আগামী ১২ ডিসেম্বরের মধ্যেই সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠন বাংলাদেশ ছাত্রলীগ, যুব মহিলা ও মহিলা আওয়ামী লীগ, মৎস্যজীবী লীগ ও তাঁতী লীগের সম্মেলন শেষ করতে চায় বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ। এ জন্য সম্ভাব্য তারিখও নির্ধারণ করেছে দলটি। নির্ধারিত ওই তারিখ আজকালের মধ্যেই পাঠানো হবে গণভবনে। সম্ভাব্য তারিখ আওয়ামী লীগ সভাপতি অনুমতি দিলেই আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেয়া হবে।
গতকাল রাজধানীর ধানমন্ডিস্থ আওয়ামী লীগ সভাপতির রাজনৈতিক কার্যালয়ে দলটির জাতীয় সম্মেলন উপলক্ষে এক সভায় এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। সভা শেষে দলটির নীতি নির্ধারণী পর্যায়ের একাধিক নেতার সাথে কথা বলে এমনটাই জানা গেছে।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে দলের সাংগঠনিক কার্যক্রম জোরদার করতে গত শুক্রবার কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের বৈঠকে বসে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ। বৈঠকে দলের সম্মেলন প্রস্তুতি উপকমিটি গঠন, মেয়াদোত্তীর্ণ জেলা-উপজেলা সম্মেল, পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন ও ত্যাগীদের মূল্যায়ন করার নির্দেশ দেন আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। দলের সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের সম্মেলন শেষ করার জন্যও উপস্থিত নেতাদের নির্দেশনা দেন তিনি। এই কার্যক্রম আগামী ১২ ডিসেম্বরের মধ্যেই শেষ করার তাগিদ দেন আওয়ামী লীগপ্রধান।
জানা যায়, আওয়ামী লীগ সভাপতির নির্দেশনার পর জাতীয় কাউন্সিল সফল করার লক্ষ্যে সম্মেলন প্রস্তুতি উপকমিটি গঠন ও সহযোগী এবং ভ্রাতৃপ্রতিমসংগঠনের সম্মেলনের তারিখ নির্ধারণ করতে গতকাল রোববার ধানমন্ডিস্থ আওয়ামী লীগ সভাপতির রাজনৈতিক কার্যালয়ে সভা করে দলটির কেন্দ্রীয় নেতারা।
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের সভাপতিত্বে বৈঠকে আরও উপস্থিত ছিলেন সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য জাফরুল্লাহ চৌধুরী, জাহাঙ্গীর কবির নানক, আব্দুর রহমান, মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া, কামরুল ইসলাম, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ, দীপু মনি, আ ফ ম বাহাউদ্দীন নাছিম, সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন, আবু সাঈদ আল মাহামুদ স্বপন, এস এম কামাল হোসেন, প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক আব্দুস সোবহান গোলাপ, দপ্তর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া প্রমুখ।
সভা শুরু আগে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের সাংবাদিকদের বলেন, ছাত্রলীগসহ সব মেয়াদোত্তীর্ণ সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের সম্মেলন ২৪ ডিসেম্বর আওয়ামী লীগের সম্মেলনের আগেই করা হবে। তাদের সম্মেলনের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত আমাদের সভাপতি দিয়েছেন। এ ব্যাপারে আমরা কো-অর্ডিনেট করছি। সম্মেলনে নেত্রীকে তারা (সহযোগী সংগঠনগুলো) চান। তাই নেত্রীর সময়ের সাথে মিলিয়ে তারিখগুলো আমরা দিয়ে দেবো।
বিএনপিদলীয় সংসদ সদস্যদের পদত্যাগের হুমকি দেয়া হচ্ছে— এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের অবস্থান কী, জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, তাদের হুমকির কি আছে? তাতে কি সংসদ অচল হয়ে যাবে? তারা কয়জন? সাতজন। সাতজন পদত্যাগ করলে সংসদ কি অচল হয়ে যাবে? হারাধন গেলেও কি, না গেলেও কি? বিএনপি বলেছে নির্বাচনে যাবে না, তাদের এক দাবি সরকারকে পদত্যাগ করতে হবে— এ বিষয়ে ওবায়দুল কাদের বলেন, নির্বাচনের এখনো এক বছর বাকি। এখনো অনেক সময়। এর মধ্যে কত কিছু ঘটে যাবে। নাটকের পর নাটক। বিএনপি তো রঙ্গে রঙ্গে নাটক দেখায়। গতবারও আসবে না, আসবে না, পানি ঘোলা করে শেষ পর্যন্ত ঠিকই এসেছে। পরিস্থিতি কোথায় গিয়ে গড়ায় দেখুন। অপেক্ষা করুন। সময়ে অনেক কিছু বদলায়।’
