জ্বিলহজ্ব মাসের প্রথম ১০ দিনের নেক আমল

মো. মাসুম বিল্লাহ প্রকাশিত: জুন ২৯, ২০২২, ০৫:৩৫ পিএম
জ্বিলহজ্ব  মাসের প্রথম ১০ দিনের  নেক আমল

হজের মাসের প্রথম দশকের করণীয় ও নেক আমল

হজের মাসের প্রথম দশকের করণীয় ও নেক আমল
জিলহজ মাসের প্রথম দশ দিনের নেক আমল করার মতো অধিক প্রিয় আল্লাহর কাছে আর কোনো আমল নেই। হাদিসের এমন ঘোষণার পর উম্মতে মুসলিমার মানসিক অবস্থা এমন যে, সব সময় নিজেদের নেক আমলে নিয়োজিত রাখবে। তাহলে হজের মাসের প্রথম দশকে মুমিন মুসলমানের করণীয় ও নেক আমলগুলো কী?

হজের মাসের প্রথম ১০ দিন সম্পর্কে মহান আল্লাহ তাআলা সময়ের কসম করেছেন। এ কসমের মাধ্যমে এ দশকের মর্যাদা ও ফজিলত যে বেশি তা বুঝিয়েছেন। এই দশ দিন হচ্ছে বছরের সর্বোত্তম দশ দিন। স্বয়ং আল্লাহ তাআলা কুরআন মজিদে এই দশকের রজনীগুলোর শপথ করে বলেছেন-
‘ভোর বেলার কসম! আর কসম দশ রাতের!’ (সুরা ফজর : আয়াত ১-২)

সুতরাং হজের মাসের প্রথম দশকের প্রতিটি মুহূর্ত ও সময়কে সঠিকভাবে কাজে লাগানোর মধ্যেই সফলতা বিদ্যমান। হজের মাসের প্রথম দশ দিনের নেক আমলের মর্যাদা সম্পর্কে হাদিসে এসেছে-
হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘জিলহজ মাসের প্রথম দশ দিনের নেক আমল করার মতো অধিক প্রিয় আল্লাহর কাছে আর কোনো আমল নেই। তাঁরা জিজ্ঞাসা করলেন, ‘জিহাদও কি (উত্তম) নয়? নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, জিহাদও নয়। তবে সে ব্যক্তির কথা ছাড়া যে নিজের জান ও মালের ঝুঁকি নিয়েও জিহাদে যায় এবং কিছুই নিয়ে ফিরে আসে না।’ (বুখারি)

জিলহজ মাসের প্রথম ১০দিনকে ‘আশরায়ে জিলহজ’ বলা হয়। অধিকাংশ ওলামায়ে কেরামের মতে পুরো বছরের সর্বশ্রেষ্ঠ ‘দশক’ হল আশরায়ে জিলহজ। রমজানের শেষ দশকের চেয়েও যার ফজিলত ও গুরুত্ব বেশি। কেননা জিলহজের এই প্রথম দশকে এমন দুইটি ইবাদত রয়েছে যা পুরো বছরের অন্য কোনো সময় আদায় করা সম্ভব নয়। এমনকি রমজানেও নয়। তাহলো- হজের নিয়তে বায়তুল্লাহ ও আরাফার ময়দানে গমন এবং আল্লাহর জন্য নির্ধারিত (১০, ১১ ও ১২ জিলহজ) কুরবানি। এই দুইটি ইবাদতের জন্য আল্লাহ তাআলা আশরায়ে জিলহজকেই নির্ধারিত করেছেন।

এই দুইটি ইবাদতই বছরের অন্য কোনো দিন আদায় করা সম্ভব নয়। সে কারণে রমজানের শেষ দশকের চেয়ে আশরায়ে জিলহজের হজ ও কুরবানির রয়েছে বাড়তি ফজিলত।

হজের মাসের করণীয় ও নেক আমল
১. আল্লাহকে অধিক স্মরণ করা। (সুরা হজ : আয়াত ২৮)
২. অধিক পরিমাণে নেক আমল করা। (বুখারি ও মুসলিম)
৩. পাপকাজের দিকে ধাবিত না হওয়া। (বুখারি ও মুসলিম)
৪. সামর্থ্য থাকলে হজ পালন করা। (বুখারি ও মুসলিম)
৫. সামর্থ্য থাকলে কুরবানি করা। (সুরা কাউছার : আয়াত ২ ও তিরমিজি)

