ইসির আহ্বানে বিশৃঙ্খলার আশঙ্কা

আবদুর রহিম প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ১, ২০২২, ১২:৫০ এএম
ইসির আহ্বানে বিশৃঙ্খলার আশঙ্কা

জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন কার্যক্রম নির্বাচন কমিশনের পরিবর্তে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অধীন সুরক্ষা সেবা বিভাগে ন্যস্ত করার আহ্বান চরম বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে। সংশ্লিষ্ট মহল থেকে দাবি উঠেছে, কমিশনের দীর্ঘ সময়ের অর্জিত সম্পদ অন্যের হাতে চলে গেলে স্বাভাবিককভাবে দেশের সাধারণ মানুষ বড় হয়রানির সম্মুখীন হবেন এবং আগামী জাতীয় দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের স্বচ্ছতা নিয়ে প্রশ্ন উঠতে পারে। রাজনৈতিক অঙ্গনেও বিতর্ক উঠবে।

দেশ-বিদেশে নানা বিষয়ে প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হবে। যা বড় দায়ভার এসে পড়বে সরকারের উপরও এবং স্থানান্তরিত হওয়ার সময় কোনো গোপনীয়তাও প্রকাশ পেতে পারে যা দেশের ভাবমূর্তি ও অস্তিত্বে এসে আঘাত করবে। ভবিষ্যতে নির্বাচন ব্যবস্থা ও গণতন্ত্রকে হুমকির মুখে ফেলতে পারে।

নির্বাচন কমিশনের প্রস্তাবের পরিপ্রেক্ষিতে নির্বাচন কমিশনের কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের মধ্যে উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠার সৃষ্টি হয়েছে। নির্বাচন কমিশনের অধীনে তিল তিল করে গড়ে তোলা একটি ডাটাবেইজ আকস্মিকভাবে অন্য কোনো প্রতিষ্ঠানে ন্যস্ত করা হলে অহেতুক বিতর্কের সৃষ্টি হতে পারে বলেও দাবি উঠেছে।

বর্তমানে প্রতি মাসে প্রায় তিন লাখ নাগরিক অনলাইনের মাধ্যমে নতুন ভোটার নিবন্ধন, জাতীয় পরচিয়পত্র সংশোধন, হারানো কার্ড উত্তোলনসহ বিভিন্ন সেবা গ্রহণ করছে। অন্যদিকে নির্বাচন কমিশনের ডাটাবেইজ ব্যবহার করে ১৬৪টি সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ঊ-কণঈ-এর মাধ্যমে পরিচয় নিশ্চিত করে সেবা প্রদান করছে।

এতে করে ভুয়া পেনশন গ্রহণকারী চিহ্নিত করে সরকারের হাজার হাজার কোটি টাকা অপচয় রোধ করা সম্ভব হয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে— ভোটার তালিকার বিশুদ্ধতা, নিরপেক্ষতা নিয়ে রাজনৈতিক দলসহ বিভিন্ন শ্রেণিপেশা ও গোষ্ঠীর মধ্যে প্রশ্ন দেখা দেবে, যার ফলে ২০০৬ সালের মতো সাংবিধানিক সংকটও সৃষ্টি হতে পারে। এ পর্যন্ত বাংলাদেশে তৈরি অন্য সব ডাটাবেইজের তুলনায় ভোটার তালিকা ডাটাবেইজ জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে নিরঙ্কুুশ আস্থা ও গ্রহণযোগ্যতা অর্জন করেছে। যার ব্যত্যয় বাংলাদেশের নির্বাচন ব্যবস্থাকে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে প্রশ্নের সম্মুখীন করতে পারে।

ইলেকশন কমিশনে যুক্ত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ভোটার তালিকা ডাটাবেইজের নিয়ন্ত্রণকারী কর্তৃপক্ষ একাধিক হলে অপারেশনাল কার্যক্রমে বহু জটিলতা সৃষ্টি হবে। ভোটার তালিকা ও জাতীয় পরিচয়পত্রের তথ্যের অসঙ্গতি ও ভুল-ত্রুটির জন্য একে অন্যকে দোষারোপ করবে। ফলে জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা অত্যন্ত দুরূহ হবে।

এছাড়া স্বাধীন সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে নির্বাচন কমিশনে জনগণ যে সব ব্যক্তিগত গোপনীয় তথ্য দিয়েছেন সে সব গোপনীয় তথ্য অন্য কোনো প্রতিষ্ঠানে হস্তান্তর সংবিধান, আইন ও বিধি পরিপন্থি হবে এবং  সংবিধান আইন ও বিধি দ্বারা ভোটার তালিকা প্রস্তুত, তত্ত্বাবধান ও নিয়ন্ত্রণ নির্বাচন কমিশনের ওপর ন্যস্ত।

ভোটার তালিকা ও জাতীয় পরিচয়পত্রের ডাটাবেইজে দ্বৈত ব্যবস্থাপনায় পরিচালিত হলে কোনো ব্যক্তির এনআইডির তথ্যের যেকোনো ধরনের সংশোধন-সংযোজন-বিয়োজন সরাসরি ভোটার ডাটাবেইজে প্রভাব ফেলবে, যার দায়ভার সরাসরি নির্বাচন কমিশনের ওপর বর্তাবে। যদিও সংবিধান ও আইনের দ্বারা অর্পিত ক্ষমতাবলে এ কাজের স্থায়ভার একমাত্র নির্বাচন কমিশনের।

অন্যদিকে জাতীয় পরিচয়পত্র নির্বাচন কমিশন থেকে অন্য মন্ত্রণালয়-বিভাগে ন্যস্ত করা হলে শুধু ভোটার হওয়ার জন্য জনগণের আগ্রহ ও উদ্দীপনায় নেতিবাচক প্রভাব সৃষ্টি হবে যা ভবিষ্যতে নির্বাচন ব্যবস্থা এবং গণতন্ত্রকে হুমকির মুখে ফেলতে পারে। উপরন্তু কোনো প্রতিষ্ঠান নিজস্ব উদ্ভাবনী কার্যক্রমের স্বীকৃতি হারালে নতুন কোনো উদ্ভাবনে প্রতিষ্ঠান নিরুৎসাহী হবে।

এছাড়া ভোটার তালিকার নির্দিষ্ট কিছু বৈশিষ্ট্য রয়েছে। বিধি অনুযায়ী প্রতি বছর বাড়ি বাড়ি গিয়ে নতুন ভোটার অন্তর্ভুক্ত করা ও বিপুল সংখ্যক মৃত মানুষের নাম ভোটার তালিকা থেকে কর্তন করা হয়। মৃত মানুষের নাম ভোটার তালিকা থেকে কর্তন করা না হলে এই ভোটার তালিকা তার নিজস্ব বৈশিষ্ট্য হারাবে এবং এই ভোটার তালিকা রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে ও আন্তর্জাতিকভাবে গ্রহণযোগ্যতা হারাবে তাছাড়া বিপুল সংখ্যক মানুষ নির্বাচনকে মাথায় রেখে ভোটার স্থানান্তর আবেদন করে যা নির্বাচন কমিশন গুরুত্বসহকারে বিবেচনা ও যাচাই-বাছাই করে ভোটার স্থানান্তর করে থাকে।

ভোটার তালিকা ও এনআইডি ডাটাবেইজ এক ও অভিন্ন হওয়ায় এবং নির্বাচন কমিশনের নিয়ন্ত্রণে থাকায় ভোটার তালিকার বৈশিষ্ট্য অক্ষুণ্ন রেখে নির্বাচন কমিশন এই ডাটাবেইজ রক্ষণাবেক্ষণ করে থাকে। এই ডাটাবেজ যদি অন্য কোনো কর্তৃপক্ষের নিয়ন্ত্রণে থাকে তাহলে মৃত ভোটারের নাম কর্তন ও ভোটার স্থানান্তরের মতো স্পর্শকাতর বিষয়গুলো পরবর্তীতে জটিলতার সৃষ্টি করবে।

সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণের অংশ হিসেবে ভোটগ্রহণ প্রক্রিয়াকে স্বচ্ছ, ত্রুটিমুক্ত ও আধুনিক প্রযুক্তিনির্ভর করার লক্ষ্যে ইভিএমের মাধ্যমে ভোটগ্রহণের জন্য বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশন ও বর্তমান সরকার ইভিএম প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। ইডিএম এ ভোটগ্রহণ পদ্ধতির সব পর্যায়ে ভোটার তালিকার ডাটাবেইজ আবশ্যিকভাবে ব্যবহার করা হয়।

উল্লেখ্য, ইডিএমে ভোটগ্রহণ, নির্বাচনে প্রার্থী ব্যবস্থাপনা ও ভোটার ব্যবস্থাপনায় স্মার্ট জাতীয় পরিচয়পত্র ও জাতীয় পরিচয়পত্র নম্বর ব্যবহার অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ  এবং অপরিহার্য অনুষঙ্গ। সুতরাং ভোটার তালিকা ডাটাবেইজ ও জাতীয় পরিচয়পত্র ডাটাবেইজের দ্বৈত ব্যবস্থাপনা থাকলে ইডিএমে ভোটগ্রহণের ক্ষেত্রে অন্য মন্ত্রণালয়/বিভাগের নিয়ন্ত্রণাধীন জাতীয় পরিচয়পত্র নিয়ে ভোটার শনাক্ত করলে নির্বাচন আইনসিদ্ধ-বিধিসম্মত হবে না।

এছাড়াও ডাটাবেইজের দ্বৈত ব্যবস্থাপনার কারণে ইভিএমে রক্ষিত ভোটার তথ্যও অন্য মন্ত্রণালয়-বিভাগের এনআইডির তথ্যে গরমিল পরিলক্ষিত হলে ডিজিটাল প্রক্রিয়ায় ভোটার শনাক্তকরণ, প্রাণী ব্যবস্থাপনা, ভোটার ব্যবস্থাপনা এবং নির্বাচন ব্যবস্থাপনা বিঘ্নিত হবে। যার ফলে ডিজিটাল প্রযুক্তিনির্ভর নির্বাচন ব্যবস্থাপনা সম্পূর্ণ ঝুঁকি ও হুমকির মধ্যে পড়বে এবং নির্বাচন প্রশ্নবিদ্ধ হবে।

সংশ্লিষ্ট অভিজ্ঞরা আরো বলছেন, ভোটার তালিকা ডাটাবেইজ প্রস্তুতকালে ভৌত ও প্রযুক্তিগত অবকাঠামো নির্মাণে আন্তর্জাতিক সংস্থা ইউএনডিপি ও সরকারের অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের সাথে ত্রিপক্ষীয় চুক্তির মাধ্যমে আর্থিক ও কারিগরি সহায়তা গ্রহণ করা হয়েছে। সম্পাদিত চুক্তি অনুযায়ী এ সব ভৌত ও প্রযুক্তিগত অবকাঠামো নির্বাচন কমিশনের নিজস্ব সম্পদ।

এ ক্ষেত্রে ডাটাবেইজের নিয়ন্ত্রণ নির্বাচন কমিশনের বাইরে হস্তান্তর করা হলে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করবে। বিশ্বে বিভিন্ন দেশে জাতীয় পরিচয়পত্র ডাটাবেইজ বিভিন্ন বিভাগের অধীন হলেও এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশের রয়েছে ভিন্ন ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট।

