সারা দেশে দিনকে দিন সামাজিক ও ফৌজদারি অপরাধ বেড়েই চলেছে। সামান্য কারণে একজন অন্যজনকে খুন করশে দ্বিধা করছে না। অসম ও অনৈতিক সম্পর্কের কারণেই ঝরে পড়ছে অনেক জীবন। সমাজবিজ্ঞানীরা মনে করছেন, নৈতিক অবক্ষয়ের ফলে সমাজে এহেন অপরাধমাত্রা ছাড়িয়ে যাচ্ছে। আমাদের প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর—
পরকীয়ার জেরে মামিকে হত্যা : কিশোরগঞ্জে পরকীয়ার জেরে মামিকে গলা কেটে হত্যার অভিযোগ উঠেছে ভাগনের বিরুদ্ধে। গতকাল শনিবার দুপুর পৌনে ২টার দিকে পৌর শহরের গুরুদয়াল কলেজের ওয়াসীম উদ্দিন মুসলিম ছাত্রবাসের বিপরীত দিকের বাসায় এ ঘটনা ঘটে। নিহত রেকসোনা (৩০) শহরের হারুয়া গুরুলদায় কলেজ রোড এলাকার তাজুল ইসলামের স্ত্রী। অভিযুক্ত মামুন (৩০) শহরের শোলাকিয়া এলাকার মো. সোহরাবের ছেলে। তাকে আটক করেছে পুলিশ। কিশোরগঞ্জ সদর মডেল থানার ওসি মোহাম্মদ দাউদ বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, পারিবারিক কলহের জেরে দুপুরের দিকে ফাঁকা বাসায় মামিকে ছুরি দিয়ে গলা কেটে হত্যা করেন মামুন। এ ঘটনার খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে ঘাতক মামুনকে আটক করে। তবে নিহত গৃহবধূর স্বামী তাজুলের দাবি— তার স্ত্রীর সাথে ভাগনে মামুনের অবৈধ সম্পর্ক ছিল। এর জেরে এ ঘটনা ঘটেছে। তিনি বলেন, আমি মামুনকে বাসায় জায়গা দিতে না করেছি। তারপরও সে মামুনকে জায়গা দিয়েছে এবং তার সাথে মিশেছে। নিহতের বড় মেয়ে ছোঁয়া জানায়, তার নানার বাড়িতেও একদিন তার মাকে মামুন ব্যাট দিয়ে মাথায় আঘাত করেছে। ওসি মোহাম্মদ দাউদ জানান, দুপুরের দিকে এ ঘটনার খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে ভাগনে মামুনকে আটক করেছে। এ ঘটনায় ব্যবহূত ছুরিটিও উদ্ধার করা হয়েছে। এ বিষয়ে পরবর্তীতে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য কিশোরগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
ঘিওরে সহকর্মীকে কুপিয়ে হত্যা করলেন আনসার সদস্য, আটক ১ : মানিকগঞ্জের ঘিওর উপজেলায় আব্দুল কুদ্দুস (৪০) নামের এক আনসার সদস্যকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছে। এ ঘটনায় মো. শাহিন নামের (২৭) আরেক আনসার সদস্যকে আটক করেছে পুলিশ। গতকাল শনিবার ভোর ৬টার দিকে এ ঘটনা ঘটে। পরে সাড়ে ৭টার দিকে ঘিওর উপজেলা পরিষদ চত্বর থেকে আব্দুল কুদ্দুসের মরদেহ উদ্ধার করে ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেলা হাসপাতালের মর্গে পাঠিয়েছে পুলিশ। নিহত আব্দুল কুদ্দুসের বাড়ি দৌলতপুর উপজেলার হাতকোড়া এলাকায়। তিনি ঘিওর উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা কার্যালয়ে নাইট ডিউটি করতেন। ঘিওর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রিয়াজ উদ্দিন আহম্মেদ বিপ্লব বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। ওসি রিয়াজ উদ্দিন আহম্মেদ বিপ্লব বলেন, ‘উপজেলা আনসার কার্যালয় থেকে আটক শাহিন ও কুদ্দুসের মধ্যে মাঝে মাঝে ঝগড়া হতো। পরে গতকাল ভোর ৬টার দিকে শাহিন কুদ্দুসকে বঁটি দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করেন। প্রাথমিকভাবে হত্যার বিষয়ে শাহিন সব স্বীকার করেছেন।’ ওসি জানান, মরদেহ উদ্ধার করে জেলা হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে। এ বিষয়ে আইনানুগ ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন।
রামুতে শাশুড়িকে কুপিয়ে হত্যা, পুত্রবধূূ তিনদিনের রিমান্ডে : কক্সবাজারের রামুতে মমতাজ বেগম (৬৫) নামে এক বৃদ্ধাকে ছয় টুকরো করে হত্যার পর মাটি চাপা দেয়ার অভিযোগে পুত্রবধূ রাশেদা বেগমকে (২৫) জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তিন দিনের রিমান্ডে নিয়েছে পুলিশ। গতকাল শনিবার সকালে জেলা কারাগার থেকে রাশেদাকে রামু থানায় নেয়া হয়। এরপর হত্যাকাণ্ডের বিষয়ে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করেছেন পুলিশ কর্মকর্তারা।