সিরাজগঞ্জ ও খুলনা কম্বাইন্ড সাইকেল বিদ্যুৎকেন্দ্র

ফের ডিজেলে বিদ্যুৎ উৎপাদন

মহিউদ্দিন রাব্বানি প্রকাশিত: জুলাই ৩১, ২০২২, ০১:০২ এএম
ফের ডিজেলে বিদ্যুৎ উৎপাদন

বিশ্ববাজারে জ্বালানির দাম বাড়ায় দেশে ডিজেলচালিত সব বিদ্যুৎকেন্দ্রে উৎপাদন বন্ধ করা হয়েছে। তখন ডিজেল রিজার্ভে গুরুত্ব দিয়েছিল সরকার। অল্প দিনের মধ্যে আবারও জিজেলে বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরু করছে।

এর আগে ডলার রিজার্ভ সংকটের ফলে জ্বালানি আমদানিও স্থগিত করা হয়। ফলে বিদুৎসাশ্রয়ে গত ১৯ জুলাই থেকে পরিকল্পিত লোডশেডিংয়ের পথে হাঁটছে সরকার।

এরফলে এক ঘণ্টা থেকে শুরু করে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে একাধিকবার লোডশেডিংয়ের কবলে পড়তে হচ্ছে গ্রাহককে। এখন নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ করতে সরকার নানা পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে ইতোমধ্যে।

এদিকে নাগরিক ভোগান্তি কমাতে লোডশেডিংয়ের সময় কমিয়ে আনতে সিরাজগঞ্জের কম্বাইন্ড সাইকেল
বিদ্যুৎকেন্দ্রে ডিজেলের মাধ্যমে একটি ইউনিট চালু করেছে ওয়েস্ট পাওয়ার জেনারেশন বিতরণ সংস্থা।

অন্যদিকে কম সময়ের মধ্যেই খুলনা কম্বাইন্ড কেন্দ্রে ডিজেলের মাধ্যমে উৎপাদন শুরু হতে যাচ্ছে। কম্বাইন্ড সাইকেল কেন্দ্রে ডিজেলের মাধ্যমে বিদ্যুৎ উৎপাদনে খরচ কম হওয়ায় এই পথে হাঁটছে সরকার। এ দুটি ইউনিট থেকে পাওয়া যাবে ৪৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ।

এদিকে নর্থ ওয়েস্ট পাওয়ার জেনারেশনের মহাপরিচালক প্রকৌশল এ এম খোরশেদ আলম বলেন, ‘আমরা একটি কম্বাইন্ড সাইকেল চালাচ্ছি। আরেকটি চালানো হচ্ছে না। এখানে সরকারের কম খরচ হবে।

ওয়েস্ট পাওয়ার জেনারেশন বলছে, উত্তরাঞ্চলের গ্রাহকরা মূল সুবিধাভোগী হলেও এ দুটি ইউনিটের বিদুৎ প্রভাব ফেলবে সারা দেশে। যাতে কমে আসবে লোডশেডিংয়ের সময়। বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের দাম কমলেই ভোগান্তি থেকে গ্রাহকের মুক্তি মিলবে।’

সরকার অনুমোদিত পরিবেশকদের নিয়মিত জ্বালানি তেল সরবরাহ করে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশনের (বিপিসি) অধীনে থাকা তিন রাষ্ট্রায়ত্ত কোম্পানি পদ্মা, মেঘনা ও যমুনা। এ জ্বালানি তেল কিনে নিয়ে পরিবেশকরা নিজস্ব পেট্রোলপাম্প থেকে ডিজেল, পেট্রোল ও অকটেন বিক্রি করে গ্রাহকের কাছে।

পেট্রোলপাম্প ব্যবসায়ীদের দাবি, এক সপ্তাহে ডিজেলের চাহিদা বেড়েছে প্রায় ২০ শতাংশ। আর অকটেন ও পেট্রোলের চাহিদা বেড়েছে ১০ শতাংশ। তাই তারা বেশি হারে জ্বালানি তেলের চাহিদা দিচ্ছেন।

