২০২২ সাল শেষ হতে আর মাত্র তিনদিন বাকি। সারা বছরজুড়ে যে সব খেলোয়াড়রা ধারাবাহিকভাবে ভাল করেছে, গোল করেছে ও শিরোপা জয় করেছে এমন শীর্ষ ১০ খেলোয়াড়ের তালিকা এখানে দেয়া হলো। তারা সবাই ক্লাব ও দেশের হয়ে সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছে। নতুন ক্লাব পিএসজির হয়ে শুরুটা ভাল না হলেও লিওনেল মেসি ঠিকই আর্জেন্টিনাকে ক্যারিয়ারের সর্বোচ্চ শিরোপা বিশ্বকাপ উহার দিয়েছেন। এদিকে দুই তরুণ আর্লিং হালান্ড ও কিলিয়ান এমবাপ্পে ২০২২ সালের সর্বোচ্চ গোলদাতা হিসেবে তালিকায় নিজেদের নাম শীর্ষ দুটি স্থানেই লিখিয়েছেন।
১.কিলিয়ান এমবাপ্পে- ৫৫: এমন একজন স্ট্রাইকারকে দলে পেয়ে ফ্রান্স ও পিএসজি সত্যিকার অর্থেই নিজেদের সৌভাগ্যবান মনে করতেই পারেন। টানা দ্বিতীয়বারের মত বিশ্ব কাপের ফাইনালে ফ্রান্সের খেলার পিছনে কিলিয়ান এমবাপ্পের অবদানই ছিল সর্বাগ্রে। আর্জেন্টিনার বিরুদ্ধে ফাইনালে হ্যাটট্রিক করেও অবশ্য দলকে বাঁচাতে পারেননি। কিন্তু আট গোল করে বিশ্বকাপের সর্বোচ্চ গোলদাতার ট্রফি গোল্ডেন বুট ঠিকই আদায় করে নিয়েছেন। এ বছর ক্লাব ও দেশের হয়ে ৫৫ ম্যাচে করেছেন ৫৫ গোল।
২. আর্লিং হালান্ড- ৪৩: মাত্র ২২ বছর বয়সে যেভাবে নিজেকে প্রমান করে চলেছেন তাতে ভবিষ্যতে কত দুর যে যাবেন তার ইঙ্গিত কিছুটা হলেও পাওয়া যায়। একজন পরিপূর্ন স্ট্রাইকার আর্লিং হালান্ড শুধুমাত্র গোলের জন্যই নয়, চমৎকার বল সেন্সের কারনে ইতোমধ্যেই ক্লাব ও দেশের অপরিহার্য্য খেলোয়াড়ে পরিনত হয়েছেন। প্রতি ম্যাচে গোল করারা তার অভ্যাসে পরিনত হয়েছে, এটা যেন একটা স্বাভাবিক ঘটনা। ডর্টমুন্ডের সাবেক ও ম্যানচেস্টার সিটির বর্তমান এই স্ট্রাইকার ক্লাব ও দেশের হয়ে এ বছর ৪০ ম্যাচে করেছেন ৪৩ গোল।
৩. রবার্ট লিওয়ানদোস্কি- ৪২: বায়ার্ন মিউনিখ ছাড়ার পর লিওয়ানদোস্কি নতুন ক্লাব বার্সেলোনার হয়ে নিজের গোল করার দক্ষতা বজায় রেখেছেন। এই মুহূর্তে লা লিগার সর্বোচ্চ গোলদাতা এই পোলিশ তারকা। কাতার বিশ^কাপে পোল্যান্ডের হয়ে করেছেন দুই গোল। আর এর মাধ্যমে ক্যারিয়ারে প্রথম বিশ^কাপ গোল পেয়েছেন লেভা। যদিও পোল্যান্ড নক আউট পর্বে খেলতে ব্যর্থ হয়েছে। এ বছর ৩৪ বছর বয়সী লিওয়ানদোস্কি ৫০ ম্যাচে দেশ ও ক্লাবের হয়ে ৪২ গোল করেছেন।
৪. ক্রিস্টোফার এনকুকু-৩৭: ২৫ বছর বয়সী এই এ্যাটাকিং মিডফিল্ডার বেশ কিছু শীর্ষ ক্লাবে যোগ দেবার দ্বারপ্রান্তে ছিলেন। তবে সূত্রমতে জানা গেছে চেলসিই তার প্রতি সবচেয়ে বেশী আগ্রহ দেখিয়েছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত ফ্রান্স ও লিপজিগের হয়ে এ বছর ৩৭ গোল করা এই এনকুকুকে এড়িয়ে যাবার কোন অবকাশ নেই। এ বছর সেই বুন্দেসলিগায় শীর্ষ গোলদাতা হিসেবে নাম লিখিয়েছেন। কিন্তু ইনজুরির কারনে বিশ^কাপে না খেলাটা ছিল সত্যিই দূর্ভাগ্যের। কিন্তু নিজের লক্ষ্যে এখনো অটুট রয়েছে এনকুকু।