গণমাধ্যমের সাথে কথা বলার পর সভা শুরু করে আওয়ামী লীগ। সভায় চূড়ান্ত করা হয় দলের ২২তম জাতীয় সম্মেলন উপলক্ষে ১১টি সম্মেলন প্রস্তুতি উপকমিটি। ছাত্রলীগ, মহিলা আওয়ামী লীগ, যুব মহিলা লীগ, মৎসজীবী লীগ, বঙ্গবন্ধু আওয়ামী আইনজীবী পরিষদ ও বাংলাদেশ তাঁতী লীগের সম্মেলনের তারিখ নির্ধারণ করা হয়। আগামী ১২ ডিসেম্বরের আগেই এদের সম্মেলন শেষ করার কথা জানান দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেন, নেত্রী চান সম্মেলন। সেই জন্য তারিখ নির্ধারণ করতে হবে। এরপর উপস্থিত নেতাদের মতামতের ভিত্তিতে ছাত্রলীগসহ সব সংগঠনের সম্মেলনের জন্য একটি সম্ভাব্য তারিখ নির্ধারণ করা হয়। সম্ভাব্য ওই তারিখ আজকালের মধ্যে গণবভনে পাঠানো হবে। এরপর আওয়ামী লীগ সভাপতি ওই তারিখে সায় দিলেই আনুষ্ঠানিকভাবে তারিখ ঘোষণা করা হবে। সম্মেলন সফল করতে ছাত্রলীগসহ মেয়াদোত্তীর্ণ সহযোগী সংগঠনের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকের সাথে দ্রুতই বসবেন আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতারা। বৈঠক সূত্র বলছে, নভেম্বরের শেষের নয়তো ডিসেম্বরের প্রথম শুক্রবার ছাত্রলীগের সম্মেলন করার ইচ্ছা আওয়ামী লীগের। সে হিসাবে ছাত্রলীগের সম্মেলন ২৭ নভেম্বর কিংবা ৪ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত হতে পারে।
জাতীয় কাউন্সিলের আগেই ঢাকা মহানগর উত্তর-দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সম্মেলন করার চিন্তাও রয়েছে ক্ষমতাসীন দলটির। নেত্রীর বেঁধে দেয়া নির্ধারিত ওই সময়ের মধ্যেই নগরের দুই শাখার সম্মেলনের আয়োজন করা হতে পারে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে সভায় উপস্থিত এক নেতা আমার সংবাদকে বলেন, সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের তারিখ নির্ধারণ করা হয়েছে। সম্ভাব্য তারিখ আমাদের নেত্রী (আওয়ামী লীগ সভাপতি) কাছে পাঠানো হবে। তিনি অনুমতি দিলেই সম্মেলন করা হবে। সবগুলো সম্মেলন ১২ ডিসেম্বরের মধ্যেই শেষ করা হবে।
সভায় উপস্থিত থাকা আওয়ামী লীগের আরেক নেতা বলেন, মহানগরের সম্মেলনও করা হবে। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে মাত্র নগরের ইউনিট, ওয়ার্ড ও থানার সম্মেলন শেষ হচ্ছে। কোথাও কমিটি ঘোষণা করা হয়নি। এখন সম্মেলনের বিষয়টি সামনে এলে নগর আওয়ামী লীগের কমিটি গঠনের বিষয়টি ধাক্কা খাবে। ফলে এখন আনুষ্ঠানিকভাবে সম্মেলনের কথা বলা হচ্ছে না। অল্প সময়ের মধ্যে নগরের ইউনিট, ওয়ার্ড ও থানা শাখাগুলোর পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করা হলে বিষয়টি সামনে আনা হবে। আগামী ২৪ ডিসেম্বর আওযামী লীগের জাতীয় কাউন্সিলের আগে ১৯ ডিসেম্বর মহানগর উত্তর-দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সম্মেলন হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলেও জানান তিনি।
সভা থেকে দলের ২২তম জাতীয় সম্মেলন উপলক্ষে ১১টি সম্মেলন প্রস্তুতি উপকমিটি গঠন করে আওয়ামী লীগ। সম্মেলন প্রস্তুতি উপকমিটির আহ্বায়ক ও সদস্য সচিবরা হলেন— অভ্যর্থনা উপকমিটির আহ্বায়ক শেখ ফজলুল করিম সেলিম ও সদস্য সচিব ডা. দীপু মনি, অর্থ উপকমিটির আহ্বায়ক কাজী জাফরউল্লাহ ও সদস্য সচিব এইচ এন আশিকুর রহমান, ঘোষণাপত্র উপকমিটির আহ্বায়ক শেখ ফজলুল করিম সেলিম ও সদস্য সচিব আব্দুর রহমান, দপ্তর উপকমিটির আহ্বায়ক অনুপম সেন ও সদস্য সচিব ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া, গঠনতন্ত্র উপকমিটির আহ্বায়ক ড. আবদুর রাজ্জাক ও সদস্য সচিব ড. সেলিম মাহমুদ, প্রচার ও প্রকাশনা উপকমিটির আহ্বায়ক মো. শাহাবুদ্দিন চপ্পু ও সদস্য সচিব আবদুস সোবহান গোলাপ, স্বেচ্ছাসেবক ও শৃঙ্খলা উপকমিটির আহ্বায়ক আবুল হাসনাত আব্দুল্লাহ ও সদস্য সচিব আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম। এ ছাড়া মঞ্চ ও সাজসজ্জা উপকমিটির আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর কবির নানক ও সদস্য সচিব মির্জা আজম, সাংস্কৃতিক উপকমিটির আহ্বায়ক আতাউর রহমান ও সদস্য সচিব অসীম কুমার উকিল, খাদ্য উপকমিটির আহ্বায়ক মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া ও সদস্য সচিব অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম, স্বাস্থ্য উপকমিটির আহ্বায়ক মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন ও সদস্য সচিব ডা. রোকেয়া সুলতানা।