‘শিশুদের ইন্টারনেটে নিরাপদ রাখতে সম্মিলিত উদ্যোগ জরুরি’

মো. মাসুম বিল্লাহ প্রকাশিত: মে ২২, ২০২৩, ০৬:৩৭ পিএম
‘শিশুদের ইন্টারনেটে নিরাপদ রাখতে সম্মিলিত উদ্যোগ জরুরি’

বর্তমান তথ্য প্রযুক্তির এই যুগে ইন্টারনেটের বিশাল জগতে শিশুদের নিরাপদ রাখার জন্য সম্মিলিত উদ্যোগ জরুরি। ভবিষ্যত প্রজন্মকে প্রযুক্তি সর্ম্পকে অন্ধকারে না রেখে ছোটবেলা থেকে স্কুল পর্যায়ে শিক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকদের প্রযুক্তির ক্ষতিকর বিষয়সমূহ সর্ম্পকে সচেতন করতে হবে।

সোমবার (২২ মে) বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি)-এর প্রধান সম্মেলন কক্ষে শিশুদের নিরাপদ ইন্টারনেট নিশ্চিত সংক্রান্ত এক কর্মশালায় এমন মন্তব্য করেন বক্তারা।

বিটিআরসি‘র সহায়তায় সিসেমি ওয়ার্কশপ বাংলাদেশ তথা সিসিমপুর আয়োজিত কর্মশালায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিটিআরসি’র চেয়ারম্যান (সিনিয়র সচিব) শ্যাম সুন্দর সিকদার।

অনুষ্ঠানে ইন্টারনেটে বাংলাদেশে শিশুদের সার্বিক অবস্থা নিয়ে একটি গবেষণা তথ্য তুলে ধরা হয়। সিসেমি ওয়ার্কশপ বাংলাদেশের উদ্যোগে গবেষণাটি করে গবেষণা প্রতিষ্ঠান উন্নয়ন সমন্বয়। গবেষণায় প্রাপ্ততথ্য অনুযায়ী,  ইন্টারনেটে প্রাক-প্রাথমিক পর্যায়ের কনটেন্ট নেই বললেই চলে, ফলে শিশুরা বেশিরভাগ ক্ষেত্রে মানহীন, ঝুঁকিপূর্ণ এবং তাদের জন্য উপযুক্ত নয় এমন কনটেন্ট দেখে। শিশুদের ইন্টারনেটে নিরাপদ রাখতে তাদের জন্য উপযোগী শিক্ষণীয় ও মানসম্পন্ন কনটেন্ট বাড়ানোর বিষয়টি জোর দেওয়া হয় গবেষণায়।

কর্মশালয় স্বাগত বক্তব্যে বিটিআরসির সিস্টেমস এন্ড সার্ভিসেস বিভাগের মহাপরিচালক ব্রিগে. জেনা. মো. নাসিম পারভেজ বলেন, নিয়ন্ত্রক সংস্থা হিসেবে বিটিআরসি টেলিযোগাযোগ খাতে লাইসেন্স প্রদানের পাশাপাশি নিরাপদ ইন্টারনেট নিশ্চিতেও কাজ করছে। ফেসবুক, ইউটিউব, টিকটকসহ বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের সঙ্গে বিটিআরসি যোগাযোগ অব্যাহত রাখছে এবং প্রতি তিনমাস পর পর উক্ত প্রতিষ্ঠানসমূহের সঙ্গে সভা আহ্বানের মাধ্যেমে সাইবার জগতে বিদ্যমান সমস্যাগুলো তুলে ধরা হচ্ছে।

তিনি আরো উল্লেখ করেন, সম্প্রতি প্রকাশিত বাংলাদেশ সাইবার অপরাধ প্রবণতা-২০২৩ প্রতিবেদন অনুযায়ী সাইবার অপরাধের বেশি শিকার নারী ও শিশুরা এবং ভুক্তভোগীদের ১৪.৮২ শতাংশের বয়সই ১৮ বছরের নিচে, যা ২০১৮ সালের জরিপের তুলনায় ১৪০ দশমিক ৮৭ শতাংশ বেশি।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে বিটিআরসির চেয়ারম্যান (সিনিয়র সচিব) শ্যাম সুন্দর সিকদার বলেন, বিটিআরসিতে সাইবার সিকিউরিটি সেল চালু করা হয়েছে, উক্ত সেলের মাধ্যমে বিভিন্ন সাইবার অপরাধে শিকার ভুক্তভোগীদের সহায়তা করা হয়।

ভুক্তভোগী অধিকাংশ নারী-শিশু লোকলজ্জার ভয়ে অভিযোগ করে না উল্লেখ করে তিনি বলেন, আইএসপি অপারেটরসমূহ বাসাবাড়িতে ইন্টারনেট সংযোগ প্রদানের সময় অভিবাবকদের প্যারেন্টাল গাইডলাইনস প্রদান করলে সচেতনতা বাড়বে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে গিয়ে শিক্ষার্থীদের সচেতন করতে পারলে তা ফলপ্রসু হবে বলেও মনে করেন তিনি।