৫. লিওনেল মেসি- ৩৫: নতুন ক্লাব পিএসজির হয়ে শুরুটা ভাল না হলেও ধীরে ধীরে লিওনেল মেসি প্যারিসে নিজেকে মানিয়ে নিতে চেষ্টা করেন। ৩৫ বছর বয়সে এসেও গোল ও এ্যাসিস্টের দিক থেকে নিজেকে ঠিকই এগিয়ে রেখেছেন আর্জেন্টাইন সুপারস্টার। শেষ পর্যন্ত বছরের শেষে এসে জয় করেছেন ক্যারিয়ারের একমাত্র বিশ্বকাপ শিরোপা। এ বছর এ যেন ভিন্ন মেসিকে দেখেছে ফুটবল বিশ্ব। ক্লাব ও দেশের হয়ে ৫১ ম্যাচে করেছেন ৩৫ গোল। বিশ্বকাপে করেছেন সাত গোল ও তিন এ্যাসিস্ট।
৬. রিকার্ডো গোমেজ- ৩৫: অনেকেই রিকার্ডো গোমেজকে সেভাবে চেনে না। কিন্তু ক্লাবের হয়ে এই অভিজ্ঞ খেলোয়াড় গোলের জন্য সবসময়ই সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছেন। কেপ ভার্দের ৩১ বছর বয়সী এই স্ট্রাইকার ২০২২ সালে নিজেকে সারা বছরই প্রমান করেছেন। ৫১ ম্যাচে সার্বিয়ান ক্লাব এফকে পার্টিজান ও দেশের হয়ে করেছেন ৩৫ গোল। ইউরোপ জুড়ে এখনো তাকে বিচক্ষন খেলোয়াড় হিসেবে বিবেচনা করা হয়। তার গোলগুলোই কার্যত তার সম্পর্কে সব কথা বলে দেয়।
৭. আমাহি পেলেগ্রিনো- ৩৪: নরওয়ের ৩২ বছর বয়সী এই তারকা জাতীয় দলের হয়ে নিজেকে মেলে ধরতে না পালেও ক্লাব পর্যায়ে প্রতিপক্ষের ডান ও বামদিক দিয়ে সমান তালে গোল করে গেছেন। বোডো গিলমিট ও নরওয়ের এই অভিজ্ঞ এই স্ট্রাইকার ২০২২ সালে সব মিলিয়ে ৩৪ গোল করেছেন।
৮. মেহদী টারেমি- ৩৪: বিশ্বকাপে টারেমি নিজেকে নতুন ভাবে উদঘাটন করলেও পোর্তোর হয়ে সারা বছরই দুর্দান্ত খেলেছেন। যদিও বিশ্বকাপেই পুরো বিশ্ব প্রথমবারের মত তার গোল করার প্রতিভা দেখতে পেয়েছে। তার গোলেই ওয়েলসকে পরাজিত করে ইরান। একইসাথে ইরান নক আউট পর্বে খেলার স্বপ্ন জাগিয়ে তোলে। এখনো পোর্তোর অন্যতম সেরা স্ট্রাইকার হিসেবে টারেমির নামই সবার আগে আসবে। ২০২২ সালে দেশ ও ক্লাবের হয়ে টারেমি ৫০ ম্যাচে করেছেন ৩৪ গোল।
৯. হ্যারি কেন- ৩৪ গোল : কেন তার গোল করার দক্ষতা অনেকটাই হারিয়ে ফেলেছিলেন। কিন্তু এন্টোনিও কন্টে আসার পর থেকে আবারো নিজের ছন্দ খুঁজে পান এই ইংলিশ অধিনায়ক। এই মুহূর্তে কেনই প্রিমিয়ার লিগের সর্বোচ্চ গোলদাতা। একইসাথে ইংল্যান্ডের হয়ে ওয়েইন রুনির রেকর্ড ভঙ্গ করেছেন। এই মৌসুমে টটেনহ্যাম ও ইংল্যান্ডের হয়ে ৬১ ম্যাচে করেছেন ৩৪ গোল। যদিও ফ্রান্সের সাথে তার পেনাল্টি মিসেই ইংল্যান্ড শেষ আট থেকে বিদায় নিয়েছে।
১০. সাদিও মানে- ৩৪ গোল : লিভারপুলের সাবেক এই খেলোয়াড় বায়ার্ন মিউনিখে যাবার সাথে সাথেই গোল করা শুরু করেছেন। সাদিও মানে ২০২২ সালটা দারুন কাটিয়েছেন। সেনেগালকে আফ্রিকান নেশন্স কাপ শিরেপা উপহার দেয়া মানে ক্লাব ও দেশের হয়ে ৬২ ম্যাচে করেছেন ৩৪ গোল। নতুন ক্লাবেও গিয়েও নিজেকে দারুনভাবে প্রমান করে চলেছেন। যদিও ইনজুরির কারনে বিশ্বকাপে খেলতে পারেননি। ২০০২ সালের পর প্রথমবারের মত সেনেগাল এবার বিশ্বকাপের শেষ ষোলতে উন্নীত হয়েছিল।