পাইকারিতে চিনি মিলছে না

নিজস্ব প্রতিবেদক প্রকাশিত: নভেম্বর ৫, ২০২২, ০১:৩২ এএম
পাইকারিতে চিনি মিলছে না

দেশের পাইকারি বাজারের বেশির ভাগ দোকানেই চিনি পাওয়া যাচ্ছে না। যদিও চিনি উৎপাদনকারী মিলগুলোতে আগামী তিন থেকে চার মাস চলার মতো পর্যাপ্ত পরিমাণে চিনি মজুত রয়েছে বলে জানা যায়। চলমান বিদ্যুৎ ও গ্যাস সংকটকে পুঁজি করে অতি মুনাফালোভী একটি চক্র বাজারে চিনির এক ধরনের কৃত্রিম সংকট তৈরির চেষ্টা করছে।

উৎপাদন ও সরবরাহ কমিয়ে দিয়ে হাতিয়ে নিচ্ছে অতিরিক্ত মুনাফা। বর্তমানে পাইকারি বাজারের বেশির ভাগ মোকাম চিনি শূন্য। আর যাদের কাছে চিনি আছে তারাও বাড়তি দামে এনে বেশি দামে বিক্রি করছে। চিনি বাজার সংশ্লিষ্টদের সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।

সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, দেশে দৈনিক ছয় হাজার টনের চিনির চাহিদা থাকলেও সরবরাহ হচ্ছে মাত্র দুই থেকে আড়াই হাজার টন। ফলে বাজারে তীব্র হচ্ছে চিনির সংকট। বেসামাল চিনির বাজার। পাইকারি বাজারের বেশির ভাগ দোকানে পণ্যটি পাওয়া যাচ্ছে না। ফলে দু’-এক প্যাকেট যা পাওয়া যাচ্ছে তাও সরকার নির্ধারিত দামের চেয়ে প্রতি কেজিতে ২৫-৩০ টাকা বেশি দিয়ে ১১৫-১২৫ টাকা দরে কিনতে হচ্ছে। বিদ্যমান পরিস্থিতিতে সরবরাহ না বাড়লে চিনি শূন্য হয়ে পড়তে পারে বাজার।

আর জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের বাজার মনিটরিং টিমের অভিযান না থাকায় বাজার চলছে ব্যবসায়ীদের ইচ্ছেমতো চলছে। সূত্র জানায়, বাজারে কম চিনি সরবরাহের বিষয়ে চিনি উৎপাদনকারী মিলাররা গ্যাসের অভাবে উৎপাদন কমে যাওয়ার অজুহাত দেখাচ্ছে।

অথচ বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশনের (বিটিটিসি) হিসাবে দেশে বছরে চিনির চাহিদা ১৮ থেকে ২০ লাখ টন। বর্তমানে সিটি, মেঘনা, এস আলম, আবদুল মোনেম ও দেশবন্ধুসহ পাঁচ গ্রুপের কাছে দেড় লাখ টনের মতো অপরিশোধিত চিনির মজুত আছে। আর আমদানির অপেক্ষায় আছে আরো তিন লাখ ৩০ হাজার টন।

তা ছাড়া সম্প্রতি বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকেও বিপুল পরিমাণ চিনি মজুত ও আমদানির কথা জানানো হয়েছে। এ অবস্থায় বাজারে চিনির সংকট নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। পাশাপাশি সংকট দূরীকরণে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ও বাংলাদেশ চিনি ও খাদ্য শিল্প কর্পোরেশন থেকে কয়েকটি উদ্যোগ নেয়া হলেও বাজার পরিস্থিতি সামাল দেয়া যায়নি। বরং দ্রুত বেসামাল হয়ে ওঠছে চিনির বাজার। বেশি দাম দিয়েও চাহিদা অনুযায়ী অনেক দোকানে চিনি পাওয়া যাচ্ছে না।

সূত্র আরো জানায়, চিনির বাজার সামাল দিতে পরিশোধিত চিনি আমদানি করা যায় কি-না সরকার সে বিষয়টি পর্যবেক্ষণ করছে। ব্রাজিল, আর্জেন্টিনা বা বিশ্বের অন্য কোনো দেশ থেকে পরিশোধিত চিনি আমদানির বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে। বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন ওই লক্ষ্যে কাজ শুরু করেছে। পরিশোধিত চিনি আমদানির মাধ্যমে যদি বাজার পরিস্থিতি সামাল দেয়া যায় তাহলে ওই পথেই হাঁটবে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।

সেক্ষেত্রে বেসরকারি খাতকে সাময়িক সময়ের জন্য পরিশোধিত চিনি আমদানির সুযোগ দেয়া হতে পারে। তবে চিনির সরবরাহ বাড়াতে মিলারদের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। সরবরাহ অব্যাহত থাকলেও ঘাটতি রয়েছে। এ প্রসঙ্গে বাণিজ্য সচিব তপন কান্তি ঘোষ জানান, চিনির সরবরাহ স্বাভাবিক করতে কাজ করা হচ্ছে। মিলারদের বেশ কয়েকটি দাবি পূরণের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। আশা করা যায় দ্রুত চিনির বাজার স্বাভাবিক হয়ে আসবে।