একান্ত প্রাকৃতিক প্রয়োজনে প্রতিদিন প্রস্রাব করতে হয় একজন মানুষকে। চিকিৎসকদের মতে, একদিন অর্থাৎ ২৪ ঘণ্টায় একজন সুস্থ ও প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তির অন্তত ২ লিটার পানি পান করা উচিত।
সে অনুযায়ী সুস্থ ও প্রাপ্তবয়স্ক কারও জন্য দিনে ৬ থেকে ৮ বার প্রস্রাব করা স্বাভাবিক। প্রতিদিন ৪-১০ বার প্রস্রাব করাও স্বাস্থ্যকর ধরে নেওয়া যায়। কারণ এতে দৈনন্দিন কার্যকলাপে ব্যাঘাত ঘটে না। কিন্তু এর বেশি হলে তা নিয়ে চিন্তা করতে হবে।
আর প্রস্রাব করার পর প্রত্যেকবার পবিত্রতা অর্জন করা জরুরি। রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন, ‘আমি তোমাদের পিতার মতো। আমি তোমাদের সব কিছু শিক্ষা দিই। তোমরা বাথরুমে গেলে কিবলামুখী হয়ে বসবে না আবার কিবলাকে পেছনে রেখেও বসবে না। ডান হাতে ইস্তিনজা তথা পবিত্রতা অর্জন করবে না।’ রাসুলুল্লাহ (সা.) তিনটি ঢিলা ব্যবহার করতে বলতেন এবং গোবর ও হাড্ডি দ্বারা ঢিলা ব্যবহার থেকে বারণ করতেন। (আবু দাউদ, হাদিস : ৭)
ইমাম বুখারী রহ. বর্ণনা করেন, আব্দুল্লাহ ইবনে মাসঊদ রা. বলেন, নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম শৌচাগারে যাওয়ার সময় আমাকে তিনটি ঢিলা নিয়ে আসার নির্দেশ দিলেন। আমি দুইটি পাথর পেয়েছি। আরেকটা পাথর তালাশ করেছি, কিন্তু পাইনি। তাই আরেকটা গোবর-টুকরা নিয়ে এসেছি। তিনি পাথরদুটো নিয়েছেন, আর গোবর-টুকরাটা ফেলে দিয়েছেন এবং বলেছেন, গোবর নাপাক। (সহীহ বুখারী, হাদীস ১৫৬, সুনানে নাসায়ী, হাদীস ৪২; সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদীস ৩১৪; মুসনাদে আহমাদ, হাদীস ৩৯৬৬)
আরেক হাদিসে আবু বকর ইবনে আবী শায়বা রাহ. বর্ণনা করেন, মুআযা রহ. বলেন, আয়েশা রা. (মহিলাদের) বলেছেন, তোমরা আপন স্বামীদের নির্দেশ দাও, তারা যেন (ঢিলা ব্যবহারের পর) পানি দ্বারা পেশাব-পায়খানার বাকি চিহ্ন ধুয়ে ফেলে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এমনই করতেন। আমি তাদের (তোমাদের স্বামীদের) বলতে লজ্জাবোধ করছি। -(মুসান্নাফে ইবনে আবী শায়বা, হাদীস ১৬২৯, জামে তিরমিযী, হাদীস ১৯; সুনানে নাসায়ী, হাদীস ৪৬; সুনানে বায়হাকী ১/১০৬; কিতাবুল ইলাল, ইবনে আবী হাতেম ১/১৭০ (৯১); আল-ইসতিযকার ১/২০৫)
প্রস্রাব থেকে ভালোভাবে পবিত্রতা অর্জন না করাও কবীরা গুনাহের পর্যায়ভুক্ত। যা খ্রিস্টানদের একান্ত বৈশিষ্ট্য এবং যে কারণে কবরে শাস্তি পেতে হয়।
আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা. থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, একদিন নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দু’টি কবরের পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন। তখন তিনি বললেন, এ দু’ জন কবরবাসীকে শাস্তি দেয়া হচ্ছে। তবে তা আপাত দৃষ্টিতে কোন বড় অপরাধের জন্য নয়।
অন্য বর্ণনায় রয়েছে, বাস্তবে তা সত্যিই বড় অপরাধ অথবা বস্তুত উক্ত দু’টি গুনাহ থেকে রক্ষা পাওয়া তাদের জন্য কোন কষ্টকরই ছিলো না। তাদের এক জন নিজ প্রস্রাব থেকে ভালোভাবে পবিত্রতা অর্জন করতো না আর অপর জন মানুষের মাঝে চোগলখুরি করে বেড়াতো।
এরপর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম খেজুর গাছের একটি তাজা ডালকে দু’ভাগ করে প্রত্যেক কবরে একটি করে গেড়ে দিলেন। সাহাবারা জিজ্ঞাসা করলেন: হে আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম! আপনি কেন এমন করলেন? রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, হয়তো বা তাদের শাস্তি হালকা করে দেয়া হবে যতক্ষণ না ডাল দু’টি শুকাবে। (বুখারী, হাদিস ২১৮; মুসলিম, হাদিস, ২৯২)
আরেক হাদিসে আবূ হুরায়রাহ রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণিত, ‘তোমরা পেশাব থেকে সতর্ক থাকো। কারণ, কবরের অধিকাংশ শাস্তি তা থেকে। (মুসনাদে আহমাদ, ২৫২, দারাকুতনি, হাদিস : ৪৪৮)
প্রস্রাব থেকে ভালোভাবে পবিত্রতার্জন না করার মধ্যে এটিও যে, আপনি প্রস্রাব শেষেই দ্রুত উঠে গেলেন অথচ প্রস্রাবের কয়েক ফোঁটা এখনো থেকে গেছে যা পরবর্তীতে কাপড়কে নাপাক করে দিচ্ছে অথবা প্রস্রাবের পর পানি বা ঢিলা কিছুই ব্যবহার না করা।
এইচআর