ফেডারেশনগুলোতেও শিগগিরই অন্তর্বর্তী কমিটি

নিজস্ব প্রতিবেদক প্রকাশিত: আগস্ট ১৮, ২০২৪, ১২:১৭ পিএম
ফেডারেশনগুলোতেও শিগগিরই অন্তর্বর্তী কমিটি

‘ক্রিকেট, ফুটবলের মতো জটিলতা অন্য ফেডারেশনগুলোতে নেই। সেখানে যখন-তখন কমিটি ভেঙে দেওয়া যায় বা নির্বাচন দেওয়া যায়। যেগুলোতে অ্যাডহক কমিটি চলছে সেখানেও দ্রুত নির্বাচনের ব্যবস্থা করা যেতে পারে’, বলছিলেন জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের ক্রীড়া পরিচালক এস এম শাহ হাবিবুর রহমান হাকিম।

সরকার পরিবর্তনের পর বেশির ভাগ ফেডারেশনেরই সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক এই মুহূর্তে দায়িত্ব পালন করতে পারছেন না।

সভাপতিদের বেশির ভাগই ছিলেন আওয়ামী লীগের মন্ত্রী-এমপি, সাধারণ সম্পাদকরাও সক্রিয় ছিলেন রাজনীতিতে। এই অবস্থায় ক্রীড়া পরিষদ প্রতিটি ফেডারেশনেই চিঠি দিয়ে অনুপস্থিত কর্মকর্তাদের তালিকা চেয়েছে।

হাবিবুর রহমান জানিয়েছেন, এখনো সব কটি ফেডারেশনের সাড়া তাঁরা পাননি। সেই তালিকা চূড়ান্ত হওয়ার পর ফেডারেশনগুলোর কার্যক্রম সচল করতে অন্তর্বর্তীকালীন কমিটি অথবা নির্বাচনের পরিকল্পনা ক্রীড়া পরিষদের।

ভলিবল ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক আশিকুর রহমান যেমন বলেছেন, ‘আমি এর মধ্যেই ফেডারেশনে গিয়েছি। সামনে আমাদের এশিয়ান সেন্ট্রাল জোনের খেলা আছে। সেটিতে দল পাঠানো হবে কি না, এ নিয়ে সভাপতির (আতিকুল ইসলাম, ঢাকা উত্তরের মেয়র) সঙ্গে কথা বলেছি। উনি পরামর্শ দিয়েছেন দেশের সাম্প্রতিক পরিস্থিতির কথা তুলে ধরে এই আসরে না খেলার কথা জানিয়ে দিতে।

ক্রীড়া পরিষদকেও আমি এটাই জানিয়েছি, উনার সঙ্গে আমার কথা হয়েছে। কিন্তু উনি (আতিকুল) কোথায় আছেন আমি জানি না। উনারা (ক্রীড়া পরিষদ) অবশ্য বলেছেন, তাঁরা আতিক সাহেবের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারেননি, যে কারণে তাঁকে অনুপস্থিত হিসেবেই ধরে নেওয়া হয়েছে।’

এমন অনুপস্থিতদের তালিকা দীর্ঘই হওয়ার কথা। হকি ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক মমিনুল হক সাঈদকে যেমন অনুপস্থিত বলছেন কমিটির অন্য সদস্যরা।

শ্যুটিং ফেডারেশনও চলছে মহাসচিবকে ছাড়াই। দাবা ফেডারেশনের সভাপতি সাবেক আইজিপি বেনজীর আহমেদ দেশে নেই। অ্যাথলেটিকসের সভাপতি তোফাজ্জল হোসেন মিয়ার প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিবের পদ গেছে, ফেডারেশনেও হয়তো তিনি থাকছেন না। সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রকিব প্যারিস থেকে দেশে ফেরেননি। দেশের বাইরে সাঁতার ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক এমবি সাইফ।কাবাডি ফেডারেশনের সভাপতি সাবেক আইজিপি ও সাধারণ সম্পাদক সাবেক ডিএমপি কমিশনার। দুজনেরই চাকরি গেছে, ফেডারেশনেও তাঁদের থাকার কথা নয়। বক্সিং ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক মাজহারুল ইসলাম তুহিন আওয়ামী লীগের সঙ্গে যুক্ত। এরই মধ্যে ‘বৈষম্যহীন বক্সিং ফেডারেশন গঠন’-এর দাবিতে ফেডারেশনে অবস্থান নেন বেশ কয়েকজন বক্সার। বাস্কেটবল ফেডারেশনের সভাপতি সাবেক এমপি মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিনের অনুপস্থিত তালিকায় থাকার কথা। ক্যারম ফেডারেশনে সভাপতি জুনায়েদ আহমেদ পলক গ্রেপ্তার হয়েছেন।

ক্রীড়া পরিষদকে তাই উদ্যোগী হতেই হচ্ছে এই ফেডারেশনগুলোতে রদবদল আনার। গতকাল বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়াম চত্বরে কামরুননাহার ডানা, জোবেরা রহমান লিনুসহ সাবেক কয়েকজন খেলোয়াড় ও সংগঠক ‘রাজনীতি ও দুর্নীতিমুক্ত ক্রীড়াঙ্গন গঠন’-এর ব্যানার নিয়ে মানববন্ধন করেছেন। সাবেক ব্যাডমিন্টন তারকা ডানা বলেছেন, ‘অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের মতো এই মুহূর্তে ক্রীড়া ফেডারেশনগুলোতেও অন্তর্বর্তী কমিটি করে দিতে হবে দ্রুত, সেখানে প্রাধান্য দিতে হবে রাজনীতিমুক্ত ক্রীড়াসংশ্লিষ্ট লোকজনকে।’

মানসম্পন্ন সংস্কারের দাবির সঙ্গে ক্রীড়াঙ্গনে দীর্ঘদিনের ‘গণতান্ত্রিক’ সংস্কৃতির এক সুরে গাঁথা নয়। ভোটব্যাংক ভাঙিয়ে ক্রীড়াঙ্গনের বাইরের লোকজনের ফেডারেশনে মাথা গোঁজার বন্দোবস্ত আছে। বিভিন্ন ফেডারেশনের ভোটার তালিকা ধরে শুরু করলে সংস্কারকাজ কার্যকর হবে বলে মনে করেন ক্রীড়াঙ্গনের বিশিষ্টজনরা।

বিআরইউ