অন্যান্য বিভাগের অধীনে অনুরূপ ডাটাবেইজ শুরু থেকেই গড়ে তোলা হলে এ নিয়ে কোনো প্রশ্নের অবকাশ ছিল না। কিন্তু বাংলাদেশের আর্থসামাজিক ও রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট বিবেচনায় বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশনের অধীনে তিল তিল করে গড়ে তোলা একটি ডাটাবেইজ আকস্মিকভাবে অন্য কোনো প্রতিষ্ঠানে ন্যস্ত করা হলে অহেতুক বিতর্কের সৃষ্টি হতে পারে। বরং জাতীয় পরিচয়পত্র সংক্রান্ত কার্যাদি সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে নির্বাচন কমিশনের কাছে ন্যস্ত থাকায় এর সর্বোচ্চ গ্রহণযোগ্যতা বজায় রাখা সম্ভব হয়েছে।

সুতরাং জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন কার্যক্রম অন্য কোনো বিভাগে অন্তর্ভুক্তির ক্ষেত্রে অন্য দেশের উদাহরণ অনুসরণ না করে বরং একই অর্থ, জনবল ও সময় ব্যবহারের মাধ্যমে ভোটার তালিকার উপজাত হিসেবে জাতীয় পরিচয়পত্র প্রস্তুত করে বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশন বিশ্বে যে নজির স্থাপন করেছে তা অনন্য ও অনুসরণীয়। উল্লেখ্য, বাংলাদেশের আদলে জ্যামাইকা, ত্রিনিদাদ অ্যান্ড টোবাগো, সেন্ট লুসিয়া ও সেন্ট ভিনসেন্ট অ্যান্ড গ্রানাডা দ্বীপপুঞ্জসহ অনেক দেশে নির্বাচন কমিশন পরিচয়পত্র কার্যক্রম পরিচালনা করে থাকে।

জানা যায়, ২০২০ সালে করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের কারণে সরকারি-বেসরকারি অফিস বন্ধ হয়ে গেলে জাতীয় পরিচয়পত্র সেবা আকস্মিক হুমকির মুখে পড়ে। এ পরিস্থিতি হতে উত্তরণের জন্য নির্বাচন কমিশনের সদয় নির্দেশনায় গত ১৬ এপ্রিল ২০২০ এনআইডি সেবার অনলাইন সার্ভিস চালু করা হয়। এতে করে জনসাধারণ ঘরে বসে জরুরি সেবা গ্রহণের সুযোগ পায়।

পরবর্তীতে এনআইডির গুরুত্ব বিবেচনা করে সরকার এনআইডি সেবাকে জরুরি সেবা ঘোষণা করে। সে সময় ভোটার তালিকা ডাটাবেইজের সহায়তায় প্রস্তুতকৃত এনআইডির মাধ্যমে সরকার ২৫ লাখ পরিবারকে শতভাগ স্বচ্ছতার সাথে দুই হাজার ৫০০ টাকা করে অনুদান দিতে সক্ষম হয়। তা ছাড়া করোনা টিকা দেয়ার ক্ষেত্রে অনলাইন নিবন্ধনে নির্বাচন কমিশন অসামান্য অবদান রাখে।

বর্তমানে প্রতি মাসে প্রায় তিন লাখ নাগরিক অনলাইনের মাধ্যমে নতুন ভোটার নিবন্ধন, জাতীয় পরচিয়পত্র সংশোধন, হারানো কার্ড উত্তোলনসহ বিভিন্ন সেবা গ্রহণ করছে। অন্যদিকে নির্বাচন কমিশনের ডাটাবেইজ ব্যবহার করে ১৬৪টি সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ঊ-কণঈ-এর মাধ্যমে পরিচয় নিশ্চিত করে সেবা প্রদান করছে। এতে করে ভুয়া পেনশন গ্রহণকারী চিহ্নিত করে সরকারের হাজার হাজার কোটি টাকা অপচয় রোধ করা সম্ভব হয়েছে।

