রাজধানীতে এবারও থাকছে না পশু জবাইয়ের নির্দিষ্ট স্থান। জবাইখানায় নয়, সুবিধামতো স্থানেই পশু কোরবানি করতে চান নগরবাসী। ঢাকার বাসিন্দারা বলছেন, নিজ এলাকা থেকে নির্ধারিত স্থান দূরে হওয়ার কারণেই তারা দুই সিটির নির্ধারিত স্থানে পশু জবাইয়ে অনাগ্রহী।
আবার কেউ কেউ বলছেন, পরিবারের সদস্যদের সামনে গরু-ছাগল জবাই করার ইচ্ছা, সুবিধামতো স্থানে জবাই ও মাংস কাটাকাটিতে উৎসবমুখর পরিবেশের কারণেও তারা সিটি কর্পোরেশন নির্ধারিত স্থানে কোরবানিতে আগ্রহী নন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, নগরের পশু জবাইখানা সম্পর্কে জানেন না অনেকে। যারা জানেন তারাও সেখানে যেতে চান না। সব মিলিয়ে নগরের বাসিন্দারা নিজেদের মতো করেই নিজের নিজের পরিবেশে কোরবানি দিতে ইচ্ছুক।
সূত্র জানায়, নির্ধারিত স্থান নির্মাণে ত্রিপল-শামিয়ানা টানানোতে ব্যয় হয় অনেক টাকা। এরপরও নগরবাসী সেখানে না যাওয়ায় অর্থ ও শ্রম কোনো কাজে লাগছে না। কাউন্সিলরদের এসব
অভিযোগের ভিত্তিতেই কোরবানিতে নির্দিষ্ট স্থান না রাখার সিদ্ধান্ত নেয় দুই সিটি কর্পোরেশন।
সংশ্লিষ্টদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন গত দুই বছর পশু জবাইয়ের স্থান বন্ধ করে দেয়। তবে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন (ডিএনসিসি) গত বছর ৩০৭টি স্থান নির্ধারণ করে দিলেও সেখানে কোরবানিদাতাদের সাড়া মেলেনি। তাই উত্তর সিটিতে এবার নির্দিষ্ট স্থানের তালিকা করা হলেও শেষ মুহূর্তে সেটি অনুমোদন দেয়া হয়নি।
তবে ডিএনসিসিতে পরীক্ষামূলকভাবে কিছু নির্ধারিত স্থান থাকবে। এছাড়া ডিএনসিসি এলাকায় ছয় লাখের অধিক পশু কোরবানি দেয়া হতে পারে। এদিকে ডিএসসিসিতে কি পরিমাণ পশু কোরবানি দেয়া হবে তার সঠিক হিসাব না থাকলেও কোরবানির বর্জ্য অপসারণের জন্য ব্যাপক প্রস্তুতিও রয়েছে দুই সিটির।
ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন (ডিএসসিসি) সূত্র জানায়, নির্ধারিত স্থানে পশু জবাই করতে যান না বাসিন্দারা। নিজের সুবিধা মতো স্থানে কোরবানি দিতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন তারা। জবাইখানা ব্যবহার না করাই অর্থ ও শ্রম নষ্ট হচ্ছে। এ ব্যাপারে কাউন্সিলরদের পক্ষ থেকে অভিযোগ দেয়া হয়। ফলে সিটি কর্পোরেশনের সিদ্ধান্তেই ২০২০ সাল থেকে পশু জবাইয়ের জন্য নির্ধারিত স্থান বন্ধ রয়েছে।
