ফুটবল বিশ্বকাপ; যাকে বলা হয় গ্রেটেস্ট শো অন দ্যা আর্থ। ২২তম ফুটবল বিশ্বকাপের জন্য প্রস্তুত মধ্যপ্রাচ্যের দেশ কাতার। আগামী ২০ নভেম্বও কাতার ও ইকুয়েডরের ম্যাচ দিয়ে পর্দা উঠছে এই ফুটবল যুদ্ধের। বিশ্বকাপের ২২ তম এই আসরে জমকালো সব আয়োজন করেছে মধ্যপ্রাচ্যের এই দেশটি। শুধু কাতারই নয়; পুরো বিশ্বকে মুড়ে রেখেছে ফুটবলের এই উম্মাদনা। তবে এই উম্মাদনা কী স্পর্শ করতে পারবে মোহাম্মদ সালাহ, সর্জিও রামোস, আর্লিং হ্যালান্ডদের মতো তারকাদের। ভাবা যায়! ক্লাব ফুটবল মাতিয়ে রাখে যেসব তারকারা, সেইসব তারকাদের দেখা যাবে না এবারের বিশ্বকাপে।
বর্তমান বিশ্বসেরা খেলোয়াড় আর্জেন্টাইন তারকা লিওনেল মেসি। মেসি; রোনালদো ও নেইমারদের বিশ্বকাপে দেখা গেলেও দেখা যাবে অন্যান্য তারকাদের। ঠিক এই মুহুর্তে লিভারপুল তারকা মোহামেদ সালাহকে বিশ্বের সেরা তারকাদের তালিকায় না রাখার কোনো কারণ অবশ্য নেই। লিভারপুলের হয়ে এই মৌসুমে ইংলিশ লিগের অন্যতম সেরা খেলোয়াড় তিনি।
নরওয়ের ২১ বছর বয়সী তারকা আর্লিং হালান্ড এখন রীতিমতো ম্যানচেস্টার সিটির গোলমেশিন। ইউরো চ্যাম্পিয়নশিপের সেরা খেলোয়াড় নির্বাচিত হয়েছিলেন জিয়ানলুইগি দোন্নারুমা। জ্লাতান ইব্রাহিমোভিচ, জর্গিনহো, মার্টিন ওডেগার্ড, লুইস দিয়াজ, জ্যান ওবলাক, রিয়াদ মাহরেজ; এরা প্রত্যেকেই নিজ নিজ জায়গায় বিশ্বের অন্যতম সেরা তারকা। তবে যারা ফুটবলকে ভালবাসেন; তাদের জন্য এই বিশ্বকাপটা হয়তো কিছুটা হতাশার। কারণ কাতারে দেখা যাবে না এই তারকাদের।
এক নজরে যেসব তারকাদের দেখা যাবে না এবারের বিশ্বকাপে :
ফিরমিনো (ব্রাজিল) : পাঁচবারের বিশ্বচ্যাম্পিয়ন ব্রাজিল। হট ফেভারিট হয়েই এবার বিশ্বমঞ্চে জায়গা করে নিয়েছে ব্রাজিল । তবে দল বিশ্বকাপ খেললেও দলে জায়গা হয়নি ফিরমিনোর। ব্রাজিলের অন্যতম সেরা এই তারকা মিস করবেন এবারের বিশ্বকাপ।
দিয়েগো জটা (পর্তুগাল) : লিভারপুলের অন্যতম তারকার খেলোয়াড় দিয়েগো জটা। ক্লাবের হয়ে দুর্দান্ত পারফরম্যান্স করা এই তারকার জায়গা হয়নি নিজ দেশ পর্তুগালের বিশ্বকাপ স্কোয়াডে।
পল পগবা (ফ্রান্স) : ইয়ুভেন্তুসের হয়ে দুর্দান্ত সময় পার করছেন ফ্রান্সের বিশ্বকাপ জয়ী ফুটবলার পল পগবা। তার দল এবারের বিশ্বকাপ খেলবে ফেভারিট হয়েই। তবে ভাগ্যের নির্মমতায় ইনজুরি বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে তার বিশ্বকাপ খেলায়। ইনজুরির কারণে এবারের বিশ্বকাপে দর্শক হয়েই দেখতে হবে নিজ দেশের খেলা।
