সিন্ডিকেটে বেসামাল ডিম ও মুরগি

মো. মাসুম বিল্লাহ প্রকাশিত: আগস্ট ১৬, ২০২২, ০১:২৮ এএম
সিন্ডিকেটে বেসামাল ডিম ও মুরগি

গরিবের প্রোটিনের প্রধান উৎস ধরা হয় ডিমকে। সহজলভ্য প্রোটিনের উৎস ব্রয়লার মুরগি ও ফার্মের ডিমের নাগাল পেতে এখন বেজায় বেগ পেতে হচ্ছে ভোক্তাদের। সিন্ডিকেটের খপ্পরে পড়ে বেসামাল মুরগি ও ডিমের বাজার। কয়েক দিন ধরে লাফিয়ে বাড়ছে মুরগি ও ডিমের দাম।

ক্রেতা-বিক্রেতা, ভোক্তা-খামারিরা এখন জিম্মি হয়ে পড়েছেন। রাজধানীর বিভিন্ন বাজারে ব্রয়লার মুরগি ১৯০ থেকে ২০০ টাকা পর্যন্ত এবং প্রতি ডজন ডিম ১৫০ থেকে ১৬৫ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে। সপ্তাহের ব্যবধানে পণ্য দুটির দাম অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে যাওয়ায় অস্বস্তিতে রয়েছেন সব শ্রেণির ভোক্তা।

আমিষনির্ভর পুষ্টির প্রায় অর্ধেক চাহিদা মুরগি ও ডিম থেকে পূরণ হলেও এখন তা কিনে খেতে পকেট ফাঁকা হয়ে যাচ্ছে নিম্ন আয়ের মানুষের। এমনকি অনেক মধ্যবিত্তের খাদ্যতালিকা থেকে বাদ পড়ছে মুরগির মাংস ও ডিম ভাজি।

সাভার বাসস্ট্যান্ড সংলগ্ন শাহজালাল মার্কেটে রয়েছে একটি ডিমের আড়ৎ। এখানে ১৯৯৮ সালে প্রতিষ্ঠা করা হয় ডিম ব্যবসায়ী সমিতি। বর্তমানে এই সমিতির সদস্য সংখ্যা ২০ থেকে ২৫ জন।

এই সমিতির সদস্যরাই রাতে মিটিং করে নির্ধারণ করেন ডিমের দাম। মিটিং হয় প্রতিদিন রাত ১০টায়। সদস্যদের ভোটাভুটির মাধ্যমে নির্ধারণ করা হয় প্রতিদিনের ডিমের বাজার দর। সমিতির সভাপতি ওবায়দুল খানের দাবি, ঢাকার তেজগাঁও সমিতির নির্ধারণ করা দরেই দেশের প্রায় অর্ধেক বাজারে ডিম সরবরাহ করা হয়।

এরপর হলো তাদের অবস্থান। আমরা দেশের বিভিন্ন স্থানের বাজার দর সংগ্রহ করি। আমাদের সমিতির সদস্যরা বসে রাত ১০টায় মিটিং করি। তারপর দাম নির্ধারণ হয়। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, অনেক জায়গায় ডিমের দাম নির্ধারণ করে দিচ্ছে এই সিন্ডিকেট। খামারিদের কাছ থেকে তারা ১৫ শতাংশ কমিশন নেয়। খামারিরা তাদের নির্ধারণ করা দামেই ডিম বিক্রি করেন।

গেল মাস থেকেই ব্রয়লার ও ডিমের বাজার ঊর্ধ্বমুখী রয়েছে। সর্বশেষ জ্বালানি তেলের মূল্য বৃদ্ধি এই গতিকে আরও এক ধাপ উসকে দিয়েছে। মাত্র এক সপ্তাহের মধ্যে ব্রয়লার মুরগির কেজিতে দাম বেড়েছে ৪০ টাকা এবং ডিমের দাম ডজন প্রতি বেড়েছে অন্তত ২০  থেকে ৩০ টাকা। দাম বাড়ার বিষয়ে বরাবরের মতো একে অপরকে দোষারোপ করছেন আড়ৎদার, পাইকারি ও খুচরা ব্যবসায়ীরা।

