টানা ৩৬ ম্যাচ পর আর্জেন্টিনার হার

মো. মাসুম বিল্লাহ প্রকাশিত: নভেম্বর ২২, ২০২২, ০৬:১৫ পিএম
টানা ৩৬ ম্যাচ পর আর্জেন্টিনার হার

টানা ৩৬ ম্যাচ অপরাজিত থেকে অবশেষে হারল আর্জেন্টিনা! এশিয়ার দল সৌদি আরবের কাছে হারে তারা। শুরুতে পিছিয়ে পড়েও আলবিসেলেস্তেদের হারাল ২-১ গোলে, জন্ম দিল এবারের বিশ্বকাপের প্রথম অঘটনের।

অথচ শুরুর অর্ধটা বলছিল, ম্যাচটা বুঝি আর্জেন্টিনা জিততে যাচ্ছে হেসে খেলেই! শুরুতেই আক্রমণে ওঠেন মেসিরা, তার একটা শট রুখে দেন গোলরক্ষক ওয়াইস। তবে ১০ মিনিটে তার পেনাল্টিটা ফেরাতে পারেননি। মেসির গোলে এগিয়ে গিয়ে আর্জেন্টিনা আক্রমণে আরও শাণ দিতে থাকে।

২২ মিনিটে তার সূত্র ধরে আরও একবার বল জালে জড়ায় আলবিসেলেস্তেরা। তবে মেসির সেই দারুণ ফিনিশ গোলে রূপ পায়নি অফসাইডের কাটায়। লিওনেল স্ক্যালোনির দল আরও দুবার বল জড়িয়েছে সৌদির জালে। সেই দুই বারও আর্জেন্টিনার গোলের পথে কাঁটা হয়ে দাঁড়ায় অফসাইড।

প্রথমার্ধে খেলাটা শেষ করে দিতে পারেনি আর্জেন্টিনা। তারই মাসুলটা দেয় দ্বিতীয়ার্ধে।

আক্রমণাত্বক সৌদির ঝুলিতে ৬ হলুদ কার্ড
কাতার বিশ্বকাপের তৃতীয় দিনেই অঘটনের জন্ম দিল এশিয়ার দেশ সৌদি আরব। হট ফেভারিট দুইবারের বিশ্বচ্যাম্পিয়ন আর্জেন্টিনাকে ২-১ গোলে হারিয়ে এক প্রকার ইতিহাস গড়েছে সৌদি। খেলার শুরুর দিকে মাঠ শান্ত থাকলেও সময়ের ব্যবধানে পাল্টে যায় চিত্র। শেষ পর্যায়ে আক্রমণাত্বক হয়ে উঠে সৌদি আরব। আর্জেন্টিনার ৭ ফাউলের বিপরিতে ২১টি ফাউল করেছে সৌদির খেলোয়াড়েরা। যার করনে ৬জন খেলোয়াড়কে হলুদ কার্ড দেখানো হয়েছে।  

খেলার প্রমমার্ধে ১-০ গোলে এগিয়ে থাকলেও দ্বিতীয়ার্ধে দুই গোল হজম করে আলবিসেস্তেরা। সৌদির জালে ১৫টি শট নিয়েও এক গোলের বেশি করতে পারে নি মেসি-ডি মারিয়ারা। ১৫ শটের মধ্যে গোলপোস্টে ছিল ৬ টি শট। ৯টি কর্ণার থেকেও গোল পায়নি মেসির দল। বিপরিতে মাত্র দুটি কর্ণার পেয়েছে সৌদি। আর্জেন্টিনার ৭ ফাউলের বিপরিতে ২১টি ফাউল করেছে সৌদির খেলোয়াড়েরা। আর্জেন্টিনার ১০ অফসাইডের বিপরিতে সৌদির অফসাইড মাত্র একটি। ৫৯৫ টি পাসের মধ্যে ৫০৭ টি নির্ভুল পাস দিয়েছে আর্জেন্টিনা। ২৬৪ পাসের মধ্যে ১৭৯ নির্ভুল পাস দিয়েছে সৌদি। এদিকে সৌদির গোলকিপার আর্জেন্টিনার ৫ টি শট সেভ করেছেন। অন্যদিকে সৌদি আরবের ৬জন খেলোয়াড়কে হলুদ কার্ড দেখানো হয়েছে। বিপরিতে আর্জেন্টিনার কোনো খেলোয়াড় হলুদ কার্ড দেখেনি।

হেরেও মেসির ঝুলিতে জমা হল দুই রেকর্ড

আর্জেন্টাইন তারকা লিওনেল মেসি; রেকর্ড আর মেসি যেন পরস্পর একে অপরের পরিপূরক। মেসি মাঠে নামলেই যেন রেকর্ড। তবে রেকর্ড করেও আক্ষেপে পুড়ছে মেসি। তবুও নতুন ইতিহাস গড়লেন আর্জেন্টাইন অধিনায়ক। সর্বকনিষ্ঠ ফুটবলার হিসেবে পঞ্চম বিশ্বকাপে খেলছেন এ মহাতারকা। এছাড়া পঞ্চম খেলোয়াড় হিসেবে ৪টি বিশ্বকাপে গোল দেওয়ার রেকর্ডও গড়েন আর্জেন্টাইন অধিনায়ক। 

