আয়রনম্যান— সদ্য পদোন্নতিপ্রাপ্ত বাংলাদেশ পুলিশের অতিরিক্ত আইজিপি হাবিবুর রহমান। যার বর্তমান কর্মস্থল ‘ট্যুরিস্ট পুলিশ হেডকোয়ার্টার্স’। কর্মস্থলে এরআগের প্রতিটি ধাপেই যিনি মেধা, যোগ্যতা, সততা, কর্মনিষ্ঠা ও নিবিড় চেষ্টায় জানান দিয়েছেন সাফল্যের। পুলিশ বিভাগে ধারাবাহিক সাফল্যের স্বীকৃতিস্বরূপ এ পর্যন্ত তিনবার বাংলাদেশ পুলিশ পদক (বিপিএম) ও দুবার রাষ্ট্রপতি পুলিশ পদক (পিপিএম) লাভ করেছেন তিনি। কর্মঠ ও নিবেদিত উচ্চপদস্থ পুলিশ কর্মকর্তার বাইরেও তিনি সফল ক্রীড়া সংগঠক, লেখক, গবেষক, সমাজ সংস্কারক, সমাজসেবক এবং বাংলাদেশ পুলিশ প্রকাশিত মাসিক পত্রিকা ‘ডিটেকটিভ’ এর সম্পাদকও। এছাড়াও বহুমাত্রিক প্রতিভাসম্পন্ন হাবিবুর রহমানের বড়গুণ— তিনি একজন আদর্শ মানুষ ও মানবিক গুণাবলিসম্পন্ন ব্যক্তিত্ব।
পদ নয়, বরং আদর্শ মানুষের সংস্পর্শেই আলোকিত হয় পদ তার দৃষ্টান্তও হাবিবুর রহমান। আর হাবিবুর রহমানের আদর্শ মানুষ হওয়ার নেপথ্যে জন্মদাতা পিতা ও জন্মদাত্রী মা। বিশেষ করে তার প্রয়াত ব্যবসায়ী ও সমাজসেবক পিতা আলহাজ আব্দুল আলী মোল্লাই ছোটবেলা থেকে কঠোর পরিশ্রম করা, মানুষের সাথে মেশা, মানুষকে সাহায্য করা, মানুষের সাথে ভালো ব্যবহার করা, মানুষকে সম্মান করা, মানুষের পাশে দাঁড়ানো ও নির্লোভ থাকার শিক্ষা দিয়েছিলেন। পিতার প্রতিটি শিক্ষাই রপ্ত এবং কর্মজীবনে এর প্রতিফলন ঘটানোর চেষ্টাই করে চলেছেন হাবিবুর রহমান। হাবিবুর রহমান ছাত্রজীবনে টাকা ছাড়াই প্রাইভেট পড়াতেন গরিব শিক্ষার্থীদের। পড়াশোনার পাশাপাশি সমাজের উন্নয়নের স্বার্থে করতেন সাংবাদিকতাও।
সংবাদপত্র অফিস থেকে নিয়মিত যোগাযোগের সুবিধার্থে তার গোপালগঞ্জের বাসায় একটি ফ্রি টেলিফোন অফার করা হয়েছিল, তা তিনি গ্রহণ করেননি। কারণ তিনি শিখেছেন পরিবর্তন কখনো বিনিময় দিয়ে নয়; বরং নিজের সবটুকু নিংড়ে দিয়েই করতে হয়। মেধাবী হাবিবুর রহমান উন্মোক্ত প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার মাধ্যমে জীবনে এমন অনেকগুলো চাকরি পেয়েছিলেন যেগুলোতে শুধু একটি পোস্টই খালি ছিল। জীবনে অনেক ঘাত-প্রতিঘাত অতিক্রম করে তিনি ১৭তম বিসিএস ক্যাডার হিসেবে উত্তীর্ণ হয়ে ১৯৯৮ সালে বাংলাদেশ পুলিশে সহকারী পুলিশ সুপার হিসেবে যোগদান করেন। সারদাতে পুলিশিং প্রশিক্ষণকালে সকল সহকর্মীদের সাথে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে তোলেন। নিজের নেতৃত্ব ও সৃজনশীলতা দিয়ে প্রশিক্ষণ স্যুভেনির ‘আমার হলো শুরু’র সম্পাদক নির্বাচিত হন; যেখানে নিজের গবেষণালব্ধ লেখনীতে স্থান পায় বাংলাদেশ পুলিশের শেকড়সন্ধানী ইতিহাস, ঐতিহ্য ও করণীয় নির্ধারণ সম্পর্কিত নানান দিক।
