পাঁচ লাখ টাকার বেশি সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ থাকলে আয়কর রিটার্নের সনদ লাগবে। ঘোষণার বাইরে সঞ্চয়পত্র থাকলে রয়েছে জেল-জরিমানার বিধান। অতিমাত্রায় সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ নিরুৎসাহিত করতে এমন সব শর্ত দিয়েছে সরকার।
এতে করে সঞ্চয়পত্র বিক্রির পরিমাণ কমে গেছে। আগের তুনলায় ঋণও নেমে এসেছে প্রায় অর্ধেকে। সদ্য সমাপ্ত ২০২১-২২ অর্থবছরের (জুলাই-জুন) জাতীয় সঞ্চয় স্কিমগুলোতে এক লাখ আট হাজার ৭০ কোটি টাকার সঞ্চয়পত্র জমা বা বিক্রি হয়েছে।
এরমধ্যে মূল টাকা ও মুনাফা পরিশোধ করা হয়েছে ৮৮ হাজার ১৫৫ কোটি টাকা। এ সময়ে রাষ্ট্রীয় কোষাগার থেকে সঞ্চয়পত্রের গ্রাহকদের ৪০ হাজার দুই কোটি ৬৯ লাখ টাকা মুনাফা বা সুদ পরিশোধ করা হয়েছে। এ অর্থ জনগণের করের টাকা।
তথ্য অনুযায়ী, সঞ্চয়পত্রের মূল টাকা ও মুনাফা পরিশোধের পর এ খাতে সরকারের নিট ঋণ দাঁড়িয়েছে ১৯ হাজার ৯১৫ কোটি ৭৫ লাখ টাকা। যা বাজেট ঘাটতি মেটাতে এ খাতের জন্য নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রার ৬২ দশমিক ২৩ শতাংশ। গেল ২০২১-২২ অর্থবছরে এ খাত থেকে সরকার নিট ঋণের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৩২ হাজার কোটি টাকা। জাতীয় সঞ্চয় অধিদপ্তরের সর্বশেষ হালনাগাদ প্রতিবেদনে এসব তথ্য জানা গেছে।
খাত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, অতিমাত্রায় সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ নিরুৎসাহিত করতে নানা শর্ত জুড়ে দিয়েছে সরকার। সবশেষ পাঁচ লাখ টাকার বেশি সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ থাকলে আয়কর রিটার্নের সনদ বাধ্যতামূলক করা হয়েছে।
এর আগে গত বছরের সেপ্টেম্বরে ১৫ লাখ টাকার বেশি বিনিয়োগে সুদহার কমানো হয়। আবার ঘোষণার বাইরে সঞ্চয়পত্র থাকলে জেল-জরিমানার বিধান রাখা হয়েছে। এসব কারণে অনেকে সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ কমিয়েছেন। একক মাস হিসেবে চলতি বছরের জুন মাসে ১০ হাজার ৭১১ কোটি ৮২ লাখ টাকার সঞ্চয়পত্র জমা হয়েছে।
এসময় মূল অর্থ ও মুনাফা পরিশোধ হয়েছে আট হাজার ৯৬২ কোটি ১৯ লাখ টাকা; যার মধ্যে গ্রাহকদের মুনাফা পরিশোধ করা হয়েছে তিন হাজার ৯৮০ কোটি ৩৯ লাখ টাকা। ফলে জুন মাসে নিট বিক্রির পরিমাণ দাঁড়ায় এক হাজার ৭৮৯ কোটি ৬৩ লাখ টাকা।
চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরে বাজেটে ঘাটতি মেটাতে সঞ্চয়পত্র থেকে ৩৫ হাজার কোটি টাকার ঋণ নেবে বলে ঠিক করেছে সরকার। গত ৯ জুন জাতীয় সংসদে স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপস্থিতিতে ২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেট প্রস্তাবে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল এ তথ্য জানান।
তিনি চলতি অর্থবছরে সঞ্চয়পত্রের ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের সুদহার অপরিবর্তিত রাখার প্রস্তাব করেন। পরে ৩০ জুন ওই প্রস্তাবিত বাজেট পাস হয়।
বাজেট বক্তব্যে অর্থমন্ত্রী বলেছিলেন, ‘স্বল্প-আয়ের লক্ষ্যভিত্তিক জনগোষ্ঠীর জন্য উচ্চ সুদ হারের সঞ্চয়পত্র ক্রয়ের ব্যবস্থা রাখা হলেও অনেক উচ্চ-আয়ের বিনিয়োগকারীরা এ স্কিমগুলোর সুবিধা নিচ্ছিল বেশি।
সে কারণে আমরা ইতোপূর্বে বিক্রয় ব্যবস্থাপনা অটোমেশন করেছিলাম। যার ফলে নির্ধারিত সীমার অতিরিক্ত সঞ্চয়পত্র ক্রয়ের ক্ষমতা সীমিত হয়েছে। এছাড়াও, সঞ্চয়পত্র ক্রয়ের ক্ষেত্রে জাতীয় পরিচয়পত্রের নম্বর ও টিআইএন নম্বর দেয়া বাধ্যতামূলক করা হয়েছিল।’
এদিকে সম্প্রতি জারি করা জাতীয় সঞ্চয়পত্র অধিদপ্তর ও সরকারি গেজেট অনুযায়ী, সঞ্চয়পত্র ও ডাকঘর সঞ্চয় ব্যাংক হিসাবে পাঁচ লাখ টাকার বেশি বিনিয়োগের ক্ষেত্রে অর্থ আইন, ২০২২ এর ৪৮ ধারা যথাযথ পরিপালনে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে ব্যাংকগুলোকে নির্দেশনা দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
নির্দেশনা অনুযায়ী, এখন থেকে যদি কোনো ব্যক্তি সঞ্চয়পত্রে পাঁচ লাখ টাকার বেশি বিনিয়োগ অথবা পোস্টাল সঞ্চয় অ্যাকাউন্ট খুলতে চান, তবে সর্বশেষ বছরের আয়কর রিটার্ন জমার প্রমাণপত্র দেখাতে হবে। অর্থাৎ সরকার মনে করছে, আপনার আয় করযোগ্য আয়ের সীমায় আছে।
পরিসংখ্যানের তথ্য বলছে, গত ২০২০-২১ অর্থবছরে সঞ্চয়পত্র বিক্রি করে ৪২ হাজার কোটি টাকা ঋণ নিয়েছিল সরকার। যা ২০১৯-২০২০ অর্থবছরে ছিল ১৪ হাজার ৪২৮ কোটি টাকা।
এর আগে ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ছিল ৪৯ হাজার ৩৯৩ কোটি টাকা, ২০১৭-১৮ অর্থবছরে ঋণ নেয় ৪৬ হাজার ৫৩০ কোটি টাকা এবং ২০১৬-১৭ অর্থবছরে ঋণ নিয়েছিল ৫২ হাজার ৪১৭ কোটি টাকা।
সম্প্রতি সঞ্চয়পত্র বিক্রিতে ব্যাংকের মাধ্যমে গ্রাহক যাতে ভোগান্তিতে না পড়ে সে বিষয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংক ৯ দফা নির্দেশনা দিয়েছে। তাছাড়া শুধুমাত্র প্রতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের ক্ষেত্রে আয়কর রিটার্ন দাখিলের ক্ষেত্রে অব্যাহতি দেয়া হয়।