দাদন সিন্ডিকেটে নাকাল ক্ষুদ্র খামারিরা

বেলাল হোসেন প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ৩০, ২০২২, ০২:২৩ এএম
দাদন সিন্ডিকেটে নাকাল ক্ষুদ্র খামারিরা

দেশের পুষ্টি চাহিদা পূরণে বড় ধরনের ভূমিকা রাখছেন খামারিরা। দুধ ও মাংসের বড় একটি অংশ সরবরাহ হয় দেশের চরাঞ্চল থেকে। দুধের বড় হাব পয়েন্ট সিরাজগঞ্জ ও পাবনা জেলার চরাঞ্চল। তবে গো-খাদ্যের চড়া দাম, দাদন ব্যবসায়ীর বেড়াজালে দুধের ন্যায্যমূল্য বঞ্চিত আর আধুনিক চিকিৎসাসেবা, প্রশিক্ষণ না পাওয়ার অভিযোগ এসব অঞ্চলের ক্ষুদ্র খামারিদের।

তবে প্রাণিসম্পদ ও ডেইরি উন্নয়ন প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা বলছেন, জনবল সমস্যার কারণে প্রান্তিক পর্যায়ে কিছু এলাকায় একটু সমস্যা হচ্ছে। এগুলো উন্নয়নে কাজ দ্রুত এগিয়ে চলছে। বর্তমানে করোনা সমস্যা কাটিয়ে প্রকল্পের বিভিন্ন কাজ চলমান রয়েছে।

সম্প্রতি পাবনা বেড়া উপজেলার হাটুরিয়া নাকালিয়া ইউনিয়নের চর সারাশিয়া, চর নাকালিয়ায় সরেজমিন গেলে আমার সংবাদে এসব বিষয়ে প্রকৃত চিত্র উঠে আসে। এ ছাড়াও চরনাগদা, পেঁচাকোলা, চরপায়খন্দ, বেঙ্গালিয়া ও চরহাটাইল আরালিয়াতেও একই অবস্থা। এসব চরে প্রায় প্রত্যেক বাড়িতেই চার-পাঁচটি গরু আছে।

বেড়া উপজেলা প্রাণিসম্পদ অফিস সূত্রে জানা গেছে, ছোট-বড় মিলিয়ে মোট খামারের সংখ্যা প্রায় এক  হাজার ৬৫০টি। গবাদি পশুর সংখ্যা প্রায় ১৮ হাজার। এ উপজেলায় প্রাণিসম্পদ ও ডেইরি উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় বাছাইকৃত উৎপাদনকারী দলের (পিজি গ্রুপ) কাজও চলমান রয়েছে। তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ‘একটি বাড়ি একটি খামার’-এর অংশ হিসেবে এই অঞ্চলের লোকজন ছোট খামার গড়ে তুলেন।

খামার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সরকারের সহযোগিতা দরকার ও দাদন ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট রুখতে পারলে খামারিরা বাঁচতে পারবেন। এতে করে দেশের পুষ্টি চাহিদায় বড় ধরনের জোগান দিতে পারবেন এই চরাঞ্চলের খামারিরা।

চরসারাশিয়ার ক্ষুদ্র খামারি আব্দুস সাত্তার বেপারি বলেন, আমার বাড়িতে এখন তিনটি গরু আছে। আগে  অনেক গরু ছিল, গো-খাদ্যের অভাবে গরু বিক্রি করে দিয়েছি। আমাদের এলাকায় যে ঘাস হয় তার খুব অভাব। আমরা ফসল ফলাব না ঘাস লাগাব— এ নিয়ে খুব চিন্তায় আছি। গরুর খাবারের যে দাম তাতে দুধের দাম পানির বরাবর। সরকারের রেট ৯০ টাকা কেজি আর আমরা পাই ৪৫ টাকা কেজি। যারা ঘোষের থেকে দাদন নেয় তারা দুধের দাম কেজিতে তিন-চার টাকা কম পায়। তিনি বলেন, একদল সিন্ডিকেটের কারণে দুধের দাম কমিয়ে রাখছে। দুধের সঠিক দাম পেলে আমরা গরু পালতে পারতাম, খামার তৈরি করতে পারতাম। এখন সিন্ডিকেটের কারণে আমরা গরু পালতে পারছি না, বাধ্য হয়ে গরু বিক্রি করে দিতে হচ্ছে। এখন সরকার যদি আমাদের সহজ শর্তে ঋণ দেয় তাহলে আমরা গরু খামারগুলো টিকিয়ে রাখতে পারব। সরকারকে নজর দেয়ার আবেদন জানিয়ে বলেন, সারা দেশে দুধের দাম বেশি আর আমাদের চরাঞ্চলে কেনো এত দুধের দাম কম!

