জীবন ব্যয়ের হিসাব মিলাতে হিমশিম খাচ্ছেন সাধারণ মানুষ। সংকটে আছেন সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীরাও। বিদ্যুৎ-জ্বালানির দাম বৃদ্ধির বিষয়ে জনগণকে অবহিত করার তাগিদ দিয়েছেন কিছু কর্মকর্তা। তবে কর্মচারীরা তাদের আয়-ব্যয়ের হিসাব মিলাতে না পেরে হতাশা প্রকাশ করেছেন। সরেজমিন প্রশাসনের প্রাণকেন্দ্র সচিবালয়ে এ প্রতিবেদকের সাথে কথা হয় কয়েকজন কর্মকর্তা ও কর্মচারীর সঙ্গে।
প্রকাশে অনিচ্ছুক স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক যুগ্মসচিব আমার সংবাদকে বলেন, বৈশ্বিক পারিপার্শিকতায় জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধি সঠিক সময়ের সিদ্ধান্ত। তিনি বলেন, আমাদের পার্শ্ববর্তী প্রত্যেক দেশেই জ্বালানি তেলের দাম আরও আগেই বৃদ্ধি করা হয়েছে। আমাদের বাড়ানোটা সার্বিক দিক থেকে ঠিক আছে বলে জানান সরকারের এ কর্মকর্তা।
বিদ্যুতের সঠিক ব্যবহার করা, যত্রতত্র বিদ্যুৎ চুরিরোধে আমাদের আরও তৎপরতা বাড়াতে হবে জানিয়ে তিনি বলেন, আমরা যদি সচেতনতার সাথে বিদ্যুৎ ব্যবহারে সরকারের নির্দিষ্ট নিয়মাবলি মেনে চলি, তাহলে লোডশেডিং অনেকাংশে কমে আসবে বলে মনে করেন এ যুগ্মসচিব।
তিনি বলেন, কেন জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানো হলো বিষয়টা নিয়ে সাংবাদিকদের জনগণকে অবহিত করতে হবে। এক্ষেত্রে সাধারণ জনগণের প্রতি ব্যবসায়ীদের নমনীয় আচরণ আশা করেন সরকারের এ কর্মকর্তা।
বিদ্যুৎ ও জ্বালানি বিভাগের প্রশাসনিক এক কর্মকর্তা বলেন, সরকারের ঘাটতি সমন্বয়ে এ দাম বাড়ানো হয়েছে। তিনি বলেন, বহির্বিশ্বে কিন্তু জ্বালানি তেলের দাম বেড়েছে আরও আগে।
সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের এক পিও এ প্রতিবেদককে বলেন, বর্তমান যে পরিস্থিতি তাতে জীবন চালানো দুর্বিষহ হয়ে উঠবে। প্রত্যেক জিনিসের দাম বৃদ্ধি পাবে। কিভাবে খরচ মিলানো যাবে তা তো বুঝে উঠতে পারছি না।
মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের এক কম্পিউটার অপারেটর জানান, আমাদের পিঠ দেয়ালে ঠেকে গেছে। সরকারি কোয়ার্টার পাইনি, থাকি ভাড়া বাসায়। চারজন সদস্যের পরিবার এক মেয়ে স্কুলে পড়ালেখা করে।
গত তিন মাস হলো ইউক্রেন-রাশিয়ার যুদ্ধের কথা বলে মনোহারি, ভোগপণ্য থেকে শুরু করে সব জিনিসের দাম বৃদ্ধিতেই কষ্ট করে চলছে জীবন। এবার জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধির ফলে আবারো সব জিনিসের দাম বাড়া শুরু হয়েছে। এ যেন ‘মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা’।
সরকারের এ কর্মচারী বলেন, যে টাকা বেতন পাই তা দিয়ে ঢাকায় থেকে পরিবার-পরিজন নিয়ে সংসার চালানো দায়।
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের এক অফিস সহায়ক এ প্রতিবেদককে জানান, সরকার জ্বালানি তেলের দাম বাড়িয়েছে ৪০ থেকে ৫০ শতাংশ পর্যন্ত। আজ (গতকাল) থেকে আবার বাড়ল গণপরিবহনের ভাড়া। এছাড়া বাজারে খাদ্যসহ সব ধরনের নিত্যপণ্যের দামও বাড়বে। কিন্তু সে অনুযায়ী চাকরিজীবী বা অন্যান্য পেশার লোকজনের আয় বাড়েনি। এমন অবস্থায় কিভাবে টিকে থাকব এ চিন্তায় করছি।
প্রসঙ্গত, গত ৫ আগস্ট দিনগত মধ্যরাত থেকে সব ধরনের জ্বালানি তেলের দাম বাড়িয়েছে সরকার। এর মধ্যে প্রতি লিটার ডিজেলে বেড়েছে ৩৪ টাকা, কেরোসিনে ৩৪, অকটেনে ৪৬ ও পেট্রলে বেড়েছে ৪৪ টাকা। দাম বাড়ার পর একজন ক্রেতাকে প্রতি লিটার ডিজেল কিনতে হচ্ছে ১১৪ টাকায়। এছাড়া প্রতি লিটার কেরোসিন ১১৪ টাকা, অকটেন ১৩৫ ও পেট্রল ১৩০ টাকায় কিনতে হচ্ছে।
এদিকে, জ্বালানি তেলের দাম বাড়ায় গতকাল রোববার থেকে গণপরিবহনের ভাড়া বাড়িয়েছে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ)। এর সঙ্গে মানুষের জীবনযাত্রার ব্যয়ও কয়েকগুণ বেড়ে গেছে। এ অবস্থায় জীবনযাত্রার ব্যয় মেটাতে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন স্বল্প আয়ের মানুষ।