প্রশিক্ষণ শেষে চট্টগ্রামের বাশখালীতে প্রবেশনারি পুলিশ কর্মকর্তা হিসেবে গভীর জঙ্গলে তৎকালীন সন্ত্রাসীদের অস্ত্র তৈরির আঁখড়া আবিষ্কার করতে সক্ষম হন তিনি। প্রবেশনকাল পার করে তিনি ২০০০ সালে সহকারী পুলিশ কমিশনার (সরবরাহ) হিসেবে ডিএমপিতে প্রথম পদায়নে ব্যাপক প্রশংসা কুড়িয়েছেন। ২০০১ সালে ভোলায় সহকারী পুলিশ সুপার (সার্কেল) হিসেবে দায়িত্ব পেয়ে আলোচনার আসেন এই কর্মবীর হাবিবুর রহমান। বলতে গেলে স্বপ্নের পুলিশিং ক্যারিয়ারের শুরুতেই পড়তে হয় নানান রোষানলে।
এরপর ২০০২ সালে আরএমপিতে সহকারী পুলিশ কমিশনার হিসেবে দায়িত্বপালনকালে পুলিশিংয়ে যুক্তরাষ্ট্র থেকে দির্ঘমেয়াদি উচ্চতর প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত এই চৌকস কর্মকর্তাকে প্রায় পাঁচ বছর ওএসডি করে রাখা হয়। পরবর্তীতে ড. ফখরুদ্দিনের তত্ত্বাবধায়ক সরকারের শুরুতেই উত্তরার ৭ নং এপিবিএনের কোয়ার্টার মাস্টার হিসেবে চাকরি ফিরে পান হাবিবুর রহমান। এর মধ্যে তিনি জাতিসংঘ শান্তি রক্ষার দায়িত্ব নিয়ে কসোভো গমন করেন। তার আগে খুব অল্প দিনের মধ্যেই উত্তরাস্থ ৭ নং এপিবিএন ও কোয়ার্টার এলাকার সার্বিক পরিবেশ বদলে দেন তিনি। এরপর শান্তি মিশন থেকে ফিরে তত্ত্বাবধায়ক সরকার পরিবর্তন হলে ২০০৯ সালে দায়িত্ব নেন ডিএমপির উপ-পুলিশ কমিশনার (সদর দপ্তর) হিসেবে। হাবিবুর রহমান এই দায়িত্বে আসার পরেই অধিক জনপ্রিয়তা পায় ডিএমপির উপ-পুলিশ কমিশনার (সদর দপ্তর) পদটি, একাধারে এই পদটি অতীতের যেকোনো সময় থেকে আরো গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে। এই পদে থাকাকালীন তিনি রাজারবাগ কেন্দ্রীয় পুলিশ হাসপাতালে ২০১০ সালের ১২ ডিসেম্বর প্রতিষ্ঠা করেন ‘পুলিশ ব্ল্যাড ব্যাংক’ যা দেশের যেকোনো আধুনিক প্রাইভেট ব্ল্যাড ব্যাংকের মতোই উন্নত সেবাদানে সক্ষম। ‘পুলিশ ব্ল্যাড ব্যাংক’ বর্তমান শুধু পুলিশ সদস্যদেরই রক্ত সরবরাহ করে না, যেকোনো প্রয়োজনে অসহায় ও মুমূর্ষু রোগীর পাশেও দাঁড়াচ্ছে।
