প্রাথমিক শিক্ষার্থীদের নতুন পাঠ্যপুস্তক ছাপানো নিয়ে ধোঁয়াশার অবসান হতে যাচ্ছে। নতুন বই শিক্ষার্থীদের হাতে তুলে দিতে গতকাল শিক্ষামন্ত্রণালয়ে বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। এতে প্রাথমিকের বই ছাপানো নিয়ে বিস্তর আলোচনা হয়। যদিও মাধ্যমিকের বই ছাপানো শুরু হলেও থেমে আছে প্রাথমিকের বই ছাপানোর কাজ।
গত ২২ অক্টোবর প্রাথমিকের বই ছাপানোর জন্য প্রেস মালিকদের সাথে চুক্তি করলেও কিছু জটিলতায় ছাপার কাজ শুরু না হওয়ায় শিক্ষামন্ত্রী, শিক্ষা সচিব, প্রাথমিক মন্ত্রণালয়ের সচিব এবং পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের চেয়ারম্যানসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা বৈঠক করেন। আজ থেকে প্রাথমিকের বই ছাপানো শুরুর কথা জানা যায়।
বৈঠকে অংশগ্রহণকারী একজন প্রতিবেদকে জানান, এ ছাড়াও সময় কম থাকায় সম্পূর্ণ বই ছাপানো না হওয়ার শঙ্কায় প্রথম দিনে তিনটি করে বই দেয়ার বিষয়ে আলোচনা হয়। তবে ফুল সেট বই শিশুদের হাতে তুলে দিতে সর্বাত্মক চেষ্টা থাকবে বলে জানানো হয়েছে।
গতকাল নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক প্রাথমিক মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা আমার সংবাদকে বলেন, প্রাথমিকের বই ছাপানোর মোট ৯৮টি লট ছিল। এর মধ্যে ১০ লটের চুক্তি হয়নি। এই ১০টি লট তিনটি প্রতিষ্ঠানের মোট ৭৫ লাখ বই ছাপানোর কথা। তিন প্রতিষ্ঠানের মধ্যে আনন্দ ও এপেক্স প্রিন্টার্স গত বছর কাজের মান খারাপ করায় তাদের জামানতের টাকা আটকে থাকায় তারা চুক্তি করেনি। তাদের বিরুদ্ধে জরিমানা যেন না করে তাদের পুরা বিল দিয়ে দেয় সে জন্য ওই প্রতিষ্ঠানগুলো আদালতে রিট করে। এ নিয়ে মূলত ঝামেলা।
প্রাথমিকের ওই কর্মকর্তা আরও বলেন, এখন আর প্রতিষ্ঠানগুলোকে সময় দেয়া যাবে না। বিভিন্ন দিক আলোচনা করে সিদ্ধান্ত হয়েছে যদি ওই তিন প্রতিষ্ঠান এগুলো না ছাপায় তাহলে আগের চুক্তি যারা করেছে তাদের মধ্যে এই ৭৫ লাখ বই ছাপানোর কাজ সমভাবে ভাগ করে দেয়া হবে। তিনি বলেন, এনসিটিবির কর্মকর্তারা আজকের ( মধ্যে সব চুক্তির বিষয়ে চূড়ান্ত করে আগামীকাল বৃহস্পতিবার (আজ) থেকে প্রাথমিকের বই ছাপানোর কাজ শুরু হবে।
এনসিটিবি সূত্রে জানা গেছে, এবার প্রায় ৩৫ কোটি পাঠ্যবই ছাপানো হচ্ছে। এর মধ্যে মাধ্যমিক স্তরের জন্য মোট ২৪ কোটি ৬৩ লাখ ১০ হাজার কপি এবং প্রাক-প্রাথমিক থেকে প্রাথমিক স্তরের ৯ কোটি ৯৮ লাখ ৫৩ হাজার কপি। এখন পর্যন্ত মাধ্যমিকের পাঁচ কোটি বই ছাপানো হয়েছে। এদিকে বছরের প্রথম দিনই শিক্ষার্থীদের হাতে নতুন বই তুলে দিতে প্রাথমিকের বই ছাপার কাজ বৃহস্পতিবার (আজ) থেকে শুরু হচ্ছে বলে জানিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি। গতকাল সচিবালয়ে নিজ দপ্তরে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন।
সরকার সময়মতো নতুন বই দিতে চায় জানিয়ে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, বইয়ের মানটাও ঠিক রাখতে চাই। এখন যদি কাগজের পাল্প পাওয়াই না যায়, তখন তো সেকেন্ডারি পাল্প দিয়ে হলেও কাগজ আমার দিতে হবে। সেখানে যদি কিছুটা হেরফের হয়— গ্রহণযোগ্য মাত্রায় তো হতেই হবে।
বইয়ের মান নিয়ে এক প্রশ্নে শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি বলেন, এমনিতেও তো আপনারা প্রত্যেকবার মান নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। আমাদের ৩৫ কোটি বই সবগুলো তো আসলে চেক করা সম্ভব হয় না। কিন্তু আমরা চাই এটাকে মানে রাখতে। যতটুকু পর্যন্ত মানের রাখার সম্পূর্ণ চেষ্টা আমাদের থাকে। এবারও সেই চেষ্টা থাকবে। বিভিন্ন ধরনের যে বাস্তবতা থাকে সেগুলোকেও আমাদের মাথায় রাখতে হবে। মন্ত্রী বলেন, কাল থেকে বই ছাপা শুরু হবে। যে মানের আমরা চাই, সেটা তারা দিতে পারবে বলে জানিয়েছে।