পেট্রোলপাম্প মালিক সমিতি জানায়, গত সপ্তাহে মাওয়া রোডের পেট্রোলপাম্পে ৪০ থেকে ৪৫ হাজার লিটার জ্বালানি তেল সরবরাহ করা হয়েছে। এ সপ্তাহে ২৭ হাজার লিটারের বেশি দেবে না বলে জানিয়েছে পদ্মা তেল কোম্পানি। অন্যরাও একই রকম কম সরবরাহের নির্দেশনা পেয়েছেন বলে দাবি করেন তিনি।

এদিকে হঠাৎ বৃদ্ধি পেয়েছে জ্বালানি বিক্রি। কিছু অসাধু লোক গাড়িতে করে অতিরিক্ত তেল নেয়ার অভিযোগ উঠেছে। আর বিপিসি পেট্রোলপাম্পের বিকিকিনি বাড়ার কারণ খুঁজে বের করতে তৎপর। পদ্মা, মেঘনা ও যমুনাও এটি খতিয়ে দেখছে।

এ কোম্পানির কর্মকর্তারা বলছেন, প্রতিটি পেট্রোলপাম্পের নিয়মিত জ্বালানি তেল কেনার হিসাব আমাদের কাছে সংরক্ষিত আছে। এ থেকে প্রতিটি পরিবেশকের সপ্তাহে গড় বিক্রির ধারণা পাওয়া যায়। হঠাৎ চাহিদা বেড়ে যাওয়ার পেছনে নানা কারসাজি থাকতে পারে। তাই যৌক্তিক ব্যাখ্যা ছাড়া বাড়তি চাহিদার জ্বালানি তেল সরবরাহ না করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশনের (বিপিসি) চেয়ারম্যান এ বি এম আজাদ গণমাধ্যমকে বলেন, সরবরাহ কমানোর কোনো সিদ্ধান্ত নেয়া হয়নি। তবে হঠাৎ করে চাহিদা ব্যাপকহারে বেড়ে যাওয়ার কথা নয়। হুট করে বাড়তি চাহিদা দিলে তার পেছনে নানা কারণ থাকতে পারে।

তাই বাড়তি চাহিদা দিলে সরবরাহের আগে তার যৌক্তিকতা যাচাই করা হয়। এটি জ্বালানি তেল কোম্পানিগুলোর নিয়মিত কাজের অংশ।’ চলমান জ্বালানি সংকটের জন্য বিশ্ববাজারে তেল এবং তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস বা এলএনজির চড়া দামকে দায়ী করছে সরকার।

বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, বাংলাদেশে জ্বালানি তেল ও গ্যাসের সংকট উদ্বেগজনক পর্যায়ে পৌঁছেছে এবং এই সংকট আরও বাড়বে। সংকটের মুখে সরকার এখন ডিজেলের ব্যবহার কমানোর ওপর জোর দিচ্ছে। কিন্তু অকটেন-পেট্রোলসহ বিভিন্ন জ্বালানি তেলের তুলনায় ডিজেলের চাহিদা সবচেয়ে বেশি

দেশে। আমাদের আমদানি করা ডিজেলের বড় অংশ পরিবহন খাত এবং কৃষিকাজে সেচের কাজে ব্যবহার হয়ে থাকে। ডিজেলের সরবরাহ নিয়ে এই দুই খাতে শঙ্কা তৈরি হয়েছে। দেশে এখন আমন ধান চাষের সময়। ডিজেল সংকটে হুমকিতে পড়বে কৃষি খাত।

জ্বালানি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক এম শামসুল আলম বলেন, ‘যে মূল্যে জ্বালানি কিনছে জনগণ, তা তাদের সামর্থ্যের বাইরে চলে যাচ্ছে। আবার সরকার এ খাতে ভর্তুকি দিচ্ছে হাজার হাজার কোটি টাকা। এ পরিস্থিতির মধ্যে সরকার যখন ফের জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধির জন্য গণশুনানির আয়োজন করল আমরা তখন প্রতিবাদ করলাম। আমরা বলেছি, বিদ্যুৎ ও গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধি হবে আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত। জ্বালানি নিয়ে সরকার একের পর এক যেসব সিদ্ধান্ত নিয়েছে, তা অনেকাংশেই ভুল এবং আত্মঘাতী বলে মনে করি। আজকের সংকট যার প্রমাণ।’