- ৩০০ আসনের ঘোষণা বনাম আম আপেল জামরুল
- ‘ডোন্ট ডিস্টার্ব’ চুক্তিতে গত তিন বছর ফুরফুরে
- প্রস্তুতি ১৪০ আসনে ভাগ্য খুলছে সাত-আট নেতার
- ক্ষমতার স্বাদে দ্বাদশে অকৃতজ্ঞতার অভিযোগ
- ভোট নিয়ে জামায়াতের সংসারে দুই বার্তা
- জামায়াতের রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ যতদূর
- সতর্কতার ধাপ চূড়ান্ত না হলে বিস্ফোরণ
ভোটের ছকে বদলে যাচ্ছে জামায়াত! পুরনোরূপে আসছে নতুন চরিত্র। দলটিতে হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ ম্যাচ দৃশ্যায়িত বলে অভিযোগ। দ্বাদশ নির্বাচনে হতে পারে ভোটের ঘুঁটিও। দেশের বড় দুটি দলের তীক্ষ্ন দৃষ্টি। লাভে-লোভের হিসাব কষছে জামায়াতও! ডিগবাজির নয়া আলাপ রাজনীতির মাঠে।
যদিও দলটির ভাষ্য, ওদের শীর্ষ নেতাদের হারানোর পর শূন্যতা রয়েছে। চৌকস নেতার অভাব। আধ্যাত্মিক নেতাও কম। নয়া নেতৃত্বে তা সম্পূরক হচ্ছে না। তবে রাজনীতির প্লাটফরম ঠিক রেখেছে। সেই থেকে এখন পর্যন্ত।
একাদশ সংসদ নির্বাচনে ২৪ আসনে লড়েছে। যদিও একটিও কপালে জুটেনি। এবারও পুরনোরূপে প্রস্তুতি নিয়েছে। এ হিসাবটা অতীতের চেয়ে ভিন্ন। গোপনে দুই নৌকাতেই পা রাখছে! বিশেষ পাড়ায় ঘুরে দাঁড়িপাল্লার প্রতীক পাওয়ার চেষ্টা চালাচ্ছে।
যদিও এই প্রতীক পাওয়ার আশা একেবারেই ক্ষীণ, তবে নয়া প্রতীক হিসেবে আম, আপেল কিংবা জামরুল পেতে ইঙ্গিত পাওয়া গেছে। এখনো চূড়ান্ত করা হয়নি।
এদিকে গত তিন বছর ডোন্ট ডিস্টার্ব চুক্তির কারণে ফুরফুরে থাকা দলটির ভেতরে এখন নানা জটিলতা তৈরি হয়েছে। ক্ষমতার স্বাদে একটি অংশে অকৃতজ্ঞতার অভিযোগ উঠছে। তেমনি সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের ফসলে সম্ভাবনার কথাও বলা হচ্ছে।
পর্দার আড়ালেই সব ঘোছানোর চেষ্টা হচ্ছে। দ্বাদশ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে ৯/৬ এর কারণে যেকোনো মুহূর্তে বিস্ফোরণও উড়িয়ে দেয়া যাচ্ছে না দলটিতে। ভোটের পলিসির চূড়ান্ত করতে স্বার্থবাদিতার কিছু অংশ নিয়ে ভেতরে ভেতরে ক্ষোভ চলছে। কেন্দ্র থেকে তৃণমূলেও বদলে যাওয়ার হিসাব হচ্ছে।
৩০০ আসনের ঘোষণা বনাম আম আপেল জামরুল : জামায়াতে চলছে লুকোচুরি। দৌড়ানো হচ্ছে বিশেষ পাড়ায়। গোয়েন্দা সংস্থা ও জামায়াতের নির্ভরযোগ্য সূত্র বলছে, জামায়াত আগামী দ্বাদশ নির্বাচনে দাঁড়িপাল্লা ফিরে পেতে দৌড়াদৌড়ি করছে। পর্দার আড়ালে বৈঠক হচ্ছে। একটি বিশেষ গোষ্ঠী চাচ্ছে আগামী দ্বাদশ নির্বাচনে যেন জামায়াত তিনশ আসনে নির্বাচনের ঘোষণা দেয়। এবং বিএনপির বিকল্প হিসেবে যাতে শক্তভাবে ভোটের মাঠেও থাকে।
তবে জামায়াতের আবদার রাখা হবে না। বিকল্প হিসেবে যদি আম, আপেল, জামরুল প্রতীক জামায়াত নিতে চায় তাহলে দেয়া হবে। শেষ মুহূর্তে ভোটের নানা হিসাবে দলটি এখন থেকেই সব ধরনের প্রস্তুতি রাখছে। যদি বিএনপির সংসারে থেকেও নির্বাচন করা লাগে তাহলে আগ থেকেই ভোটের যে পূর্বপ্রস্তুতি থাকা দরকার তা রাখা হচ্ছে।
আর যদি ভোটের আগে বিএনপির পক্ষ থেকে জামায়াতকে প্রকাশ্যে ঘোষণা দিয়ে ছেড়ে দেয়া হয় কিংবা জামায়াতই যদি কোনো কারণে বিএনপিকে ছাড়তে বাধ্য হয় সে জন্য আগে থেকে ভোটের মাঠের ছক কষা হয়েছে। একটি গোষ্ঠীর সাথে একাদশ সংসদ নির্বাচনের পর গত মাসে ফের আরো একটি বৈঠক হয়েছে। সেখানে ৩০০ আসনের নির্বাচন এবং দাঁড়িপাল্লার বিকল্পে আম আপেল জামরুল প্রতীক নিয়ে বিস্তর আলোচনা হয়েছে।
ডোন্ট ডিস্টার্ব চুক্তিতে ফুরফুরে : এখন আর কোনো কিছুতে বাধা নেই। প্রকাশ্যে সব কাজেই ফুরফুরে করা যাচ্ছে। উপরের সবুজ ইঙ্গিতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীও ঠাণ্ডাভাবে রয়েছে। একাদশ সংসদ নির্বাচনের পরপর সরকারের সাথে ডোন্ট ডিস্টার্ব চুক্তি করে জামায়াত। এমন কোনো কর্মসূচিও গ্রহণ করা হবে না যাতে সরকারের ওপর চাপ আসবে। তাহলে সরকারও হস্তক্ষেপ থেকে দূরে থাকবে।
গত তিন বছর জামায়াত কথা রেখেছে, সরকারও অতীতের কঠোর অবস্থান থেকে ফিরে এসেছে। চলমান আমিরের হস্তক্ষেপে রাজনৈতিক এমন দূরদর্শী নীতিকে জামায়াতের ব্যবসায়ী নেতারা সাদরে গ্রহণ করলেও একটি অংশের ক্ষোভ রয়েছে। ফাঁসিতে নিহত জামায়াত নেতাদের শহীদ বলে দাবি করা বড় অংশ বলছে, জামায়াতের শহীদ পরিবারের সাথে এ নীতি সাংঘর্ষিক।
তবে এমন চুক্তির বিষয়ে জামায়াতের কয়েকজন নেতাই মাত্র জানেন। তৃণমূলের রুকন বা আমিরদের এ ধরনের বার্তা দেয়া হয়নি। রাজনৈতিক কারণে চুক্তির বিষয়টিও জামায়াতের মাঠপর্যায়ের নেতাদের কাছে পৌঁছানো হয়নি।
চলতি সপ্তাহে জামায়াতের উল্লেখযোগ্য কয়েকটি কর্মসূচি বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, বিশ্বনবী হজরত মুহাম্মদ সা. ও হজরত আয়েশা রা.-কে নিয়ে অবমাননাকর মন্তব্যের প্রতিবাদে রাজধানীসহ সারা দেশে বিক্ষোভ করে দলটি। বিস্ময়কর হলেও সত্য, এ ঘটনায় জামায়াতের আমিরসহ প্রথম সারির কোনো নেতাকে দেখা যায়নি। মধ্য সারির নেতারাই প্রতিবাদ জানিয়েছেন। বাজেট প্রত্যাখ্যান করে রাজধানীতে বিক্ষোভেও জামায়াতের আমির ছিলেন না।