ম্যাচের দশম মিনিটে সফল স্পট কিক থেকে লক্ষ্যভেদ করেন তিনি। তাতেই রেকর্ড স্পর্শ করেন মেসি। আর্জেন্টিনার হয়ে প্রথম খেলোয়াড় হিসেবে চারটি বিশ্বকাপে গোল করলেন এই অধিনায়ক। এর আগে চারটি বিশ্বকাপে গোল দিয়েছেন পর্তুগালের ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো, ব্রাজিলিয়ান কিংবদন্তি পেলে এবং দুই জার্মান তারকা উই সিলার ও মিরাস্লাভ ক্লোসা। তবে এ চার তারকাই গোল দিয়েছেন টানা চারটি বিশ্বকাপে। 

এবার অবশ্য এ রেকর্ডটা এককভাবে নিজের করে নেওয়ার সুযোগ রয়েছে রোনালদোর। এদিন মাঠে নামার আগে চার জন খেলোয়াড় ছিলেন যারা পাঁচটি করে বিশ্বকাপ খেলেছেন। মেক্সিকোর আন্তনিও কারবাহাল, জার্মানির লোথার ম্যাথিউজ ও মেক্সিকোর রাফায়েল মার্কুয়েজ এতদিন ছিলেন এ তালিকায়। তাদের সঙ্গে যুক্ত হলেন মেসি। এছাড়া ইতালির জিয়ানলুইজি বুফনও ছিলেন পাঁচটি বিশ্বকাপে। তবে প্রথমবার মাঠে নামা হয়নি তার। পঞ্চম বিশ্বকাপ খেলাকালিন সময়ে বুফনের বয়স ছিল ৩৬ বছর, কারবাহাল ও ম্যাথিউজের ছিল ৩৭ বছর এবং মার্কুয়েজের ছিল ৩৯ বছর বয়স। যেখানে ৩৫ বছর বয়সেই এ রেকর্ডটি গড়লেন মেসি। বিশ্বকাপ যদি নির্ধারিত সময়ে অর্থাৎ জুন-জুলাইয়ে হতো, তাহলে বয়সটা আরও ছয় মাস কম থাকতো মেসির। সেক্ষেত্রে ৩৪ বছর বয়সেই রেকর্ডটা গড়তে পারতেন আর্জেন্টাইন অধিনায়ক। একই সঙ্গে দেশের হয়ে সবচেয়ে বেশি সংখ্যক বিশ্বকাপে খেলার রেকর্ডটিও করলেন মেসি। আর্জেন্টিনার খেলোয়াড়দের মধ্যে মেসির সমান ৪টি করে বিশ্বকাপে অংশ নিয়ে কিংবদন্তি দিয়াগো ম্যারাডোনা ও সাবেক সতীর্থ হ্যাভিয়ের মাসচেরানোর পাশে ছিলেন তিনি। 

এছাড়া আর্জেন্টিনার হয়ে বিশ্বকাপে সবচেয়ে বেশি ম্যাচ খেলার রেকর্ডের খুব কাছে রয়েছেন মেসি। যা মাঠে নামার পরই বিশ্বকাপের মঞ্চে ম্যাচ খেললেন ২০টি। আর্জেন্টিনার হয়ে সর্বাধিক ম্যাচ খেলেছেন সাবেক অধিনায়ক কিংবদন্তি দিয়াগো ম্যারাডোনা। বিশ্বমঞ্চে ২১টি ম্যাচ খেলেছেন তিনি। তবে জার্মানির লোথার ম্যাথিউজ সর্বোচ্চ ২৫টি ম্যাচ খেলেছেন বিশ্বকাপে।

 

আর্জেন্টিনা একাদশ: এমিলিয়ানো মার্টিনেজ, নাহুয়েল মোলিনা, ক্রিস্টিয়ান রোমেরো, নিকোলাস ওটামেন্ডি, নিকোলাস তাগলিয়াফিকো, রদ্রিগো ডি পল, লিয়ান্দ্রো পারদেস, আলেহান্দ্রো গোমেজ, লিওনেল মেসি, লাওতারো মার্টিনেজ ও অ্যাঞ্জেল ডি মারিয়া।

সৌদি আরব একাদশ: আল-ওয়াইস, আব্দুল হামিদ, আল-তামবাক্তি, আল-বুলাইহি, আল-শাহরানী, কান্নো, আল-মালকি, আল-শেহরি, আল-ফারাজ, আল বুরাইকান, আল-দাওসারী।

এবি