এছাড়া তিনি ওয়ান স্টপ পুলিশ ভেরিফিকেশন সার্ভিস সেন্টার প্রতিষ্ঠা, পুলিশ কালাচারাল টিম প্রতিষ্ঠা, রাজারবাগ পুলিশ লাইনে পুলিশ শপিংমল স্থাপন, মৃত্যু ও অবসর পরবর্তী পুলিশ সদস্যদের সাত দিনের মধ্যে পাওনা পরিশোধ, মেস বয় স্কুল স্থাপন, প্রতিটি থানার পরিবেশ উন্নয়ন ও ডিএমপি হেডকোয়ার্টার্সের সার্বিক উন্নয়নসহ অসংখ্য গুরুত্বপূর্ণ মানবিক ও উন্নয়নমূলক কাজে অবদান রাখেন। এসময় সাধারণ মানুষ ও অধঃস্তন পুলিশ সদস্যদের কাছে হাবিবুর রহমান একজন নক্ষত্র পুলিশ কর্মকর্তা হিসেবে ব্যাপক পরিচিতি লাভ করেন। তিনি ‘মুক্তিযুদ্ধে প্রথম প্রতিরোধ’ নামে একটি গ্রন্থ সম্পাদনা করেন, যার মাধ্যমে স্বাধীনতাযুদ্ধে পুলিশের অগ্রণী ভূমিকা প্রকাশ্যে আসে।
২০১২ সালের ১৪ নভেম্বর হাবিবুর রহমান ঐতিহ্যবাহী ঢাকা জেলার পুলিশ সুপার হিসেবে দায়িত্ব নেন। তিনি ঢাকা জেলার সার্বিক আইনশৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে অভিনব সব কলাকৌশল অবলম্বন করেন। বিশেষ করে চলমান ও সংঘঠিত অপরাধকে দমন করার পাশাপাশি সম্ভাব্য অপারধসমূহকে প্রতিরোধ করার ওপর অধিক গুরুত্ব দেন। যার ধারাবাহিকতায় আইনের প্রয়োগিক দিক থেকে বিদ্যমান আইনের প্রতি জনমনে সচেতনতা বৃদ্ধিসহ আইনের প্রতি তাদের যথাযথ সম্মান প্রদর্শনের জন্য নানাবিধ সচেতনতামূলক কার্যক্রম গ্রহণ করেন। প্রতিটি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের বাই রোটেশন বিভিন্ন মসজিদ-মন্দিরে নামাজ ও প্রার্থনায় শরিক হয়ে জনগণের সাথে মতবিনিময় করা, কমিউনিটি পুলিশিংয়ের মাধ্যমে স্থানীয় অপরাধ প্রতিরোধ করা, যানজট নিরসনে ট্রাফিক ব্যবস্থাপনায় আমূল পরিবর্তন করা, টেলি পুলিশিংয়ের মাধ্যমে স্থানীয় আর্থিক ও বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান এবং শিল্প-কলকারখানার নিরপত্তা নিশ্চিত করা মতো গুরুত্বপূর্ণ উদ্যোগ গ্রহণ করেন তিনি।
এসময় মহান মুক্তিযুদ্ধে বাংলাদেশ পুলিশ বাহিনীর ইতিহাস ঐতিহ্যকে সমগ্র জাতির সম্মুখে চিরস্মরণীয় কর রাখতে রাজারবাগ পুলিশ লাইনে অবস্থিত টেলিকম ভবনের পাশে ‘বাংলাদেশ পুলিশ মুক্তিযুদ্ধ যাদুঘর’ প্রতিষ্ঠা করেন। এটি ২০১৩ সালে সর্বসাধারণের জন্য উন্মুক্ত করে দেয়া হয় এবং ২০১৭ সালের জাতীয় পুলিশ সপ্তাহে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এটির আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন। জাদুঘরটিতে মুক্তিযুদ্ধের সময়কার পুলিশ সদস্যদের ব্যবহূত রাইফেল, বন্দুক, মর্টারশেল, হাতব্যাগ, টুপি, চশমা, মানিব্যাগ, ইউনিফর্ম, বেল্ট, টাই, স্টিক, ডায়েরি, বই, পরিচয়পত্র, কলম, মেডেল, বাঁশি, মাফলার, জায়নামাজ, খাবারের প্লেট, পানির মগ, পানির গ্লাস, রেডিও, শার্ট, প্যান্ট, র্যাংক ব্যাজসহ টিউনিক সেট, ক্যামেরা, পাসপোর্ট, ড্রাইভিং লাইসেন্স, লোহার হেলমেট, হ্যান্ড মাইক, রক্তভেজা প্যান্ট-শার্ট, দেয়ালঘড়ি, এমএম রাইফেলসহ অনেক কিছু সংরক্ষিত আছে।
ঢাকা জেলার পুলিশ সুপার থাকাকালীন মাইকে ঘোষণা দিয়ে বাড়ি বাড়ি গিয়ে ডেকে এনে মাত্র ১০০ টাকায় পুলিশ কনস্টেবলে চাকরি দেয়ার বিষয়টি ব্যাপকভাবে আলোচিত হয়। যে কারণে তিনি বিভিন্ন মিডিয়ায় প্রকাশিত সংবাদ শিরোনামে ‘মানবতার ফেরিওয়ালা’ হিসেবে খ্যাতিলাভ করেন। মূলত ঢাকা জেলা থেকেই পুলিশ কনস্টেবল নিয়োগের ক্ষেত্রে সব প্রকার অনৈতিক লেনদেন বন্ধে ব্যাপক গণসচেতনতা তৈরি হয় এবং পুলিশে মেধাভিত্তিক নিয়োগ প্রক্রিয়ার বিষয়টি আরো একধাপ এগিয়ে যায়।
ঢাকা জেলার পুলিশ সুপার হিসেবে তিনি সাভারে বসবাসরত ২০ হাজারেরও বেশি বেদে জনগোষ্ঠীর সামাজিক ও অর্থনৈতিক জীবনমান উন্নয়নের লক্ষ্যে বিভিন্ন কর্মমুখী উদ্যোগ গ্রহণ করেন। যার মধ্যে প্রাথমিকভাবে ১০৫ জন বেদে নারীকে সেলাই প্রশিক্ষণ দিয়ে পোড়াবাড়িতে কর্মসংস্থানের জন্য মিনি গার্মন্টস প্রতিষ্ঠা করেন তিনি। সাপ খেলা দেখানোর পেশা থেকে ফিরিয়ে এনে ৩৫ জন বেদে যুবককে ড্রাইভিং প্রশিক্ষণ দিয়ে প্রত্যেকের জন্য চাকরির ব্যবস্থা করা, কোচিং সেন্টার ও কম্পিউটার সেন্টার প্রতিষ্ঠা করে বেদে ছেলেমেয়েদের পড়া লেখার অতিরিক্ত সুযোগ তৈরি করা, সরকারি সহযোগিতায় ১৮টি জরাজীর্ণ রাস্তা মেরামত করা, একটি মসজিদ নির্মাণ করা এবং স্থানীয় বেদে জনসাধারণের জন্য একটি পাকা ইদগাহ নির্মাণ করাসহ বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ কাজ সম্পন্ন করেন। উল্লেখ্য, বেদেদের জন্য নির্মিত এই ঈদগাহটিই সাভারের প্রথম পাকা ইদগাহ।
আলোকিত মানুষ হাবিবুর রহমানের প্রেরণায় বেশ কয়েকজন বেদে সন্তান বর্তমানে সারকারি ও প্রতিষ্ঠিত প্রাইভেট কোম্পানিতে চাকরি করছেন। সাভারের বেদে জনগোষ্ঠীর ভাগ্য পরিবর্তনের জন্য এবং চলমান কার্যক্রমগুলোকে আরো গতিশীল করতে গত ২০১৪ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর হাবিবুর রহমান উত্তরণ ফাউন্ডেশন নামে একটি