তীরে গিয়ে তরী ডুবার আক্ষেপটা বাংলাদেশের জন্য নতুন কিছু নয়। প্রায় সময়ই তীরে গিয়ে তরী ডুবায় টাইগাররা। ভারতের বিপক্ষেও হলো তাই। ঢাকা টেস্টে জয়ের আশা জাগিয়েও হারতে হলো বাংলাদেশকে।
এর আগে ২০০০ সালে টেস্ট স্ট্যাটাস পায় বাংলাদেশ। প্রথম টেস্ট ম্যাচটি ভারতের বিপক্ষেই খেলেছিল বাংলাদেশ। সে ম্যাচটা অবশ্য হেরেছিল টাইগাররা। এরপর গত ২১ বছরে ভারতীয়দের বিপক্ষে ১২টি টেস্ট খেলে বাংলাদেশ। অথচ তাদের বিপক্ষে একবারও জয় তো দূরের কথা; জয়ের কাছাকাছি পর্যন্ত পৌঁছাতে পারেনি টাইগাররা।
এবারই সুবর্ণ সুযোগ ছিল গেরো ভাঙার। কিন্তু সে সুযোগও হাতছাড়া হয়ে গেল। অশ্বিন-আইয়ারের ৭১ রানের জুটিতে ইতিহাস গড়া হলো না বাংলাদেশের। মিরপুরে দ্বিতীয় টেস্টের তৃতীয় দিনেই ম্যাচটি জমিয়ে দিয়েছিলেন মেহেদী হাসান মিরাজ। শেষ বিকেলে একাই নিলেন তিন উইকেট। জয়ের জন্য তখনও ভারতের দরকার আরও ১০০ রান। বাংলাদেশের প্রয়োজন ৬ উইকেট। মেহেদী হাসান মিরাজ, তাইজুল ইসলাম ও সাকিব আল হাসানের বল যেভাবে টার্ন করছিল; তাতে চতুর্থ দিনে জয়ের স্বপ্ন দেখাটাই স্বাভাবিক। উইকেটও সহায় হচ্ছিল সাকিব-মিরাজদের।
এমনিতেই মিরপুরের ক্রিজ স্পিন সহায়ক। তার ওপর আবার তিন দিন খেলা হয়েছে। গতকাল সকালবেলা টাইগারদের দরকার ছিল দ্রুত উইকেট নেয়া। বাংলাদেশের বোলারদের জন্য বিপজ্জনক হয়ে উঠতে পারেন রিশভ পান্ত। ক্রিজে তিনি থিতু হওয়ার আগে ফেরাতে হবে। সবই পরিকল্পনা অনুযায়ী এগুলো। কিন্তু এরপর গিয়ে সব গড়বড় হয়ে গেল। শ্রেয়াস আইয়ার আর রবিচন্দ্রন অশ্বিনকে টলানো গেল না।
শক্তিশালী ভারতকে বাগে পেয়েও টেস্টে হারাতে পারল না বাংলাদেশ। উল্টো দুই ম্যাচের দুটিতেই হেরে ঘরের মাঠে হোয়াইটওয়াশ হলো বাংলাদেশ। গতকাল মিরপুর শেরে বাংলা ক্রিকেট স্টেডিয়ামে বাংলাদেশকে ৩ উইকেটে হারিয়েছে ভারত। ১৪৫ রানের লক্ষ্যে নেমে চতুর্থ দিনে ৭৪ রানে ৭ উইকেট হারিয়ে খাদের কিনারায় চলে গিয়েছিল তারা। অষ্টম উইকেটে ৭১ রানের অবিচ্ছিন্ন জুটিতে সফরকারীদের জিতিয়ে দেন রবিচন্দ্রন অশ্বিন এবং শ্রেয়াস আইয়ার। জয়ের জন্য ভারতের সামনে লক্ষ্য ছিল মাত্র ১৪৫ রান। ভারতের বিধ্বংসী ব্যাটিং লাইনআপের সামনে এই রান একেবারেই মামুলি।
