অষ্টম টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ সুপার টুয়েলভ পর্বে আগামীকাল নিজেদের শেষ ম্যাচে শীর্ষ সারির দল পাকিস্তানকে হারাতে চায় বাংলাদেশ ক্রিকেট দল। আসরে এ পর্যন্ত নিজেদের পারফরমেন্সে উজ্জীবিত হয়ে আগামীকাল অ্যাডিলেড ওভালে পাকিস্তানের মত শীর্ষ দলকে হারাতে বদ্ধপরিকর বাংলাদেশ।
রোববার (৬ নভেম্বর) বাংলাদেশ সময় সকাল ১০টায় শুরু হওয়া ম্যাচটি সরাসরি সম্প্রচার করবে গাজী টিভি ও টি স্পোর্টস চ্যানেল।
এখন পর্যন্ত নেদারল্যান্ডস এবং জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে দু’টি ম্যাচ জিতেছে বাংলাদেশ। এবারের আসরটি বাংলাদেশের জন্য সেরা টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ। তবে শীর্ষ দলের বিপক্ষে জয় এখনও অধরা বাংলাদেশের। দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ১০৪ রানের বিশাল ব্যবধানে হারের পর গত ম্যাচে ভারতের বিপক্ষে জয়ের দ্বারপ্রান্তেই পৌঁছে গিয়েছিলো বাংলাদেশ।
যাইহোক উত্তেজনা, অনঅভিজ্ঞতাসহ আরো বিতর্কিত কিছু সিদ্ধান্তে ম্যাচটি পাঁচ রানে হেরে যায় বাংলাদেশ। তবে পাকিস্তানকে হারনোর আত্মবিশ্বাস যোগাতে সাহায্যকারী অনেক কিছুই ওই ম্যাচ থেকে পেয়েছে টাইগাররা।
২০০৭ সালে প্রথম টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে হারিয়েছিলো বাংলাদেশ। এই ইভেন্টে শীর্ষ দলের বিপক্ষে এটিই একমাত্র জয় টাইগারদের। এরপর দ্বিপাক্ষিক সিরিজ এবং অন্যান্য টুর্নামেন্টে বেশ কিছু বড় দলকে হারায়, তবে খুব বেশি নয়। কিন্তু ২০২১ বিশ্বকাপের পর থেকে কোনও শীর্ষ দলকে হারাতে পারেনি বাংলাদেশ। যা এই ফরম্যাটে টাইগারদের দুর্বলতাকে ফুটিয়ে তুলে।
শনিবার (৫ নভেম্বর) এখানে বাংলাদেশের টেকনিক্যাল পরামর্শক শ্রীধরন শ্রীরাম বলেন, ‘আমরা ভারতের বিপক্ষে প্রতিন্দ্বন্দিতা করেছি। আমরা ইতিমধ্যে দু’টো ম্যাচ জিতেছি এবং এটি আমাদের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ ইতিহাসের সেরা টুর্নামেন্ট। এটি নিয়ে ছেলেদের গর্ব করা উচিত এবং যে কোন দলকে হারাতে আমরা সত্যিই আত্মবিশ্বাসী।’
ভারতের বিপক্ষে বাংলাদেশের ম্যাচটি কিছু বিতর্কের জন্ম দিয়েছে। ভারতের তারকা ব্যাটার বিরাট কোহলির বিপক্ষে ফেক ফিল্ডিংয়ের অভিযোগ করেন সহ-অধিনায়ক নুরুল হাসান সোহান।
তার মতে ভারতকে পাঁচ রানের পেনাল্টি দেয়া যেত। এছাড়াও বৃষ্টির পর খেলা শুরু হওয়ার আগে মাঠটি ভালোভাবে শুকানোর অনুরোধ করেছিলো বাংলাদেশ। কিন্তু এসব অনুরোধ শুনেননি আম্পায়াররা।
শ্রীরাম বলেন, ভারতের ম্যাচে যা ঘটেছিল তা এখন অতীত এবং এখন পাকিস্তানের বিপক্ষে খেলায় মনোযোগ।