অনুষ্ঠানে লিগ্যাল এন্ড লাইসেন্সিং বিভাগের কমিশনার আবু সৈয়দ দিলজার হোসেন বলেন, শিশুদের মানসিক উন্নয়ন ও সচেতন করতে পারিবারিক বন্ধন সুদৃঢ় করা জরুরি।

শিশুরা ক্রমশ ইন্টারজগতে আসক্ত হয়ে পড়ছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমকে শৃঙ্খলার মধ্যে নিয়ে আসতে বিটিআরসি ওটিটি গাইডলাইনস প্রণয়নে কাজ করছে। শিশুদের নিরাপদ ভবিষ্যদ গড়ার দায় আমাদের সকলের ওপর জানিয়ে তিনি আরো বলেন, শিশুরা যাতে ডিজিটাল ওয়ার্ল্ডে আসক্ত না থেকে প্রকৃতি ও গ্রামীণ পরিবেশের সাথে যোগসূত্র স্থাপন করতে পারে সে বিষয়ে সচেতন হতে হবে।

বিটিআরসি’র স্পেকট্রাম বিভাগের কমিশনার প্রকৌশলী শেখ রিয়াজ আহমেদ বলেন, শিশুদের নিরাপদ ইন্টারনেট রাখতে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাসহ বিভিন্ন দেশে প্রণীত গাইডলাইন অনুসরণের পাশাপাশি তথ্যপ্রযুক্তি খাতে নিয়োজিত আইএসপপি, মোবাইল অপারেটরসহ অন্যান্য সংস্থার সমন্বয়ে কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে ।

কমিশনের অর্থ, হিসাব ও রাজস্ব বিভাগের কমিশনার ড. মুশফিক মান্নান  চৌধুরী বলেন, প্রযুক্তির প্রসারের সঙ্গে সঙ্গে সাইবার জগতে অপরাধের ধরণও বদলেছে। শিশুদের জন্য নিরাপদ ইন্টারনেট নিশ্চিতে গবেষণার মাধ্যমে এ সংক্রান্ত বাস্তব পরিস্থিতি তুলে আনার পরামর্শ দিয়ে তিনি বলেন, সাইবার জগত নিরাপদ রাখতে সচেতনতামুলক কার্যক্রম গ্রহণ করতে হবে।

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে সিসেমি ওয়ার্কশপ বাংলাদেশের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ শাহ আলম বলেন, সাইবার জগতের বিশাল পরিসরে শিশুদের নিরাপদ রাখতে অভিবাবকদের সচেতন করতে হবে। সেইফ ইন্টারনেট ফর আর্লি চাইল্ডহুড ডেভেলপমেন্ট প্রকল্পের মাধ্যমে সিসিমপুর সেই কাজটি করছে।

সভাপতির বক্তব্যে বিটিআরসির ভাইস-চেয়ারম্যান প্রকৌশলী মো. মহিউদ্দিন আহমেদ বলেন, আগামী দিন সারা পৃথিবী প্রযুক্তির দিকে অগ্রসর হচ্ছে। তাই শিশু-কিশোরদের সাইবার জগত সর্ম্পকে জানার পথকে অবরুদ্ধ না রেখে প্রযুক্তি জ্ঞান অর্জনের পথ খোলা রাখতে হবে। সচেতন না থাকায় প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে হাইস্কুল পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের ওপর  ইন্টারনেটের ক্ষতিকর প্রভাব পড়ছে জানিয়ে তিনি বলেন, ইন্টারনেটের খারাপ প্রভাব থেকে বেরিয়ে আসতে হলে অভিবাবকদের সর্বপ্রথম এগিয়ে আসতে হবে। সন্তানদের অভিবাবক বিশেষ করে মায়েদের সচেতন করা জরুরি বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

সিসেমি ওয়ার্কশপ বাংলাদেশের ডিরেক্টর আবু সাইফ আনসারী (প্রোগ্রাম এন্ড বিজনেস ডেভেলপমেন্ট) এর সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত কর্মশালায় অন্যান্যদের মধ্যে বিটিআরসি‘র প্রশাসন বিভাগের মহাপরিচালক আবদুল্লাহ আাল মামুন, ইঞ্জিনিয়ারিং এন্ড অপারেশন্স বিভাগের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. এহসানুল কবীর, সচিব (বিটিআরসি) মো. নুরুল হাফিজ, মোবাইল অপারেটর, ইন্টারনেট সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান, ইন্টারনেট সোসাইটি ফাউন্ডেশনসহ বিটিআরসি’র কর্মকর্তা ও বিভিন্ন সংস্থার প্রতিনিধিবৃন্দ অংশগ্রহণ করেন।

এআরএস