এর আগে বৃহস্পতিবার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে পাঁচ দিনের রিমান্ডের আবেদন করে রামু থানার পুলিশ। শুনানি শেষে বিচারক তার তিন দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। পুলিশ জানায়, গত ১৬ জুলাই বিকেলে উপজেলার দক্ষিণ মিঠাছড়ি ইউনিয়নের ২নং ওয়ার্ডের পশ্চিম উমখালীতে দা দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করা হয় মমতাজ বেগমকে। এরপর তার মরদেহ ছয় টুকরা করে বস্তায় ভরে বাড়ির আঙিনায় পুঁতে ফেলা হয়। ১৭ জুলাই সন্ধ্যায় মাটি খুঁড়ে নিহতের মরদেহের টুকরাগুলো উদ্ধার করে পুলিশ। একই সঙ্গে মমতাজের একমাত্র ছেলে মো. আলমগীরের স্ত্রী রাশেদা বেগমকে গ্রেপ্তার করে। ১৮ জুলাই বিকেলে আদালতের মাধ্যমে রাশেদাকে জেলা কারাগারে পাঠানো হয়। এর পরদিন ১৯ জুলাই মমতাজের মেয়ে আয়েশা বেগম বাদী হয়ে রাশেদা বেগম, তার দুই ভাই অলী উল্লাহ, তারেক উল্লাহ এবং বাবা সৈয়দ নুরের নাম উল্লেখ এবং অজ্ঞাতনামা আরও কয়েকজনকে আসামি করে হত্যামামলা করেন।
রামু থানার ওসি আনোয়ারুল হোসাইন বলেন, এ মামলার প্রধান অভিযুক্ত রাশেদা বেগম। কারগার থেকে আনার পরই তাকে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করা হয়েছে। তিনি বলেন, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে পারিবারিক কলহের জের ধরে রাশেদা বেগম ধারালো অস্ত্র দিয়ে শাশুড়ি মমতাজকে হত্যা করেন বলে সন্দেহ করা হচ্ছে। এ হত্যাকাণ্ডে অন্য কারো সংশ্লিষ্টতা আছে কি-না, তার অনুসন্ধান চলছে। মামলার অন্যান্য আসামিদের ধরতে অভিযান চালাচ্ছে পুলিশ। আলোচিত এ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ও রামু থানার পরিদর্শক (তদন্ত) অরূপ কুমার চৌধুরী বলেন, চাঞ্চল্যকর মমতাজ হত্যাকাণ্ডের ঘটনাটি খুব গুরুত্ব সহকারে তদন্ত করা হচ্ছে।
উল্লেখ্য, গত ১৬ জুলাই বিকেলে মমতাজ বেগমকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করেন ছেলের বউ রাশেদা বেগম। এরপর মরদেহ কেটে ছয় টুকরা করে বাড়ির আঙিনায় টিউবওয়েলের পাশে গর্ত করে পুঁতে রাখেন। এ সময় ছেলে মো. আলমগীর (৩২) বাড়িতে ছিলেন না। তিনি কক্সবাজার সৈকতের একটি আবাসিক হোটেলের কর্মচারী। শনিবার বিকেলে মো. আলমগীর বাড়িতে এসে মাকে না পেয়ে বিভিন্ন জায়গায় খোঁজাখুঁজি করতে থাকেন। না পেয়ে ফেসবুকে মায়ের ছবি দিয়ে সন্ধান চেয়ে একটি স্ট্যাটাস দেন। এতেও তিনি মায়ের খোঁজ পাননি। পরদিন বিকেল পাঁচটার দিকে তিনি বাড়ির আঙিনার টিউবওয়েলের পাশে মায়ের শাড়ির অংশ দেখতে পেয়ে মাটি খুঁড়তেই তার শাড়ি ও মরদেহ দেখতে পান। এরপর থানায় খবর দেয়া হলে পুলিশ এসে মমতাজ বেগমের ছয় টুকরো মরদেহ উদ্ধার করে।
এদিকে শুক্রবার বিকেলে উমখালী গ্রামে মমতাজ বেগমের হত্যাকারীদের গ্রেপ্তার ও পুত্রবধূ রাশেদার ফাঁসি দাবি করে মানববন্ধন করেছেন এলাকার বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষ। উপজেলার দক্ষিণ মিঠাছড়ি ইউনিয়নের উমখালী হাজিরপাড়া এলাকায় নিহতের বাড়ির পাশে রাজারকুল-চেইন্দা সড়কে এই কর্মসূচি পালন করেন তারা। এ সময় তারা বলেন, বৃদ্ধা শাশুড়িকে ছেলের বউ কেটে ছয় টুকরো করে মাটিচাপা দেয়ার ঘটনা সব বিবেকবান মানুষকে হতবাক করেছে। এ ঘটনায় জড়িতদের দ্রুত শাস্তির দাবি করে এবং জড়িত সবার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন-সংগ্রাম চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেন তারা। নিহতের পরিবারের সদস্য সিরাজুল হকের সভাপতিত্বে মানববন্ধনে রামু উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান সালাহ উদ্দিন, মিঠাছড়ি ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান খোদেশতা বেগম রীনা, রামু প্রেস ক্লাবের সভাপতি নীতিশ বড়ুয়া, মিঠাছড়ি ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ সভাপতি জহুর আলম, সাধারণ সম্পাদক শফিকুল ইসলাম রানা, ইউপি সদস্য আমির হামজা ও আজিজুল হক দুদু মিয়া, আওয়ামী লীগ নেতা আবদুল হামিদ ও হাজীরপাড়া জামে মসজিদ পরিচালনা কমিটির সাধারণ সম্পাদক সংবাদকর্মী নুর মোহাম্মদ বক্তব্য দেন।