ওয়ানডে বিশ্বকাপ

পাকিস্তানকে ১ উইকেটে হারিয়ে শীর্ষে দ. আফ্রিকা

মো. মাসুম বিল্লাহ প্রকাশিত: অক্টোবর ২৮, ২০২৩, ১২:৫১ এএম
পাকিস্তানকে ১ উইকেটে হারিয়ে শীর্ষে দ. আফ্রিকা

একটা সময় মনে হচ্ছিল দক্ষিণ আফ্রিকা সহজেই রান তাড়ার কাজটা সেরে ফেলবে। সেখান থেকে নাটকীয়ভাবে ম্যাচে ফেরে পাকিস্তান। কিন্তু শেষ রক্ষা হলো না বাবর আজমদের। রুদ্ধশ্বাস লড়াইয়ে পাকিস্তানকে ১ উইকেটে হারালো দক্ষিণ আফ্রিকা। ১৬ বল হাতে রেখে পাওয়া এই জয়ে পয়েন্ট তালিকারও শীর্ষে উঠে এসেছে প্রোটিয়ারা।

দক্ষিণ আফ্রিকার রানরেট আগে থেকেই ভালো ছিল। পাকিস্তানকে হারানোর পর পয়েন্টও হয়েছে ভারতের সমান ১০। রানরেটে এগিয়ে থাকায় ভারতকে পেছনে ঠেলে এক নম্বরে চলে এসেছে টেম্বা বাভুমার দল।

এই ম্যাচে প্রোটিয়াদের জয়ের লক্ষ্য ছিল ২৭১ রানের। উইকেটে সেট হয়ে আউট হয়েছেন কুইন্টন ডি কক (২৪), টেম্বা বাভুমা (২৮), রসি ফন ডার ডুসেন (২১) আর হেনরিখ ক্লাসেন (১২)। ১৩৬ রানে দক্ষিণ আফ্রিকার ৪ উইকেট তুলে নিয়ে বেশ চেপে ধরেছিল পাকিস্তান।

কিন্তু এইডেন মার্করাম আর ডেভিড মিলার সেখান থেকে ৬৯ বলে ৭০ রানের একটি জুটি গড়ে ম্যাচ অনেকটাই হাতে নিয়ে আসেন। একটা সময় ৪ উইকেটেই ২০৫ রান তুলে ফেলেছিল দক্ষিণ আফ্রিকা। জয়টা তখন মনে হচ্ছিল সময়ের ব্যাপার। সেখান থেকে লড়াই জমিয়ে তোলে পাকিস্তান।

২৯ করা ডেভিড মিলারকে সাজঘরের পথ দেখান শাহিন শাহ আফ্রিদি। ১৪ বলে ২০ রানের ছোটখাটো ঝড় তোলা মার্কো জানসেনকে আউট করেন হারিস রউফ। এরপর সেঞ্চুরির পথে থাকা এইডেন মার্করামকে ফিরিয়ে আশা জাগান উসামা মীর। ৯৩ বলে ৭ চার আর ৩ ছক্কায় মার্করাম আউট হন ৯১ করে। পরের ওভারে গেরাল্ড কোয়েটজিকে (১০) উইকেটরক্ষককের ক্যাচ বানান শাহিন আফ্রিদি।

৪৬তম ওভারে নিজের বলেই হারিস রউফ লুঙ্গি এনগিদির চোখ ধাঁধানো এক ক্যাচ নিলে নবম উইকেট হারায় দক্ষিণ আফ্রিকা। তখনও জয়ের জন্য ১১ দরকার প্রোটিয়াদের। পাকিস্তানের দরকার মাত্র ১টি উইকেট। কিন্তু সে উইকেটটি আর তুলে নিতে পারেনি পাকিস্তান। ৪৭.২ ওভারে জয় তুলে নেয় দক্ষিণ আফ্রিকা। কেশভ মহারাজ ৭ আর তাবরেজ শামসি ৪ রানে অপরাজিত থাকেন।

পাকিস্তানের হারিস রউফ ৩টি আর শাহিন আফ্রিদি, মোহাম্মদ ওয়াসিম আর উসামা মীর নেন দুটি করে উইকেট।

