২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলায় নিহতদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়েছেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ও দলটির সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা। গতকাল সকালে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে দলটির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে নির্মিত স্মৃতিস্তম্ভে দলের সর্বস্তরের নেতাকর্মীরা শ্রদ্ধা জানান। আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রথমে গ্রেনেড হামলার শহীদদের স্মরণে স্থাপিত বেদিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান।
শ্রদ্ধা নিবেদনের পর শহীদদের স্মরণে দাঁড়িয়ে নীরবতা পালন করেন প্রধানমন্ত্রী। পরে তিনি দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরকে সাথে নিয়ে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। এর আগে গাড়ি থেকে নেমে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলায় আহত ও দলের নেতাদের সঙ্গে কিছুক্ষণ কুশল বিনিময় করেন।
এরপর আওয়ামী লীগ প্রধান ২১ আগস্টের নারকীয় গ্রেনেড হামলার প্রতিবাদ ও নিহতদের স্মরণে আলোচনা সভায় উপস্থিত হন।
এসময় উপস্থিত ছিলেন— আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদ সদস্য আমির হোসেন আমু, তোফায়েল আহমেদ, মোজাফ্ফর হোসেন পল্টু, সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য বেগম মতিয়া চৌধুরী, শেখ ফজলুল করিম সেলিম, জাহাঙ্গীর কবির নানক ও আব্দুর রহমান, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ, ডা. দীপু মনি, তথ্য ও সমপ্রচারমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ ও আ ফ ম বাহা উদ্দিন নাছিম, সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন, এস এম কামাল হোসেন ও মির্জা আজম, দপ্তর সম্পাদক বিপ্লব বড়ুয়া, উপদপ্তর সম্পাদক সায়েম খান প্রমুখ।
সভায় সভাপতির বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলা বিএনপি-জামায়াতের রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় সংঘটিত হয়েছিল। দেশের চলমান অগ্রযাত্রায় পুনরায় আঘাত আসতে পারে।’ তিনি বলেন, এই আঘাত হয়তো সামনে আরও আসবে, কারণ আমার আব্বা যখন দেশটাকে উন্নয়নের পথে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছিলেন তখনই ১৫ আগস্ট ঘটেছিল। এজন্য সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে।
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, বঙ্গবন্ধু হত্যার যারা মাস্টারমাইন্ড, একুশে আগস্টেরও মাস্টারমাইন্ড তারা। মুফতি হান্নান জবানবন্দিতে বলেছেন, হাওয়া ভবনের নির্দেশ পেয়ে আমরা অপারেশন শুরু করেছিলাম। এ সত্য কি তারা অস্বীকার করতে পারবেন? বিএনপি মহাসচিবের কাছে জবাব চেয়ে পাইনি জানিয়ে কাদের বলেন, রাজনৈতিক সম্পর্কের এই দেয়াল একুশে আগস্টে এসে আরও উঁচুতে গেছে। এর সৃষ্টি করেছে বিএনপি।
তারপরও শেখ হাসিনা তাদের গণভবনে ডাকেন, সংলাপ করেন। আলোচনা সভা শেষে আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অনুষ্ঠান স্থল ত্যাগ করার পর সবার শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য শহীদ বেদি উন্মুক্ত করে দেয়া হয়। পরে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দ ও আওয়ামী লীগের বিভিন্ন অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের নেতারা শ্রদ্ধা জানান।
২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলায় নিহতদের প্রতি শ্রদ্ধা জানান কেন্দ্রীয় ১৪ দলীয় জোট। জোটের সমন্নয়ক ও মুখপাত্র এবং আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য আমির হোসেন আমুর নেতৃত্বে শ্রদ্ধা নিবেদনে উপস্থিত ছিলেন সাম্যবাদী দলের সাধারণ সম্পাদক দিলীপ বড়ুয়া, জাসদের সাধারণ সম্পাদক শিরীন আখতার এমপি, ঢাকা মহানগর ১৪ দলের সমন্নয়ক ও আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া বীর বিক্রম, জাতীয় পার্টি জেপির সাধারণ সম্পাদক শেখ সহিদুল ইসলাম, গণতন্ত্রী পার্টির সাধারণ সম্পাদক ডা. শাহাদাত হোসেন, বাসদের আহ্বায়ক রেজাউর রশিদ খান প্রমুখ।
ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের পক্ষ থেকে গ্রেনেড হামলায় নিহতদের প্রতি শ্রদ্ধা জানান মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস। এরপর শ্রদ্ধা জানান মহানগর উত্তর-দক্ষিণ আওয়ামী লীগ। সভাপতি শেখ বজলুর রহমান ও সাধারণ সম্পাদক এমএম মানান কচির নেতৃত্বে মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগ এবং সভাপতি আবু আহম্মেদ মান্নাফি ও হুমায়ুন কবিরের নেতৃত্বে মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলায় নিহতদের প্রতি শ্রদ্ধা জানান।