এসব বিক্ষোভে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী দাঁড়িয়ে থাকলেও কোনো ধরনের বাধা দেয়া হয়নি। তবে ফটোসেশনের কর্মসূচিগুলোতে জামায়াতের আমিরকে দেখা গেছে। সিলেটে বন্যায় অসহায়দের খাবার বিতরণ, সীতাকুণ্ডের বিএম কনটেইনার ডিপো পরিদর্শন, রাজনৈতিক নেতাদের দেখতে যাওয়া। ঢাকা ১৪ আসনের সাবেক এমপি বিএনপির কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য এসএ খালেককে নিজ বাসায় গিয়ে সহানুভূতি জানানোর ছবিতে জামায়াতের আমিরকে সক্রিয়ভাবে দেখা গেছে।
ক্ষমতার স্বাদে অকৃতজ্ঞতার অভিযোগ : গত বছরের ৬ সেপ্টেম্বর রাজধানীর বসুন্ধরা আবাসিক এলাকা থেকে জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার, সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল হামিদুর রহমান আজাদ ও রফিকুল ইসলাম খানসহ দলটির ৯ নেতাকে আটক করে পুলিশ।
গোয়েন্দা সূত্র ও দলটির একাংশ থেকে অভিযোগ রয়েছে, ওইদিন দলের এই শীর্ষ নেতাদের আটকের বড় ভূমিকা পালন করেছে স্বয়ং জামায়াতের ভোটের পলিসির একটি অংশ! যারা আগামী দ্বাদশ নির্বাচনে যেকোনো উপায়ে ভোটে গিয়ে কিছু আসন পেতে চায়। কারণ দলের মধ্যে ভোট সংক্রান্ত সব সিদ্ধান্তে মিয়া গোলাম পরওয়ার, হামিদুর রহমান আজাদ ও রফিকুল ইসলাম খানের বড় ভূমিকা থাকে। এ তিনজনের সিদ্ধান্তকে অগ্রাধিকার দিতে হয়। এ জন্য আগ থেকেই তাদের দূরে রাখা হয়েছে। যাতে স্বার্থের মধ্যে নিজেদের পছন্দমতো দলে সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করা যায়।
অন্যথায় এ তিনজনকে বৈঠকে রেখে ভোটের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করা সম্ভব নয়। দলের একটি অংশের ভাষ্য, কারাগারেও একটি গোষ্ঠীর সাথে ভোট নিয়ে সমাঝোতা ও বৈঠক হচ্ছে। ভোটের এই পলিসিমেকারদের ওই গোষ্ঠীটি নিজেদের ঘরে নিতে চাচ্ছে। আর তা হচ্ছে জামায়াতের লিড পর্যায়ের একটা শ্রেণির ইঙ্গিতেই। যারা যেকোনো উপায়ে ক্ষমতার স্বাদ পেতে চাচ্ছে। যে কারণে ডোন্ট ডিস্টার্ব নীতির মধ্যেও ভোটের পলিসির নেতারা কারাগারে।
সমপ্রতি এ নিয়ে জামায়াতের রাজনীতিতে চোখ রাখা শীর্ষ এক নেতা আমার সংবাদকে বলেন, সেদিন ওই নেতাদের বৈঠকের বিষয় জানতেন আমিরে জামায়াতসহ দুজন নেতা। আটক হওয়ার মতো কোনো ইঙ্গিত বা বার্তা আগ থেকেই ছিল না। সব নিরাপত্তা নিশ্চিত করেই বৈঠকে বসা হয়। সে বৈঠকে আরো তিন নেতা উপস্থিত থাকার কথা। রহস্যজনকভাবে তারা বৈঠকে যাননি। এ থেকে ধারণা করা হচ্ছে, জামায়াতের ভোটের মৌলিক পলিসিমেকারদের দূরে রেখে একটি অংশ ক্ষমতার স্বাদ পেতে অকৃতজ্ঞতার ঘটনাটি ঘটিয়েছে। যাতে নিজেদের মতো করে সিদ্ধান্ত নিতে পারে। ভোট যতই ঘনিয়ে আসছে ততই স্বার্থবাদী বিষয়গুলো স্পষ্ট হচ্ছে মনে করা হচ্ছে।
