বিদ্যুতে তেল-গ্যাসের বিকল্প খুঁজছে সরকার

মো. মাসুম বিল্লাহ প্রকাশিত: জুলাই ২৩, ২০২২, ০১:২৩ এএম
বিদ্যুতে তেল-গ্যাসের বিকল্প খুঁজছে সরকার

বৈশ্বিক জ্বালানি সংকটে বন্ধ করে দেয়া হয়েছে তেলভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র। গ্যাসভিত্তিক কেন্দ্রের উৎপাদন কমিয়ে দিয়ে সারা দেশে দিনে অন্তত এক ঘণ্টা লোডশেডিং করছে বিদ্যুৎ বিভাগ। তারপরও রয়ে গেছে বিদ্যুৎ ঘাটতি। যে কারণে রাজধানীতে মোটামুটি শিডিউল মেনে লোডশেডিং করা গেলেও জেলাগুলোতে বারবার লোডশেডিং করতে হচ্ছে। 

কোথাও কোথাও দিনে ৪-৫ ঘণ্টারও বেশি সময় থাকছে না বিদ্যুৎ। চলমান এই পরিস্থিতিতে বিদ্যুৎ উৎপাদনে তেল-গ্যাসের বিকল্পের সন্ধানে নেমেছে সরকার। আর এ ক্ষেত্রেই বিদ্যুৎ বিভাগ জোর দিতে চায় নবায়নযোগ্য জ্বালানি থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদনে। 

সরকারি যেসব কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র বন্ধ করা হয়েছে, সেখানে সৌরবিদ্যুৎ বা নবায়নযোগ্য জ্বালানি থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদনে দ্রুত সময়ের মধ্যে প্রকল্প নেয়ার তাগিদ দিয়েছেন বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ।

বিদ্যুৎ বিভাগের তথ্য বলছে, দেশে বর্তমানে বিদ্যুৎ উৎপাদনের সক্ষমতা ২৫ হাজার ৫৬৬ মেগাওয়াট। আর পিডিবি সূত্র বলছে, বৃহস্পতিবার (২১ জুলাই) দেশে ১৪ হাজার ২০০ মেগাওয়াট চাহিদার বিপরীতে বিদ্যুতের সরবরাহ পাওয়া গেছে ১২ হাজার ৫৭০ মেগাওয়াট। সে হিসেবে বিদ্যুতের ঘাটতি ছিল ১৬০০ মেগাওয়াট। 

এ প্রেক্ষাপটেই বৃহস্পতিবার সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেন বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী। ওই বৈঠক থেকেই নবায়নযোগ্য উৎসে নজর দেয়ার নির্দেশ দেন তিনি। 

এর আগে, ২০০৮ সালের নবায়নযোগ্য জ্বালানি নীতিতে ২০১৫ সালের মধ্যে দেশের মোট বিদ্যুৎ উৎপাদনের ৫ শতাংশ এবং ২০২০ সালের মধ্যে ১০ শতাংশ নবায়নযোগ্য উৎস থেকে উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। কিন্তু সেই লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করা সম্ভব হয়নি। বর্তমানে দেশে ১৫২টি বিদ্যুৎকেন্দ্র এবং অন্যান্য উৎস থেকে ২৫ হাজার ৫৬৬ মেগাওয়াট উৎপাদন সক্ষমতার যে হিসাব দেয়া হচ্ছে, তার মাত্র ৮৯১ মেগাওয়াট আসে 
নবায়নযোগ্য জ্বালানি থেকে। 

এর পরিমাণ মোট বিদ্যুৎ উৎপাদনের সাড়ে তিন শতাংশেরও কম। সরকারি তথ্য বলছে, নবায়নযোগ্য এই বিদ্যুতের মধ্যে সৌরবিদ্যুৎ থেকে ৬৫৭ দশমিক ৫১ মেগাওয়াট, বায়ু থেকে দুই দশমিক ৯ মেগাওয়াট, হাইড্রো বা জল থেকে ২৩০ মেগাওয়াট, বায়োগ্যাস থেকে দশমিক ৬৯ মেগাওয়াট এবং বায়োম্যাস থেকে দশমিক ৪ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদিত হয়। সব মিলিয়ে ৮৯১ দশমিক ৫ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে যোগ হচ্ছে।

