সহিংসতার পথেই এগোচ্ছে দেশের রাজনীতি! বেড়েই চলছে রাজনৈতিক সংঘাত! নির্দলীয়-নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন, জ্বালানি ও দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির প্রতিবাদ, বর্তমান সরকারের পদত্যাগ দাবিতে সরকারবিরোধী লাগাতার কর্মসূচি দিয়ে মাঠ দখলের চেষ্টায় ব্যস্ত বিএনপি।
দলটির টার্গেট— রাজনীতির মাঠ নিজেদের নিয়ন্ত্রণে রাখা। গণতান্ত্রিক অধিকার আদায়ের নামে বিএনপি যেন দেশের অভ্যন্তরে বড় ধরনের সংঘাত-সহিংসতা তৈরি করতে না পারে যে জন্য সতর্ক ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ।
দলটির শীর্ষ নেতারা বলছেন, দেশের সুষ্ঠু রাজনীতির ধারা নষ্ট করতে সংঘাত-সহিংসতার দিকে এগোচ্ছে বিএনপি। সরকারকে বেকায়দায় ফেলতে উসকানি দিচ্ছে। বিএনপি যেন কোনো ধরনের সংঘাত তৈরি করতে না পারে সে বিষয়ে সতর্ক আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে ঘরের রাজনীতিতে ব্যস্ত আওয়ামী লীগ। মেয়াদোত্তীর্ণ ওয়ার্ড, ইউনিয়ন, পৌরসভা, উপজেলা, জেলাসহ সকল ইউনিটের সম্মেলন ও কমিটি গঠনের কাজে ব্যস্ত সময় পার করছেন দলটির বিভাগীয় দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা।
দলের দুর্দিনের পরীক্ষিত, ত্যাগী, মেধাবী ও জনপ্রিয় নেতাদের মূল্যায়নের পাশাপাশি অনুপ্রবেশকারী, হাইব্রিড, বিতর্কিত ও সুযোগসন্ধানীদের দলের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দেয়া হচ্ছে। দলের অভ্যন্তরে সৃষ্ট দ্বন্দ্ব ও কোন্দল নিরসন, বিভক্তি-বিভাজন কমানো ও বলয়ভিত্তিক রাজনীতি ভেঙে দিয়ে সুসংগঠিক আওয়ামী লীগ গঠনে কাজও চলমান।
যে সকল এমপির সাথে দলীয় নেতাদের দূরত্ব বেড়েছে, সে সব এমপিদের আমলনামা তৈরি করা হচ্ছে দলের পক্ষ থেকে। আওয়ামী লীগ ঘরের রাজনীতিতে মনযোগী হলেও মাঠ দখলের চেষ্টায় দেশের প্রধান বিরোধী রাজনৈতিক দল বিএনপি। দলটির সরকারবিরোধী লাগাতার কর্মসূচি দিচ্ছে। নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন, জ্বালানি ও দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির প্রতিবাদ, বর্তমান সরকারের পদত্যাগ দাবিতে লাগাতার কর্মসূচি দিচ্ছে বিএনপি।
সর্বশেষ গত বৃহস্পতিবার পর্যন্ত পুলিশের গুলি ও হামলাকারীদের আঘাতে বিএনপির চার কর্মীর মৃত্যু হয়েছে। এমন অবস্থানেও পিছু হটছেন না দলটির শীর্ষ নেতারা। একের পর এক সরকারবিরোধী কর্মসূচি দিয়ে যাচ্ছে দলটি। তবে সংসদ নির্বাচনের আগে বিএনপির এমন কর্মকাণ্ড ভালোভাবে নিচ্ছে না ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ।
দলটির শীর্ষ নেতারা বলছেন, বিএনপির আন্দোলন মানেই আগুন-সন্ত্রাস। পুলিশের ওপর হামলা। সাধারণ মানুষকে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে মারা। সংসদ নির্বাচনের আগে পুরোনো রূপে ফিরছে বিএনপির রাজনীতি। দেশের চলমান গণতান্ত্রিক পরিবেশ নষ্টের অপচেষ্টায় লিপ্ত তারা। গণতান্ত্রিক আন্দোলনের নামে বিএনপি নৈরাজ্য সৃষ্টির অপচেষ্টা করলেই প্রতিরোধ করবে আওয়ামী লীগ।
তারা মনে করেন, সংবিধান অনুযায়ী নির্ধারিত সময়েই সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। দেশের জনগণ যাদের ভোট দিয়ে নির্বাচিত করবে তারাই রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব গ্রহণ করবে। ফলে বিএনপির রাজনীতির নামে অপরাজনীতি কোনো কাজে আসবে না। এ জন্য মাঠের রাজনীতিতেও অনেকটাই মনোযোগী আওয়ামী লীগ নেতারা। বিএনপি-জামায়াতসহ সরকারবিরোধী মিত্র দলগুলো যেন গণতান্ত্রিক আন্দোলনের নামে দেশের অভ্যন্তরে নৈরাজ্য ও অস্থিতিশীল পরিবেশ সৃষ্টি করতে না পারে, সে দিকেও সজাগ দৃষ্টি দেয়া হচ্ছে।
তথ্য মতে, দেশের বৃহত্তম দুই রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপির কর্মী-সমর্থকদের মধ্যে রাজপথের মিছিল-সমাবেশ নিয়ে প্রায়ই রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ হচ্ছে। ফলে দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি ক্রমেই জটিল হয়ে উঠছিল।
বিএনপির নেতাদের দাবি— আওয়ামী লীগ দেশের গণতন্ত্রকে ধ্বংসস্তূপে পরিণত করেছে। তাদের একনায়কতন্ত্রে মুখথুবড়ে পড়েছে দেশের গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলো। বিচার বিভাগ, প্রশাসন, জাতীয় সংসদ ও নির্বাচন কমিশন সবাই মুখোশের আড়ালে আওয়ামী লীগের পক্ষে কাজ করছে। বিএনপির সমাবেশে পুলিশ এবং পুলিশের ভেতর থেকে খালি গায়ে ‘জয়বাংলা’ স্ল্লোগান দিয়ে হামলা করা হচ্ছে।
অন্যদিকে আওয়ামী লীগের নেতাদের দাবি— গণতান্ত্রিক আন্দোলনের নামে বিএনপি আগুন-সন্ত্রাসের রাজনীতির দিকে ফিরে যাচ্ছে। তাদের টার্গেট গণতান্ত্রিক পথ পরিহার করে পেছনের দরজা দিয়ে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা দখল করা।
আওয়ামী লীগ-বিএনপির এমন মুখোমুখি অবস্থান এবং মাঠের রাজনীতিতে ধারাবাহিক কর্মসূচি ঘোষণায় সহিংসতার পথেই এগোচ্ছে দেশের রাজনীতি! আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য আব্দুর রহমান আমার সংবাদকে বলেন, ‘বিএনপির আন্দোলন মানেই আগুন-সন্ত্রাস ও মানুষ পুড়িয়ে হত্যা করা। তারা বিগত দিনের মতোই ফের আগুন-সন্ত্রাসের রাজনীতির দিকে ফিরে যাচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, বিএনপির জনপ্রিয়তা নেই। দেশের মানুষও আর বিএনপিকে বিশ্বাস করে না। তারা জানে সুষ্ঠুু নির্বাচন হলে বিএনপি কোনোদিন রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় আসতে পারবে না। এ জন্য গণতান্ত্রিক পথ পরিহার করে, পেছনের দরজা দিয়ে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় আসার পাঁয়তারা করছে বিএনপি। তাদের এই স্বপ্ন কোনোদিন পূরণ হবে না।’
আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক বিএম মোজাম্মেল হক আমার সংবাদকে বলেন, ‘গণতান্ত্রিক আন্দোলনে নামে বিএনপির পুরোনো দিনের দিকে যাচ্ছে। দেশের গণতান্ত্রিক পরিবেশকে নষ্ট করার অপচেষ্টা করছে।
তিনি আরও বলেন, সংবিধান অনুযায়ী নির্ধারিত সময়েই সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। দেশের জনগণ যাদের ভোট দিয়ে নির্বাচিত করবে তারাই রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব গ্রহণ করবে। ফলে বিএনপির রাজনীতির নামে অপরাজনীতি কোনো কাজে আসবে না।’
এআই