এখন পর্যন্ত এই ফরম্যাটে ১৭টি ম্যাচ খেলেছে বাংলাদেশ ও পাকিস্তান। এরমধ্যে ১৫ বার জিতেছে পাকিস্তান। বাংলাদেশের জয় ২টি। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে বাংলাদেশের বিপক্ষে পাঁচ ম্যাচের সবকটিতেই জিতেছে পাকিস্তান। এই বৈশ্বিক ইভেন্টে পাকিস্তানের বিপক্ষে কোনভাবেই বাংলাদেশের তুলনা করা যায়না।
পাকিস্তানের বিপক্ষে জিততে না পারার আত্মবিশ্বাসের অভাব থাকলেও, বিশ্বকাপের আগে নিউজিল্যান্ডে ত্রিদেশীয় সিরিজে প্রতিন্দ্বন্দিতার দু’বার হারতে হয়েছিলো বাংলাদেশকে। এবার এশিয়ার জায়ান্টদের হারাতে চান শ্রীরাম।
ত্রিদেশীয় সিরিজে পাকিস্তানের বিপক্ষে প্রথম খেলায় জয়ের ভালো সুযোগ ছিলো বাংলাদেশের। মিডল অর্ডার ব্যাটারদের ব্যর্থতায় ম্যাচটি ২১ রানে হেরেছিলো টাইগাররা। ফিরতি পর্বে ৬ উইকেটে ১৭৩ রান করার পরও বাজে বোলিংয়ের কারনে ম্যাচটি হারতে হয় টাইগারদের।
শ্রীরাম জানান, ভুল থেকে শিক্ষা নিয়েছে বাংলাদেশ এবং এবার নিজেদের উন্নতি দেখাতে প্রস্তুত তারা।
তিনি বলেন, ‘পাকিস্তান খুব ভালো দল। কিন্তু আমরা তাদের বিপক্ষে অনেক ম্যাচ খেলেছি। তারা আমাদের শক্তি সম্পর্কে সচেতন এবং আমরাও তাদের সম্পর্কে সচেতন। এটি দারুন একটি ম্যাচ হওয়া উচিত।’
পাকিস্তানকে বড় ব্যবধানে হারাতে পারলে গাণিতিকভাবে সেমিফাইনালে যেতে পারে বাংলাদেশ। অবশ্য এজন্য নিজেদের শেষ খেলায় জিম্বাবুয়ে ও নেদারল্যান্ডসের কাছে হারতে হবে ভারত বা দক্ষিণ আফ্রিকাকে।
এ বিশ্বকাপ পর্যন্ত বাংলাদেশের সাথে চুক্তি থাকছে শ্রীরামের। যদি সেমিফাইনালে না উঠতে পারে বাংলাদেশ, তবে এটাই হবে তার শেষ ম্যাচ। কেননা এখনো তার সাথে চুক্তি নবায়ন করেনি বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)।
চিরপ্রতিন্দ্বন্দ্বি ভারতের কাছে হার ও জিম্বাবুয়ের কাছে হতাশার হারের পর সেমিফাইনালের দৌঁড়ে টিকে থাকতে ম্যাচটি জিততে মরিয়া পাকিস্তানও। ভারত ও দক্ষিণ আফ্রিকার কেউ হারলে, সেমির আশা জাগবে পাকদের।
সব মিলিয়ে ১৪৩টি টি-টোয়েন্টি আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলেছে বাংলাদেশ। সেখানে ৪৯টি ম্যাচে জিতেছে, ৯১টিতে হেরেছে তারা। বাকি তিনটি ম্যাচ পরিত্যক্ত হয়।
বাংলাদেশ দল: সাকিব আল হাসান (অধিনায়ক), নাজমুল হোসেন শান্ত, সৌম্য সরকার, লিটন কুমার দাস, আফিফ হোসেন, ইয়াসির আলী চৌধুরি, মোসাদ্দেক হোসেন সৈকত, নুরুল হাসান সোহান, মেহেদি হাসান মিরাজ, তাসকিন আহমেদ, মুস্তাফিজুর রহমান, হাসান মাহমুদ, শরিফুল ইসলাম, নাসুম আহমেদ ও এবাদত হোসেন।
পাকিস্তান দল: বাবর আজম (অধিনায়ক), শাদাব খান (সহ-অধিনায়ক), আসিফ আলি, হায়দার আলি, হারিস রউফ, ইফতিখার আহমেদ, খুশদিল শাহ, মোহাম্মদ হাসনাইন, মোহাম্মদ নওয়াজ, মোহাম্মদ রিজওয়ান, মোহাম্মদ ওয়াসিম, নাসিম শাহ, শাহিন শাহ আফ্রিদি, শান মাসুদ ও ফখর জামান।
টিএইচ