পশুর হাটে যেকোনো অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে শুরু থেকেই আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কঠোর অবস্থানের কথা বলা হলেও দৃশ্যত এখনো বলার মতো তৎপরতা লক্ষ্য করা যায়নি হাটগুলোতে।
গতকাল ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশনের ২০টি হাটের অধিকাংশগুলোতেই সরেজমিন ঘুরে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায়নি। তবে হাটের নিরাপত্তা নিশ্চিতে এখনো আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রস্তুতির কথা বলা হচ্ছে।
যদিও ঈদের বাকি রয়েছে আর মাত্র তিন দিন। এখনো হাটে পুলিশ ও র্যাবের অস্থায়ী ক্যাম্প নির্মাণের প্রস্তুতি চলছে। চলছে সিসিটিভি ক্যামেরা ও ওয়াচ টাওয়ার নির্মাণের প্রস্তুতিও।
গতকাল পর্যন্ত খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, হাটগুলোতে এখনো পৌঁছেনি জালটাকা শনাক্তের মেশিনও। এরই মধ্যে হাটগুলোতে পশু বেচাকেনা শুরু হয়েছে বলে জানিয়েছেন একাধিক বিক্রেতা এবং হাটের আয়োজকরা। যে কারণে এবারের পশুর হাটের নিরাপত্তা ঝুঁকি রয়েছে বলেও বলছেন হাটে আসা ক্রেতারাও।
অথচ গত রোববার পুলিশের মহাপরিদর্শক ড. বেনজীর আহমেদ পশুর হাটগুলোতে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদারের নির্দেশ দিয়েছিলেন।
এছাড়া বন্যাকবলিত এলাকাসহ দেশজুড়ে ঈদের সময় আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে আগাম প্রয়োজনীয় সব ধরনের ব্যবস্থা নিতেও বেশকিছু নির্দেশনা দিয়েছেন তিনি।
ঈদের আর মাত্র তিন বাকি থাকলেও এখনো আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, পশুর হাটকে কেন্দ্র করে কয়েক স্তরের নিরাপত্তাব্যবস্থা গ্রহণের প্রস্তুতি চলছে।
এরমধ্যে পশুর হাটগুলোতে পর্যাপ্ত সংখ্যক পুলিশ মোতায়েন থাকবে। পশুর হাটে অজ্ঞান পার্টি ও ছিনতাই চক্র প্রতিরোধে ইউনিফর্মের পাশাপাশি সাদা পোশাকেও বিপুলসংখ্যক পুলিশ মোতায়েন থাকবে।
এছাড়া প্রতিটি পশুর হাটে ওয়াচ টাওয়ার ও অস্থায়ী পুলিশ কন্ট্রোল রুম স্থাপনের প্রস্তুতিও চলছে ডিএমপির। অন্যদিকে জালটাকার বিস্তার রোধ ও পশুর হাটে অজ্ঞান পার্টি, মলম পার্টি, পকেটমার ও অন্যান্য অপরাধীদের তৎপরতা বন্ধ করতে কার্যকরী ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। পশুর হাটকেন্দ্রিক মানি এস্কর্ট ব্যবস্থা থাকবে। থাকবে জাল নোট শনাক্ত করার মেশিনও।
যদিও গতকাল পর্যন্ত এসবের বাস্তবায়ন দেখা যায়নি ঢাকা দুই সিটির নির্ধারিত ২০টি হাটের অধিকাংশেই। গতকাল রাজধানীর শনির আখড়া, পোস্তগোলা শ্মশানঘাট এলাকার হাট, ধোলাইপাড় ট্রাক টার্মিনাল সংলগ্ন হাট, রহমতগঞ্জ ক্লাবের খেলার মাঠের হাট, শাহজাহানপুর-খিলগাঁও রেলগেট বাজারের মৈত্রী সংঘ ক্লাব হাট ও আফতাব নগর হাটসহ অধিকাংশ হাটে সরেজমিন ঘুরে নিরাপত্তা ব্যবস্থার ঢিলেঢালা অবস্থান দেখা যায়।
জানতে চাইলে শনির আখড়া হাট আয়োজন কমিটির সাধারণ সম্পাদক জিয়া উদ্দিন জিয়া বলেন, বেচাকেনা শুরু হলেও এখনো কিছুটা কম।
নিরাপত্তার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা রয়েছে। পুলিশ সদস্যরা রয়েছেন। যদিও হাটে সরেজমিন ঘুরে পুলিশের উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায়নি গতকাল।
এছাড়া জালটাকা শনাক্তের মেশিন বসানোর বিষয়ে তিনি বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনা অনুযায়ী দুটি ব্যাংক (বেসিক ব্যাংক ও যুমনা ব্যাংক) এ হাটে জালটাকা শনাক্তের মেশিন বসাবে। তারা জায়গা দেখে গেছে, আজ থেকে মেশিন বসানোর কথা রয়েছে।
