দ্বিতীয় সেমিফাইনাল

দ. আফ্রিকাকে হারিয়ে বিশ্বকাপের ফাইনালে অস্ট্রেলিয়া

ক্রীড়া ডেস্ক প্রকাশিত: নভেম্বর ১৭, ২০২৩, ১২:২৬ এএম
দ. আফ্রিকাকে হারিয়ে বিশ্বকাপের ফাইনালে অস্ট্রেলিয়া

অস্ট্রেলিয়া ও দক্ষিণ আফ্রিকার মধ্যকার সেমিফাইনাল উত্তেজনায় ঠাসা থাকবে না তা কি হয় নাকি! ১৯৯৯ বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে অজিদের সঙ্গে প্রোটিয়াদের ঐতিহাসিক টাই ম্যাচটি আজও অমর হয়ে আছে ক্রিকেট দুনিয়ায়। তেমনই আরেকটি উত্তেজনায় ঠাসা সেমিফাইনাল দেখলো পুরো ক্রিকেট বিশ্ব যার পরতে পরতে ছিল উত্তেজনা।

প্রোটিয়াদের মাত্র ২১২ রানে অলআউট করেও কে ভেবেছিল এই ম্যাচ জিততে এতটা বেগ পেতে হবে অস্ট্রেলিয়াকে। দক্ষিণ আফ্রিকার বোলিংয়ের সামনে অনেকটাই অসহায় পড়ছিল অজি ব্যাটাররা কিন্তু শেষ পর্যন্ত জশ ইংলিসের দৃঢ়তায় ২০১৫ বিশ্বকাপের পর আবারো বিশ্বকাপের ফাইনালে উঠলো অস্ট্রেলিয়া। প্রোটিয়াদের হারালো ৩ উইকেটের ব্যবধানে।

ইডেন গার্ডেনসে ২১৩ রানের লক্ষ্যে ব্যাট করে নেমে দুর্দান্ত সূচনা পায় অস্ট্রেলিয়া। ওপেনিং জুটিতেই ৬০ রান তোলেন ডেভিড ওয়ার্নার ও ট্রাভিস হেড। মাত্র ৬ ওভারেই তারা ৬০ রানের জুটি গড়েন।

তাদের উড়ন্ত সূচনায় ফাটল ধরান পার্টটাইম বোলার মারকরাম। ১৮ বলে ২৯ রান করা মারকুটে ওপেনার ডেভিড ওয়ার্নারকে বোল্ড করেন এই ডান হাতি অফ স্পিনার।

তিনে নেমে কোন রানের খাতা খোলার আগেই প্যাভিলিয়নে ফেরেন গ্রুপ পর্বের শেষ ম্যাচে সেঞ্চুরি হাঁকানো মিচেল মার্শ। রাবাদার বলে দুর্দান্ত এক ক্যাচ নেন ভ্যান ডার ডুসেন।

৬১ রানে দুই উইকেট হারিয়ে খানিকটা বিপদে পড়ে অজিরা। তৃতীয় উইকেট জুটিতে ৪৫ রানের জুটি গড়েন স্মিথ ও হেড। এক প্রান্ত আগলে রেখে অর্ধশতক তুলে নেন হেড। তবে বেশিদূর এগোতে পারেননি এই বাম হাতি ব্যাটার।

কেশব মাহারাজের দুর্দান্ত এক ডেলিভারিতে ৬২ রানে বোল্ড হন হেড। ১৪ ওভারে একশো পেরোয় অজিরা। লাবুশেনকেও বেশিক্ষণ ক্রিজে থাকতে দেয়নি প্রোটিয়ারা। তাকে লেগ বিফোরের ফাঁদে ফেলেন শামসি।

অজিদের ব্যাটিং ইনিংসে সবচেয়ে বড় আঘাতটা আসে ম্যাক্সওয়েলের আউটের মাধ্যমে। মাত্র ১ রান করেই শামসির বলে বোল্ড হন আফগানদের বিপক্ষে ডাবল সেঞ্চুরি করে ম্যাচ জেতানো ম্যাক্সওয়েল।

এরপর স্টিভ স্মিথ ৬২ বলে ৩০ রান করে আউট হলে ১৭৪ রানে ৬ উইকেট হারালে ম্যাচ ঝুঁকে পড়ে প্রোটিয়াদের দিকে। তখনও ক্রিজে ছিলেন ইংলিস। প্রোটিয়াদের বিরুদ্ধে কিছুটা প্রতিরোধ গড়ার চেষ্টা করেন এই উইকেটকিপার ব্যাটার।

তবে কোয়েটজের দুর্দান্ত এক ইয়োর্কারে বোল্ড হন এই ব্যাটার। অজিরা তখন জয় থেকে মাত্র ২০ রান দূরে। উত্তেজনার বারুদ ছড়িয়ে পড়ে পুরো ইডেন গার্ডেনস থেকে পুরো বিশ্বে।