৬. কুরবানি করার ইচ্ছাপোষণকারী ব্যক্তির জন্য এ ১০ দিন নখ, চুল ইত্যাদি না কাটা। (মুসলিম)
৭. বেশি বেশি তাকবির, তাহমিদ ও তাহরিল পড়া। তাহলো-
اللَّهُ أَكْبَرُ اللَّهُ أَكْبَرُ لَا إلَهَ إلَّا اللَّهُ وَاَللَّهُ أَكْبَرُ اللَّهُ أَكْبَرُ وَلِلَّهِ الْحَمْدُ
উচ্চারণ : ‘আল্লাহু আকবর, আল্লাহু আকবর; লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু; ওয়াল্লাহু আকবর, আল্লাহু আকবর; ওয়ালিল্লাহিল হামদ।’
অর্থ : ’আল্লাহ মহান, আল্লাহ মহান; আল্লাহ ছাড়া কোনো ইলাহ নেই; আল্লাহ মহান, আল্লাহ মহান; সব প্রশংসা মহান আল্লাহ জন্য। (বুখারি)

৮. আরাফার দিন (৯ জিলহজ) ফজর থেকে ঈদের চতুর্থ দিন (১৩ জিলহজ) আসর পর্যন্ত এই ২৩ ওয়াক্ত প্রত্যেক ফরজ নামাজের পর নারী-পুরুষ সবার জন্য এ তাকবিরে তাশরিক ১ বার পাঠ করা আবশ্যক। (বুখারি)

৯. ইয়াওমে আরাফা তথা হজের দিন রোজা পালন করা। (মুসলিম)
১০. ঈদের নামাজ ও ঈদের দিনের সুন্নাত কাজগুলো পালন করা।
১১. ঈদের নামাজের পর আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য পশু কুরবানি করা।

মনে রাখতে হবে
রমজানের লাইলাতুল কদরের সমতুল্য আশরায়ে জিলহজের নেক আমল ও করণীয় শ্রেষ্ঠ ইবাদত। এটা হজরত জাবের রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা থেকে সুস্পষ্ট। তিনি বলেছেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন-
‘আশরায়ে জিলহজের দিনের চেয়ে কোনো দিনই আল্লাহর কাছে উত্তম নয়।’ (ইবনে হিব্বান)

জিলহজ্বের প্রথম দশকের মধ্যে শেষ দু’দিন নবম তারিখ ও দশম তারিখ হল পুরো বছরের সর্বোৎকৃষ্ট দিন। যাকে হাদিসের ভাষায় ইয়াওমে আরাফা ও ইয়াওমে নাহর বলা হয়। (মুসনাদে আহমদ)

আশরায়ে জিলহজের আরও আমল
কুরআন-সুন্নাহে আশরায়ে যিলহজ্বের এই আলাদা গুরুত্ব ও বৈশিষ্ট্যের দরুণ এ দশটি দিন হল আল্লাহর নৈকট্য অর্জনের ভরপুর মৌসুম। এই দিনগুলোতে করা ইবাদত-বন্দেগী আল্লাহর নিকট সর্বাধিক প্রিয়।
হজরত ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহ আনহু হতে বর্ণিত রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন- ‘আশরায়ে জিলহজের নেক আমলের চেয়ে আল্লাহর নিকট অধিক প্রিয় অন্য কোনো দিন নেই।’ (বুখারি, মুসনাদে আহমদ)

পরিশেষে...
এই দশ দিনের যে কোনো আমল চাই নফল নামাজ-রোজা হোক বা জিকির-তাহাজ্জুদ, তা আল্লাহর নিকট খুবই প্রিয় ও অতি পছন্দনীয়। তাই যে কোনো নফল ইবাদত যেমন নামাজ-রোজা, জিকির-তাহাজ্জুদ ও দান-খয়রাত ইত্যাদি এই দশ দিনে করা হলে তার ফজিলত ও মর্যাদা বছরের অন্য যে কোনো সময়ের চেয়ে অনেক বেশি পাওয়া যায়। আল্লাহ তাআলা আশারায়ে জিলহজের ইবাদতে মনোযোগী হওয়ার তাওফিক দান করুন। আমিন।