যা মামলার রায় এক সপ্তাহের মধ্যে দিতে হবে এবং আসামিদের মৃত্যুদণ্ড দিতে হবে। সব ধর্ষককে ফাঁসি দিতে হবে। ধর্মহীনতার চর্চা এবং নৈতিকতাহীন শিক্ষা মূল্যবোধের অবক্ষয়ের জন্য দায়ী, ইসলামি শিক্ষা ব্যবস্থা চালু এবং ধর্মীয় মূল্যবোধে জনগণকে উজ্জীবিত করতে হবে। আইনের যথাযথ প্রয়োগ করতে হবে। বিচারের দীর্ঘসূত্রিতা পরিহার করতে হবে। বিচারহীনতার সংস্কৃতি থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। ধর্ষণ মামলায় কারাদণ্ডের বিধান বাতিল করে শুধু মৃত্যুদণ্ডের (ফাঁসি) বিধান করতে হবে। ধর্ষকরা যুগে যুগে আইনের ফাঁক দিয়ে বেরিয়ে যাওয়ার কারণেই সমাজ থেকে ধর্ষণ নামক ব্যাধি দূর করা যায়নি।

তিনি বলেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ৯০ দিনের মধ্যে ধর্ষণ মামলা নিষ্পত্তি করার এবং জামিন বিধান বাতিল করার ঘোষণা দিয়েছে। আমরা এ ঘোষণার বাস্তবায়ন চাই। মাগুরার শিশুটিকে শুধু ধর্ষণ করা হয়নি হত্যাও করা হয়েছে। এই ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের সরকারের ঘোষণা ও আমাদের পাঁচ দাবির আলোকে বিচার করতে হবে। নতুবা নারী সমাজ কঠোর আন্দোলনে রাজপথে নেমে আসবে।

জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদের সদস্য অ্যাডভোকেট সাবিকুন্নাহার মুন্নী বলেন, বিগত স্বৈরাচার সরকারের ছত্রছায়ায় ধর্ষণের ঘটনা সমাজে বিস্তার করেছে। ছাত্রলীগ নেতা ধর্ষণের সেঞ্চুরি করে মিষ্টি বিতরণ করেছে কিন্তু আওয়ামী লীগ সরকার তার বিচার করেনি। এতেই স্পষ্ট আওয়ামী লীগ ধর্ষণের বিস্তার ঘটিয়েছেন।

অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রতি সমর্থনের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, এই মানববন্ধনের মাধ্যমে সরকারের কাছে নারী সমাজের পাঁচ দাবি তুলে ধরার অর্থ হচ্ছে সরকারকে জনস্বার্থে ও শান্তিপূর্ণ সমাজ গঠনে প্রয়োজনীয় কাজ দেখিয়ে দেওয়া। সরকার এই পাঁচ দাবি বাস্তবায়ন না করলেই নারী সমাজকে কঠোর আন্দোলনে যেতে হবে।

তিনি আরও বলেন, রাষ্ট্র সংস্কারের আগে মানুষের নৈতিকতার সংস্কার জরুরি। রাজনৈতিক দলগুলোর সংস্কার জরুরি। রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় অপরাধীরা বেরিয়ে যাওয়ার সংস্কৃতি থেকে বেরিয়ে না এলে রাষ্ট্র সংস্কারের সুফল পাওয়া যাবে না।

জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদের সদস্য নাজমুন্নাহার নীল বলেন, সমাজে মূল্যবোধ আর নৈতিকতার অভাব। তাই আমরা আর নীরব থাকতে পারি না। শিক্ষা ব্যবস্থায় নৈতিকতার কোনো উপাদান নাই। শিক্ষা ব্যবস্থায় ধস নামার কারণেই সমাজের আজ করুণ পরিণতি। আইন ও সালিশ কেন্দ্রের তথ্যানুযায়ী বিগত ১০ বছরে সাড়ে তিন হাজার শিশু ধর্ষণের মামলা হলেও একটি মামলারও বিচার হয়নি। তিনি সব ধর্ষণ মামলা দ্রুত বিচার আইনে নিষ্পত্তি করে ধর্ষকদের ফাঁসি দেওয়ার দাবি জানান।

মানববন্ধনে মহিলা বিভাগের সেক্রেটারি অধ্যক্ষ নূরুন্নিসা সিদ্দিকার পক্ষ থেকে দাবি পেশ করা হয়। 

দাবিগুলো হলো:

১. মাগুরার ওই শিশুটিকে যারা হত্যা করেছে তাদের বিচার এক সপ্তাহের মধ্যে সম্পন্ন করতে হবে এবং ফাঁসি কার্যকর করতে হবে।
২. সব ধর্ষকের ফাঁসি দিতে হবে।

৩. বিচারের দীর্ঘ সূত্রিতা বিচারহীনতার নামান্তর। এক মাসের মধ্যে হত্যা ও ধর্ষণের বিচার এবং রায় কার্যকর করতে হবে।
৪.নৈতিকতাহীন শিক্ষা এবং সামাজিক অবক্ষয়ের মূল কারণ অনৈতিকতা। এটা দূর করার জন্য ইসলামি শিক্ষা ব্যবস্থা চালু করতে হবে এবং ইসলামি সামাজিক মূল্যবোধে জনগণকে উদ্বুদ্ধ করতে হবে।
৫. এদেশের শতকরা ৮৭ ভাগ মুসলমান। এখানে কোরআনের আইন বাস্তবায়ন হলে ধর্ষণ ও হত্যার অপরাধ কমতে বাধ্য। তাই আমরা কোরআনের আইন বাস্তবায়ন চাই।

মানববন্ধনে উপস্থিত ছিলেন জামায়াতে ইসলামী মহিলা বিভাগের সহকারী সেক্রেটারি সাঈদা রুম্মান ও মার্জিয়া বেগম, কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদের সদস্য রোজিনা আখতার, আয়েশা সিদ্দিকা পারভীন, সালমা সুলতানা, ইরানি আখতার, মাহবুবা জাহান, খোন্দকার আয়েশা সিদ্দিকা, সুফিয়া জামালসহ মহানগর উত্তর ও দক্ষিণের দায়িত্বশীল নেতারা।

আরএস