দফায় দফায় বেড়ে গত মঙ্গলবার পর্যন্ত প্রতি ডজন ডিমের দাম ১৬০ টাকায় উঠেছিল। গত বুধবার থেকে এ দাম কমতে শুরু করেছে। গতকাল প্রতি ডজন ডিম ১৪৫ থেকে ১৫০ টাকায় পাওয়া যায়। অর্থাৎ ৫০ টাকা বা তার কিছু কমে একহালি ডিম কিনতে পারছেন ক্রেতারা।
যদিও স্বাভাবিক অবস্থার তুলনায় এ দাম অনেক বেশি। তবে দুদিন আগের তুলনায় দাম কমেছে। দুদিন আগেও প্রতি হালি ডিম ৫৫ থেকে ৬০ টাকায় বিক্রি হয়। গতকাল বৃহস্পতিবার রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা ঘুরে এ চিত্র দেখা যায়। অস্বাভাবিক দামের কারণে চাহিদা কমে যাওয়ায় ডিমের দাম এখন নিম্নমুখী বলে মনে করেন ব্যবসায়ীরা।
রাজধানীর হাজিপাড়া বউবাজারের ডিম বিক্রেতা সফিউল্লাহ বলেন, দাম বাড়ার পর থেকে বিক্রি কমেছে। এর ওপর এখন বাজারে ডিমের সরবরাহ বেড়েছে। ফলে পাইকারি বাজারে বুধবার এক রাতে প্রতি ডজন ডিমের দাম ১০ থেকে ১৫ টাকা কমেছে।
তিনি বলেন, ডিমের দাম পুরোপুরি অস্বাভাবিক ছিল। জীবনে কখনো এত দামে ডিম বিক্রি করিনি। মানুষও এত দামে খায়নি। এজন্য অনেকে ডিম খাচ্ছেন না বা খাওয়া কমিয়ে দিয়েছেন। হাজিপাড়া বাজারের আরও কয়েকজন ব্যবসায়ী জানান, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ডিম না খাওয়ার প্রচার করছেন অনেকেই।
এছাড়া ব্যবসায়ীরা কারসাজি করে দাম বাড়িয়েছেন— এমন নেতিবাচক প্রচারণাও ডিমের চাহিদা কমিয়ে দিয়েছে। সেজন্য বিক্রি বেশ কম।
এদিকে ফার্মের মুরগির ডিমের দাম কমলেও দেশি মুরগি কিংবা হাঁসের ডিমের দাম এখনো কমেনি। হাঁসের ডিমের ডজন বিক্রি হচ্ছে ২১০ থেকে ২২০ টাকা। একই সঙ্গে দেশি মুরগির ডিমের ডজন বিক্রি হচ্ছে ২০০ থেকে ২৪০ টাকা।
মালিবাগ বাজারের ডিম বিক্রেতা এমদাদুল হক বলেন, ফার্মের ডিমের দাম কমেছে। ফলে এখন এমনিতেই দু-তিনদিনের মধ্যে দেশি হাঁস-মুরগির ডিমের দামও কমবে। ফার্মের মুরগির ডিমের দামের সঙ্গে এগুলো (দেশি মুরগি ও হাঁস) ওঠানামা করে।
এদিকে, ডিমের অস্বাভাবিক দাম নিয়ন্ত্রণে তৎপর সরকার। বুধবার বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি জানিয়েছেন, প্রয়োজনে ডিম আমদানি করা হবে।
অন্যদিকে চলমান দামের ঊর্ধ্বগতি ঠেকাতে গতকাল তেঁজগাও ডিমের আড়তে অভিযান চালিয়েছে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর। অভিযানে ডিমের দামের ক্ষেত্রে ব্যবসায়ীদের কারসাজির প্রমাণ মিলেছে। আড়তগুলো গ্রামগঞ্জের মোকাম থেকে বাড়তি দামে ডিম কেনার কোনো রশিদ দেখাতে পারেনি।
এছাড়া তারাও বাড়তি দামে ডিম বিক্রির কোনো রশিদ দেয়নি খুচরা বাজারের ক্রেতাদের। এসব অভিযোগে তেজগাঁও এলাকায় ডিমের দুটি আড়তকে ১০ হাজার টাকা করে জরিমানা করা হয়। এ অভিযান পরিচালনা করেন ভোক্তা অধিকার অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক হাসানুজ্জামান।
হাসানুজ্জামান বলেন, ডিমের আড়তে তারা কত দামে কিনেছেন তার কোনো ক্রয়ের রশিদ নেই। তাদের বিক্রির কোনো মূল্য তালিকাও নেই। আবার যার কাছে বিক্রি করছেন তাদের কোনো রশিদও দিচ্ছেন না। সম্পূর্ণ পেপারলেস বিজনেস।
এর কারণ তারা সরবরাহ ও চাহিদা দেখে নিজেদের মতো দাম নির্ধারণ করছেন। কোনো নিয়মনীতির তোয়াক্কা করছেন না। সেজন্য এবার সতর্কতামূলক জরিমানা করেছি। সেটা না মানলে কঠোর ব্যবস্থা নেবো, যোগ করেন ভোক্তা অধিকার অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক।