ভোটকক্ষের গোপন বুথে সিসি ক্যামেরা স্থাপন নিয়ে নিজেদের ব্যাখ্যা জানালো কাজী হাবিবুল আউয়াল নেতৃত্বাধীন নির্বাচন কমিশন (ইসি)। গতকাল রোববার নির্বাচন কমিশনের যুগ্মসচিব ও জনসংযোগ পরিচালক এস এম আসাদুজ্জামান এ তথ্য জানান। তিনি বলেন, কারো কারো বক্তব্য বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রচারিত হয়েছে।
প্রচারিত বক্তব্য মতে, ভোট কক্ষের গোপন বুথে সিসি ক্যামেরা বসিয়ে কে কাকে ভোট দিচ্ছে তা দেখা মানুষের ব্যক্তিগত গোপনীয়তার লঙ্ঘন। গাইবান্ধা-৫ আসনের উপনির্বাচনে নির্বাচন কমিশন সেই কাজটি করে নাগরিকদের মৌলিক অধিকারের ওপর হস্তক্ষেপ করেছে মর্মে কারো কারো বক্তব্যে প্রচারিত হয়েছে। তবে গণমাধ্যমে প্রচারিত এ ধরনের বক্তব্য মোটেও সঠিক নয়। একইসঙ্গে এই ধরনের বক্তব্য বিভ্রান্তিকর।
তিনি বলেন, জাতীয় সংসদের ৩৩ গাইবান্ধা-৫ শূন্য আসনের উপনির্বাচনে ভোটকক্ষে ভোট প্রদানের সার্বিক কার্যক্রম মনিটরিংয়ের জন্য নির্বাচন কমিশন ভোট কক্ষে সিসি ক্যামেরা স্থাপন করেছিল। গোপন কক্ষে ভোটার কাকে ভোট দিলেন তা দেখার কোনো সুযোগ নেই। তবে গোপন কক্ষে ভোটারের সঙ্গে কেউ প্রবেশ করল কী না বা ভোটার ছাড়া অন্য কেউ প্রবেশ করল কী না, একই সঙ্গে একাধিক ব্যক্তি প্রবেশ করল কী না, ভোট দেয়ার সময় কেউ উঁকি দিয়ে দেখে কী না বা পাশে দাঁড়িয়ে কোনো নির্দেশ দিলো কী না তা দেখা যায়।
আসাদুজ্জামান আরও বলেন, ইভিএমে কীভাবে ভোট দিতে হয় সে বিষয়ে ভোটারের শিক্ষার জন্য প্রচারণা চালানো হয়েছে। এছাড়া একজন ভোটারকে ভোট দেয়ার জন্য গোপনকক্ষে প্রবেশের পূর্বেই সংশ্লিষ্ট নির্বাচন কর্মকর্তারা ডামি ব্যালট ইউনিটে দেখিয়ে দেন কীভাবে ভোট দিতে হবে। কাজেই ভোট কীভাবে দিতে হবে এটা দেখানোর জন্য ভোটারের সঙ্গে গোপনকক্ষে অন্য কারো প্রবেশের কোনো সুযোগ নেই।
তিনি জানান, গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ, ১৯৭২ এর ৩১(৭) ধারা অনুযায়ী ভোটার দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী বা অন্যভাবে এরূপ অক্ষম হন যে তিনি কোনো সঙ্গীর সাহায্য ছাড়া ভোট দিতে পারবেন না, সেক্ষেত্রে প্রিজাইডিং অফিসার ওই ভোটারের পছন্দমতো ও বিশ্বস্ত ব্যক্তিকে তার ভোট প্রদানে সাহায্য করার জন্য গোপন কক্ষে নিতে পারবেন। তার সঙ্গে কোনোভাবেই কোনো ভোটগ্রহণকারী কর্মকর্তা, এজেন্ট বা অন্য কেউ গোপন কক্ষে প্রবেশ করতে পারবেন না। অর্থাৎ বিষয়টি খুবই স্পষ্ট যে ভোটকক্ষে সিসি ক্যামেরা স্থাপনে কোনোক্রমেই ভোট প্রদানের গোপনীয়তা নষ্ট হয় নাই। নির্বাচন কমিশন প্রতিটি ভোটারের ভোট প্রদানের গোপনীয়তা রক্ষায় আইন অনুযায়ী সব ব্যবস্থা গ্রহণ করে থাকে। সুষ্ঠু, অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠানে ব্যাঘাত ঘটে এমন বিভ্রান্তিকর বক্তব্য প্রদান না করে আইন অনুযায়ী যথাযথভাবে নির্বাচন পরিচালনায় সহায়তা করার জন্য নির্বাচন কমিশন সবার প্রতি আহ্বান জানাচ্ছে বলে জানান তিনি।