উল্লেখ্য, গত সপ্তাহের শুরুর দিকে বিক্রি হয়েছে ১৫৫ থেকে ১৬০ টাকায়। সপ্তাহের ব্যবধানে রাজধানীর বাজারে ব্রয়লারের দাম ২২ দশমিক ৫৮ শতাংশ বেড়েছে। উৎপাদনে খরচ বাড়ায় সপ্তাহের ব্যবধানে খামার পর্যায়ে মুরগি ও ডিম দাম কিছুটা বেড়েছে। কিন্তু পাইকারি ও খুচরা পর্যায়ে অতিরিক্ত হারে বেড়েছে। মূলত যাদের হাত হয়ে ভোক্তা পর্যন্ত পৌঁছাচ্ছে তারাই নানা অজুুহাতে অস্বাভাবিকভাবে দাম বাড়াচ্ছে।

বাংলাদেশ পোল্ট্রি ইন্ডাস্ট্রিজ সেন্ট্রাল কাউন্সিলের (বিপিআইসিসি) সদস্য নজরুল ইসলাম বলেন, ৩২ থেকে ৩৫ দিনের মধ্যে খামারিদের ব্রয়লার মুরগি বিক্রি করে দিতে হয়। নইলে খাবার খরচ হলেও এরপর মুরগির ওজন খুব একটা বাড়ে না। স্থানীয় পাইকাররা এর সুযোগ নিয়ে খামারিদের কাছ থেকে কম দামে মুরগি কেনেন এবং তা রাজধানীর পাইকারদের কাছে বাড়তি দামে বিক্রি করেন। জ্বালানির দাম বাড়ার অজুহাতে এখন তারা আরও বেশি দাম রাখছেন।

এ্যাগ প্রডিউসার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের সভাপতি তাহের আহমেদ সিদ্দিকীও বলেন, উৎপাদন পর্যায়ে খামারিদের প্রতিপিস ডিমে বর্তমানে কমবেশি আট টাকা খরচ হয়। বিক্রি করতে গেলে আড়তদারদের কাছ থেকে সাড়ে আট টাকার মতো দাম পান খামারিরা। অথচ, খুচরা বাজারে এই ডিম ১২ থেকে ১৩ টাকাতেও বিক্রি হচ্ছে। সরকারি সংস্থা ট্রেডিং কর্পোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) বাজার প্রতিবেদনও বলছে সপ্তাহের ব্যবধানে ব্রয়লারের দাম ১৬ শতাংশের বেশি বেড়েছে।

অপর দিকে ডিমের দামও ১৪ শতাংশের বেশি বেড়েছে। ভোক্তা অধিকার সংগঠন কনজ্যুমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সভাপতি গোলাম রহমান গণমাধ্যমকে বলেন, জ্বালানি তেলের দাম বাড়ার ফলে পণ্য বিতরণ, বিপণনে খরচ বাড়বে, পণ্যমূল্যও বাড়বে। তবে যতটা বাড়ার কথা তার থেকেও বেশি বাড়ানো হচ্ছে। মূলত হাত বদলের সংখ্যা যত বাড়বে দাম ততই বাড়বে। দাম সমানুপাতিকভাবে না বেড়ে অতিরিক্ত বাড়ছে। এই হাত বদলের সংখ্যা কমাতে হবে।

নইলে খামারিরাও ঠকবেন, আবার বেশি দামে পণ্য কিনে ভোক্তারাও প্রতারিত হবেন। নিত্যপণ্যের বাজার যদি সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণ করে তাহলে দাম বৃদ্ধি অস্বাভাবিক নয়। ডিম উৎপাদন করেন খামারিরা। এই দাম নির্ধারণ করবেন তারাই। আড়ৎদাররা ডিমের দাম নির্ধারণ করার ফলে খামারি ও ভোক্তা উভয়ই ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন।