ভারী বর্ষণ, খানাখন্দে ভরা সড়ক এবং জলাবদ্ধতায় রাজধানীর বিমানবন্দর সড়কে তীব্র যানজট সৃষ্টি হয়েছে। এতে বিদেশগামী অসংখ্য যাত্রী হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ফ্লাইট মিস করছেন। মঙ্গল ও বুধবার (১৩ ও ১৪ সেপ্টেম্বর) এমন পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে।
যাত্রীদের অভিযোগ, যানজটের কারণে নির্ধারিত সময়ে বিমানবন্দরে পৌঁছানো যাচ্ছে না। ৩০ মিনিটের পথ যেতে সময় লাগছে চার থেকে পাঁচ ঘণ্টা। এমন পরিস্থিতিতে অনেক যাত্রী বিশ্বের বিভিন্ন দেশের গন্তব্যের ফ্লাইট মিস করছেন। এতে তাদের মোটা অঙ্কের টাকা গচ্চা যাচ্ছে। অথচ যানজট নিয়ন্ত্রণে ট্রাফিক পুলিশের তেমন কোনো ভূমিকাই দেখা যাচ্ছে না।
তবে পুলিশের ট্রাফিক বিভাগ বলছে, বিমানবন্দর এলাকা থেকে উত্তরা ও গাজীপুর অংশে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের কাজ চলছে। এই কাজের জন্য নিচের সড়কে খানাখন্দের সৃষ্টি হয়েছে। এর মধ্যে উত্তরা ও আব্দুল্লাহপুর অংশে অনেকগুলো বড় গর্ত রয়েছে। বৃষ্টির পানি জমে এসব গর্তে যানবাহনের চাকা আটকে যাচ্ছে। ফলে সড়কে তীব্র যানজট তৈরি হয়েছে। ট্রাফিক পুলিশ তাদের সাধ্যমতো কাজ করছে।
বিমানবন্দর সড়কে যানজটের চিত্র তুলে ধরে গতকাল বুধবার দুপুর ১টায় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেন ডিবিসি নিউজের সম্পাদক জায়েদুল আহসান পিন্টু।
তিনি লেখেন, ‘গত কদিন ধরে যানজটের কারণে বিমানের শিডিউল বিপর্যয় হচ্ছে। ঘণ্টার পর ঘণ্টা রাস্তায় বসে থেকে ফ্লাইট মিসের আশঙ্কায় লাগেজ মাথায় নিয়ে বিমানবন্দরের দিকে যাত্রীদের ছুটতে দেখা যাচ্ছে। দেশি-বিদেশি সব ফ্লাইটের এ অবস্থা। যাত্রী পৌঁছায় তো ক্রুরা এসে পৌঁছাতে পারেন না, ক্রুরা পৌঁছালে যাত্রীরা পারেন না। সে এক বিতিকিচ্ছিরি অবস্থা।’
আগামীকাল থেকে এসএসসি পরীক্ষা শুরু হচ্ছে জানিয়ে জায়েদুল আহসান আরও লেখেন, যানজটের আশঙ্কায় ১০টার পরিবর্তে ১১টায় পরীক্ষা শুরু হবে। এ সড়ক দিয়ে যাদের চলাচল, তারা সময়মতো কেন্দ্রে পৌঁছাতে চাইলে সকাল ৬টায় যাত্রা শুরু করতে হবে। সবচেয়ে ভালো হয় আগের রাতে কেন্দ্রে গিয়ে অবস্থান নিলে। কাল এ সড়ক দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বিমানবন্দরে যাবেন। সকাল ১১টায় তার ফ্লাইট।’
যানজটের কারণে গতকাল বুধবার সকালে ফ্লাইট মিস করে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেন শিমন রায়হান নামে এক আইনজীবী। তিনি লেখেন, ‘রাস্তায় অনিঃশেষ উন্নয়নের চাপ! প্রথম ফ্লাইট মিসের স্বাদ গ্রহণ করলাম। আড়াই কোটি নগরবাসীর উড়ালবন্দর থেকে শুভসকাল।’
রাজধানীর কোন সড়কে যানজট কেমন, তা জানতে মোবাইল অ্যাপস ‘মি অন দ্য ম্যাপে’ দেখা যায়, রাজধানীর অধিকাংশ সড়কেই যানজট রয়েছে। এর মধ্যে বনানী থেকে খিলক্ষেত হয়ে উত্তরা, আব্দুল্লাহপুর, টঙ্গী, গাজীপুর পর্যন্ত সড়কে তীব্র যানজট রয়েছে। তবে বিমানবন্দর থেকে বনানীগামী সড়ক অনেকটাই ফাঁকা দেখা গেছে। গত দুদিনে যানজটের কারণে কী পরিমাণ যাত্রী ফ্লাইট মিস করেছেন, তা জানতে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের নির্বাহী পরিচালক গ্রুপ ক্যাপ্টেন মোহাম্মদ কামরুল ইসলামের মোবাইলে কল দিলে তিনি ব্যস্ত আছেন বলে জানান।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিমানবন্দরের এক কর্মকর্তা বলেন, গত দুদিন ধরেই যথাযথ সময়ে বিমানবন্দরে উপস্থিত হতে পারছেন না যাত্রীরা। অনেক উড়োজাহাজ যাত্রী রেখেই চলে যাচ্ছে। কিন্তু কী পরিমাণ যাত্রী ফ্লাইট মিস করছেন, তার সঠিক পরিসংখ্যান তিনি দিতে পারেননি। কারণ, কেউ নিজের কারণে ফ্লাইট মিস করলে এ বিষয়ে বিমানবন্দরে লিখিত দেয়ার সুযোগ নেই।