আদর্শ পরিবার গঠন, জৈবিক চাহিদা পূরণ ও মানসিক প্রশান্তি লাভের প্রধান উপকরণ বিয়ে। বিয়ে মানুষের জীবন পরিশীলিত, মার্জিত ও পবিত্র করে তোলে। সৃষ্টির শুরুলগ্ন থেকেই বিয়ের বিধান পালন হয়ে আসছে। প্রাপ্ত বয়স্ক ও সামর্থ্যবান হলে— কালবিলম্ব না করে বিয়ে করা প্রত্যেক মুসলমানের ঈমানি দায়িত্ব।
বিয়ের ক্ষেত্রে গোপনীয়তা পছন্দ করে না ইসলাম
বিয়ের ক্ষেত্রে ইসলামী শরিয়তে অভিভাবকের অভিমত গুরুত্বপূর্ণ। এক হাদিসে এ বিষয়ে তাগিদ দিয়ে আল্লাহর রাসুল (সা.) বলেন, ‘অভিভাবক ছাড়া বিয়ে সংঘটিত হয় না।’ -(তিরমিজি, হাদিস : ১১০১; আবু দাউদ, হাদিস : ২০৮৩) ঘোষণা না দিয়ে এবং আপনজনকে না জানিয়ে গোপনে বিয়ে করা অসামাজিক, অমানবিক ও লজ্জাজনক কাজ। এজন্য বিয়ের ক্ষেত্রে গোপনীয়তা পছন্দ করে না ইসলাম। ঘটা করে ঘোষণা দিয়ে বিয়ে করার কথা বলেছেন রাসুল সাল্লাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম। বিয়ের মতো গুরুত্বপূর্ণ বিধানের ক্ষেত্রে ইসলামের নির্দেশনা হলো, ‘বিয়ে করবে ঘোষণা দিয়ে।’-(মুসনাদে আহমাদ ৪/৫)
ঘোষণা দিয়ে বিয়ে করতে বলেছেন নবীজি
উম্মুল মুমিনীন হজরত আয়েশা সিদ্দিকা রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এক সাহাবির বিয়ের খবর শুনে নির্দেশ দেন, তোমরা বিবাহ অনুষ্ঠানকে প্রকাশ্যে ঘোষণা কর, মসজিদে এটিকে উদযাপন কর এবং দফ (এক ধরণের বাদ্যযন্ত্র বিশেষ) বাজাও।’ -(তিরমিজি, ১০৮৯)
আরেক হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, তোমরা বিয়ের বিষয়টি প্রকাশ কর এবং প্রস্তাবনার বিষয়টি গোপন রাখ। -(জামিয়িস সাগীর, ৯২২)
বিয়েতে অভিভাবকের অনুমতি আবশ্যক
নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরও বলেছেন, ‘যারা তার অভিভাবকের (বাবা-মা কিংবা বড়ভাই এক কথায় অভিভাবক) অনুমতি ছাড়া বিয়ে করবে তার বিবাহ বাতিল, তার বিবাহ বাতিল, তার বিবাহ বাতিল।’ -(তিরমিজি, ১০২১)
এই হাদিসের আলোকে অনেক ওলামায়ে কেরাম বলেন বিয়ের আগে ঘোষণা দেওয়া মানে `বিয়ের সাক্ষী রাখা` তাই এটি ওয়াজিবের পর্যায়ে। কেউ কেউ বলেন, ঘোষণা দেওয়া বিয়ে শুদ্ধ হওয়ার অন্যতম একটি শর্ত।
বিয়ের পরে স্বজনদের আপ্যায়ন
ইসলামে মূলত লুকিয়ে বিয়ে করাকে অবৈধ মনে করা হয়। বিয়ের আগে ঘোষণা দিয়ে, বিয়ের পর ছেলের পক্ষে আত্মীয়স্বজন, বন্ধুবান্ধব, শুভাকাঙ্ক্ষী ও গরিব-মিসকিনদের সামর্থ্য অনুযায়ী আপ্যায়নের (ওয়ালিমা) কথাও বলা হয়েছে ইসলামে।হজরত আনাস (রা.) বলেন, নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আবদুর রহমান ইবনে আওফের গায়ে হলুদ রঙের চিহ্ন দেখে জিজ্ঞেস করলেন, এটা কী? তিনি বললেন, আমি এক খেজুর আঁটির ওজন স্বর্ণ দিয়ে একজন মহিলাকে বিবাহ করেছি। রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ‘আল্লাহ তোমার বিবাহে বরকত দান করুক। একটি ছাগল দ্বারা হলেও তুমি ওয়ালিমা করো।’ (বুখারি: ৫১৫৫; মুসলিম ও মিশকাত, হাদিস নম্বর-৩২১০)। রাসুলুল্লাহ (সা.) নিজেও ওয়ালিমা করেছেন এবং সাহাবিদের করতে বলেছেন। রাসুলুল্লাহ (সা.) জয়নব বিনতে জাহাশ (রা.)-কে বিয়ে করার পরদিন ওয়ালিমা করেছিলেন। (বুখারি, হাদিস নম্বর-৫১৭০)। রাসুলুল্লাহ (সা.) ছাফিয়াহ (রা.)-কে বিয়ের পর তিন দিন যাবৎ ওয়ালিমা খাইয়েছিলেন। (মুসনাদে আবু ইয়ালা, হাদিস নম্বর-৩৮৩৪)।
গোপনে বিয়ে করলেও বন্ধন রক্ষা করতে হবে
হাদীসের আলোকে বুঝা যায় ইসলাম বিভিন্ন কল্যাণের কথা বিবেচনা করে ঘোষণা দিয়ে বিয়ে করার কথা বলেছে এবং গোপন বিয়েকে নিরুৎসাহিত করেছে। তবে নিন্দনীয় হলেও গোপনে বিয়ে করে ফেললে বিয়ে হয়ে যাবে। এবং এই বন্ধন রক্ষা করতে হবে। মনে রাখতে হবে এটি কোনো ছেলেখেলা নয়। বরং আল্লাহ তায়ালাপ্রদত্ত ও নির্দেশিত নারী-পুরুষের সারাজীবনের একটি চিরস্থায়ী পূত-পবিত্র বন্ধন।
আমারসংবাদ/আরইউ