বেসরকারি সংগঠন প্রতিষ্ঠা করেন যার মাধ্যমে সাভারের বেদে পল্লীর বাসিন্দাদের জন্য প্রায় ৩০০টি ঘর তৈরি করে দেয়া হয়েছে। সাভারের অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে মুন্সীগঞ্জের বেদে শিশুদের জন্যও গড়ে তোলা হয়েছে স্কুল ও কম্পিউটার সেন্টার। বলতে গেলে সমগ্র বাংলাদেশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা প্রায় ৩৬ লাখ বেদে ও মান্তা সমপ্রদায়ের কাছে তিনি যেমন হয়ে উঠেছেন আশার বাতিঘর তেমনি তিনি এই জনগোষ্ঠীর সাড়ে চারশ বছরের অস্পৃশ্য ও গ্লানিময় জীবনের মুক্তিদূতও। তিনি দির্ঘ আট বছর নিবিড় গবেষণা করে কিছুদিন আগে বেদে জনগোষ্ঠীর বিলুপ্তপ্রায় ভাষা ‘ঠার’ নিয়ে একটি পূর্ণাঙ্গ ভাষার বই প্রকাশ করেছেন যা দেশি-বিদেশি বিভিন্ন মহলে ব্যাপক প্রশংসিত হয়েছে। শুধু বেদে জনগোষ্ঠী নয়, ঢাকা জেলার পুলিশ সুপার থাকাকালীন হাবিবুর রহমান সামাজের পিছিয়ে পড়া হিজড়া সমপ্রদায়কেও মূলধারায় ফিরিয়ে আনেন।
হাবিবুর রহমান ২০১৬ সালের ১৬ জুলাই পদোন্নতি পেয়ে পুলিশ সুপার থেকে পুলিশ হেডকোয়ার্টার্সের অতিরিক্ত ডিআইজি (পারসোনাল ম্যানেজমেন্ট-১) হিসেবে নিযুক্ত হন এবং বাংলাদেশে পজেটিভ পুলিশিংয়ের অগ্রযাত্রাকে আরো একধাপ এগিয়ে নেন। পরবর্তীতে ২০১৮ সালের ৬ নভেম্বর পদোন্নতি পেয়ে ২০১৯ সালের ১৫ মে পর্যন্ত তিনি পুলিশ হেডকোয়ার্টার্সের ডিআইজি (অ্যাডমিন) হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। এসময়ে তিনি সমগ্র বাংলাদেশের মেধাবী ও যোগ্য পুলিশ অফিসারদের যথাযথ পদায়নের ক্ষেত্রে অবদান রাখেন এবং পুলিশের সামগ্রিক পেশাগত উন্নয়নে ভূমিকা পালন করেন।
এতসব মৌলিক কাজের মধ্যেও তিনি বেদে জনগোষ্ঠীর জীবেনযাত্রার মানোন্নয়ন, হিজড়া সমপ্রদায় বা তৃতীয় লিঙ্গের সদস্যদের স্বাবলম্বীকরণ এবং যৌনকর্মীদের পুনর্বাসনের কর্মকাণ্ড চালিয়ে গেছেন। ২০১৯ সালের ১৬ মে তিনি ঢাকার রেঞ্জ ডিআইজি হিসেবে দায়িত্বভার গ্রহণ করেন। এই চ্যালেঞ্জিং দায়িত্ব নেয়ার পরপরই ঢাকা রেঞ্জের ১৩টি জেলার আইনশৃঙ্খলার ব্যাপক উন্নতি শুরু হয়। পুলিশ হেডকোয়াটার্স এক বিজ্ঞপ্তি মারফত বাংলাদেশের বাকি সব রেঞ্জ ডিআইজিকে ঢাকা রেঞ্জের চলমান কার্যক্রমকে একটি রোল মডেল মনে করে নিজ নিজ রেঞ্জের কার্যক্রম পরিচালনা করার নির্দেশ দেন। ঢাকা রেঞ্জের ১৩ জেলার ৯৮ থানার কার্যক্রম সিসি ক্যামেররা মাধ্যমে একটি মনিটরে সার্বক্ষণিক পর্যবেক্ষণ চলছে।