এদিকে ঢাকা দক্ষিণ সিটির আওতাধীন এলাকার বর্জ্য ২৪ ঘণ্টার ভেতরে সরানো হবে। বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় ৯ হাজার ৫০ জন লোকবল কাজ করবেন। পাশাপাশি বর্জ্য সরাতে ৩০০ যান-যন্ত্রপাতি প্রস্তুত রয়েছে। কোরবানিদাতাদের পরিবেশবান্ধব পলিথিন দেয়া হবে। ২৮ টন ব্লিচিং পাউডার ছিঁটানোর পাশাপাশি ২০৫ গ্যালন স্যাভলন ব্যবহার করা হবে।
আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তাদের নেতৃত্বে মাঠে ১০টি টিম থাকবে। সকল কার্যক্রম তদারকি করতে ঈদের আগের দিন, ঈদের দিন ও পরের দিন নগর ভবনে একটি লাইভ মনিটরিং সেল ও কন্ট্রোলরুম থাকবে।
ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন (ডিএনসিসি) সূত্র জানায়, গত বছর তিন শতাধিক স্থান নির্ধারণ করা হলেও সেখানে যাননি বাসিন্দারা। তাই এবারও থাকছে না নির্ধারিত স্থান। তবে পরীক্ষামূলকভাবে কয়েকটি স্থান চালু থাকতে পারে বলে জানায় সংশ্লিষ্ট কৃর্তপক্ষ।
এদিকে কোরবানির বর্জ্য সরাতে ঈদের দিন ও পরের দিন প্রায় ১০ হাজার লোকবল কাজ করবেন। পাশাপাশি বর্জ্য সরাতে ৫৮৫টি হালকা ও ভারী যান-যন্ত্রপাতি প্রস্তুত রয়েছে। কোরবানিদাতাদের পাঁচ লাখের বেশি পরিবেশবান্ধব পলিথিন দেয়া হবে। ৫৩ টন ব্লিচিং পাউডার ছিঁটানো হবে। চার হাজার ৩৩০ লিটার স্যাভলনও দেয়া হবে। জীবাণুনাশক স্প্রে করা হবে।
এসব কাজ তদারকি করতে মাঠে থাকবে ২৩ সদস্যবিশিষ্ট একটি টিম। সব কিছুই গুলশানের নগর ভবনে অস্থায়ী কেন্দ্রীয় নিয়ন্ত্রণ কক্ষ থেকে পর্যবেক্ষণ করা হবে। রাজধানীর শাহজাদপুর এলাকার বাসিন্দা তানভীর আহমেদ নীলয় বলেন, প্রতি বছর নিজ বাড়ির সামনেই গরু কোরবানি করি। আমাদের এলাকার সবাই নিজ সুবিধামতো স্থানেই করে।
সিটি কর্পোরেশনের নির্ধারিত স্থান দূরে হওয়ায় সেখানে যাওয়া হয় না। তাছাড়া পরিবারের বড়-ছোট সবার সামনে কোরবানি করার ইচ্ছা থাকে। তাই নির্ধারিত স্থানে যাওয়া হয় না।’
ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের জনসংযোগ কর্মকর্তা বলেন, নির্ধারিত স্থানে বাসিন্দারা পশু জবাই করতে যান না। তাই কাউন্সিলররা এ ব্যাপারে অভিযোগ দিলে পশু জবাইখানা ২০২০ সাল থেকে বন্ধ করে দেয়া হয়।
এছাড়া ২৪ ঘণ্টার ভেতর বর্জ্য সরানো জন্য আমাদের ব্যাপক প্রস্তুতি রয়েছে। কী পরিমাণ পশু জবাই হয় তার সঠিক হিসাব রাখা কঠিন। বর্জ্য ব্যবস্থাপনার বিষয়ে ডিএনসিসি মেয়র মো. আতিকুল ইসলাম বলেন, বেশ কিছু ওয়ার্ডে কোরবানির জায়গাও নির্ধারণ করা আছে।
২৪ ঘণ্টায় নয়, ১২ ঘণ্টায় কোরবানির বর্জ্য পরিষ্কার করা হবে। আমাদের পর্যাপ্ত লোকবল রয়েছে। বর্জ্য অপসারণের সাথে সংশ্লিষ্ট সব কর্মকর্তা ও কর্মচারীর ছুটি বাতিল করা হয়েছে।