হজরত নূহ ও লুত আলাইহিস সালামের স্ত্রীদের জাহান্নামের অধিবাসী বলা হয়েছে। আবার ফেরাউনের স্ত্রী হজরত আছিয়াকে মুমিন নারীদের জন্য উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত হিসেবে উল্লেখ করে জান্নাতি বলা হয়েছে। বিশেষ দুটি গুণের কারণে বিবাহিত ঈমানদার নারীরা পাবে জান্নাত। গুণ দুটি কী?
বিবাহিত ঈমানদার নারীরা বিশেষ ২টি গুণের কারণে পাবে চিরস্থায়ী জান্নাত। তাদের জন্য জান্নাতের মধ্যে নির্মাণ করা হবে আলাদা ঘর। যেখান তারা আল্লাহর দিদারও পাবে। নারীদের বিশেষ গুণ দুটি হলো স্বামীর ব্যাপারে আমানতদারিতা ও কল্যাণ কামনা করা। তাহলো-
১. স্বামীর দোষা প্রচার না করা তার প্রশংসা ও সহযোগিতা করা। অর্থাৎ অন্য মানুষের কাছে স্বামী দোষ বা কুৎসা বলে বেড়ানো থেকে বিরত থাকা।
২. স্বামীকে অভিশাপ না দিয়ে তাদের জন্য কল্যাণে দোয়া করা। অর্থাৎ স্বামীর জন্য বদদোয়া বা তাদের কথা ও কাজের অকল্যাণ কামনা না করা।
স্ত্রীরা কারণে-অকারণে স্বামীদের সঙ্গে এ দুটি কাজই বেশি করে থাকে। সামান্য কারণেই স্বামীকে দোষারোপ করে কিংবা কথায় কথায় অভিশাপ দিয়ে থাকে। যা কোনোভাবেই কাম্য নয়।
কেননা এ দুইটি কারণই একজন ঈমানদার নারীকে নিশ্চিত জাহান্নামের দিকে ঠেলে দেয়। আল্লাহ তাআলা কুরআনে পাকে পয়গাম্বর নূহ ও লূত আলাইহিস সালামের স্ত্রীদের কথা উল্লেখ করে বলেন-
‘আল্লাহ অবিশ্বাসীদের জন্য নূহ ও লূতের স্ত্রীদের দৃষ্টান্ত তুলে ধরেছেন; তারা আমার দুই নেককার বান্দার স্ত্রী ছিল। কিন্তু তারা তাদের স্বামী সঙ্গে খেয়ানত করেছিল। তারা (নূহ ও লূত আলাইহিস সালাম) আল্লাহর মোকাবেলায় তাদের (স্ত্রীদের) কোনো কাজেই আসতে পারেনি। দুই জনকে বলে দেয়া হয়েছে যাও, জাহান্নামে প্রবেশকারীদের সঙ্গে তোমরাও প্রবেশ কর।’ (সুরা তাহরিম : আয়াত ১০)
এ আয়াতে খেয়ানত বলতে নবীদের স্ত্রীরা ব্যভিচারে লিপ্ত হয়েছিল এটি বুঝানো হয়নি বরং তারা নবিদের সঙ্গে ঈমানের পথে হাটেনি বরং তারা নবিদের বিরুদ্ধে ইসলামের শত্রুদের সহযোগিতা করেছিল।
নবিদের কাছে যারা ঈমান নিতে আসতো তাদের তথ্য অন্যের কাছে দিয়ে দিতো। নবিদের ব্যাপারে লোকদের বলে বেড়াতো- এ লোক একজন পাগল। তারা তাদের স্বামী নামে চোগলখুরী করতো। তাদের নামে কুৎসা রটনা বা বদনাম বলে বেড়াতো। যার ফলে নবীদের সঙ্গে সংসার করা সত্বেও তারা জাহান্নামী।
পক্ষান্তরে আল্লাহ তাআলা বিশ্বাসীদের (নারীদের) উদ্দেশ্যে ফেরাউনের স্ত্রী হজরত আসিয়ার দৃষ্টান্ত তুলে ধরেছেন। যিনি ফেরাউন ও তার বাহিনীর অত্যাচারে আল্লাহর সাহায্য চেয়েছেন ঠিকই ফেরাউনের ব্যাপারে কোনো অভিযোগ বা বদদোয়া করেনি। আবার তার কোনো দোষও বলে বেড়াননি। আল্লাহ বলেন-
‘আল্লাহ তাআলা বিশ্বাসীদের জন্য ফেরাউনের স্ত্রীর (আসিয়া) দৃষ্টান্ত উপস্থাপন করেছেন। যখন সে দোয়া করলো- হে আমার রব! আমার জন্য তোমার কাছে জান্নাতে একটি ঘর বানিয়ে দাও। আমাকে ফেরাউন ও তার খারাপ কাজ-কর্ম থেকে রক্ষা করো এবং আমাকে অত্যাচারি সম্প্রদায় থেকে রক্ষা করো।’ (সুরা তাহরিম : আয়াত ১১)
এ আয়াতের আলোকে বুঝা যায় যে, ফেরাউনের স্ত্রী আসিয়া স্বামী অবিশ্বাসী হওয়া সত্ত্বেও তার ব্যাপারে বদদোয়া করেনি এবং তার কোনো দোষও বর্ণনা করেনি বরং তার অত্যাচার ও দুষ্কর্ম থেকে উদ্ধার হওয়ার আবেদন করেছেন। আল্লাহ তাআলা স্বামীদের অধিকারের ব্যাপারে বিশ্বাসী নারীদের জন্য এ আয়াত তুলে ধরেছেন।
এ আয়াতের তাফসিরে এসেছে, ফেরাউনের স্ত্রীর নাম ছিল আসিয়া। তিনি হজরত মুসা আলাইহিস সালামের আহ্বানে ঈমান এনেছিলেন। ফেরাউন তার হাত ও পায়ে পেরেক দিয়ে আটকিয়ে মাথার ওপ গরম তেল ঢেলে দিয়েছিলেন। যার ফলে তার মাথার চুল ও চামড়াগুলো ওঠে গিয়েছিল। সে সময় ফেরেশতারা তার সামনে জান্নাতের দৃশ্য তুলে ধরেছিলেন। ফলে ফেরাউনের শাস্তি তার কাছে সহজ হয়েগিয়েছিল। আর তখন তিনি আল্লাহর কাছে উল্লেখিত দোয়া করেছিলেন।
সুতরাং প্রত্যেক ঈমানদার নারীর উচিত যে, স্বামীর ব্যাপারে চোগলখুরী না করা। স্বামীদের দোষ বলে বেড়ানো থেকে বিরত থাকা। স্বামীর জন্য বদদোয়া বা অভিশাপ না দেয়া। বরং স্বামীর প্রতি কৃতজ্ঞতা জ্ঞপনের পাশাপাশি তাদের জন্য আল্লাহর কাছে দোয়া করা। তাদের প্রতি সন্তুষ্ট থাকা। ফলে তারা পাবে সুনিশ্চিত জান্নাত।
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহর সব নারীকে কুরআনে এ দুই আয়াত থেকে শিক্ষা গ্রহণ করে স্বামীদের আনুগত্য করার তাওফিক দান করুন। সব সময় স্বামীদের পাশে থেকে তাদের কল্যণমূলক কাজে সহযোগিতা করার তাওফিক দান করুন। আমিন।
আরইউ