যাত্রীদের কাছে জনপ্রিয় হলেও ধুঁকে ধুঁকে চলছে স্বল্পসংখ্যক বিআরটিসির বাস। সরকারি ওই পরিবহন সংস্থাটি নামমাত্র সেবা দিচ্ছে। সড়কে বেসরকারি বাসের সংখ্যাক ক্রমাগত বাড়লেও বিআরটিসি আটকে রয়েছে উদ্যোগেই। রাজধানীর ৩৮৬টি রুটের মধ্যে মাত্র ৪৩টি রুটে বিআরটিসির ৫০০ বাস চলছে।
সংস্থাটির বহরে থাকা এক হাজার ১৯৫টি সচল বাসের মধ্যে ৩২ শতাংশ বাস শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কাছে ইজারা দেয়া। সারা দেশের বেসরকারি বাসের সংখ্যার তুলনায় বিআরটিসির ১ শতাংশ বাস নেই। একই সাথে জনবল সঙ্কট ও আধুনিক ওয়ার্কশপ না থাকায়ও সংস্থাটি ধুঁকছে। বিআরটিসি এবং পরিবহন খাত সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়। সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, বিআরটিসি বাসের সংখ্যা প্রতি বছরই কমছে।
বিগত ২০০০ সালের পর সারা দেশে বিআরটিসির বহরে দুই হাজার ২০৪টি বাস যুক্ত ছিল। কিন্তু ২০১৯ সালে বাসের সংখ্যা কমে এক হাজার ৮২৪টিতে দাঁড়ায় এবং ২০২১ সালের জুলাই মাসে বাসের সংখ্যা কমে এক হাজার ৭৬২টিতে দাঁড়িয়েছিল। বর্তমানে সংস্থাটির বহরে বাস এক হাজার ৬০০টি আছে। তার মধ্যে এক হাজার ১৯৫টি সচল রয়েছে। বর্তমানে ঢাকা ও চট্টগ্রাম শহরের বিভিন্ন রুটে কর্মজীবীসহ অন্যান্য মহিলাদের বিভিন্ন গন্তব্যে আনা-নেয়ার ক্ষেত্রে ৯টি রুটে ৯টি মহিলা বাস চলাচল করছে। অথচ ২০২০ সাল পর্যন্ত ২০ রুটে ২৩টি বাসের চলাচল ছিল।
সূত্র জানায়, বর্তমানে ঢাকার ৪১টি রুটে পাঁচ শতাধিক বিআরটিসি বাস চলাচল করছে। দৈনিক গড়ে রুটে বাস চলে ১২টি। ওসব রুটের মধ্যে গুলিস্তান থেকে নরসিংদী, মেঘনা, গৌরীপুর, কুড়িল বিশ্বরোড থেকে ভুলতা, বিশনন্দী, ইটাখোলা, মতিঝিল থেকে গাজীপুর, গাবতলী থেকে গাজীপুর, চিটাগাং রোড থেকে সাভার এবং যাত্রাবাড়ী থেকে মাওয়ার মতো পথও রয়েছে। তা ছাড়া সারা দেশে সংস্থাটির ৩৮৩টি বাস বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কাছে ইজারা দেয়া এবং বাকি ৮৫২টি গণপরিবহন হিসেবে চলাচল করে।
ঢাকাসহ সারা দেশে চলাচলকারী বিআরটিসির ৩২ শতাংশ বাস ইজারায় চলে। যা বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কর্মী এবং শিক্ষার্থী পরিবহন করে থাকে। যাত্রীদের পছন্দের তালিকায় এগিয়ে থাকলেও চাহিদার তুলনায় বিআরটিসির সংখ্যা খুবই কম। মতিঝিল থেকে উত্তরা ও মিরপুর রুটে চলাচলকারী বিআরটিসি বাসের যাত্রী বরাবরই বেশি।
বিশেষ করে শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ বাস সেবা রাজধানীতে এখন পর্যন্ত বিআরটিসিই দিয়ে আসছে। তবে বিআরটিসি থেকে লিজ কিংবা ভাড়ায় নিয়ে চালানো বাসগুলোর ভাড়া আদায় নিয়ে বড়সড় অভিযোগ আছে। আগের তুলনায় এখন বিআরটিসি এসি বাসের ভাড়া বাড়লেও সেবার মান আরো কমেছে। বাসের সংখ্যাও কমেছে।