সিটি কর্পোরেশন সূত্রে জানা গেছে, এবার উত্তর সিটি কর্পোরেশন (ডিএনসিসি) এলাকায় বসছে আটটি অস্থায়ী পশুর হাট। অন্যদিকে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন (ডিএসসিসি) এলাকায় বসছে ১০টি অস্থায়ী পশুর হাট। ডিএনসিসির গাবতলী ও ডিএসসিসির সারুলিয়া স্থায়ী হাটেও কোরবানির পশু বেচাকেনা হবে।
এছাড়া সারা দেশে চার হাজার ৪০৭টি হাট বসবে বলেও জানা গেছে। ঢাকা ও ঢাকার বাইরে কোরবানির পশুর হাটের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ইতোমধ্যে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সংশ্লিষ্টদের বৈঠকও হয়েছে।
অন্যবারের মতো এবারো কোরবানির পশুর হাটে নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা বলয় সৃষ্টি করার জন্য নির্দেশও দেয়া হয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে। তবে ঢাকার বাইরের হাটে নিরাপত্তা ব্যবস্থা মোটামুটি সন্তোষজনক হলেও ঢাকায় এখনো সন্তোষজনক নয় বলে জানান ক্রেতা-বিক্রেতারা।
শুধু তাই নয়, হাটে আসা ক্রেতা-বিক্রেতা কারো মুখেই মাস্ক ব্যবহারের প্রবণতাও লক্ষ্য করা যায়নি। যদিও মাস্ক পরিধান করে হাটে প্রবেশ নিশ্চিতের নির্দেশ রয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ওপর। রাজধানীর সবচেয়ে জমজমাট পশুর হাটগুলোর মধ্যে অন্যতম গাবতলীর স্থায়ী পশুর হাট।
এই হাটে ক্রেতা-বিক্রেতাদের ভিড় রাজধানীর অন্য সব হাটের তুলনায় বেশি। ইতোমধ্যে এই পশুর হাটে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ব্যবসায়ীরা কোরবানির পশু নিয়ে আসতে শুরু করেছেন।
এছাড়া হাটে নিরাপত্তা ব্যবস্থার প্রস্তুতিও শুরু হয়েছে বলে জানা গেছে। তবে বাস্তবে সেখানকার দৃশ্যও ভিন্ন।
জানতে চাইলে ডিএমপির শ্যামপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মফিজুল আলম বলেন, হাটে এখনো বেচাকেনা শুরু হয়নি। তারপরও হাটের নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। একটি অস্থায়ী পুলিশ কন্ট্রোল রুম ও ওয়াচ টাওয়ার বসানো হয়েছে। হাট এলাকায় গোয়েন্দা নজরদারি বাড়ানো হয়েছে।
তবে সরেজমিন ঘুরে আপনার থানাধীন পোস্তগোলা শ্মশানঘাট হাটে পুলিশ কন্ট্রোলরুম ও ওয়াচ টাওয়ারের অস্তিত্বই দেখা যায়নি জানালে তিনি বলেন, প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। সিসিটিভি ক্যামেরা স্থাপনের প্রস্তুতিও নেয়া হচ্ছে।
এদিকে অন্যবারের মতো এবারো হাট এলাকায় নিরাপত্তা বলয় সৃষ্টি করবে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব)। কোরবানির প্রতিটি পশুর হাটে বিশেষ নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে অন্য সব আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে সমন্বয় করে কাজ করবে র্যাব।
রাজধানীর প্রতিটি কোরবানির পশুর হাটে র্যাবের কন্ট্রোল রুম, ওয়াচ টাওয়ার ও টহল টিম থাকবে। যদিও হাটগুলোতে র্যাবের এসব কার্যক্রমেরও বাস্তবায়ন দেখা যায়নি গতকাল পর্যন্ত।
র্যাব সদর দপ্তরের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের সহকারী পরিচালক (এএসপি) আ ন ম ইমরান খান বলেন, কোরবানির পশুর হাটকে কেন্দ্র করে নিরাপত্তা নিশ্চিত করার দায়িত্বে নিয়োজিত থাকবে র্যাব।
কোরবানির পশুর হাটকে কেন্দ্র করে চাঁদাবাজি, ছিনতাই, অজ্ঞান, মলম পার্টি, জালটাকা ছড়ানো রোধে ইউনিফর্মে ও সাদা পোশাকে কাজ করবে র্যাব। পশু আনা-নেয়া করা ট্রাকে যেন রাস্তায় কোনো ধরনের ছিনতাই বা চাঁদাবাজির ঘটনা না ঘটে সে লক্ষ্যেও রাস্তায় র্যাবের গাড়ি টহল দেবে।