তবে তৃতীয় দিনের শেষে দৃশ্যপট একেবারেই উল্টে গিয়েছিল। তৃতীয় দিনের শেষ বিকেলে সাকিব আল হাসান, মেহেদি হাসান মিরাজ, তাইজুল ইসলামরা যেভাবে বল ঘুরালেন; তাতে অবিশ্বাস্য এক জয়ের স্বপ্ন জেগেছিল টাইগার শিবিরে। শেষ বিকেলে ভারতের স্কোরবোর্ডে ৪৫ রান যোগ হতেই চারটি উইকেট তুলে নিয়েছিল বাংলাদেশ। তবে হিসেব গরমিল করে দিয়েছে অশ্বিন ও শ্রেয়াস।
৬২ বলে ৪ বাউন্ডারি ও ১ ছক্কায় ৪২ রানের অপরাজিত ইনিংস খেলেন অশ্বিন। ৪৬ বলে ৪ বাউন্ডারিতে ২৯ রান করে অপরাজিত থাকেন শ্রেয়াস। মেহেদী হাসান মিরাজ ৬৩ রানে নেন ৫ উইকেট। মূলত তার ঘূর্ণি জাদুতেই জয়ের আশা দেখছিল বাংলাদেশ। অধিনায়ক সাকিব আল হাসান ৫০ রান খরচ করে নেন ২ উইকেট।
এদিকে পুরো ম্যাচে অবশ্য অনেকগুলো সুযোগও হাতছাড়া করেছে সাকিবরা। যে অশ্বিন জয়সূচক অপরাজিত একটি ইনিংস খেললেন; সেই অশ্বিনকেই ব্যক্তিগত ১ রানে সাজঘরে পাঠানো যেত। কিন্তু মিরাজের বলে শর্ট লেগে ক্যাচ ধরতে পারেনি মুমিনুল হক।
পরে অশ্বিনই মিরাজের এক ওভারে ১৬ রান নিয়ে খেলা শেষ করে দেন। বাংলাদেশকে করতে হয় তীরে গিয়ে তরী ডোবার আক্ষেপ। চতুর্থ দিনের প্রথম ওভারেই অফ স্পিনার মিরাজকে ছক্কা মেরে দেন নাইটওয়াচম্যাচ জয়দেব উনাদকাট। প্রথম ওভার থেকে আসে ১০ রান। পরের ওভারেই আঘাত হানেন বাঁহাতি স্পিনার সাকিব। তার ভেতরে ঢোকা বলে লাইন মিস করে এলবিডব্লিউ হয়ে যান উনাদকাট। তার ব্যাট থেকে আসে ১৬ বলে ১৩ রান। ৫৬ রানে ৫ উইকেট হারায় ভারত।
উনাদকাটের পরই ভয়ংকর রিশাভ পান্ত ৯ রান করে মেহেদি হাসান মিরাজের বলে এলবিডব্লিউ হয়ে ফিরে যান সাজঘরে। আর তাতেই জয়ের স্বপ্ন দেখতে শুরু করেন বাংলাদেশের সমর্থকরা। পরের ওভারে মিরাজ বোল্ড করেন অক্ষর প্যাটেলকে। ৩৪ রান করে তাকে ফিরতে হয় প্যাভিলিয়নে। ৭৪ রানেই ৭ উইকেট হারিয়ে বসে ভারত। আর তাতে জয়ের স্বপ্ন আরও বেশি গাড় হতে থাকে।
তবে এই স্বপ্ন মুহূর্তেই ভেঙে যায়। অশ্বিন-আইয়ারের জুটির কাছে হার মানতে হয়। অথচ আগের দিনই সাজঘরে ফিরে গিয়েছিলেন ভারতীয় অধিনায়ক লোকেশ রাহুল, শুভমান গিল, ব্যাটিং স্তম্ভ চেতেশ্বর পূজারা আর ভিরাট কোহলি। ৩৭ রান তুলতে ৪ উইকেট হারায় ভারত। প্রথম ইনিংসে বাংলাদেশ করেছিল ২২৭ রান। জবাবে ৩১৪ রানে অলআউট হয় ভারত। দ্বিতীয় ইনিংসে বাংলাদেশ ২৩১ করলে ভারতের সামনে লক্ষ্য দাঁড়ায় ১৪৫ রানের। চতুর্থ দিনে ৩ উইকেট হাতে রেখেই জয়ের লক্ষ্যে পৌঁছে যায় ভারত।