থিয়াগো (স্পেন) : ২০১০ সালে প্রথমবারের মতো বিশ্বকাপ জিতেছিল স্পেন। স্পেন দলের অন্যতম খেলোয়াড় থিয়াগো। লিভারপুলের অন্যতম এই তারকা ফুটবলারের জায়গা হয়নি স্পেনের বিশ্বকাপ স্কোয়াডে।
কান্তে (ফ্রান্স) : চেলসির হয়ে মিডফিল্ডে দারুণ সময় পার করছেন কান্তে। গতবারের চ্যাম্পিয়ন ফ্রান্স দলে তার জায়গা হতে দেয়নি ইনজুরি। ইনজুরির কারণে এবারের বিশ্বকাপ মিস করবেন ফরাসি এই মিডফিল্ডার।
সার্জিও রামোস (স্পেন) : রক্ষণভাগে চিনের প্রাচীরের মতো দাঁড়িয়ে থাকেন সার্জিও রামোস। ফরাসি ক্লাব পিএসজিতেও তিনি দারুণ খেলছেন। তবে এই তারকা যে দল থেকে বাদ পড়বেন তা হয়তো কেউই ভাবেননি। তবুও বিশ্বকাপ দলে ডাক পাননি স্পেনের এই তারকা ডিফেন্ডারের।
টমরি (ইংল্যান্ড) : এবারের বিশ্বকাপের অন্যতম ফেভারিট দল ইংল্যান্ড। সেই দলেরই এক খেলোয়াড় টমরি। তবে তাকে রাখা হয়নি ইংল্যান্ড স্কোয়াডে। যে কারণে তাকেও দর্শক হয়ে এবারের বিশ্বকাপ দেখতে হবে গ্যালারিতে বসে।
হামেলস (জার্মানি) : জার্মানির এই ডিফেন্ডারকে কতজন চিনেন তা হয়তো বলা মুশকিল। তবে ফুটবল প্রেমীরা হয়তো ঠিকই চেনেন। জার্মানির বিশ্বকাপ স্কোয়াডে রাখা হয়নি এই ডিফেন্ডারকে।
ডি গিয়া (স্পেন) : ডি গিয়া; স্পেনের এই গোলকিপারকে কেই বা না চেনেন! বর্তমানে সেরা দশ গোলকিপারের তালিকা করা হলে স্পেনের এই গোলকিপারকে রাখতে বাধ্য। তবুও বিশ্বকাপ স্কোয়াডে জায়গা হয়নি অন্যতম সেরা এই গোলকিপারের।
মোহাম্মদ সালাহ (মিশর) : মোহাম্মদ সালাহ ফুটবল জগতের অন্যতম একজন তারকা খেলোয়াড়। তবে লিভারপুল এই তারকার দেশ মিশর জায়গা করে নিতে পারেনি বিশ্বকাপে। জিয়ানলুইগি দোন্নারুমা (ইতালি) : চারবারের বিশ্বচ্যাম্পিয়ন ইতালি।
ভাবা যায়; এবার নিয়ে টানা দ্বিতীয়বার বিশ্বকাপে জায়গা হলো না ইতালির। ইউরোজয়ী ইতালি রাশিয়ার পর কাতারেও বিশ্বকাপে জায়গা করে নিতে ব্যর্থ হয়েছে। তাই বিশ্বকাপে দেখা যাবে না ইউরো ২০২০-এর টুর্নামেন্ট সেরা নির্বাচিত হওয়া ইতালিয়ান গোলরক্ষক দোন্নারুমাকে। জ্যান অবলাক (স্লোভেনিয়া) : অ্যাতলেতিকো মাদ্রিদের স্লোভেনিয়ান গোলরক্ষক তার প্রজন্মেরই অন্যতম সেরাদের একজন। তবে জাতীয় দলে ভাগ্য তার খুব একটা ভালো নয়। স্লোভেনিয়া ইউরোপের কোনো ফুটবল পরাশক্তি নয়। যুগোস্লাভিয়া ভেঙে স্বাধীন হওয়ার পর তারা বিশ্বকাপেই খেলেছে মোটে দুবার। কাতার বিশ্বকাপের বাছাইপর্বে নিজ গ্রুপে চতুর্থ হয়েছে স্লোভেনিয়া। যার জন্য এবারের বিশ্বকাপে দেখা যাবে না এই তারকাকে।