ভোট নিয়ে জামায়াতের সংসারে যা হচ্ছে : দৃশ্যটা একাদশ সংসদ নির্বাচনের। জামায়াত কমপক্ষে ১৭০টি আসন দাবি করা হয় বিএনপির কাছে। তখন বিএনপি ২০ দলীয় জোট ও ঐক্যফ্রন্ট সব মিলিয়ে মাত্র ১৭টি আসন দেয়া হয়, আর জামায়াতকে একাই দেয়া হয় ১৯টি আসন। এ ছাড়া জামায়াত পাঁচটি আসনে স্বতন্ত্র নির্বাচন করে। দলীয় সূত্রগুলোর ভাষ্য ছিল, জামায়াতকে মূলত ২৪টি আসনই দেয়া হয়। ১৯টি ঘোষিত এবং পাঁচটি অঘোষিত।
এবারো দ্বাদশ নির্বাচনকে সামনে রেখে দলটির ভোটের প্রস্তুতি রেখেছেন। জামায়াতকে ছাড়া নিয়ে সম্প্রতি বিএনপির স্থায়ী কমিটির তিনটি বৈঠকে আলোচনা ও চাপ প্রয়োগ হলেও কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। জামায়াত পুরোনো ছকেই থাকবে। কোনো জোটে সম্পৃক্ত করা হবে না। বিএনপি ধারণা করছে, অতীতের মতো আগামী দ্বাদশ নির্বাচনেও জামায়াত প্রায় দেড়শ আসন চেয়ে বসতে পারে। এমন রাগ অভিমানে ভোটের আগে অনেক ঘটনাই জন্ম নিতে পারে।
তাই আগ থেকেই জামায়াতও সব ধরনের প্রস্তুতি রাখছে। খালেদা জিয়া যতদিন আছেন ততদিন হয়তো জামায়াতকে বিএনপি ছাড়তে পারবে না। কিন্তু কোনো কারণে যদি খালেদা জিয়ার পাওয়ার চলে যায় তাহলে জামায়াতকে আনুষ্ঠানিক ছেড়ে দেয়ার মতো ঘটনা ঘটতে পারে। তাই ভোটের পলিসি থেকে আগ থেকেই সরকারের সাথে যোগাযোগ ও দলীয় প্রস্তুতি দুটোই রাখা হচ্ছে।
প্রস্তুতি ১৪০ আসনে সাত-আটজন নেতার ভাগ্য খুলছে : ৩০০ আসনে নির্বাচনে করার জন্য বিশেষ একটি গোষ্ঠী থেকে জামায়াতের কাছে প্রস্তাবনা রয়েছে। বেশ উসকানিও দেয়া হচ্ছে। রয়েছে সবুজ সঙ্কেতও। তবে জামায়াতের প্রস্তুতি মাত্র ১৪০ আসনে বলে নির্ভরযোগ্য একটি সূত্রে জানা গেছে। আগামী দ্বাদশ নির্বাচনে জামায়াত কয়েকটি আসনের দিকে তীক্ষ দৃষ্টি রেখেছে। বিএনপিবিহীন নির্বাচনে গেলেও সাত-আটজন নেতার জন্য আসন নির্দিষ্ট থাকবে বলে জানা গেছে। ওই নেতারা যেকোনো উপায়ে ভোটের প্রস্তুতি রাখছেন। বিএনপি হঠাৎ ছেড়ে দেয়ার ঘোষণা দিলেও যাতে কোনো ধরনের বাধায় পড়তে না হয় তাই আগে থেকেই দেড়শ আসনের প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে। তবে শঙ্কা রয়েছে অনেক।
অতীতে জামায়াতে ইসলামী অধিকার ও ন্যায়বিচারকে অগ্রাধিকার দিয়ে তৃণমূলের কাছে কিছু কাজের জন্য আস্থাভাজন হতে পারলেও গত এক দশকে সেটি প্রায় ম্লান হয়ে গেছে। সব কিছুতে রাজনৈতিক হিসাব বাস্তবায়ন করায় আদর্শের শক্তির মেরুদণ্ড এখন অনেকটাই ভেঙে গেছে। ধারণা করা হচ্ছে, স্বয়ং জামায়াতই মাঠ পর্যায়ের জামায়াতকে সহযোগিতা করবে না। দলটিও এখন অন্যান্য রাজনৈতিক আদর্শের ন্যায় রূপ নিয়েছে। দলের উদ্দেশ্য ও গঠনতন্ত্র পরিপন্থি কর্ম অনেকেরই মন ভেঙে দিয়েছে। এর মধ্যেও শত হিসাবে ১৪০ আসনে দলটি নির্বাচন করবে।