চর নাকালিয়ার ক্ষুদ্র খামারি আব্দুল আজিজ মোল্লা বলেন, বর্তমানে এক কেজি দুধেরদাম ৪০ টাকা আর সারা দেশে পানির দাম ২৫ টাকা লিটার সে হিসাবে আমরা দুধের দাম কিছুই পাই না। তিনি বলেন, কয়েকজন ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট করে দুধের দাম কমিয়ে রাখেন। খড় ৬০০ টাকা বাংলা (৩০ সের) মণ, দুই হাজার টাকা বস্তা ভুসি, গুঁড়া ৮০০ টাকা বস্তা। এখন ঘাসের সংকট। এই ঘাসও আমাকে কিনতে হয়। আমরা যে দুধ বিক্রি করি তা দিয়ে গরু পালন করা এখন পুরোটাই লস। একটি দুধের গরুর জন্য প্রতিদিন ২৫০-৩০০ টাকার মতো খাবার খরচ লেগে যায়, গাবের গরুর খরচ তো আরো বেশি। প্রতি বছর দেখা যায় আমাদের অন্য ফসল বিক্রি করে গো-খাদ্যের লাখ লাখ টাকা বাকি পরিশোধ করতে হয়। সেই ঋণ পরিশোধ করতে গেলে আমাদের গরুই বাঁচে না। এসময় আমাদের ঘোষের কাছ থেকে দাদন নিতে হয়। এক সময় ঋণের বোঝা এককালীন দিতে গেলে গরু বিক্রি করে দিতে হয়। বর্তমান খুব করুণ অবস্থা উল্লেখ করে এ খামারি বলেন, আবাদ সব পানিতে ডুবে গেছে। পটোল, বাদাম, তিল ছিল— সব পানিতে ডুবে গেছে। সরকারি সুযোগ-সুবিধা কেমন পেয়েছেন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, তেমন সুযোগ-সুবিধা পাইনি। শুধু ভ্যাকসিন আসছিল দুই-একবার পেয়েছি। আর করোনার মধ্যে গরুর খাবারের জন্য কিছু নগদ অনুদান পাইছিলাম।

আব্দুল আজিজ বলেন, দুধের নায্যমূল্য যদি ঠিকমতো পাই আর সরকার সুদমুক্ত ঋণের ব্যবস্থা করে দেয় তাহলে গরুর খামার টিকিয়ে রাখতে পারব।  

চর নাকালিয়ার ক্ষুদ্রখামারি মিল্টন এ প্রতিবেদকে বলেন, গরুর দুধের যে দাম তাতে চলতে পারছি না। ভুসি, খৈলের দাম বেড়ে গেছে। এখন এক কেজি দুধের দাম এখন ৪০-৪১ টাকা। এক কেজি ভুসির দাম ৫০-৫৫ টাকা। গরুর খাবারের দাম হুহু করে বাড়ছে। দাদন ব্যবসায়ীর (ঘোষ) কাছ থেকে টাকা ধার করে চলতে গিয়ে দুধের নায্যমূল্য পাচ্ছেন না বলে অভিযোগ এই খামারির। দাদন নেয়ায় কম দামে তাকে দুধ বিক্রি করতে হয়। চরে গরুর চিকিৎসাও মেলে তিন মাস অন্তর অন্তর।

চরের আরেক কৃষক বলেন, বর্তমানে গো-খাদ্যের যেভাবে দাম বেড়েছে আমি গরুকে ভুসি খাওয়ানো বাদ দিয়েছি। এখন শুধু ঘাস আর খড় দিয়ে গরুর খাবার কোনোরকমে দেয়া হচ্ছে।

তিনি বলেন, গরুর খাওয়া কমে যাওয়ায় দুধ কমে গেছে। নিজেই চলতে পারি না; গরুকে কি খাওয়াব। কখনো সরকারি প্রাণিসম্পদ অফিস থেকে ঘাস লাগানো, প্রাথমিক চিকিৎসার বিষয়ে প্রশিক্ষণ নিয়েছেন কি-না এমন প্রশ্নের উত্তরে সে জানায়, এ ধরনের অফিসে কখনো যাইনি, কেউ শিক্ষা দিতে আসেনি।

