ব্যাংক এশিয়ায় জালিয়াতির মাধ্যমে পাস হওয়া এলিট পেইন্ট অ্যান্ড কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের ১৪০ কোটি টাকার ঋণটি বিতরণ করা হচ্ছে না বলে জানা গেছে। নির্ধারিত সময়ে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র জমা দিতে ব্যর্থ হওয়ায় প্রতিষ্ঠানটি লোন প্রাপ্তির যোগ্যতা হারিয়েছে বলে ব্যাংক সূত্র নিশ্চিত করেছে। তবে অনুমোদিত লোনটি এখনো বাতিল করা হয়নি। একটি অভিযোগের ভিত্তিতে এ বিষয়ে কাজ করছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
সম্প্রতি ব্যাংক এশিয়ার উত্তরা শাখা থেকে ১৪০ কোটি টাকার একটি ঋণ অনুমোদন করিয়ে নেয় এলিট পেইন্ট। পর্যাপ্ত জামানত ছাড়াই লবিস্টের মাধ্যমে লোনটি পাস হয়। লোন অনুমোদনে কমিশনের ভিত্তিতে লবিস্ট ফার্ম নিয়োগ দেয়া হয়েছে। লবিস্ট নিয়োগের চুক্তিপত্র দৈনিক আমার সংবাদের হাতে এলে গত বৃহস্পতিবার (১৫ সেপ্টেম্বর) এ সংক্রান্ত প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়।
প্রতিবেদন প্রকাশের পরপরই বিষয়টি নজরে আসে বাংলাদেশ ব্যাংক ও ব্যাংক এশিয়ার সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের। তাৎক্ষণিকভাবে লোনটি বিতরণ বন্ধে ব্যবস্থা নিতে পদক্ষেপ নেয়া হয়। তবে জালিয়াতির কথা সরাসরি স্বীকার না করে নির্ধারিত সময়ে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র জমা না দেয়ায় লোনটি বিতরণ করা হচ্ছে না বলে দাবি করেছে ব্যাংক এশিয়া।
এ বিষয়ে ব্যাংক এশিয়ার অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক শফিউজ্জামান আমার সংবাদকে বলেন, ‘অনুমোদন হলেও যথাসময়ে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র জমা না দেয়ায় লোনটি বিতরণ হচ্ছে না।’ তবে লোনটি বাতিল করা হয়নি বলে জানিয়েছেন এ কর্মকর্তা।
উল্লেখ্য, নিজের ভাইয়ের পরামর্শক প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে লোন অনুমোদনে এলিট পেইন্টকে সহায়তার অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। লোন বিতরণের বিষয়ে কথা বলতে ব্যাংকটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক আদিল চৌধুরীকে ফোন করা হলে তিনি রিসিভ করেননি।
প্রসঙ্গত, ইনস্পিরিজেন্স সার্ভিসেস লিমিটেড (আইএসএল) নামের একটি পরামর্শক প্রতিষ্ঠানের সাথে দেড় থেকে দুই শতাংশ কমিশনের শর্তে ঋণ পাইয়ে দেয়ার একটি চুক্তি করেছে এলিট পেইন্ট। ১০০ টাকার সরকারি স্ট্যাম্পে করা ওই চুক্তিতে বলা হয়, লবিস্ট ফার্মটিকে প্রথম ৫০ কোটিতে ২ শতাংশ হারে এবং এর বেশি পরিমাণের লোন অনুমোদনের ক্ষেত্রে ১.৫ শতাংশ হারে কমিশন দেবে এলিট পেইন্ট।
চুক্তি অনুযায়ী বিভিন্ন ব্যাংক থেকে এলিটকে ঋণ পাইয়ে দিতে তদবির শুরু করে পরামর্শক প্রতিষ্ঠানটি। আপন ভাই ব্যাংক এশিয়ার অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালকের পদে থাকায় এ সুযোগ কাজে লাগায় আইএসএলের এমডি মাহবুবুজ্জামান। দুই কোটি ৯ লাখ টাকা কমিশন ভাগাভাগির মাধ্যমে ছোট ভাইকে দিয়ে ১৪০ কোটি টাকার ঋণ অনুমোদন করিয়ে নেন।
মাহবুবুজ্জামানের ব্যাংক হিসাবের মাধ্যমে প্রথম দফায় ৩০ লাখ টাকা ও দ্বিতীয় দফায় ১৫ লাখ টাকা লেনদেন হয়। বাকি এক কোটি ৬৪ লাখ টাকা নগদ লেনদেন হয়েছে বলে জানা গেছে। এরপরই ঝুঁকিপূর্ণ এই ঋণ বিতরণ বন্ধে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট শাখায় অভিযোগ জমা হয়েছে। অভিযোগটি নিয়ে কাজ করছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
অভিযোগে বলা হয়, ‘ইস্পিরিজেন্স সার্ভিসেস লিমিটেডের ম্যানেজিং ডিরেক্টর মাহবুবুজ্জামান ও মাহবুবুজ্জামানের আপন ভাই শফিউজ্জামান (ক্রেডিন ইন চার্জ ) ও অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক, ব্যাংক এশিয়ার যোগসাজশ ও কারসাজির মাধ্যমে মোট ঋণের ১.৫ শতাংশ কমিশনের ভিত্তিতে এলিট পেইন্ট লিমিটেডকে ১৪০ কোটি টাকার ঋণ অনুমোদন দেয়া হয়।
ওই অবৈধ চুক্তির দুই কোটি ৯ লাখ টাকার মধ্যে মাহবুবুজ্জামানের ব্যাংক হিসাবের মাধ্যমে গত ৮ আগস্ট প্রথম দফায় ৩০ লাখ টাকা ও দ্বিতীয় দফায় গত ২৮ আগস্ট ১৫ লাখ টাকা লেনদেন হয়। বাকি এক কোটি ৬৪ লাখ টাকা নগদ প্রদান করা হয়। তাই লোনটি বিতরণ বন্ধে কেন্দ্রীয় ব্যাংককে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে অনুরোধ করা হয়েছে।’
বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র সিরাজুল ইসলাম আমার সংবাদকে বলেন, ‘সাধারণত যেকোনো বিষয়ে অভিযোগ পেলে আমরা গুরুত্বসহ পরীক্ষা করে দেখি। প্রমাণ পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হয়। তবে এক্ষেত্রে অগ্রগতি পরে জানানো হবে।’
এ বিষয়ে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হয় এলিট পেইন্ট অ্যান্ড কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের সাথে। প্রতিষ্ঠানটির পক্ষ থেকে বোর্ড সেক্রেটারি মুরাদ আমার সংবাদের সাথে কথা বলেন। জানতে চাওয়া হয় কেন নির্ধারিত সময়ে তারা প্রয়োজনীয় কাগজপত্র জমা দেননি। প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে তিনি এ সংক্রান্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করায় আমার সংবাদের প্রতি ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন। একই সঙ্গে আইনি ব্যবস্থা নেয়ার হুমকি দিয়ে একটি ক্ষুদে বার্তা পাঠান।