২০২৪ সালের শুরুতে আগামী দ্বাদশ নির্বাচন। গণমাধ্যমকে এমন ইঙ্গিত দিয়েছে নির্বাচন কমিশন। অতীতে জাতীয় নির্বাচনের আগে শক্তির মহড়ায় কে এগিয়ে অনেক কিছু পূর্ব থেকেই আঁচ করা গেছে। এবার অতীতের হিসাব মিলছে না। দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে অনেক অজানা খবরের ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে। বিদেশি শক্তিগুলোও তীক্ষ নজর রেখেছে। প্রকাশ্যে না বললেও দারুণ চাপে রয়েছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ।
অন্যদিকে বাধার বাঁধ ভেঙে, হামলা-নির্যাতন, কারফিউ পরিস্থিতিতেও কর্মসূচি বাস্তবায়ন করে বিএনপিও কোমর সোজা করে দাঁড়িয়েছে। আগামী চব্বিশে যে ভোট হবে তাতে উনিশ-বিশ লড়াই হবে বলেই মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। শত চাপের মধ্যেও আওয়ামী লীগ নিজেদের অধীনে আবারও বিতর্কিত নির্বাচন আয়োজনের ঝুঁকি নিতে শুরু করেছে। আবার বিএনপিও ঠেকাতে মৃত্যু ঝুঁকি নিয়ে শেষ লড়াই চালিয়ে যাবে- এমন বার্তা দিচ্ছে। দুই দলের মরণ কামড়ের প্রস্তুতিতে অনেক অঘটনের জন্ম দিয়ে তৃতীয় শক্তির আবির্ভাবকেও অনেকে উড়িয়ে দিচ্ছেন না। যেহেতু বিএনপি চাচ্ছে যেকোনো উপায়ে ক্ষমতাসীন সরকারকে সরানো, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন, রাষ্ট্র সংস্কার, জাতীয় সরকার গঠন, সেহেতু বিএনপির ক্ষমতার লড়াইয়ের পাশাপাশি আগ থেকেই অন্য কিছু হলে তাতেও তাদের সমর্থন থাকবে পূর্ব থেকেই ইঙ্গিত দিচ্ছেন।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন হলে প্রশাসন ক্ষমতাসীনদের পক্ষে থাকে। এটা বহুবার প্রমাণিত হয়েছে। ২০০৯ সালে ক্ষমতায় এসে আওয়ামী লীগ সরকার তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনব্যবস্থা বাতিল করে দেয়। সংকটের শুরু তখন থেকে। এবার সংকট উত্তরণে রাজনৈতিক নজরের সাথে গণতন্ত্র ও মানুষের অধিকার নিশ্চিতের দাবি উঠছে বাংলাদেশের পার্শ্ববর্তী দেশগুলো থেকেও। হ্যাটট্রিক সময়ে আওয়ামী লীগ রাষ্ট্রের নেতৃত্ব দিলেও বড় কঠিন সময় পার করছে। দেশের অর্থনৈতিক ভবিষ্যৎ নিয়ে আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী নিজেই ইঙ্গিত দিয়েছেন। জ্বালানি সংকট, ডলারের বিপরীতে টাকার অবমূল্যায়ন, ব্যাংকে তারল্যের সংকট, রিজার্ভের অবনতিশীল পরিস্থিতি এবং সামনের বছর থেকে বিশাল অংকের বৈদেশিক ঋণ পরিশোধের ধাক্কা সামাল দেয়া সহজ হবে না বলে মনে করছেন ক্ষমতাসীন সরকারের নীতি-নির্ধারকরাও। এমন পরিস্থিতিতে দেশের মানুষেরও ক্ষোভের তোপে পড়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। মাঠপর্যায়ের খারাপ পরিস্থিতিগুলো গোয়েন্দা সংস্থার মাধ্যমে সরকারের ঘরেও যাচ্ছে।