উপজেলার হাটুরিয়া নাকালিয়া ইউনিয়নের দাদন ব্যবসায়ী সনৎ দাস বলেন, তিন চর মিলিয়ে ৬০ থেকে ৭০ জন ক্ষুদ্রখামারিকে দাদন দেয়া আছে। চর থেকে দুধ সংগ্রহ করে প্রাণ, আকিজ কোম্পানির কাছে ৪.০ ফ্যাট দুধে ৪৫ টাকা লিটার রেটে বিক্রি করি। আবার বিকেলে ৪.৩ ফ্যাট এলে আমরা দুধের দাম পাই ৪৭ টাকা লিটার। আমরা চর থেকে ৪১ টাকা লিটার দরে ক্রয় করি। আর প্রতি লিটারে ক্যারিং খরচ আছে তিন টাকা।

লিটারে দুই-তিন টাকা লাভের কথা উল্লেখ করে সনৎ ঘোষ আরও বলেন, এখন ট্রলারের ভাড়া বাড়ছে, শ্রমিকের বেতন বাড়ছে। এখন দুধ কম সংগ্রহ হয় কিন্তু ক্যারিং খরচ একই, আমাদের তেমন লাভ হয় না। শীতের সময় দুধ বেশি হয়, ওই সময়টাতে একটু লাভ হয়।

তিনি আরও বলেন, চরের খামারিরা তো কোম্পানির রেটের কথা বোঝে না এ জন্য তারা (ক্ষুদ্রখামারিরা) বলে কম দাম পাচ্ছে।

তিনি বলেন, কোম্পানি দুধের দাম লিটারে বাড়িয়ে দিলো ১০ টাকা আর আমাদের জন্য বাড়িয়েছে মাত্র ২.৭০ পয়সা। তারা (কোম্পানির) সবাই এক আমরা কি করব।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বেড়া উপজেলা প্রাণিসম্পদ অফিসার ডা. মো. মিজানুর রহমান আমার সংবাদকে বলেন, ‘চর সারাশিয়া ও দক্ষিণ চর পেঁচাকোলাতে দুটি পিজি (প্রডিউসার গ্রুপ) আছে। পিজির কার্যক্রম এখনো শুরু হয়নি।’ তিনি বলেন, ‘প্রাণিসম্পদ সেক্টর খামারিদের জন্য যতটা সাহায্য করছে অন্য কোনো সেক্টর এরকম করছে কি-না তা নিয়ে প্রশ্ন রাখেন।’

চরের অনেক খামারি সরকারি সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত বলে অভিযোগ করেছে— এমন প্রশ্নের উত্তরে প্রাণিসম্পদ অফিসার বলেন, ‘করোনাকালীন সময়ে প্রত্যেক খামারিদের মোবাইলে কোনো মিডিয়া ছাড়া সরাসরি ১৫ হাজার থেকে ২০ হাজার, ২২ হাজার টাকা পর্যন্ত প্রণোদনা দেয়া হয়েছে।’

তিনি বলেন, ‘আমাদের আটটি প্রকল্প আছে ডেইরি বেজ, এলাকার চরগুলোতে বিভিন্ন কাজ হাতে নিয়েছি। আমি নিজে চরগুলোতে গেছি ফ্রি মেডিকেল ক্যাম্প করে খামরিদের সচেতন করেছি। এখন গো-খাদ্যের দাম বেশি। আটা-ভাত, গুঁড়া, খৈল এগুলো আমরা গো-খাদ্য হিসেবে ধরি না। আমরা তাদের বেশি বেশি ঘাস খাওয়ার বিষয়ে পরামর্শ দিয়ে থাকি।’

তিনি বলেন, ‘ঘাস প্রকল্প আছে সেখানে অনেক খামারিকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে তারা সরকারিভাবে সহযোগিতা পাবেন। এখানে খামারিদের উন্নত জাতের ঘাস লাগানোর প্রশিক্ষণ দেয়া হবে। বর্ষাকালে প্রচুর ঘাস হয়, সেগুলোকে সাইলেজ পদ্ধতিতে সংরক্ষণ করে তা শুষ্ক মৌসুমে খাওয়ানোর জন্য প্রশিক্ষণ দেয়া হবে।’