শুধু তাই নয়, কোনো বিচ্যুতি কিংবা অনিয়ম করলেই দায়ী পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। সেন্ট্রি, ডিউটি অফিসার ও হাজতখানার কর্মকাণ্ড তদারকিতে প্রতিটি থানায় তিনটি করে মোট ২৮০টি ক্যামেরা বসানো হয়েছে, যেগুলো ৩৬০ ডিগ্রি ঘুরিয়ে আশপাশের দৃশ্যও দেখা যায়। রাজধানীর সেগুনবাগিচায় ঢাকা রেঞ্জ ডিআইজি কার্যালয়ের নিয়ন্ত্রণ কক্ষ থেকে থানাগুলো মনিটরিংয়ে এই উদ্যোগ নেন হাবিবুর রহমান।
ক্রীড়া সংগঠক হিসেবেও নিজের প্রতিভার স্বাক্ষর রেখেছেন হাবিবুর রহমান। তিনি ক্রীড়াঙ্গনে থিতিয়ে যাওয়া জাতীয় খেলা কাবাডিকে মূলধারায় তুলে এনেছেন। দেশের গণ্ডি পেরিয়ে আন্তর্জাতিক পর্যায়েও সুনাম কুড়িয়ে চলেছেন। ক্রীড়া সংগঠক হিসেবে এখন তিনি বাংলাদেশ কাবাডি ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক, এশিয়ান কাবাডি ফেডারেশনের সহসভাপতি এবং আন্তর্জাতিক কাবাডি ফেডারেশনের সহসভাপতির দায়িত্বও সামলাচ্ছেন কার্যকরভাবে। একই সাথে তিনি বাংলাদেশ পুলিশ ক্রিকেট টিম পরিচালনা কমিটির মেম্বার এবং ইতোপূর্বে একই টিমের সভাপতি হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন। এছাড়া তিনি দুবার বাংলাদেশ পুলিশ অ্যাসোসিয়েশনের সেক্রেটারি নির্বাচিত হয়েছিলেন।
১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারের নির্মমভাবে হত্যা করার ঘটনাটি নিয়ে বেশ কয়েক বছর গবেষণা করেন হাবিবুর রহমান। বঙ্গবন্ধু হত্যামামলার পূর্ণাঙ্গ রায় অ্যানালাইসিস করে নির্মম সত্য ঘটনাটিকে সমগ্র জাতির কাছে তুলে ধরতে সচেষ্ট হন তিনি। অবশেষে এই জঘন্য হত্যাযজ্ঞের পূর্ণাঙ্গ ঘটনার ওপর ‘অভিশপ্ত আগস্ট’ নামে একটি মঞ্চনাটক তৈরি করেন, যা এক বছরেই ১০০ বারেরও বেশি মঞ্চস্থ হয়েছে, এমনকি এটি এখন বিশ্ব রেকর্ড করতে চলেছে। কারণ ইতিহাসে আর কোনো মঞ্চনাটক এক বছরে ১০০ বারের বেশি মঞ্চস্থ হয়নি। এছাড়া তিনি বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক কিছু ছবি ও ছবির অন্তরালের গল্প নিয়ে ‘পিতা তুমি বাংলাদেশ’ নামে একটি ফটো অ্যালবাম প্রকাশ করেছিলেন। দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ মানবতার ফেরিওয়ালাখ্যাত অতিরিক্ত আইজিপি হাবিবুর রহমান তার ব্যক্তি ও কর্মজীবনের পুরোটাই সপে দিয়েছেন দেশ ও দেশের মানুষের কল্যাণে।