এনআইডি চলে গেলে বাধাগ্রস্ত হবে নির্বাচনি কার্যক্রম : জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন (এনআইডি) অনুবিভাগ নির্বাচন কমিশন (ইসি) থেকে নিয়ে নেয়া হলে নির্বাচনে স্বাভাবিক কার্যক্রম বাধাগ্রস্ত হবে। তাই এটি সরকারের অন্য কোনো বিভাগের হাতে না নেয়ার দাবি তুলেছেন ইসি কর্মকর্তারা। গতকাল রোববার নির্বাচন ভবনে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়ালের কাছে দাবি জানিয়ে তারা একটি স্মারকলিপি জমা দিয়েছেন।
স্মারকলিপি জমা দেয়ার পর বাংলাদেশ ইলেকশন কমিশন অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশনের মহাসচিব হাসানুজ্জামান সাংবাদিকদের বলেন, আমরা ইতোমধ্যে সিইসিকে এনআইডির বিষয়ে যুক্তিযুক্ত স্মারকলিপি দিয়েছি। কমিশন এ নিয়ে আমাদের সাথে আলোচনা করেছেন। সাবেক সিইসি ও সচিবরা সম্প্রতি অনুষ্ঠিত সভায় সবাই একবাক্যে বলেছিলেন এনআইডি ইসির অধীনে রাখা যুক্তিযুক্ত। সেই ধারাবাহিকতায় আমাদের স্মারকলিপি দিয়েছি। তারা আশ্বস্ত করেছেন, কমিশন সভা করে তাদের বক্তব্য স্পষ্ট করবেন।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এনআইডি অন্যত্র চলে গেলে নির্বাচনের স্বাভাবিক কার্যক্রম বাধাগ্রস্ত হবে এবং ইভিএমের মাধ্যমে যে নির্বাচন করতে চাচ্ছি, সেখানে সরাসরি এনআইডির ব্যবহার হয়। আমাদের ডাটাবেজ অন্য কোথাও থেকে এলে নির্বাচন প্রশ্নবিদ্ধ হতে পারে।
তিনি আরও বলেন, কমিশন বলেছে দ্রুত সময়ের মধ্যে কমিশন সভা করে তাদের বক্তব্য স্পষ্ট করবেন। আমরা আশা রাখতে চাই তারা নিশ্চয় ভালো কোনো সিদ্ধান্ত দেবেন। তাদের সিদ্ধান্ত পাওয়ার পর আমরা পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেবো। সরকার এনআইডি ইসির কাছ থেকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগের হাতে ন্যস্ত করার নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এ জন্য নতুন একটি আইন করার প্রক্রিয়াও হাতে নেয়া হয়েছে। সাবেক সিইসি কাজী রকিবউদ্দীন আহমদ এ নিয়ে বলেছেন, এনআইডি চলে গেলে মানুষের ভোটার হওয়ার আগ্রহ কমে যাবে। এ ছাড়া সাবেক সিইসি কে এম নূরুল হুদা, বিচারপতি আব্দুর রউফ, সাবেক ইসি সচিব ড. মোহাম্মদ সাদিকসহ অন্যরা এনআইডি ইসির অধীনে রাখার পক্ষেই মতামত দিয়েছেন।