জামায়াতের রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ কতদূর : জামায়াতের ৮০ ঊর্ধ্বে জ্যেষ্ঠ দুই নির্বাহী পরিষদের সদস্যের সাথে কথা হয় আমার সংবাদের। তারা জানিয়েছেন, বিএনপির তরীতে পা রেখেই জামায়াতের ভবিষ্যৎ নির্ধারণ করতে হবে। অতীতে বিএনপির সমর্থন নিয়েই জামায়াতকে ভাগ্য নির্ধারণ করতে হয়েছে। আসন পেতে হলে যেমন জামায়াতকেও বিএনপির প্রয়োজন তেমনি জামায়াতের প্রয়োজন বিএনপির।
কারণ রাজনীতি ও ভোটের হিসাব এভাবেই হয়ে আসছে। বাংলাদেশে প্রায় অর্ধশত আসন রয়েছে জিতে আসতে হলে দুদলেরই সমন্বয় করতে হবে। বিএনপি যদি কোনোভাবে জামায়াতকে ছেড়ে না দেয় তাহলে ঐক্যবদ্ধ ও সমঝোতায় যা পাওয়া যায় তা নিয়েই নির্বাচন করা উচিত। অন্যথায় অন্য কোনো লাভের হিসাব করলে কারো ইঙ্গিতে বিএনপি ছেড়ে ভোটে গেলে ভবিষ্যৎ রাজনীতিতে মৃতের ছাপ পড়তে পারে জামায়াতে।
তবে এ ক্ষেত্রে বিএনপি যদি নিজ উদ্যোগে জামায়াতকে ছেড়ে দেয় সেখানে রাজনীতির অনেক হিসাব রয়েছে। জামায়াতের তখন যেকোনো ভোটের পলিসিতে তারুণ্যের একটি জোয়ার আসতে পারে। জামায়াতের প্রতি রাজনীতির যে একটি হিসাব আছে তখন জামায়াত সেটি ঘরে তুলতে পারবে।
সতর্কতার ধাপ চূড়ান্ত না হলে বিস্ফোরণ : জামায়াতের নীতিনির্ধারণী কয়েকজন নেতার সাথে কথা বলে জানা যায়, দলটিতে ব্যক্তির আনুগত্যের চাইতেও আদর্শের নীতিকে বেশি গুরুত্ব দেয়া হয়। ব্যক্তির প্রতি এক মাপকাঠিতে আনুগত্য রয়েছে। যদি নীতির বিরুদ্ধে কোনো কাজ করা হয় তাহলে যেকোনো মুহূর্তে গণবিস্ফোরণ হতে পারে। জামায়াতে ইসলামী শীর্ষ নেতাদের যখন ফাঁসি দেয়া হয় যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে তখন দলটি চৌকস অংশ নির্বাহী পরিষদের কাছে প্রস্তাব জানায় সরকারের সাথে রাজনৈতিক সমঝোতা করার জন্য। কিন্তু নির্বাহী পরিষদের বড় অংশই সরকারের সাথে তখন বসতে রাজি হয়নি। স্পষ্ট জানিয়ে দেয়া হয়, এ ইস্যুতে সরকারের কাছে মাথানত করা হবে না। সরকারের সাথে বসবেও না।
