‘টিকিট এখন সোনার হরিণ। গ্রামে না গেলে ঈদের পূর্ণতা পায় না। তাই টিকিট সংগ্রহে শেষ দিনের অপেক্ষা করছি।’ রাজধানীর কমলাপুর রেলস্টেশনে টিকিট যুদ্ধে দুই দিন ব্যর্থ হয়ে কামারুজ্জামান নামের এক যাত্রী এসব কথা বলেন।
কয়েকদিন পরই পবিত্র ঈদুল আজহা। কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনে যাত্রীদের টিকিট সংগ্রহের ধুম। এদিকে ঈদ উপলক্ষে চতুর্থ দিনের মতো ট্রেনের অগ্রিম টিকিটও ইতোমধ্যে শেষ হয়ে গেছে। গতকাল সোমবার সকাল ৮টা থেকে এ টিকিট বিক্রি শুরু হয়।
আজ মঙ্গলবার দেয়া হবে ৯ জুলাইয়ের টিকিট। বরাবরের মতো গতকালও কাউন্টারের পাশাপাশি অর্ধেক টিকিট অনলাইন ও অ্যাপে দেয়া হয়। কাউন্টারে বিকাল ৪টা পর্যন্ত টিকিট দেয়ার কথা থাকলেও দুপুর ১২টার আগেই টিকিট শেষ হয়ে যায়। অনলাইনে তো প্রায় ২০ মিনিটের মধ্যেই শেষ হয় টিকিট।
এছাড়া ১১ জুলাইয়ের ট্রেনের ফিরতি টিকিট ৭ জুলাই, ১২ জুলাইয়ের টিকিট ৮ জুলাই, ১৩ জুলাইয়ের টিকিট ৯ জুলাই এবং ১৪ ও ১৫ জুলাইয়ের টিকিট বিক্রি করা হবে ১১ জুলাই।
অগ্রিম টিকিট শুরু হওয়া থেকেই রাজধানীর কমলাপুর স্টেশনে দেখা যায়, ভোর থেকেই টিকিট প্রত্যাশীদের বিশাল লম্বা লাইন। টিকিট কাউন্টার থেকে লাইন শুরু হয়ে কাউন্টারের বাইরে চলে যায়। টিকিট পেতে শনিবার সকাল থেকে স্টেশনে সিরিয়াল দিয়ে গদাগাদি করে অবস্থান করেন যাত্রীরা। নতুন করে করোনা সংক্রমণ দেখা দিলেও নেই কোনো স্বাস্থ্যবিধির বালাই।
টিকিটপ্রত্যশীরা বলছেন, ট্রেনের টিকিট নামক সোনার হরিণ পেতে যেন রীতিমতো যুদ্ধ করতে হচ্ছে। তারপরও আশা ছাড়ছে না অনেকেই। কেউ কেউ আবার বিকল্প পথে অর্থাৎ সড়ক পথে গ্রামে ফেরার কথা ভাবছেন।
গতকাল বেলা ১২টায় টিকিট শেষ হলে শুরু হয় শেষ দিনের অর্থাৎ ৯ জুলাইয়ের টিকিটের লাইন। অনেকে সেই প্রস্তুতি নিয়ে এসেছেন স্টেশনে। অনেকেই মঙ্গলবার সারাদিন ও রাত এখানেই কাটাবে স্বপ্নের টিকিটের প্রত্যাশায়।
আসন্ন ঈদুল আজহা উপলক্ষে যাত্রীদের সুবিধার্থে ছয় জোড়া বিশেষ ট্রেন পরিচালনা করা হবে। সেগুলো হলো— দেওয়ানগঞ্জ স্পেশাল, চাঁদপুর স্পেশাল ১, ২, বীর মুক্তিযোদ্ধা সিরাজুল ইসলাম (পঞ্চগড়) ঈদ স্পেশাল, শোলাকিয়া স্পেশাল ১, ২।
এছাড়া, আগামী ৬ জুলাই থেকে ৯ জুলাই পর্যন্ত ঢাকামুখী একতা, দ্রুতযান, পঞ্চগড়, নীলসাগর, কুড়িগ্রাম, লালমনি ও রংপুর এক্সপ্রেস ট্রেনগুলোর বিমানবন্দর স্টেশনে যাত্রাবিরতি থাকবে না। আগামী ৬ থেকে ১৪ জুলাই পর্যন্ত মিতালি এক্সপ্রেস এবং ৭ থেকে ১৪ জুলাই পর্যন্ত মৈত্রী এক্সপ্রেস ও বন্ধন এক্সপ্রেস ট্রেন চলাচল করবে না।
চরম দুর্ভোগে যাত্রীরা টিকিটের অপক্ষো করছেন। অনেক যাত্রীই কয়েকদিন ব্যর্থ হয়ে এখন শেষ দিনের আশায় আছেন। আজ টিকিট বিক্রির শেষ দিন। আজও টিকিট সংকটের আশঙ্কা করছেন যাত্রীরা। অনেকে ধারণা করছেন, শেষ দিন ব্ল্যাকে টিকিট পাওয়া যাবে হয়তো।
তারপরও সবাই চায় নাড়ির টানে বাড়ি ফেরার টিকিট। টিকিট সিন্ডিকেট সংশ্লিষ্টদের দৌরাত্ম্য ধরতে না পারলে শেষ মুহূর্তেও লাঘব হবে না যাত্রী হয়রানি ও সীমাহীন দুর্ভোগ।