এর আগে হাতে আরও ২০টি বল ছিল। পুরো ৫০ ওভার খেলতে পারলে হয়তো স্কোরটা তিনশোর কাছাকাছি চলে যেতো পাকিস্তানের। কিন্তু সেটা পারেনি বাবর আজমের দল। প্রোটিয়া বোলারদের তোপে ৪৬.৪ ওভারে ২৭০ রানেই অলআউট হয় পাকিস্তান।

পাকিস্তান তাদের ইনিংসে চাপ কাটিয়ে দুইবার ঘুরে দাঁড়িয়েছে। কিন্তু সম্ভাবনা থাকলেও শেষ পর্যন্ত আর বড় স্কোর গড়ার স্বপ্ন পূরণ হয়নি আনপ্রেডিক্টেবলদের।

দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে বাঁচামরার লড়াইয়ে টস জিতে ব্যাটিং বেছে নিয়েছিলেন পাকিস্তান অধিনায়ক বাবর আজম। চেন্নাইয়ে এমএ চিদাম্বরম ক্রিকেট স্টেডিয়ামে টসভাগ্য সহায় হলেও শুরুতেই উইকেট হারিয়ে চাপে পড়ে পাকিস্তান।

দলীয় ২০ রানের মাথায় প্রথম উইকেট হারায় পাকিস্তান। উইকেটে থিতু হয়ে থাকার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হন ওপেনার আব্দুল্লাহ শফিক। ১৭ বলে ৯ রান করে সাজঘরে ফেরত যান এই ওপেনার। ইনিংসের পঞ্চম ওভারে মার্কো জানসেনের বলে লুঙ্গি এনগিদির হাতে ধরা পড়েন তিনি।

এরপর ইনিংসের সপ্তম ওভারে জানসেনের দ্বিতীয় শিকার হন আরেক ওপেনার ইমাম উল হক। হেনরিখ ক্লাসেনের হাতে ক্যাচ দেওয়ার আগে তিনি করেন ১৮ বলে ১২ রান। ৩৮ রানে ২ উইকেট হারায় পাকিস্তান।

তৃতীয় উইকেটে ৪৮ রান যোগ করেন অধিনায়ক বাবর আজম ও মোহাম্মদ রিজওয়ান। রিজওয়ান মেরে খেলছিলেন। কিন্তু ২৭ বলে ৩১ রানে থাকার সময় তার উইকেটটি তুলে নেন কোয়েতজি। ইফতিখার আহমেদও সেট হয়ে উইকেট দিয়ে আসেন। ৩১ বল খেলে তিনি করেন ২১।

অধিনায়ক বাবর আজম হাল ধরেছিলেন। ফিফটিও পেয়ে যান পাকিস্তান দলপতি। কিন্তু হাফসেঞ্চুরি পূরণ হতেই উইকেট দিয়ে আসেন। তাবরেজ শামসির বলে সুইপ খেলতে গিয়ে উইকেটরক্ষককে ক্যাচ দিয়ে ফিরেন বাবর তিনি। ১৪১ রানে ৫ উইকেট হারিয়ে ফের চাপে পড়ে পাকিস্তান।

সেখান থেকে দলকে টেনে তোলেন সৌদ শাকিল। ষষ্ঠ উইকেটে শাদাব খানকে নিয়ে ৮৪ রান যোগ করেন এই ব্যাটার। শাদাব খান ঝোড়ো গতিতে ৩৬ বলে ৪৩ করে আউট হন। এরপর শাকিলও ফিফটি করে সাজঘরে ফিরে যান। ৫২ বলে ৭ বাউন্ডারিতে ৫২ রান করে তাবরেজ শামসির ঘূর্ণি বলে উইকেটরক্ষকের গ্লাভসে ধরা পড়েন এই হাফসেঞ্চুরিয়ান।

সেট দুই ব্যাটার ফেরার পর পাকিস্তানের বড় স্কোর গড়ার সম্ভাবনা শেষ হয়ে যায়। শেষদিকে মোহাম্মদ নওয়াজ ২৪ বলে ২৪ করলেও ২৭০ রানের বেশি তুলতে পারেনি বাবরের দল। দক্ষিণ আফ্রিকার লেগস্পিনার তাবরেজ শামসি ৬০ রান খরচায় নেন ৪টি উইকেট। ৩টি উইকেট শিকার মার্কো জানসেনের।

আরএস