এরপর একে একে প্রথম সারির সব নেতাকেই ফাঁসির কাষ্ঠে ঝুলতে হয়েছে। এ নিয়ে দলটিতে মান-অভিমানও হয়েছে। তখনই দাবি তোলা হয় জামায়াত কী ধর্মীয় দল নাকি রাজনৈতিক দল স্পষ্ট করার জন্য। রাজনৈতিক দল হলে কেন রাজনৈতিক সমঝোতা করা হবে না? সেই দলটি যদি এখন লাভে লোভে পড়ে সরকারের সাথে রাজনৈতিক চুক্তিতে যায় তাহলে আচরণটি ফাঁসিতে মৃত্যু হওয়া শহীদ বলে দাবি করা পরিবারের সাথে আত্মঘাতী হবে বলে মনে করা হচ্ছে। তৃণমূলের কাছে দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতাদের আচরণ প্রকাশ পেলে বিস্ফোরণ ঘটতে পারে।
ভোটে অংশগ্রহণ ও সামগ্রিক বিষয়ে জানতে চাইলে কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও সিলেট মহানগর আমির অ্যাডভোকেট এহসানুল মাহবুব জুবায়ের আমার সংবাদকে বলেন, ‘নির্বাচনকে সামনে রেখে প্রতিটি রাজনৈতিক দল যেভাবে প্রস্তুতি নেয়, সেভাবে জামায়াতও রাখছে। সারা দেশে যেসব আসনে জামায়াত আগে নির্বাচন করেছে সেগুলোয় আমাদের শক্ত প্রস্তুতি রয়েছে। কেন্দ্র থেকে তাদের নার্সিং করা হচ্ছে। আগ থেকেই কিভাবে নির্বাচনে যাব তা এখনি বলা যাচ্ছে না।’
সরকারের ওপর ক্ষোভ ও অভিযোগ জানিয়ে অ্যাডভোকেট এহসানুল মাহবুব জুবায়ের বলেন, ‘সরকার জামায়াতে ইসলামীর ওপর নির্যাতন চালিয়ে বারবার দলটিকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে চেয়েছে; কিন্তু সাংগঠনিক দলটিকে ইচ্ছে করলেই শেষ করা যাবে না। আমাদের থেকে কোনো নেতাকর্মী দূরে সরে যায়নি। আমাদের নেতারাই আমাদের শক্তি।’
বিএনপির সাথে জোটের বিষয়ে জানতে চাইলে জামায়াতের কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও সাংগঠনিক সম্পাদক এবং ইসলামী ছাত্রশিবিরের সাবেক কেন্দ্রীয় সভাপতি মতিউর রহমান আকন্দ আমার সংবাদকে বলেন, ‘বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী সিদ্ধান্ত নিয়েছে— এ সরকারের অধীনে আর কোনো নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে না। জামায়াত আপাতত এই সিদ্ধান্তের বাইরে যাবে না।’
সমপ্রতি রাজনৈতিক একটি বৈঠক বা সমঝোতার বিষয়ে জানতে চাইলে দলের কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগর দক্ষিণের আমির নূরুল ইসলাম বুলবুল আমার সংবাদকে জানান, ‘এ বিষয়ে তার কোনো জানা নেই’। জামায়াত কার সাথে কী বিষয়ে বৈঠক করেছে তিনি কিছুই বলতে চাননি।
কত আসনে নির্বাচন করবে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘বিভিন্ন গণমাধ্যমে দেখছি ৩০০ আসন, আবার অনেকে অন্য সংখ্যাও বলে এগুলো কোথায় থেকে কিভাবে আসে তিনি জানেন না। আর দলীয় কর্মীরা কেন বিভিন্ন ফেসবুক গ্রুপ বা নানাভাবে প্রকাশ করছে তাও তিনি জানেন না। এ নিয়ে কর্মীদের ওপর তিনি ক্ষোভও প্রকাশ করেন, বলেন” সবাই তো এখন সিদ্ধান্ত নিজেরাই দিয়ে দিচ্ছেন, আমরা এগুলো কিছুই জানি না।’