এদিকে কয়েক বছরে বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে আন্তর্জাতিক মহলের রেড সিগন্যাল দেয়া। র্যাব-পুলিশের কিছু কর্মকর্তার ওপর আমেরিকার নিষেধাজ্ঞাও এসেছে। রোহিঙ্গা ও ইউক্রেন সংকটের পর আন্তর্জাতিক রাজনীতির মেরুকরণের ফলে আওয়ামী লীগ সরকারের ওপর আন্তর্জাতিক নজরদারি ও সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানের চাপ অনেক বেড়েছে। প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম ও বড় প্রকল্পে চীনের ক্রমবর্ধমান অংশগ্রহণ ভারতের সঙ্গে কিছুটা হলেও আওয়ামী লীগ সরকারের টানাপড়েনের সৃষ্টি করেছে বলে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা দাবি করছেন।
রাজনীতিতে চোখ রাখা সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ক্ষমতাসীন সরকারের অধীনে হওয়া দুটো নির্বাচন বিএনপির সীমানার বাইরে চলে যায়। দলটির মাঠ থেকে কিছুটা দূরত্ব তৈরি হয়। যার কারণে খালেদা জিয়ার মুক্তি ও আন্দোলনের বিষয়ে সম্পূর্ণ ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে। জাতীয় প্রেস ক্লাবে কয়েকটি মানববন্ধন ছাড়া তেমন বড় ভূমিকা দেখাতে পারেনি। তবে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ইস্যুতে নানা ক্ষোভ থাকলেও দলটিতে কোনো ভাঙন তৈরি হয়নি। কোনো নেতা রাগ অভিমানে অন্য দলেও চলে যায়নি। মাঠের শক্তির ইঙ্গিত গত মাসে সমাবেশ থেকে দেয়া শুরু হয়েছে। বিএনপি বুঝতে পেরেছে অতীতের ন্যায় আবারও ক্ষমতায় থাকার জন্য নানা কৌশল নিচ্ছে আওয়ামী লীগ। সব কিছুই বিএনপি এখন থেকে মোকাবিলা করছে। একদিকে মাঠে শক্ত অবস্থান অন্যদিকে সরকারের দুর্বলতাগুলো আন্তর্জাতিক মহলে তুলে ধরছে।
অন্যদিকে বিএনপি ক্ষমতায় এলে যে কাজগুলো করবে তারও রোডম্যাপ শুরু করেছে। বিএনপির এবারের আন্দোলনে শেষবেলায় আরও গণজোয়ার তৈরি হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। টিকে থাকার লড়াইয়ে জীবন-মৃত্যুর ভূমিকা পালন করে যাবে। যাতে সরকার দাবি মেনে নিয়ে সরে যেতে বাধ্য হয়।
সংশ্লিষ্ট বিষয়ে জানতে চাইলে নিরাপত্তা বিশ্লেষক এয়ার কমোডর (অব.) ইশফাক ইলাহী চৌধুরী আমার সংবাদকে বলেন, বর্তমান অর্থনৈতিক সমস্যা পুরো বিশ্বব্যাপী। অর্থনৈতিক এই অবস্থা আরও খারাপ হতে পারে। এমন অবস্থায় দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা যদি আরও খারাপের দিকে যায়। তাহলে দেশে সুষ্ঠু নির্বাচন করা খুবই কঠিন হবে। চলমান এসব সমস্যা সমাধানের দায়িত্ব সব রাজনৈতিক দলের। তারা নিজেদের মধ্যে আলোচনা এবং সংলাপের মধ্যে দিয়ে সমস্যা সমাধানের পাশাপাশি সুষ্ঠু নির্বাচন গ্রহণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। কিন্তু তারা যদি নিজেদের মধ্যে সংলাপ বা আলোচনা না করে। তাহলে সত্যিই দেশে সুষ্ঠু নির্বাচন করা অনেক কঠিন হবে। কারণ সংসদ নির্বাচনে সব সময় ঝুঁকি থাকে। এবার দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে সেই ঝুঁকিগুলো দেখা যাচ্ছে।
সাবেক নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এম. সাখাওয়াত হোসেন আমার সংবাদকে বলেন, এখনো অনেক বাকি আছে সংসদ নির্বাচনের। নির্বাচন এলে ঝুঁকি থাকে। এখনো যেহেতু আরও সময় রয়েছে, অনেক কিছু দেখার বাকি আছে। তবে এখনো রাজনৈতিক সহিংসতা বড় ধরনের দেখা যায়নি। রাজনীতির স্বাভাবিক ইস্যুগুলো এখন চলছে। কী ঘটছে সেই ঘটনা পূর্বের মতো এবার বলা যাচ্ছে না।