মাহমুদউল্লাহ ছিলেন বিপদের ত্রাণকর্তা

মো. মাসুম বিল্লাহ প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ১৬, ২০২২, ০৭:১৩ পিএম
মাহমুদউল্লাহ ছিলেন বিপদের ত্রাণকর্তা

মাহমুদউল্লাহ রিয়াদকে বলা হয় সাইলেন্ট কিলার। নিরবে নিভৃতে দলকে জিতিয়েছেন বহুবার। দেশের ক্রিকেটে তিনি অভিজ্ঞ খেলোয়ার। শুধু মুখের কথা নয় তার ক্যারিয়ারও তাই বলে। তার অধিনায়কত্বেই বাংলাদেশ সবচেয়ে বেশি টি-টোয়েন্টি ম্যাচ জিতেছে। ভেঙে যাওয়া স্বপ্নকে জুড়ে দিতেন জয় ছিনিয়ে এনে, জয়ের গল্প লিখে। চরম দুঃসময়েও আশার নিভু প্রদিপটা জ্বলে ওঠতো যোদ্ধা রিয়াদের ইস্পাত কঠিন মনবলে। তিন ফরম্যাটেই যিনি ছিলেন অটোচয়েজ। অথচ তিনিই নেই অস্ট্রেলিয়া বিশ্বকাপে। অভিজ্ঞ এ ক্রিকেটার বাদ পড়ায় ইতিমধ্যে সোস্যাল মিডিয়ায় ঝড় ওঠেছে।

মাহমুদউল্লাহ কতটা দায়িত্ব নিয়ে খেলতে পারেন, সেটির বড় প্রমাণ ২০১৮ সালের নিধাহাস ট্রফির শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ম্যাচটি। ম্যাচ জিততে শেষ ছয় ওভারে ৫৫ রান দরকার ছিল বাংলাদেশের। শেষ ওভারের পঞ্চম বলে ছক্কা মেরে মাহমুদউল্লাহ দলকে যখন জেতালেন, তার নামের পাশে ১৮ বলে ৪৩ রান!

টি-টোয়েন্টিতে বাংলাদেশকে ২৪টি ম্যাচে নেতৃত্ব দিয়েছেন মাহমুদউল্লাহ। এর মধ্যে ১২টিতেই জিতেছে বাংলাদেশ। অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহর জয়ের গড় ৫০ ভাগ।

২০০৭ সালের ১ সেপ্টেম্বর কেনিয়ার বিপক্ষে নাইরোবিতে টি-টোয়েন্টি ম্যাচে অভিষেক হয় রিয়াদের। এরপর দেখতে দেখতে কেটে গেছে ১৪টি বছর। এই ১৪ বছরে দলের অন্যতম ভরসা হওয়ার পাশাপাশি পেয়েছেন টি-টোয়েন্টি দলের অধিনায়কত্বের গুরুভার। খেলেছেন শতাধিক টি-টোয়েন্টি ম্যাচ। যেখানে আছে অপরাজিত ৬৪ রানের ক্যারিয়ার সেরা ইনিংস। বল হাতে ৬১ ইনিংসে শিকার করেছেন ৩১টি উইকেট। যেখানে রয়েছে তার ক্যারিয়ার সেরা ২৮ রানে তিন উইকেটের দুর্দান্ত পারফরম্যান্স। প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে ১০০টি টি-টোয়েন্টি ম্যাচ খেলার মাইলফলক স্পর্শ করেছেন মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ।

২০০৭ সালের ২৫ জুলাই শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে একদিনের আন্তর্জাতিক ম্যাচে অভিষেক হয় মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের। বাংলাদেশের পক্ষে ক্রিকেট বিশ্বকাপে প্রথম সেঞ্চুরি (১০৩) করার গৌরব অর্জন করেন তিনি। এ ছাড়াও প্রথম বাংলাদেশি ক্রিকেটার হিসেবে বিশ্বকাপে টানা দ্বিতীয় সেঞ্চুরি করার গৌরব অর্জন করেন তিনি।

২০০৯ সালের ৯ জুলাই আর্নোস ভ্যাল স্টেডিয়ামে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে অনুষ্ঠিত প্রথম টেস্টে তার টেস্ট অভিষেক ঘটে। সে ম্যাচে তিনি তৃতীয় বাংলাদেশি বোলার হিসেবে টেস্ট অভিষেকে পাঁচ উইকেট লাভ করেন এবং বাংলাদেশকে জয় এনে দেন।

