বিপিএল-২০২৪

সাকিবের রংপুরকে হারিয়ে খুলনার হ্যাটট্টিক জয়

ক্রীড়া প্রতিবেদক প্রকাশিত: জানুয়ারি ২৬, ২০২৪, ০৭:৪৮ পিএম
সাকিবের রংপুরকে হারিয়ে খুলনার হ্যাটট্টিক জয়

ঢাকা পর্ব শেষ করে এখন বিপিএলের আমেজ এখন সিলেট শহরে। শুক্রবার ছুটির দিন, দর্শকদের উপচে পড়া ভীড়। মাঠের কানায় কানায় দর্শক। দেখে যেন মনে হচ্ছে প্রাণ ফিরতে শুরু করেছে বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগে। দুই বিদেশীর অলরাউন্ড নৈপুণ্যে শুক্রবার (২৬ জানুয়ারি) রংপুর রাইডার্সকে ২৮ রানে হারিয়েছে খুলনা টাইগার্স। খুলনার শানাকা ব্যাট হাতে ৪০ রান ও বল হাতে ২ উইকেট নেন। নওয়াজের ব্যাট থেকে আসে ৫৫ রান। বল হতে ২ উইকেট শিকার করেন এই পাকিস্তানী।

সিলেট আন্তর্জাতিক স্টেডিয়ামে গতকাল শুক্রবার দিনের প্রথম ম্যাচে টসে জিতে খুলনাকে ব্যাটিংয়ে আমন্ত্রণ জানায় রংপুর। ব্যাট করতে নেমে মোহাম্মদ নওয়াজের হাফসেঞ্চুরিতে ভর করে ১৬০ রানের পুঁজি পেয়েছিল খুলনা। জবাবে রান তাড়ায় শুরু থেকেই ব্যাটিং বিপর্যয়ে পড়ে রংপুর রাইডার্স। শেষ পর্যন্ত তাদের ইনিংস গুটিয়ে যায় ১৩২ রানে। 

লড়াকু লক্ষ্য তাড়ায় ব্যাট করতে নেমে শুরুতেই বাবর আজমকে হারায় রংপুর। আগের ম্যাচেই সিলেট স্ট্রাইকার্সের বিপক্ষে দলের ব্যাটিং বিপর্যয়ে দারুণ ইনিংস খেলেছিলেন পাকিস্তানের সাবেক এই অধিনায়ক। নিউজিল্যান্ড সফরের ছন্দটা টেনে এনেছিলেন বিপিএলেও। তবে দ্বিতীয় ম্যাচ খেলতে নেমে দেখলেন মুদ্রার উল্টো পিঠ। ইনিংসের দ্বিতীয় ওভারে স্বদেশি মোহাম্মদ ওয়াসিমের বলে এলবিডব্লিউ হয়ে ফিরেছেন বাবর। সাজঘরে ফেরার আগে ৮ বলে করেন ২ রান। 

বাবরের পর দ্রুত ফিরেছেন ব্রান্ডন কিং। ৫ বলে ১ রান করে মোহাম্মদ নওয়াজের শিকার হন ক্যারিবীয় এই ব্যাটার। তৃতীয় উইকেট জুটিতে রনি তালুকদারকে সঙ্গে নিয়ে ইনিংস মেরামতের চেষ্টায় ছিলেন শামিম হোসেন। দলীয় ৪৯ রানে রনি তালুকদার সাজঘরে ফিরলে ভাঙে দুজনের ৩২ বলে ৩৮ রানের জুটি। মন্থর ব্যাটিংয়ে ২৫ বলে ১৫ রান করেছিলেন রনি।

আগ্রাসী মেজাজে ব্যাটিংয়ে রানের চাকা সচল রাখছিলেন শামিম। তাকে ফেরান নেওয়াজ। ২২ বলে ৩০ রান করেছিলেন শামিম। এরপর একে একে প্যাভিলিয়নে ফেরেন আজমতউল্লাহ ওমরজাই (৪), নুরুল হাসান (১) ও মেহেদী হাসান (১২)। জয়ের দৌড়ে তখন অনেকটাই ছিটকে যায় রংপুর। সিঙ্গাপুরে চোখের ডাক্তার দেখিয়ে দেশে ফিরেই সিলেটে খেলতে নেমেও ব্যাট হাতে হাল ধরতে পারলেন না সাকিব আল হাসান। বোলিংয়ে ছিলেন উইকেটশূন্য, ব্যাট হাতে রান করেছেন মাত্র দুই।

শেষদিকে ঝোড়ো ব্যাটিংয়ে ৩০ বলে ফিফটি হাঁকিয়ে আশা দেখাচ্ছিলেন মোহাম্মদ নবি। শেষমেশ নবিকে ফিরিয়ে ৮ বল বাকি থাকতেই খুলনার জয় নিশ্চিত করেন ওয়াসিম। জয়ের হ্যাটট্রিকে পয়েন্ট টেবিলে শীর্ষস্থান ধরে রাখল খুলনা। অন্যদিকে, তিন ম্যাচে ১ জয়ে টেবিলের ছয়ে আছে রংপুর।

