ইউক্রেন-রাশিয়ার চলমান সংকটের প্রভাব এখন বিশ্বব্যাপী। জ্বালানি সংকট নিরসনে বিকল্প চিন্তা করছে সরকার। দেশে এই প্রথমবারের মতো বিভিন্ন জ্বালানি পণ্যের কাঁচামাল ন্যাফথা আমদানি করা হয়েছে। ভারতের হলদিয়া বন্দর থেকে মোংলা বন্ধর হয়ে এই ন্যাফথা নরসিংদীর ঘোড়াশালের শীতলক্ষ্যা নদীর অ্যাকোয়া রিফাইনারি লিমিটেডের জেটিতে পৌঁছেছে।
গতকাল শনিবার আনুষ্ঠানিকভাবে এই জ্বালানি পণ্য খালাস কার্যক্রম উদ্বোধন করেন ভারত ও বাংলাদেশের প্রতিনিধিরা। বাংলাদেশের বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের অনুমতি সাপেক্ষে এই প্রথম এক হাজার ৯০০ মেট্রিক টন ন্যাফথা আমদানি করা হয়। এই ন্যাফথা পরবর্তী সময়ে ২৫ লাখ লিটার জ্বালানি তেলে রূপান্তরিত হবে।
এই ন্যাপথা পরিশোধিত হওয়ার পর ৮০ শতাংশ অকটেন, ৫ শতাংশ পেট্রোল ও ৭ শতাংশ কোরোসিন উৎপাদিত হবে। যা দেশের চলমান জ্বালানি সংকট নিরসনে ভূমিকা রাখবে।
এ বিষয়ে অ্যাকোয়া রিফাইনারির ডিরেক্টর (অপারেশন্স) এরশাদ হোসেন বলেন, আমরা প্রতি মাসে সাড়ে তিন হাজার থেকে চার হাজার মেট্রিক টন ন্যাফথা আনব। এটি প্রক্রিয়াকরণ করতে পাঁচদিন সময় লাগে। ন্যাপথা পরিশোধিত করার পর পদ্মা, মেঘনা ও যমুনার মাধ্যমে সারা দেশের ভোক্তাদের কাছে পৌঁছে যাবে। ভবিষ্যতে এই ন্যাফথা বাংলাদেশের ১০ শতাংশ অকটেনের চাহিদা পূরণ করতে পারবে।
ইন্ডিয়ান ওয়েল কর্পোরেশনের বাংলাদেশের কান্ট্রি ম্যানেজার মাজহার আলম বলেন, ভারতের হলদিয়া থেকে দূরত্ব কম হওয়ায় ন্যাফথা খুব দ্রুত ঢাকায় পৌঁছে যাবে। এটির প্রক্রিয়াকরণ করতেও সময় কম লাগে। আগে এটা প্রথমে চট্টগ্রামে আসত পরে তা অ্যাকোয়া রিফাইনারিতে আসত। এর ফলে ভাড়া বেশি পড়ত। এখন সময় কম লাগার কারণে দ্রুত ন্যাফথা থেকে ফুয়েল উৎপাদন করে জ্বালানি সংকট দূর করা যাবে।
বিআইডব্লিউটিএর পরিচালক রফিকুল ইসলাম বলেন, আমরা বছরে ৪৫ লাখ মেট্রিক টন মালামাল ভারত থেকে নিয়ে আসি। এই প্রথম ভারত থেকে ন্যাফথা বাংলাদেশে নিয়ে আসা হয়েছে। বর্তমানে দেশে বিদ্যুতের যে ঘাটতি তার প্রধান কারণ হলো ফুয়েলের অপ্রতুলতা। দেশে ন্যাফথার অয়েল আমদানির ফলে ফুয়েলের যে ঘাটতি তা কিছুটা পূরণ হবে। আর সরকারের বছরে এক লাখ ২০ হাজার মেট্রিক টন ন্যাফথা নিয়ে আসার পরিকল্পনা রয়েছে। আগামীতে আরও ন্যাফথা দেশে আসবে।
বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয় অধীনস্ত পাওয়ার সেলের মহাপরিচালক প্রকৌশলী মোহাম্মদ হোমসাইন আমার সংবাদকে জানান, জ্বালানি সংকট মোকাবিলায় ইতোমধ্যে লোডশেডিংসহ বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে সরকার। বিকল্প চিন্তাও করা হচ্ছে। তার অংশ হিসেবে ভারত থেকে জ্বালানির কাঁচামাল আমদানি করা হয়েছে। তবে অক্টোবরে পদক্ষেপগুলোর ফল পাবে জনগণ।
সূত্র থেকে জানা যায়, জ্বালানি তেল প্রায় পুরোটাই আমদানি করতে হয়। বর্তমান বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে আমদানি ব্যয় নিয়ন্ত্রণে রাখতে জ্বালানি তেলের ব্যবহার কমানোর নানা উপায় নিয়ে পর্যালোচনা চলছে। সপ্তাহে একদিন পেট্রোল পাম্প বন্ধ রাখা, ব্যক্তিগত গাড়ির ব্যবহার কমিয়ে আনাসহ বিভিন্ন উদ্যোগের লাভক্ষতি খতিয়ে দেখা হচ্ছে। গৃহীত পদক্ষেপে যদি পরিস্থিতি সামলানো যায়, তাহলে ভালো। না হলে সর্বশেষ উপায় হিসেবে জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানো হতে পারে। তবে তা অবশ্যই সহনীয় হবে। তার আগে গত ৭ জুলাই গণমাধ্যমে পাঠানো বিবৃতিতে দাম বাড়ানোর ইঙ্গিত দেন জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ। এদিকে সংকট মোকাবিলায় পরিবহন খাতে জ্বালানি ব্যবহারের কথা ভাবছে সরকার।