আমাদানির চাপে ৩৩ বিলিয়ন ডলারের বিশাল বাণিজ্য ঘাটতি নিয়ে ২০২১-২২ অর্থবছর শেষ হয়। চাপ সামাল দিতে বাংলাদেশ ব্যাংকের নানামুখী উদ্যোগে আমদানি ব্যয় কমাতে সক্ষম হলেও রপ্তানি আয়ের তুলনায় তা এখনো অনেক বেশি। ফলস্বরূপ বেড়েই চলেছে বাণিজ্য ঘাটতি।
২০২২-২৩ অর্থবছরের প্রথম মাসে (জুলাই) ১৮ হাজার ৮১৯ কোটি টাকার বাণিজ্য ঘাটতিতে পড়েছে দেশ। গতকাল রোববার বাংলাদেশ ব্যাংকের বৈদেশিক লেনদেনের চলতি হিসাবের ভারসাম্যের (ব্যালান্স অব পেমেন্ট) হালনাগাদ প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের জুলাই মাসে ৫৮৬ কোটি ডলারের পণ্য আমদানি হয়েছে। এর বিপরীতে রপ্তানি হয়েছে ৩৮৮ কোটি ডলারের পণ্য।
এরফলে ১৯৮ কোটি ডলারের বাণিজ্য ঘাটতি হয়েছে। দেশীয় মুদ্রায় প্রতি এক ডলার ৯৫ টাকা ধরে এর পরিমাণ ১৮ হাজার ৮১৯ কোটি ৫০ লাখ টাকা। যা গত অর্থবছরের জুলাইয়ের চেয়ে ৬২ কোটি ৮০ লাখ ডলার বেশি।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, পণ্য এবং সেবা আমদানি ব্যয়ের বিপরীতে রপ্তানি আয় ও রেমিট্যান্সের জোগান সেভাবে না বাড়ায় ক্রমবর্ধমান বাণিজ্য ঘাটতি বাড়ছে। জুলাই মাসে সেবা খাতের বাণিজ্য ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ২৮ কোটি ৩০ লাখ ডলার।
গত বছরের একই সময়ে এ ঘাটতি ছিল সাত কোটি ৫০ লাখ ডলার। মূলত বিমা, ভ্রমণ ইত্যাদি খাতের আয়-ব্যয় হিসাব করে সেবা খাতের বাণিজ্য ঘাটতি পরিমাপ করা হয়। আমদানি বাড়ায় বৈদেশিক লেনদেনের চলতি হিসাবের ভারসাম্যে ঘাটতি হয়েছে। জুলাই মাসে এ ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ৩২ কোটি ১০ লাখ ডলার। অথচ গত বছরের একই সময়ে উদ্বৃত্ত ছিল ২৯ কোটি ৩০ লাখ ডলার।
অন্যদিকে গত জুলাই মাসে ২০৯ কোটি ডলার রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা। আগের বছর জুলাইয়ে পাঠিয়েছিলেন ১৮৭ কোটি ডলার। সে হিসেবে প্রবৃদ্ধি হয়েছিল ১২ শতাংশ। অর্থনীতির সূচকগুলোর মধ্যে সবচেয়ে ভালো অবস্থায় ছিল এই সূচক।
বাণিজ্য ঘাটতির ফলে সামগ্রিক লেনদেন ভারসাম্যেও ঘাটতি পড়েছে। জুলাই মাস শেষে ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ১০৮ কোটি ডলার।
অথচ গত বছরের একই সময়ে উদ্বৃত্ত ছিল ৩১ কোটি ডলার। আলোচ্য সময়ে বৈদেশিক বিনিয়োগ বেড়েছে ৩০ শতাংশ। গত জুলাই মাসে ৩৯ কোটি ডলার বিনিয়োগ করেছেন বিদেশি উদ্যোক্তারা।
তবে গত বছরের একই সমেয় এর পরিমাণ ছিল ৩০ কোটি ডলার। তথ্য মতে, ২০২১-২২ অর্থবছর শেষে আগের সব রেকর্ডকে পেছনে ফেলে ৩৩ বিলিয়ন ডলার ছাড়ায় বাণিজ্য ঘাটতি।
একই অর্থবছরে দেশের বৈদেশিক লেনদেনের চলতি হিসাবের ভারসাম্যেও সাড়ে ১৮ বিলিয়ন ডলারের বেশি ঘাটতি হয়েছিল। আমদানি পণ্যে সামপ্রতিক বছরগুলোর মধ্যে অতিমাত্রায় ব্যয় বেড়ে যাওয়ার কারণেই অর্থবছর শেষে এমন দুই রেকর্ডের চাপে পড়ে দেশ।