তবে শেষ দিকে আর অঘটন ঘটতে দেননি অধিনায়ক প্যাট কামিন্স ও মিচেল স্টার্ক।

প্রোটিয়াদের হয়ে শামসি ও কোয়েটজে দুটি করে উইকেট পান। রাবাদা, মারকরাম ও মাহারাজ ১টি করে উইকেট নেন।

এর আগে ডেভিড মিলারের লড়াকু সেঞ্চুরির পরও পুঁজিটা বড় হয়নি প্রোটিয়াদের। ৪৯.৪ ওভারে ২১২ রানেই থেমে গেছে টেম্বা বাভুমার দল। অর্থাৎ ফাইনালে উঠতে অস্ট্রেলিয়াকে করতে হবে ২১৩।

ইডেন গার্ডেনে টস জিতে প্রথমে ব্যাট করার সিদ্ধান্ত নেন দক্ষিণ আফ্রিকা অধিনায়ক টেম্বা বাভুমা। পুরো টুর্নামেন্টে টস জয় মানেই দক্ষিণ আফ্রিকার রান উৎসব। এবারও তেমনটা হবে, ভাবছিলেন সবাই। তবে ঘটেছে তার উল্টো।

দক্ষিণ আফ্রিকাকে শুরু থেকেই চেপে ধরেন অস্ট্রেলিয়ার বোলাররা। একদিকে তারা যেমন উইকেট তুলে নিয়েছেন, অন্যদিকে রানও আটকে রেখেছেন। ফলে শুরুতেই কোণঠাসা হয়ে পড়ে প্রোটিয়ারা।

২৪ রানের মধ্যে সাজঘরে ফেরেন চার টপঅর্ডার ব্যাটার-টেম্বা বাভুমা (০), কুইন্টন ডি কক (৩), এইডেন মার্করাম (১০) আর রসি ফন ডার ডুসেন (৬)।

প্রথম ওভারের শেষ বলেই মিচেল স্টার্ক ফিরিয়ে দেন টেম্বা বাভুমাকে। উইকেটের পেছনে জস ইংলিশের হাতে ক্যাচ দেন প্রোটিয়া অধিনায়ক। ৪ বলে কোনো রানই করতে পারেননি তিনি।

৬ষ্ঠ ওভারের চতুর্থ বলে আউট হন কুইন্টন ডি কক। জস হ্যাজলউডের বলে প্যাট কামিন্সের হাতে ক্যাচ দেন ডি কক। বিশ্বকাপে দুর্দান্ত খেলে আসা ডি কক একেবারে জায়গামত এসে ব্যর্থ হন। দলীয় রান ছিল তখন ৮ রান।

দলীয় ২২ রানের মাথায় ফিরে যান এইডেন মার্করাম। ১১তম ওভারের পঞ্চম বলে আউট হন তিনি। ১০ রান করে তিনি আউট হন হ্যাজলউডের বলে। ২৪ রানের মাথায় আউট হন রসি ফন ডার ডুসেন। তিনি করেন ৬ রান।

দলের সেই কঠিন বিপর্যয়ের মুখে হেনরিখ ক্লাসেনকে নিয়ে হাল ধরেন ডেভিড মিলার। পঞ্চম উইকেটে তারা ৯৫ রানের জুটি। ক্লাসেন হাফসেঞ্চুরির দোরগোড়ায় ছিলেন। দক্ষিণ আফ্রিকাও অনেকট ঘুরে দাঁড়িয়েছিল।

৩১তম ওভারে এসে টানা দুই বলে দুই উইকেট শিকার করেন পার্টটাইম অফস্পিনার ট্রাভিস হেড। ক্লাসেন ৪৭ রানে বোল্ড আর মার্কো জানসেন এলবিডব্লিউ হন প্রথম বলেই।

১১৯ রানে ৬ উইকেট হারিয়ে দেড়শোর আগেই গুটিয়ে যাওয়ার শঙ্কায় ছিল দক্ষিণ আফ্রিকা। ডেভিড মিলার একটা প্রান্ত ধরে দলকে এগিয়ে নিয়ে যান। ১১৫ বল খেলে লড়াকু এক সেঞ্চুরিও তুলে নেন।

তবে দলের রানকে একটু ভালো জায়গায় নিতে গিয়ে সেঞ্চুরির পরই ছক্কা হাঁকাতে যান মিলার। কিন্তু বল সীমানার বাইরে পাঠাতে পারেননি। প্যাট কামিন্সকে তুলে মারতে গিয়ে বাউন্ডারিতে হয়ে যান ক্যাচ। ১১৬ বলে ১০১ রানের ইনিংসে ৮টি চার আর ৫টি ছক্কা হাঁকান মিলার।

মিলার আউট হওয়ার পরই আসলে দক্ষিণ আফ্রিকার লড়াকু পুঁজি গড়ার স্বপ্নটা শেষ হয়ে যায়। ইনিংসের ২ বল বাকি থাকতে ২১২ রানে অলআউট হয় প্রোটিয়ারা।

অস্ট্রেলিয়ার মিচেল স্টার্ক আর প্যাট কামিন্স নেন তিনটি করে উইকেট। দুটি করে উইকেট শিকার জস হ্যাজেলউড আর ট্রাভিস হেডের।

আরএস