এছাড়া শ্রদ্ধা জানায় বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগ। সংগঠনের চেয়ারম্যান শেখ ফজলে শাসস পরশ ও সাধারণ সম্পাদক আলহাজ মাইনুল হোসেন খান নিখিলের নেতৃত্বে যুবলীগের কেন্দ্রীয়, মহানগর ও বিভিন্ন ইউনিটের নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন। ছাত্রলীগের সভাপতি আল নাহিয়ান খান জয় ও সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্যের নেতৃত্বে সংগঠনের কেন্দ্রীয়, মহানগর, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নেতাকর্মীরা শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। ভারপ্রাপ্ত সভাপতি গাজী মেজবাউল হক সাচ্চু ও সাধারণ সম্পাদক আফজালুর রহমান বাবুর নেতৃত্বে স্বেচ্ছাসেবক লীগ, সভাপতি সমীর চন্দ ও সাধারণ সম্পাদক উম্মে কুলসুম স্মৃতির নেতৃত্বে বাংলাদেশ কৃষক লীগ, সভাপতি মো. সায়ীদুর রহমান ও সাধারণ সম্পাদক লায়ন শেখ আজগর নস্করের নেতৃত্বে আওয়ামী মৎস্যজীবী লীগ, সংগঠনের সভাপতি সাফিয়া খাতুন ও সাধারণ সম্পাদক মাহমুদা বেগম ক্রিকের নেতৃত্বে মহিলা আওয়ামী লীগ, সভাপতি নাজমা আকতার ও সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপিকা অপু উকিলের নেতৃত্বে যুব মহিলা লীসহ শ্রমিক লীগ, তাঁতী লীগসহ আওয়ামী লীগের সর্বস্তরের নেতাকর্মীরা শ্রদ্ধা জানান। ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলায় নিহতদের স্মরণে অস্থায়ী বেদিতে শ্রদ্ধা জানায় বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি।
এসময় উপস্থিত ছিলেন পার্টির পলিটব্যুরোর সদস্য কামরুল আহসান, আবুল হোসাইন, মোস্তফা আলমগীর রতন, কিশোর রায় প্রমুখ। গ্রেনেড হামলায় নিহতদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ)। বিএসএমএমইউর পক্ষে উপাচার্য অধ্যাপক ডা. মো. শারফুদ্দিন আহমেদের নেতৃত্বে এ শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়।
এসময় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (গবেষণা ও উন্নয়ন) অধ্যাপক ডা. মো. জাহিদ হোসেন, উপ-উপাচার্য (অ্যাকাডেমিক) অধ্যাপক ডা. এ কে এম মোশাররফ হোসেন, উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক ডা. ছয়েফ উদ্দিন আহমদ, কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ আতিকুর রহমান প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
বর্বরোচিত ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলায় ২৪ জনকে হত্যার ঘটনায় আদালতের দেয়া রায় অবিলম্বে কার্যকর করার দাবিতে মানববন্ধন করেছে জাতীয় স্বাধীনতা পার্টি (জেএসপি)। গতকাল রোববার জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে এ মানববন্ধন করে সংগঠনটি।
এতে সাবেক রাষ্ট্রদূত ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. নিমচন্দ্র ভৌমিক বলেন, ২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলা জাতির জন্য একটি কলঙ্কের দিন। মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের শক্তিকে চিরতরে শেষ করে দিতে এ হামলা করেছে ঘাতকের দল। অনতিবিলম্বে এই মামলার রায় কার্যকর করতে হবে।
যেসব হামলাকারী বিদেশে পলাতক আছে তাদের দেশে ফিরিয়ে এনে রায় কার্যকর করুন। জাতীয় স্বাধীনতা পার্টির চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান মিজুর সভাপতিত্বে বক্তব্য রাখেন বিএনএর মহাসচিব মেজর (অব.) ডা. শেখ হাবিবুর রহমান, জাতীয় গণতান্ত্রিক লীগের সভাপতি এম. এ জলিল, কাজী আরেফ ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান কাজী মাসুদ আহমেদ, ন্যাপ ভাসানীর চেয়ারম্যান মোস্তাক আহমেদ, ইসলামী গণতান্ত্রিক পার্টির চেয়ারম্যান মো. আনোয়ার হোসেন, কনজারভেটিভ পার্টির চেয়ারম্যান আনিসুর রহমানসহ বিভিন্ন পার্টির নেতারা।
নিহতদের পরিবারের প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের সমবেদনা : ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলায় নিহতদের পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জানিয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। গতকাল রোববার এক বার্তায় এ সমবেদনা জানায় ঢাকাস্থ মার্কিন দূতাবাস। দূতাবাসের বার্তায় বলা হয়, যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাস ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট সংঘটিত গ্রেনেড হামলায় নিহতদের পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জ্ঞাপন করছে।
এসব হামলার প্রতিক্রিয়ায় যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক সেক্রেটারি অফ স্টেট কলিন পাওয়েল রাজনৈতিক সহিংসতা ও হত্যাকাণ্ডের তীব্র নিন্দা করেছেন। তার বক্তব্য আজও সত্য। যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাস সব ধরনের রাজনৈতিক সহিংসতার নিন্দা জানায় বলেও বার্তায় উল্লেখ করে দূতাবাস।
উল্লেখ্য, ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট ঢাকার বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেতা ও বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সমাবেশে গ্রেনেড হামলা চালানো হয়। এতে দলের নেতা ও কর্মীসহ ২৪ জন নিহত হন। আহত হন শেখ হাসিনাসহ দলের কয়েকশ নেতাকর্মী।