বিদ্যুৎ নিয়ে সরকারের যে মহাপরিকল্পনা রয়েছে, সেখানে ২০৩০ সালের মধ্যে মোট বিদ্যুৎ উৎপাদনের ১৫ শতাংশ নবায়নযোগ্য উৎস থেকে আসার কথা। 

সূত্রে জানা যায়, বর্তমানে ৯টি সৌরশক্তিচালিত বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের কাজ চলমান। এছাড়া একটি বায়ুচালিত বিদ্যুৎ উৎপাদন প্রকল্পের কাজও চলছে। আরও ১২টি সৌরশক্তিচালিত বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের জন্য চুক্তি করা হচ্ছে। এর পাশাপাশি চলছে আরও কয়েকটি বায়ু ও বায়োমাস বিদ্যুৎকেন্দ্রের কাজ। এসব বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে এক হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আসার কথা রয়েছে।

বিদ্যুৎ বিভাগ বলছে, বর্তমান প্রেক্ষাপটে এসব প্রকল্প দ্রুত বাস্তবায়ন করতে চায় সরকার। একইসঙ্গে নবায়নযোগ্য জ্বালানির উৎস খুঁজতে নতুন প্রকল্পও হাতে নিতে চায়। সেক্ষেত্রে চলতি বছরে সরকারের কয়লাভিত্তিক যে কেন্দ্রগুলো বন্ধ করা হয়েছে, সেসব কেন্দ্র ব্যবহারের পরামর্শ দিয়েছেন বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ।

বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী বলেছেন, নবায়নযোগ্য জ্বালানির প্রকল্পগুলোর অগ্রগতি বাড়াতে ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টা চালাতে হবে। নির্ধারিত সময়ে প্রকল্পগুলোর অগ্রগতি আশানুরূপ নয়। সৌরবিদ্যুতের সম্ভাবনা থাকলেও কাঙ্ক্ষিত সাফল্য আসছে না। এগুলো দ্রুত করতে হবে।

বৃহস্পতিবার (২১ জুলাই) এ নিয়ে বিদ্যুৎ ভবনে এক জরুরি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। এসি ও বৈদ্যুতিক বাতি ছাড়া প্রাকৃতিক আলোতে অনুষ্ঠিত বৈঠকে  বিদ্যুৎ সচিব মো. হাবিবুর রহমান, পিডিবির চেয়ারম্যান মো. মাহবুবুর রহমান, পাওয়ার সেলের মহাপরিচালক মোহাম্মদ হোসাইনসহ সংশ্লিষ্ট দপ্তর ও সংস্থার প্রধানরা উপস্থিত ছিলেন। 

আর এ বৈঠকেই নবায়নযোগ্য জ্বালানি প্রকল্পগুলোর অগ্রগতি পর্যালোচনা করা হয়। বৈঠকে প্রতিমন্ত্রী আরও বলেন, নবায়নযোগ্য উৎস থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন বাড়াতে হবে। সরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের জায়গা পড়ে রয়েছে। সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ করে পাবলিক-প্রাইভেট পার্টনারশিপ (পিপিপি) বা জয়েন্ট ভেঞ্চার বা সুবিধাজনক কোনো প্রক্রিয়ায় জমির যথাযথ ব্যবহারের উদ্যোগ নেয়া যেতে পারে।

প্রতিমন্ত্রী এ সময় নেট মিটারিং কার্যক্রমের বিষয়ে বলেন, নেট মিটারিং একটি চমৎকার বিজনেস মডেল। এর ফলে সময়, অর্থ ও বিদ্যুৎ সাশ্রয় হবে। নেট মিটারিং কার্যক্রম প্রসারে প্রতিটি বিতরণ কোম্পানি ও স্রেডাকে সমন্বিতভাবে কাজ করা উচিত।

উল্লেখ্য, জ্বালানি সংকটের কারণে দেশে বিদ্যুতের উৎপাদন কমে গেছে। এই ঘাটতি কমাতে এরই মধ্যে রেশনিংয়ের পাশাপাশি সরকারি-বেসরকারি অফিস-আদালতে সাশ্রয়ীভাবে বিদ্যুৎ ব্যবহারের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এরপরও দৈনিক ঘাটতি থাকছে দেড় হাজার মেগাওয়াটের ওপরে।