ডা. মিজানুর রহমান বলেন, ‘প্রাণিসম্পদ ও ডেইরি সম্পদ উন্নয়ন প্রকল্প পিজিদের কার্যক্রম শুরু হলে এর আওতাভুক্ত খামারিরা অনেক সুবিধা পাবেন। চর এলাকায় একসময় খামারিদের প্রচুর লোন দেয়া হয়েছে’ তার অভিজ্ঞতা অনেক খারাপ বলে জানান মিজানুর রহমান। এখনো লাখ লাখ টাকা কিস্তি তোলা যায়নি। যার কারণে এটি বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। এখন ব্যাংকের মাধ্যমে ৫ শতাংশ সুদে খামারিদের ঋণের ব্যবস্থা করা হয়েছে। আমরা তাদের লজিস্টিক সাপোর্ট দেবো।’

সিরাজগঞ্জের শাহাজাদপুর উপজেলার সোনাতনী চরের খামারি রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘বর্তমানে আমার সাতটি গরু আছে। আগে ২০টি গরু ছিল। গো-খাদ্যের যে দাম তাতে গরু পালন করে লাভ করতে পারছি না। এই জন্য অনেক গরু বিক্রি করে দিয়েছি।

তিনি বলেন, মিল্কভিটা সরাসরি আমাদের থেকে ৩৮ টাকা লিটার দরে দুধ ক্রয় করে। ঘোষেরা ৪০ টাকা লিটার দরে ক্রয় করে। একটি গরুর প্রতিদিন ৩০০ টাকার মতো খাবার খরচ হয়। সরকারি সুযোগ-সুবিধা ছাড়া খামার চালানো খুব সমস্যা।’

রাজবাড়ী জেলার বালিয়াকান্দি উপজেলার ইশারা ডেইরি ফার্মের মালিক ইমদাদুল হক বলেন, আমার ফার্মে ২০টি গরু ছিল। গরুর খাবারের দাম বৃদ্ধি, পরিচালনা ব্যয় বৃদ্ধি হওয়াতে গত বছর অনেক গরু বিক্রি করে দিয়েছি এখন অবশিষ্ট চারটি গাভী আছে। সব জিনিসের দাম বেড়েছে তবে দুধের দাম তো সেই হারে বাড়েনি। এখনো ৪০ টাকা লিটার দুধ বিক্রি করতে হয়। এভাবে তো খামার বৃদ্ধি করা সম্ভব নয়।’

এ বিষয়ে প্রাণিসম্পদ গবেষণা ইনস্টিটিউটের সাবেক মহাপরিচালক ও কৃষি অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক ড. জাহাঙ্গীর আলম খান আমার সংবাদকে বলেন, ‘আগে কৃষিজমি চাষাবাদে গরুর হালের প্রয়োজন ছিল। কমবেশি অনেকের গরু ছিল। এখন প্রযুক্তিনির্ভর চাষাবাদের কারণে গরু কমে গেছে। এ ছাড়া গো-খাদ্যের দাম বৃদ্ধি, মাঠে ঘাসের পরিমাণ কম হওয়ায় গবাদিপশু পালন কমে যাচ্ছে।’

তিনি বলেন, পশুখাদ্যে সাবসিডি দেয়া দরকার। স্বল্পসুদে যে ঋণ দেয়া হয় এটি যেন প্রান্তিক পর্যায়ে পায় সেটি নিশ্চিত করতে হবে। প্রান্তিক পর্যায়ে খামারিদের সাথে আমাদের প্রাণিসম্পদের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের যোগাযোগ কম। এটি বাড়াতে হবে বলেও জানান ড. জাহাঙ্গীর আলম।

প্রাণিসম্পদ ও ডেইরি উন্নয়ন প্রকল্পের (এলডিডিপি) চিফ টেকনিক্যাল কো-অর্ডিনেটর ড. মো. গোলাম রব্বানী বলেন, ‘খামারিদের ঋণ সহায়তা প্রাণিসম্পদ সেক্টর দেয় না। ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও কিছু এনজিও আছে তারা ঋণ সহায়তা দিয়ে থাকে। কোনো ক্ষুদ্রখামারি যদি বাংলাদেশ ব্যাংকের ৫ শতাংশ হারে ঋণ নিতে চায় সে ক্ষেত্রে একজন খামারি চারটি গরুর বিপরীতে সর্বোচ্চ দুই লাখ টাকা ঋণ পাবেন। এ ক্ষেত্রে টেকনিক্যাল ভিরেফিকেশনের বিষয়টি আমাদের অধিদপ্তর দেখবে। প্রাণিসম্পদ সেক্টর শুধু কারিগরি সেবা দিয়ে থাকে। প্রাণিসম্পদের সেবা দিতে উপজেলা পর্যায়ের অফিসে সর্বোচ্চ ১৮টি পদের পজিশন আছে। অনেক উপজেলায় এতগুলো পদে লোকবল নেই। সে ক্ষেত্রে বিচ্ছিন্ন কিছু জায়গায় সেবার ক্ষেত্রে কিছুটা সমস্যা হতে পারে। এটি কিন্তু স্বাভাবিক চিত্র নয়।’