এর আগে টস হেরে প্রথমে ব্যাট করতে নেমে শুরুটা ভালো ছিল না খুলনারও। ইনিংসের দ্বিতীয় ওভারেই ক্যাচআউট হন খুলনার অধিনায়ক এনামুল হক বিজয়। শেখ মেহেদীর বলে কাটা পড়ার আগে ৭ বল খেললেও রানের খাতা খুলতে পারেননি এনামুল। আগের দিন নেটে চার-ছক্কার ঝলক দেখিয়েছিলেন এভিন লুইস। গতকাল মাঠেও আগ্রাসী মেজাজে ছিলেন ক্যারিবীয় এই বিধ্বংসী ব্যাটার। 

পঞ্চম ওভারে চড়াও হন আজমতউল্লাহ ওমরজাইয়ের ওপর। নিজের প্রথম ওভারে মেডেন দেওয়া আফগান এই পেসার এবার এক ওভারেই দিলেন ১৮ রান। এক প্রান্তে লুইস ঝড় তুললেও অন্যপ্রান্তের ব্যাটাররা ছিলেন আসা-যাওয়ার মিছিলে। জয় (৭) আর আফিফ (৪) রানে ফেরার পর সাজঘরে ফিরেছেন লুইসও। ২৫ বলে ৩৭ রান করে আউট হন ক্যারিবীয় এই ব্যাটার। এরপর লঙ্কান অলরাউন্ডার দাসুন শানাকা ও পাকিস্তানি মোহাম্মদ নেওয়াজের ব্যাটে বিপর্যয় সামাল দেয় খুলনা।

পঞ্চম উইকেটে দুজনে মিলে গড়েন ৭৭ রানের জুটি। হাসান মাহমুদের বলে বোল্ড আউট হয়ে ব্যক্তিগত ৪০ রানে আউট হন শানাকা। লঙ্কান অলরাউন্ডার ফিফটি মিস করলেও বিপিএল খেলতে নেমেই পঞ্চাশ ফেরোলেন নেওয়াজ। রিপন মণ্ডলের শিকার হওয়ার আগে ৩৪ বলে করেন ৫৫ রান। তার ইনিংসে ছিল ৫টি চার ও ৩টি ছয়ের মার। রংপুরের হয়ে ২৯ রানে ৩ উইকেট নিয়েছেন হাসান মাহমুদ, ২০ রানে মাহেদি হাসানের শিকার ২ ব্যাটার। 

এক ম্যাচ পর দলে ফিরে চার ওভার বল করেও উইকেটশূন্য ছিলেন সাকিব আল হাসান। যদিও ছিলেন মিতব্যয়ী (৪-০-২১-০)। ২৪টি ডেলিভারির মধ্যে ১০টি দিয়েছেন ডট, খেয়েছেন ২টি বাউন্ডারি। দ্বিতীয় ওভারে খরচ করেন মাত্র ১ রান। ব্যাটিংয়ে নেমে দ্বিতীয় ওভারে রংপুরের স্পিনার মাহেদি হাসানের বলে খালি হাতে বিদায় নেন খুলনার অধিনায়ক এনামুল হক বিজয়। 

সতীর্থকে হারালেও মারমুখী মেজাজে ছিলেন আরেক ওপেনার ওয়েস্ট ইন্ডিজের এভিন লুইস। আফগানিস্তানের আজমতুল্লাহ ওমরজাইর করা পঞ্চম ওভারে ২টি ছক্কা ও ১টি চারে ১৮ রান তুলেন লুইস। পাওয়ার প্লে’র শেষ ওভারে মাহমুদুল হাসান জয়কে ৭ রানে শিকার করে খুলনা শিবিরে দ্বিতীয় আঘাত হানেন মাহেদি। 

এরপর আফিফ হোসেন ও লুইসকে আউট করে  খুলনাকে চাপে ফেলেন পেসার হাসান মাহমুদ। আফিফকে ৪ ও লুইসকে ৩৭ রানে শিকার করেন হাসান। ২৫ বল খেলে ৩টি করে চার-ছক্কা মারেন লুইস। ৬৪ রানে ৪ উইকেট পতনের পর খুলনার হাল ধরেন শ্রীলঙ্কার দাসুন শানাকা ও মোহাম্মদ নওয়াজ। ৫৩ বলে ৭৭ রানের জুটি গড়ে খুলনাকে লড়াকু সংগ্রহ এনে দেন তারা। ২০ ওভারে ৬ উইকেটে ১৬০ রানের পুঁজি পায় খুলনা।