জ্বালানি সংকটে সরকারের নেয়া নানা পদক্ষেপের সাথে এবার যুক্ত হলো শিল্পাঞ্চলভিত্তিক আলাদা সাপ্তাহিক ছুটির বিষয়। এর আগে এলাকাভিত্তিক এক ঘণ্টার লোডশেডিং, সপ্তাহে একদিন পেট্রোল পাম্প বন্ধ রাখাসহ বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। জ্বালানি সাশ্রয়ে কৃচ্ছ্রতা সাধনে উদ্বুদ্ধ করে এসেছে বিভিন্ন মহল।
এর আগে ১৮ জুন এক সপ্তাহের পরীক্ষামূলক লোডশেডিংয়ের ঘোষণা দেন জ্বালানি, বিদ্যুৎ ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী। এক সপ্তাহের লোডশেডিং শেষ হলে প্রতিমন্ত্রী পুনরায় ১০ দিন সময় নেন।
এদিকে লোডশেডিংয়ের ২০ দিন পর আশার বাণী শোনান প্রতিমন্ত্রী। আগামী মাসে কমবে অর্ধেক লোডশেডিং। অক্টোবরে সরবরাহ করা হবে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ।
বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী বলেন, আমরা বিদ্যুতের উৎপাদন বাড়াব। গ্যাসের পরিমাণ বাড়িয়ে ব্যালেন্স করার
চেষ্টা করব। অক্টোবর থেকে আগের মতো নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুতের দিকে যেতে পারব।
লোডশেডিং নিয়ে নসরুল হামিদ আরও বলেন, এটি সাময়িক। বিদ্যুৎ বিভাগ মনে করছে, আগামী মাস থেকে লোডশেডিং থেকে আস্তে আস্তে বের হয়ে আসবে। এখন শিল্পাঞ্চলে শুক্রবার সাপ্তাহিক ছুটি।
এক দিনে সব এলাকায় ছুটি না দিয়ে, যদি রেশনিংয়ের মাধ্যমে একেক দিন একেক এলাকায় ছুটি চালু করা যায়, তাহলে বিদ্যুতের কিছুটা সাশ্রয় হবে, লোডশেডিং কিছুটা কমে আসবে। শিল্পমালিকরা এ বিষয়ে বিদ্যুৎ বিভাগের সাথে একমত হয়েছেন। ক্যাপটিভ বিদ্যুৎকেন্দ্রের মাধ্যমে যেসব ফ্যাক্টরি চলে তাদের ক্ষেত্রে এ ধরনের সিদ্ধান্ত কার্যকর নাও হতে পারে বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।
শিল্পাঞ্চলভিত্তিক সাপ্তাহিক এক দিনের লোডশেডিং থাকবে এখন থেকে। ফলে সরকারি হিসাব মতে, এতে ৪৯০ মেগাওয়াটের মতো বিদ্যুৎ সাশ্রয় হবে প্রতিদিন।
এদিকে ব্যবসায়ী নেতারা বলেন, আমরা বলেছি, কেবল ঢাকায় নয়, সারা দেশেই যেন এরকম ছুটি কার্যকর করা হয়।
এক সময় যখন নিয়মিত লোডশেডিং হতো, তখন এ রকম ছুটির ব্যবস্থা চালু ছিল জানিয়ে বিকেএমইএর সহসভাপতি ফজলে শামীম আহসান বলেন, আমরা বলেছি, প্রয়োজনে সে ধরনের সূচি আবার চালু করা হোক।
তবে ডায়িং ও স্পিনিং ফ্যাক্টরিকে কিছুটা ছাড় দেয়া যায় কি-না, সেই প্রস্তাব আমরা করেছি। এদিকে উৎপাদন বাড়ানোর চেষ্টা করছে সরকার। বাড়লেই অক্টোবর মাস থেকে অনেকটাই স্বাভাবিক হবে লোডশেডিং।
জ্বালানি ও ভূতত্ত্ববিদ অধ্যাপক ড. বদরুল ইমাম আমার সংবাদকে বলেন, ‘অক্টোবরের মধ্যে যদি লোডশেডিং বন্ধ হয়ে যায় তাহলে এটি বড় একটি আশার দিক। তবে সরকার চাইলে সম্ভব।
শিল্পকারখানায় এলাকাভিত্তিক লোডশেডিং হলে উৎপাদনে কেমন প্রভাব পড়বে জানতে চাইলে তিনি বলেন, শিল্প এলাকাতে লোডশেডিং হলে অবশ্যই নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। তা এখনই বেশি কিছু বলা যাচ্ছে না। তবে এর প্রভাব শিগগিরই দৃশ্যমান হবে। ফলে শিল্পে উৎপাদন প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে পারবে না।
আন্তর্জাতিক জ্বালানি বিশেষজ্ঞ ও পাওয়ার সেলের মহাপরিচালক প্রকৌশলী মোহাম্মদ হোসাইন আমার সংবাদকে জানান, আমরা আগেই বলেছি অক্টোবরে বিদ্যুৎ সমস্যা সামাধান হবে। আর সেভাবে পরিকল্পনা নিয়েই কাজ করছি আমরা। চলমান সংকট বেশি দিন থাকবে না। খুব দ্রুত স্বস্তি মিলবে জনমনে।
এফবিসিসিআইয়ের সহ-সভাপতি মোস্তফা আজাদ চৌধুরী বলেন, ‘বিদ্যুৎ বিভাগের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, এই পদ্ধতি অবলম্বন করলে ৪৯০ মেগাওয়াটের মতো বিদ্যুৎ সাশ্রয় হবে দিনে। আমরা বলেছি, কেবল ঢাকায় নয়, সারা দেশেই যেন এ রকম ছুটি কার্যকর করা হয়।
এদিকে অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ নিটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিকেএমইএ) সহ-সভাপতি ফজলে শামীম এহসান জানান, এলাকাভিত্তিক কারখানা বন্ধের যে সিদ্ধান্ত হয়েছে তা মেনে নিলেও মন্ত্রণালয় থেকে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহের বিষয়ে কোনো নিশ্চয়তা দেয়া হয়নি।
জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধি কারণে এফবিবিসিআইয়ের নেতারা বলেন, তেলের দাম বাড়ায় পণ্য সরবরাহে ব্যয় বাড়বে। এ সময় বাসের মতো ট্রাকেরও ভাড়া নির্ধারণের দাবি জানান এফবিবিসিআইয়ের নেতারা। গ্যাস-বিদ্যুৎ সমন্বয় করে উৎপাদন বাড়ানের কথা ভাবছে সরকার।
গ্যাসের পরিমাণ বাড়িয়ে ব্যালেন্স করার চেষ্টা করব। অক্টোবর থেকে পুরোপুরি আগের অবস্থা নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুতের দিকে যেতে পারব। সবাইকে অনুরোধ করব, সবাই যেন ধৈর্য ধরেন। সব কিছুর দায় যেন ঠেকেছে সাধারণ মানুষের। দিন শেষে বলির পাঁঠা ভোক্তা।
গ্যাস-বিদ্যুৎ কিংবা জ্বালানি তেল-যে পণ্যের দামই বাড়ুক না কেন কেউ নিতে চান না দায়। সব কিছুর প্রভাব গিয়ে চূড়ান্তভাবে পড়ছে সাধারণ মানুষের কাঁধেই। এবারো জ্বালানি তেলের দাম বাড়ার পর গণপরিবহন থেকে দ্রব্যমূল্য— সব কিছুর পেছনেই বাড়তি ব্যয় বইতে হচ্ছে ভোক্তাদের।