২০১৫ সালের ৫ মার্চ স্কটল্যান্ডের বিপক্ষে গ্রুপ পর্বের চতুর্থ খেলায় তামিম ইকবালের সঙ্গে ১৩৯ রানে জুটি গড়েন মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। পরবর্তীতে সাকিব, মুশফিকের অনন্য নৈপুণ্যে ওই খেলায় বাংলাদেশ দল বিশাল রান তাড়া করে ৬ উইকেটের কৃতিত্বপূর্ণ জয়লাভ করে। এর ফলে বাংলাদেশ সফলভাবে একদিনের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে সর্বোচ্চ রান তাড়া করে বিজয়ী হয়।

২০১৫ সালের ৯ মার্চে অ্যাডিলেড ওভালে অনুষ্ঠিত গ্রুপ পর্বের পঞ্চম খেলায় ইংল্যান্ডের বিপক্ষে অভিষেক সেঞ্চুরি করেন রিয়াদ। এটি বিশ্বকাপের ইতিহাসে প্রথম বাংলাদেশি ক্রিকেটার হিসেবে বাংলাদেশের পক্ষে প্রথম সেঞ্চুরি করেন তিনি।

বাংলাদেশের পক্ষে বিশ্বকাপের যেকোনো উইকেটে মুশফিকুর রহিমকে সঙ্গে নিয়ে ১৪১ রানের সর্বোচ্চ জুটি গড়ার রেকর্ড মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের। ২০১৫ সালে একদিনের আন্তর্জাতিকে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে বাংলাদেশ দলগতভাবে সর্বোচ্চ রান তোলে। পরবর্তীতে রুবেল হোসেনের প্রশংসনীয় বোলিংয়ে (৪/৫৩) বাংলাদেশ ১৫ রানের ব্যবধানে জয়ী হওয়াসহ কোয়ার্টার ফাইনালে উন্নীত হয়। ওই খেলায় তিনি ম্যান অব দ্য ম্যাচের পুরস্কার লাভ করেন।

২০১৫ সালের ১৩ মার্চ সেডন পার্কে গ্রুপ পর্বে দলের সবশেষ খেলায় নিউজিল্যান্ডের সঙ্গে ১২৮ রান করে অপরাজিত থাকেন ও নিজস্ব দ্বিতীয় শতরান করেন। এ খেলায় তিনি বিশ্বকাপে ধারাবাহিকভাবে দুই খেলায় শতক হাঁকানোর গৌরব অর্জন করেন; যা এর আগে কোনো বাংলাদেশি খোলোয়াড় করতে পারেননি।

এতো অর্জনের পরও তিনি অস্ট্রেলিয়া টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ থেকে বাদ পড়লেন। আর এতেই ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন দেশের ক্রিকেট প্রেমীরা।

এদিকে, টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ দল থেকে মাহমুদউল্লাহকে বাদ দেওয়ার ব্যাপারে নির্বাচক মিনহাজুল আবেদীন নান্নু বলেছেন, ‘সাম্প্রতিক ফর্মহীনতা আর বয়স বিবেচনায়ই তাকে আসন্ন বিশ্বকাপ থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে। ক্রিকেটের সংক্ষিপ্ততম সংস্করণে নিজেদের ব্যর্থতা ঝেড়ে ফেলে নতুন করে শুরু করতে চায় বাংলাদেশ। এজন্য এশিয়া কাপের আগে স্মরণকালের দ্রুততম সময়ে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে টেকনিক্যাল কনসালট্যান্ট শ্রীধরন শ্রীরামকে। বিশ্বকাপের দলে কারা থাকছেন, বা না থাকছেন, কাদের নিয়ে বিশ্বকাপের পরিকল্পনা সাজানো হবে, সেসবই ঠিক করেছেন এই শ্রীরাম।

এ ব্যাপারে শ্রীধরন শ্রীরাম বলেন, ‘শুধু আসন্ন বিশ্বকাপ নয়, ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার জন্যই রিয়াদকে বাদ দেওয়া হয়েছে। পারফরম্যান্স বা পরিসংখ্যান নয়। আমি গুরুত্ব দিয়েছি ম্যাচের মধ্যে ক্রিকেটারদের ইমপ্যাক্টকে। এ কারণে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের স্কোয়াডে রিয়াদের পরিবর্তে অগ্রাধিকার পেয়েছে ইয়াসির আলী রাব্বি।

অবশ্য নির্বাচক বা কোচের এমন সিদ্ধান্তে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের স্ত্রী, জান্নাতুল কাওসার মিষ্টি। তিনি তার ফেসবুক স্ট্যাটাসে লেখেন, ‘এই দেশে যোগ্য লোকের যথাযথ মূল্যায়ন হয় না, হবেও না!’

এবি