সূত্র আরো জানায়, রাজধানীর বিভিন্ন রুটে চলাচল করা এসি ও নন-এসি বিআরটিসি বাসের অবস্থা খুবই জরাজীর্ণ। তারপরও ঝুঁকি নিয়ে যাত্রীরা বিআরটিসি বাসে বাধ্য হয়েই চড়ছে। রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠানটির বাহনে যাতায়াতে যাত্রীদের আগ্রহ থাকলেও বাসের
দুর্দশায় যাত্রীদের আগ্রহে ভাটা পড়ছে। শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত ও ওয়াইফাইসমৃদ্ধ ডিজিটাল বাস সার্ভিস ধুঁকে ধুঁকে চলছে। সড়কে জ্যামে আটকে থেকে যাত্রীরা যাতে ইন্টারনেট চালাতে পারে এমন ভাবনা থেকেই ২০১৪ সালের এপ্রিলে চালু হয়েছিল ওই ব্যবস্থা চালু করা হয়।
বিআরটিসির এসি বাসে বসানো হয়েছিল রাউটার, ছিল বিনামূল্যে ওয়াইফাই ইন্টারনেট সংযোগ। আর এ সুবিধায় যাত্রীরা যানজটে স্মার্টফোন-ট্যাব বা ল্যাপটপে ইচ্ছামতো সময় কাটাতে পারত। কিন্তু ইন্টারনেটের ধীরগতি থাকায় তা দিয়ে কোনো কাজ করা যায় না। মূলত নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে ওসব বাসে কাঙ্ক্ষিত সেবা পাচ্ছে না যাত্রীরা।
এদিকে বিআরটিসি সংশ্লিষ্টদের মতে, বিআরটিসির মেনটেইন্যান্স, স্টোর, চালক কোনো খাতেই পর্যাপ্ত জনবল নেই। ওয়ার্কশপগুলোতে আধুনিক যন্ত্রপাতি নেই। অনেক সময় পর্যাপ্ত স্পেয়ার পার্সও থাকে না। ফলে নতুন গাড়িগুলো কয়েক বছর পরই নষ্ট হতে শুরু করে। নিজস্ব জনবল ও যন্ত্রপাতি দিয়ে গোটা বিআরটিসিকে নতুন করে ঢেলে না সাজালে তা কখনোই টেকসই সংস্থা হবে না। ১৯৬১ সালে বিআরটিসি প্রতিষ্ঠা হওয়ার উদ্দেশ্য ছিল দেশে নিয়মতান্ত্রিকভাবে পরিবহন সেবা দেয়া। কিন্তু সংস্থাটি ওই জায়গায় যেতে পারেনি।
অন্যদিকে এ বিষয়ে বিআরটিসির চেয়ারম্যান (অতিরিক্ত সচিব) মো. তাজুল ইসলাম জানান, বিআরটিসি বাস চলাচলে কোনো রুট পারমিট লাগে না। জনগণের স্বার্থে যেকোনো রুট বাস চালু করা যায়। বিভিন্ন সময় বেসরকারি বাস মালিকরা রংপুর, নোয়াখালী, শরীয়তপুরসহ কয়েকটি স্থানে বাস বন্ধ করেছিল। ইতোমধ্যে বন্ধ হওয়া ওসব রুটের বাসগুলো আবার চালু হয়েছে।
সারা দেশে ২১৪টি রুটে দৈনিক ৭৫০টি বাস চলাচল করছে। তবে চাহিদার তুলনায় বিআরটিসির বাসের সংখ্যা কম। নতুন ৩২০টি বাস বহরে যুক্ত হওয়ার প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। সেগুলো এলে কিছু অংশ বাস ঢাকা শহরে যুক্ত হবে, বাকিগুলো আন্তঃজেলায় যুক্ত করা হবে। তা ছাড়া বিআরটিসি চাইলেই গাড়ির সংখ্যা বাড়াতে পারে না। তবে জরাজীর্ণ বাসগুলো অপসারণ করা হচ্ছে। সেগুলো টেন্ডারের মাধ্যমে বিক্রি করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। ওই বাসগুলো টেন্ডার হয়ে গেলে রাস্তায় থাকা বাসগুলো ডিপোর ভেতরে নিয়ে আসা হবে। ডিপোতে জায়গা সংকটের কারণে বাসগুলো বাইরে থাকে।