বিশ্বকাপের ফাইনাল খেলতে নামলে বেশ কয়েকটি রেকর্ড গড়বেন লিওনেল মেসি— এটা ছিল জানা কথা। তবে কটি রেকর্ড তিনি গড়তে পারেন, সেদিকেই ছিল সবার দৃষ্টি। রেকর্ড তো গড়লেনই, সঙ্গে একে একে বেশ কজন কিংবদন্তির রেকর্ডও ছুঁয়ে ফেললেন তিনি। পেলে, ম্যারাডোনা, লোথার ম্যাথিউজ, পাওলো মালদিনি— ফুটবল বিশ্বের সব রথি-মহারথির রেকর্ড ভেঙে খান খান করে দিয়েছেন তিনি।
বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে গোল করে গ্যাব্রিয়েল বাতিস্তুতাকে পেছনে ফেলে আর্জেন্টিনার হয়ে সবচেয়ে বেশি গোল করার রেকর্ড গড়েছিলেন। ফাইনালে মাঠে নেমেই একটি রেকর্ড গড়েন এবং আরেকটি ছুঁয়ে ফেলেন। অধিনায়ক হিসেবে বিশ্বকাপে সবচেয়ে বেশি ১৯ ম্যাচ খেলার রেকর্ড গড়েন তিনি।
বিশ্বকাপ খেলতে নেমেই বিশ্বকাপের ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি ম্যাচ খেলার রেকর্ডও গড়ে ফেলেন তিনি। সেমিফাইনালেই জার্মানির লোথার ম্যাথিউসের সমান হয়েছিলেন ২৫টি ম্যাচ খেলে। ফাইনালে খেলতে নামার পর তার নামের পাশে শোভা পাচ্ছে ২৬টি ম্যাচ।
একনজরে মেসির সব রেকর্ড : সবচেয়ে বেশি ম্যাচ খেলার রেকর্ডও তার। ২০০৬ সাল থেকে ফুটবল বিশ্বকাপ খেলছেন মেসি। ফাইনালে ফ্রান্সের বিপক্ষে খেলতে নামার সঙ্গে সঙ্গেই তার নামের পাশে জ্বলজ্বল করছিল ২৬তম ম্যাচ, বিশ্বকাপের ইতিহাসে যা সর্বোচ্চ। ২৫ ম্যাচ খেলা জার্মানির লোথার ম্যাথিউসকে পেছনে ফেলেছেন তিনি।
সবচেয়ে বেশি সময় খেলার রেকর্ড : ফ্রান্সের বিপক্ষে মাঠে নামার আগে মেসি বিশ্বকাপে খেলেছেন দুই হাজার ১৯৪ মিনিট। দুই হাজার ২১৭ মিনিট খেলে শীর্ষে ছিলেন ইতালিয়ান কিংবদন্তি পাওলো মালদিনি। ফ্রান্সের বিপক্ষে ২৪ মিনিট খেলার পরই মেসি তাকে পেছনে ফেলে সবচেয়ে বেশি সময় বিশ্বকাপে খেলার রেকর্ড গড়েন। সব মিলিয়ে ফ্রান্সের বিপক্ষে মেসি খেলেছেন ১৪৪ মিনিট। সময়ের হিসাবে সর্বমোট দুই হাজার ৩৩৮ মিনিট বিশ্বকাপে খেলেছেন মেসি।
বিশ্বকাপে সবচেয়ে বেশি জয় : ফাইনালে ফ্রান্সের বিপক্ষে টাইব্রেকারে জয়ের মধ্য দিয়ে বিশ্বকাপে সর্বোচ্চ ১৭টি ম্যাচে জয়ের রেকর্ড স্পর্শ করেছেন মেসি। ১৭ জয় নিয়ে এতদিন শীর্ষে ছিলেন জার্মানির মিরোস্লাভ ক্লোসা। এবার তার পাশে বসলেন মেসি।
পেলেকে পেছনে ফেললেন : বিশ্বকাপে মোট ৯ গোল করিয়েছেন সতীর্থদের দিয়ে। নিজে গোল করেছেন মোট ১৩টি। সব মিলিয়ে বিশ্বকাপে মোট ২১টি গোলে অবদান মেসির। বিশ্বকাপে সব মিলিয়ে ১২ গোল করেছিলেন পেলে। ফাইনালে দুই গোল করে পেলেকে পেছনে ফেললেন তিনি। সে সঙ্গে সর্বমোট গোলে অবদানের ক্ষেত্রেও পেলেকে ছুঁলেন তিনি। পেলে ১২ গোলের পাশাপাশি ১০টি গোলে অ্যাসিস্ট করেছেন। মোট ২২ গোলে তার অবদান। এবার মেসিরও মোট ২২টি গোলে অবদান রাখার রেকর্ড হলো।
প্রথম ফুটবলার হিসেবে দুই গোল্ডেন বল : বিশ্বকাপের ইতিহাসে এই প্রথম দুটি গোল্ডেন বল জয়ের রেকর্ড গড়লেন মেসি। ১৯৮২ সাল থেকে টুর্নামেন্টসেরার পুরস্কার গোল্ডেন বল চালু করা হয়। এরপর আর কোনো ফুটবলার দুবার গোল্ডেন বল জেতেননি। ২০১৪ সালে দেশকে বিশ্বকাপ জেতাতে না পারলেও প্রতিযোগিতার সেরা ফুটবলার নির্বাচিত হয়েছিলেন মেসি। আর এবার বিশ্বকাপই জিতলেন। সে সঙ্গে গোল্ডেন বলও উঠল তার হাতে। বিশ্বকাপের ৯২ বছরের ইতিহাসেও কোনো ফুটবলার দুবার টুর্নামেন্টসেরা নির্বাচিত হননি।
সব রাউন্ডেই গোল : কাতার বিশ্বকাপে কিলিয়ান এমবাপ্পের কাছে গোল্ডেন বুট হারতে হয়েছে মেসিকে। তবে আরেকটি ক্ষেত্রে রেকর্ড গড়েছেন মেসি। এই প্রথম কোনো ফুটবলার হিসেবে বিশ্বকাপের প্রতিটি রাউন্ডে গোল করার রেকর্ড রয়েছে তার। প্রথম রাউন্ড, দ্বিতীয় রাউন্ড, কোয়ার্টার ফাইনাল, সেমিফাইনাল এবং ফাইনাল— সব রাউন্ডেই গোল পেয়েছেন তিনি। গ্রুপপর্বে শুধু পোল্যান্ডের বিপক্ষে গোল পাননি। এছাড়া বাকি ৬ ম্যাচের প্রতিটিতেই একটি করে এবং ফাইনালে দুই গোল করলেন তিনি।