দীর্ঘদিন পর দালালমুক্ত হলো নরসিংদী আঞ্চলিক পাসপোর্ট কার্যালয়টি। এতে করে পাসপোর্ট পাওয়ার বিড়ম্বনা থেকে রেহাই পেয়েছে এখানকার সাধারণ মানুষ।
জানা গেছে, ২০০৯ সালে নরসিংদী আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসের কার্যক্রম শুরু হয়। দুটি বছর ভালোভাবেই চলছিল পাসপোর্ট অফিসের কার্যক্রম। অতি সহজে মানুষ তাদের পাসপোর্ট করতে পারত।
এরপর থেকেই সাধারণ মানুষ পাসপোর্ট করতে এসে বিভিন্ন বিড়ম্বনার শিকার হচ্ছে। বিশেষ করে দালালদের খপ্পরে পড়ে অনেক নিরীহ মানুষকে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। এ অবস্থা থেকে মুক্তি পেতে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার লোকেরা অনেক চেষ্টা করেও কোনো ধরনের সুফল বয়ে আনতে পারেনি।
দিনের পর দিন দালালদের সংখ্যা বেড়েই চলে আসছিল। বিভিন্ন এলাকা থেকে পাসপোর্ট করতে আসা সাধারণ মানুষগুলো তাদের আবেদন জমা দিতে পাসপোর্ট কার্যালয়ের সামনে এলেই দালালরা তাকে ঘিরে ধরে এবং কম টাকায় অতি তাড়াতাড়ি পাসপোর্ট করে দেয়ার প্রলোভন দেখিয়ে বিভিন্ন কৌশলে তাদের আয়ত্তে এনে প্রয়োজনের চেয়েও দ্বিগুণ টাকা আদায় করে রেখে দিতো এবং মাসের পর মাস অতিবাহিত হওয়ার পরও তাদের পাসপোর্ট প্রদান করত না। বিশেষ করে অনেকে জরুরি ভিত্তিতে তাদের পাসপোর্ট করতে এলে দালালদের খপ্পরে পরে প্রয়োজনের তুলনায় অধিক টাকা খরচ করেও সময়মত তাদের পাসপোর্ট পায় না।
কারণ দালালরা ৮-১০ দিনের মধ্যে জরুরি পাসপোর্ট করে দেয়ার কথা বলে আবেদনকারীদের কাছ থেকে মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নেয়। পরে দালালরা অতি জরুরি ব্যাংক ড্রাফট না করে কম টাকায় নিয়মিত (সাধারণ) ব্যাংক ড্রাফট করে পাসপোর্টের আবেদন জমা দেয়। পাসপোর্ট পাওয়ার সময় অতিবাহিত হওয়ার পর আবেদনকারীরা তার পাসপোর্ট নিতে এলে দালালরা বিভিন্ন অজুহাত দেখিয়ে আবেদনকারীকে বিদায় করে দেয়। এক কথায় দালালদের খপ্পড়ে পড়ে শত শত মানুষকে প্রতিনিয়ত বিড়ম্বনার শিকার হতে হয়েছে।
গত ১৮ জুলাই একেএম আবু সাঈদ নরসিংদী আঞ্চলিক পাসপোর্ট কার্যালয়ে উপ-পরিচালকের দায়িত্ব গ্রহণ করার পর দালালের বিষয়টি তার নজরে এলে তিনি এ নিয়ে স্থানীয় প্রশাসনের সাথে আলাপ-আলোচনা করেন এবং পাসপোর্ট কার্যালয়টি দালাল মুক্ত করার জন্য সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন।
পরবর্তীতে প্রশাসনের সার্বিক সহযোগিতায় একের পর এক অভিযান চালিয়ে অনেক দালালকে গ্রেপ্তার করে বিভিন্ন মেয়াদে সাজা দিয়ে জেলহাজতে প্রেরণ করা হয়। নরসিংদী আঞ্চলিক পাসপোর্ট কার্যালয়টি এখন সম্পূর্ণ দালালমুক্ত। বিষয়টি এলাকায় ছড়িয়ে পড়লে সাধারণ মানুষের মনে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফিরে আসে এবং সর্বস্তরের মানুষ উপ-পরিচালক একেএম আবু সাঈদের এ মহৎ কাজটির জন্য ব্যাপক প্রশংসা করেন।
গত মঙ্গলবার সরেজমিন নরসিংদী আঞ্চলিক পাসপোর্ট কার্যালয়ে গিয়ে দেখা গেছে, এখানকার চিত্রটি সম্পূর্ণভাবে পাল্টে গেছে। এখানো কোনো দালালের খোঁজ পাওয়া যায়নি। পাসপোর্ট করতে আসা বেশ কয়েকজন লোকের সাথে আলাপ করে জানা গেছে, ইতোপূর্বে পাসপোর্ট করতে এখানে এলে তাদেরকে দালালদের খপ্পড়ে পড়ে অনেক দুর্ভোগ পোহাতে হতো। এখন আর আগের অবস্থা নেই।
এ ব্যাপারে নরসিংদী আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসের উপ-পরিচালক একেএম আবু সাঈদের সাথে আলাপ করলে তিনি জানান, আমি এখানে যোগদান করার পরই দেখতে পাই সাধারণ মানুষ দালালদের রোষানলে পড়ে অনেক হয়রানির শিকার হচ্ছে। এমন অভিযোগ পাওয়ার পর বিষয়টি কিভাবে দমন করা যায় এ ব্যাপারে স্থানীয় প্রশাসন ও জনপ্রতিনিধিদের সাথে আলাপ-আলোচনা করি।
পরবর্তীতে স্থানীয় প্রশাসনের আন্তরিক সহযোগিতায় এখান থেকে দালালদের বিতাড়িত করা হয়েছে। বর্তমানে পাসপোর্ট অফিসটি সম্পূর্ণ দালালমুক্ত বলে আমি মনে করি।
তিনি আরও বলেন, যতদিন আমি এখানে থাকব ততদিন সবার সহযোগিতা নিয়ে এ অফিসকে দালালমুক্ত করার চেষ্টা করব ইনশাআল্লাহ।