ব্যাংক ইন্স্যুরেন্স ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান- কোথায় নেই তারা!

জাহিদুল ইসলাম প্রকাশিত: জুলাই ২১, ২০২২, ০১:৪০ এএম
ব্যাংক ইন্স্যুরেন্স ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান- কোথায় নেই তারা!

ব্যাংক-ইন্স্যুরেন্স-আর্থিক প্রতিষ্ঠান, কোথায় নেই তারা। আইনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে এসব প্রতিষ্ঠানের নিয়ন্ত্রণ করছেন। ক্ষমতার সব ধরনের অপব্যবহার করছেন তারা। এরা হলেন প্রগতি ইন্স্যুরেন্স কোম্পানির পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যান সৈয়দ এম আলতাফ হোসেন ও পরিচালক খলিলুর রহমান। 

একই সাথে বীমা কোম্পানি ও ব্যাংকের পরিচালক পদে না থাকার বিষয়ে আইনে নির্দেশনা থাকলেও তারা সেটি মানছেন না। ব্যাংক-ইন্স্যুরেন্স-আর্থিক প্রতিষ্ঠানে পরিচালনা পর্ষদে একই সাথে দায়িত্বে রয়েছেন, যা নিয়ে ক্ষোভ জানিয়েছে খাত সংশ্লিষ্টরা। সব কিছু দেখেও ব্যবস্থা না নেয়ায় নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলোর ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। 

জানা গেছে, গত ৬ জুন তারিখে অনুষ্ঠিত হয়েছে কোম্পানির ৩৬তম বার্ষিক সাধারণ সভা। এতে চেয়ারম্যান ও ভাইস চেয়ারম্যান হিসেবে পুনঃনির্বাচিত হন যথাক্রমে সৈয়দ এম আলতাফ হোসেন এবং তাবিথ এম আউয়াল। কিন্তু চেয়ারম্যান হিসেবে নির্বাচিত আলতাফ হোসেনকে ঘিরেই বীমা খাতে তৈরি হয়েছে বিতর্ক। তিনি পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত আরেক আর্থিক প্রতিষ্ঠান ন্যাশনাল হাউজিং অ্যান্ড ফিন্যান্সের ভাইস চেয়ারম্যান হিসেবে রয়েছেন। 

এ ছাড়া ইন্ডাস্ট্রিয়াল অ্যান্ড ইনফ্রাস্ট্রাকচার ডেভলপমেন্ট ফাইন্যান্স কোম্পানি (আইআইডিএফসি) ক্যাপিটাল নামে একটি মার্চেন্ট ব্যাংক এবং আইআইডিএফসি সিকিউরিটিজ নামে একটি ব্রোকারেজ হাউজের পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। এর ফলে একই সাথে ব্যাংক ও বীমা আইন লঙ্ঘন হয়েছে।

অপরদিকে, আরেক পরিচালক খলিলুর রহমান এই প্রতিষ্ঠানে যুক্ত থাকার পাশাপাশি বেসরকারি ন্যাশনাল ব্যাংক লিমিটেডেরও পরিচালনা পর্ষদের সদস্য হিসেবে রয়েছেন। অথচ বীমা আইন অনুসারে কোনো পরিচালক একই ধরনের অপর বীমা কোম্পানির অথবা কোনো ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানের পরিচালক হতে পারবেন না। 

আবার ব্যাংক আইনে বলা হয়েছে যদি আর্থিক খাত সংশ্লিষ্ট কোনো নিয়ামক সংস্থার আইন ও বিধি লঙ্ঘন করেন তবে ব্যাংকের পরিচালক পদে অযোগ্য হবেন। এছাড়া প্রতিষ্ঠানটিতে স্বতন্ত্র পরিচালক হিসেবে হাসিনাতুন নাহের রয়েছেন। কিন্তু সিকিউরিটিজ এক্সচেঞ্জ কমিশনের কর্পোরেট গভর্ন্যান্স কোড (সিজিসি) অনুসারে তার যে যোগ্যতার প্রয়োজন ছিল তাতে ঘাটতি রয়েছে। 

জানা গেছে, হাসিনাতুন নাহের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগে অনার্স ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকেই একই বিষয়ে মাস্টার্স ডিগ্রি অর্জন করেন।

এরপর তিনি শিক্ষকতা পেশাসহ আরো কয়েকটি প্রতিষ্ঠানে গুরুত্বপূর্ণ পদে কাজ করেন। কিন্তু স্বতন্ত্র পরিচালক হিসেবে নিয়োগ পেতে তাকে অর্থনীতি অথবা ব্যবসা অথবা বাণিজ্য বিভাগ থেকে গ্রাজ্যুয়েশন সম্পন্ন করতে হবে, যেটি তার নেই। 

এদিকে বীমা আইন অনুসারে এক পরিবার থেকে দুই জনের বেশি পরিচালক না থাকার বাধ্যবাধকতা থাকলেও তা মানা হচ্ছে না প্রতিষ্ঠানটিতে। প্রগতি ইন্স্যুরেন্সের বর্তমান পরিচালনা পর্ষদে রয়েছেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আব্দুল আওয়াল মিন্টু। তিনিসহ তার আরও দুই সন্তান তাবিথ আওয়াল ও তাজওয়ার এম আওয়াল প্রতিষ্ঠানটিতে পরিচালক হিসেবে রয়েছেন। 

আব্দুল আওয়াল মিন্টু নিজেও এক সময় ন্যাশনাল ব্যাংকের পরিচালক ছিলেন। তা ছাড়া বিদেশের অর্থপাচারে জড়িত থাকার অভিযোগে গত বছরের ৩ অক্টোবর প্রকাশিত ইন্টারন্যাশনাল কনসোর্টিয়াম অব ইনভেস্টিগেটিভ জার্নালিজমের (আইসিআইজে) অনুসন্ধানমূলক প্রতিবেদন প্যান্ডোরা পেপারর্সে তার ও পরিবারের সদস্যদের নাম এসেছে। 

এছাড়াও প্রতিষ্ঠানটির মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) সৈয়দ শিহাব উল্লাহ আল-মনজুর বীমা আইন ভেঙে আট মাসেরও বেশি সময় ধরে চলতি দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন। 

এ বিষয়ে বীমা আইনে বলা হয়েছে, নিয়মিত সিইও না থাকলে সিইওর অব্যবহিত পদে কোনো দায়িত্বশীল ব্যক্তিকে সর্বোচ্চ তিন মাস পর্যন্ত ভারপ্রাপ্ত হিসেবে নিয়োগ করতে পারবে। তবে অপরিহার্য বিবেচিত হলে নিয়ন্ত্রণ সংস্থা এই সময় আরো তিন মাস বৃদ্ধি করতে পারবে। 

এরমধ্যেও কোনো নিয়মিত সিইও নিয়োগ দেয়া না হলে, আইডিআরএ সেখানে প্রশাসক নিয়োগ দিতে পারবে। অর্থাৎ কোনোক্রমেই ছয় মাসের বেশি সিইও চলতি দায়িত্ব পালন করা যাবে না। বীমা আইনের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন করার পরও আইডিআরএ থেকে প্রতিষ্ঠানটিকে এ নিয়ে কোনো কারণ দর্শানো হয়নি। 

এমনকি অডিট রিপোর্টেও এ বিষয়ে কিছুই উল্লেখ করেনি নিরীক্ষা প্রতিষ্ঠান। এতে বিস্ময় প্রকাশ করেছেন খাত সংশ্লিষ্টরা। নাম প্রকাশ না করার অনুরোধ জানিয়ে সাধারণ বীমা খাতের কয়েকজন সিইও বলেন, এমনিতেই বীমা খাতের উপর দেশের মানুষের আস্থা কম। আবার দেশের অর্থনীতিতে বীমা খাতের পেনিট্রেশনও উল্লেখ করার মতো নয়। 

এরপরও প্রধানমন্ত্রী অক্লান্ত চেষ্টা করছেন জাতির পিতার স্মৃতিধন্য এই খাতটিকে ভালো করার। উন্নত দেশগুলোর কাতারে শামিল করার। কিন্তু এভাবে যদি আইন লঙ্ঘন হতে থাকে এবং এরপরও যদি কোনো শাস্তি বা জবাবদিহিতার মধ্যে পড়তে না হয়, তবে সবাই আইন ভাঙায় উৎসাহিত হবে। এতে প্রধানমন্ত্রীর সব প্রচেষ্টা ব্যর্থতায় পর্যবসিত হবে। 

এ বিষয়ে প্রতিষ্ঠানটির সিইও সৈয়দ শিহাব উল্লাহ আল-মনজুরের কাছে জানতে তার কার্যালয়ে গেলেও যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি। পরে কোম্পানি সচিব আনিসুজ্জামানের কাছে জানতে চাইলে তিনি এ নিয়ে কোনো মন্তব্য করেননি।