আলেসান্দ্রো ফ্লোরেঞ্জি (ইতালি) : ইউরোজয়ী ইতালিকে ধরা হচ্ছিল কাতার বিশ্বকাপের অন্যতম ফেবারিট হিসেবে। দারুণ ভারসাম্যপূর্ণ দলটায় আছে সময়ের অন্যতম সেরা কিছু খেলোয়াড়। ২০২০ ইউরোর অন্যতম সেরা পারফর্মারকে দেখা যাবে না বিশ্বমঞ্চে। ডাভিড আলাবা (অস্ট্রিয়া) : রিয়াল মাদ্রিদের হয়ে লা-লিগা মাতাচ্ছেন আলাবা। অস্ট্রিয়ান তারকা বায়ার্ন মিউনিখের হয়ে সম্ভাব্য সবকিছু জিতে এখন রিয়াল মাদ্রিদের হয়ে মাতাচ্ছেন মাঠ। তবে এই তারকাকেও দেখা যাবে না এবারের বিশ্বকাপে। জর্জিও চিয়েলিনি (ইতালি): ইতালির আরেক তারকা খেলোয়াড় জর্জিও চিয়েলিনি। নিজের দেশ বিশ্বকাপে জায়গা করে নিতে না পারায় তাকেও দেখা যাবে না এবারের বিশ্বমঞ্চে। আর্তুরো ভিদাল (চিলি): টানা দ্বিতীয়বারের মতো বাছাইপর্ব উতরাতে পারেনি চিলি। তাই এবারও দেখা যাবে না বায়ার্ন মিউনিখ, জুভেন্টাস, বার্সেলোনা ও ইন্টার মিলানের হয়ে খেলা এই মিডফিল্ডারকে।
রিয়াদ মাহরেজ (আলজেরিয়া): আলজেরিয়ার এই তারাক ক্লাব ফুটবল মাতাচ্ছেন ম্যানচেস্টার সিটির হয়ে। ২০১৯ সালের আফকন বিজয়ী আলজেরিয়া ২০১৮-এর পর ২০২২ সালেও ব্যর্থ হয়েছে বিশ্বকাপ বাছাইপর্ব পার হতে। তাই বিশ্বকাপে দেখা যাবে না ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগের এই তারকাকে। আর্লিং হ্যালান্ড (নরওয়ে) : লিওনেল মেসি, ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো এবং নেইমারদের মতো খেলোয়াড়দের কাতারেই এখন ধরা হয় আর্লিং হ্যালান্ডকে।
বর্তমান বিশ্বের অন্যতম সেরা তরুণ প্রতিভাবান খেলোয়াড় হ্যালান্ড। ম্যান সিটির হয়ে দারুণ দারুণ সব গোল উপহার দিচ্ছে ফুটবল প্রেমিদের। তবে নরওয়ে বিশ্বকাপ নিশ্চিত করতে না পারায় হ্যালান্ডকে দেখা যাবে না বিশ্বকাপের মঞ্চে। জ্লাতান ইব্রাহিমোভিচ (সুইডেন) : ইব্রাহোমবিচ; সেরাদের সেরা এক ফুটবলার। তার দল সুইডেন বিশ্বকাপ নিশ্চিত করতে পারেনি। তাই তাকে দেখা যাবে বিশ্বকাপের মঞ্চে।
ফুটবলপ্রেমীদের অনেকের মনেই জায়গা করে নিয়েছেন এই তারকা ফুটবলাররা। অগনিত ফটবলপ্রেমীদের মধ্যে এই সব তারকা খেলোয়াড়দের ভক্তও হয়তো কোনো অংশে কম নয়। এইসব তারকা ফুটবলারদের ভক্তরা হয়তো বিশ্বকাপে মিস করবেন তাদের।
এবি