অন্যদিক দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতিসহ আর্থিক খাতে শৃঙ্খলা বজায় রাখার ক্ষেত্রেও নির্বাচন কমিশনের ডাটাবেইজ ভাসামান্য অবদান রেখে চলেছে। তা ছাড়া এই ভোটার তালিকার ডাটাবেইজের ওপর ভিত্তি করেই বর্তমান ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়া সম্ভব হয়েছে, যার সুফল জনসাধারণসহ বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানসমূহ ভোগ করছে। করোনাকালে ওই জরুরি সেবা প্রদান করতে নির্বাচন কমিশনের তিন শতাধিক কর্মকর্তা-কর্মচারী কোভিড আক্রান্ত হয় এবং তাদের মধ্যে আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তাসহ সাতজন মৃত্যুবরণ করেন।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ ইলেকশন কমিশন অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশন মহাসচিব মো. রাশদুল ইসলাম আমার সংবাদকে বলেন, ‘বিগত ২০০৭-০৮ সাল থেকে অদ্যাবধি নির্বাচন কমিশনের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা অক্লান্ত পরিশ্রম করে এবং নানামুখী প্রতিবন্ধকতা মোকাবিলা করে জাতীয় পরিচয়পত্রকে সত্যিকার অর্থে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিয়েছে।

জাতীয় পরিচয়পত্র অন্যত্র হস্তান্তরের নির্দেশনার সাধারণ জনগণসহ নির্বাচন কিমশন কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে বিরূপ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে। বর্ণিতাবস্থায়, জাতীয় স্বার্থে অমূল্য এ তথ্যভাণ্ডারকে সুসংহত রেখে অব্যাহত নাগরিকসেবা নিশ্চিত করতে নির্বাচন কমিশন থেকে জাতীয় পরিচয়পত্র অন্য মন্ত্রণালয়-বিভাগে ন্যস্তকরণের সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশনের সব কর্মকর্তা-কর্মচারীর প্রাণের দাবি।’

বাংলাদেশ ইলেকশন কমিশন অফিসার্সের সভাপতি মুহাম্মদ হাসানুজ্জামান নির্বাচন কমিশনের মুখোমুখি হয়ে এক লিখিত বার্তায় বলেন, ‘২০০৭-০৮ সালে নির্বাচন কমিশনের প্রত্যক্ষ তত্ত্বাবধানে ছবিসহ ভোটার তালিকা এবং জাতীয় পরিচয়পত্র কার্যক্রম শুরু হয়। সুদীর্ঘ পথ পরিক্রমায় বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশন তাদের নিজস্ব ৫১৯ টি উপজেলা-থানা নির্বাচন অফিস, ৬৪টি জেলা নির্বাচন অফিস ও ১০টি আঞ্চলিক নির্বাচন অফিস ও আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন একটি নির্বাচনি প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট নিয়ে বর্তমানে একটি সুসংগঠি অবস্থানে পৌঁছেছে।

নির্বাচন কমিশনের নিজস্ব ভৌত অবকাঠামো, দক্ষ জনবল এবং ভিপিএন নির্ভর সুবিশাল নেটওয়ার্কিং ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে ছবিসহ ভোটার তালিকা ও জাতীয় পরিচয়পত্র সেবা কার্যক্রম নিরপেক্ষতার সাথে পরিচালিত হচ্ছে। ওই কার্যক্রম পরিচালনার জন্য এনআইডি উইংয়ের আলাদা অরকাঠামো ও জনবল নেই।

এক্ষণে, ওই কার্যক্রম অন্য কোনো সংস্থা কর্তৃক পরিচালনা করে বর্তমান অবস্থানে পৌঁছাতে সুদীর্ঘ সময়ের প্রয়োজন হবে। অনুরূপ অবকাঠামো তৈরি এবং পৃথক ডাটাবেইজ ব্যবস্থাপনার ফলে তথ্যের অভিন্নতা ক্ষুণ্ন হবে এবং আলাদা করে বিপুল অর্থ ও শ্রমের প্রয়োজন হবে যা বিদ্যমান বৈশ্বিক করোনা পরিস্থিতিতে বর্তমান সরকার গৃহীত ব্যয় সঙ্কোচন নীতির পরিপন্থি।