তিনি বলেন, আমাদের প্রকল্পে প্রান্তিক পর্যায়ে যোগাযোগ বাড়াতে সরকার জনবল বাড়ানোর জন্য নতুন নতুন পদ সৃষ্টি করেছে। নতুন লোকবল যোগ দিলে আমাদের যে সমস্যা সেটি আশা করছি সমাধান হবে। ফলে চিকিৎসা সহায়তা, বিভিন্ন প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা আরও সহজে করা যাবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি। দুধের ন্যায্যমূল্যের বিষয়ে জানতে চাইলে গোলাম রব্বানী আরও বলেন, আমরা দুধের কালেকশন সেন্টার করছি। এটি সরাসরি প্রান্তিক পর্যায়ের খামারিরা ক্রেতার কাছে দুধ বিক্রি করতে পারেন। এতে করে দাদন ব্যবসায়ীদের দুধ ক্রয়ের যে সিন্ডিকেট এর সমাধান হবে।

এ বিষয়ে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম আমার সংবাদকে বলেন, ‘প্রাণিসম্পদ খাতে উৎপাদন ব্যয় কমানোর জন্য সরকার সবসময় সচেষ্ট রয়েছে। ডেইরি ও পোল্ট্রি খাদ্য উপাদান আমদানিতে শুল্ক কমানো, কর রেয়াতসহ নানা সুবিধা সরকার অব্যাহত রেখেছে। গো-খাদ্য যাতে আমদানি করতে না হয় সে জন্য সরকার দেশে গো-খাদ্য উৎপাদনে বেসরকারি খাতকে উৎসাহিত করছে।’

মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর কর্তৃক বাস্তবায়নাধীন প্রাণিসম্পদ ও ডেইরি উন্নয়ন প্রকল্পের মাধ্যমে দেশে দুধের উৎপাদন বৃদ্ধি এবং সরবরাহ ও বিপণন ব্যবস্থায় বড় ধরনের পরিবর্তন আনতে কাজ করছে সরকার। দুধ সংগ্রহ ও বিপণনের সীমিত উদ্যোগের কারণে অনেক সময় প্রান্তিক খামারিরা দুধের ন্যায্যমূল্য প্রাপ্তি থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। এ কারণে  প্রাণিসম্পদ ও ডেইরি উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় দেশের বিভিন্ন স্থানে ৩০০টি ভিলেজ মিল্ক কালেকশন সেন্টার (ভিএমসিসি) স্থাপন করা হচ্ছে। এছাড়া আঞ্চলিক পর্যায়ে ডেইরি হাব স্থাপনের বিষয়টিও প্রক্রিয়াধীন। তা ছাড়া খামারিদের সংগঠিত করে বিভিন্ন ডেইরি গ্রুপ তৈরি করা হচ্ছে। ডেইরি গ্রুপগুলো থেকে উৎপাদিত দুধ যাতে প্রাতিষ্ঠানিক বিপণন চ্যানেলে প্রবেশ করতে পারে সে জন্য উৎপাদক এলাকাগুলোর দুধ প্রক্রিয়ায় সম্পৃক্তদের তত্ত্বাবধানে এসব ভিএমসিসি স্থাপন করা হচ্ছে। এসব কালেকশন সেন্টার থেকে দুধ আঞ্চলিক ডেইরি হাবে স্থানান্তরিত হবে। যেখানে অধিক পরিমাণ দুধ শীতলীকরণ ও ভ্যালু এডিশনের ব্যবস্থা থাকবে। এছাড়াও ডেইরি উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে মিল্ক কুলিং সেন্টার ও দুগ্ধ প্রক্রিয়াকরণ ইউনিট স্থাপন করা হচ্ছে।

ভিএমসিসি ও ডেইরি হাবকেন্দ্রিক মিল্ক কুলিং সিস্টেম স্থাপনের মাধ্যমে চরাঞ্চলসহ দেশের অন্যান্য প্রান্তিক অঞ্চলের খামারিরা দুধের ন্যায্যমূল্য পাবেন বলে আশা করা যাচ্ছে।’